চার
একথা সত্য যে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পম্চিমারা নানান অযুহাতে বাঙ্গালীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্ঠায় লিপ্ত হয়। প্রথম আঘাত আসে ভাষার উপর।। ফলে 1947 সালের 19শে নভেম্বর বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, আইনজীবি, শিল্পী, সাংবাদিক ও সরকারী-বেসরকারী ও ওলামারা মুর্খ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে একটি স্বারক লিপি পেশ করেন। 11মার্চ রাষ্ট্রভাষা সাবকমিটির উদ্দ্যোগে ধর্মঘট ও ছাত্র বিক্ষোভের আহব্বান করা হয়। এই বিক্ষোভ থেকে তোয়াহা, ওলি আহাদ, শেখ মজিব, বাহাউদ্দিন চৌধূরীসহ 69 জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। 14ই মার্চ তারা মুক্তি পেলে 15ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ‘সাধারন ছাত্রসভা আহুত হয়। 1947 সালের 6 ডিসেম্বর ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীদের সম্মেলনে ঢাকসুর ভি.পি ফরিদ আহম্মদ ‘বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার বাহনের দাবি করেন। তিনি বলেন ‘রাষ্ট্রভাষা, লিঙ্গুয়া, ফ্রান্কা নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে তার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পূর্ববাংলার জনগনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা। ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টমবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ ও রসায়ন বিভাগের দুই অধ্যাপক জনাব আবুল কাশেম ও নূরুল হক পাকিস্তান 'তমদ্দুন মজিলস নামে একিট সংগঠেনর গোড়াপওন করেন । 1987 সালে ঢাকায় তমুদ্দিন মজলিসের উদ্দোগে এক সাহিত্য সম্মেলনে পূববাংলা সরকারের মন্ত্রী ও সাহিত্যিক জনাব হাবিবুল্লাহ বাহারে সভাপতিত্বে বক্তাগন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রকাশ দাবি করেন। 1947 সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়া উদ্দিন আহম্মদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। কিন্তু জ্ঞানতাপস ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এর প্রতিবাদ জানান। দৈনিক আজাদ পত্রিকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা র্শীষক নিবন্ধে তিনি লেখেন ‘পাকিস্তান ডোমিনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলের অধীবাসিদের মাতৃভাষা বিভিন্ন যেমন পশতু, বেলুচি, পাঞ্জাবী, সিন্ধি এবং বাংলা, কিন্তু উর্দু কোন অঞ্চলের মাতৃভাষা রুপে চালু নাই। যদি বিদেশী ভাষা বলিয়া ইংরেজী ভাষাকে অবজ্ঞা করা হয় তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারুপে গ্রহন না করার পক্ষে কোন যুক্তি নাই। এরই প্রেক্ষাপটে করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব পাশ হয়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষা বাংলা ও উর্দু করার সুপারিশ করা হয়। ফলে 15ই ফ্রেরুয়ারী প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা ‘সংগ্রাম পরিষদের’ সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তিতে বলা হয় ‘এপ্রিল মাসের ব্যবস্থাপনা সভায় এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব উপস্তাপন করা এবং পাকিস্তান গনপরিষদও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই ব্যাপারে একটি বিশেষ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।1948 সালের 25শে ফ্রেরুয়ারী কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গনপরিষদে সর্বপ্রথম ইংরেজী, উর্দু ভাষার পাশাপাশি বাংলাকেও পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কংগ্রেস সদস্য শ্রীশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত, ও হেমহরি বর্মা তার এই প্রস্তাকে সমর্থন করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধীতা করেন। 1948 সালের 11ই মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারাদেশে সাধারন ধর্মঘট পালিত হয়। উপায় অন্ত না দেখে খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে চুক্তির একটি চুক্তি হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই 1949 সালের 24শে মার্চ পাকিস্তানের গর্ভনর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এক ঝটিকা সফরে ঢাকায় এসে রমনার রেস্ কোর্স ময়দানে পাচঁলক্ষ লোকের সমাবেশে ঘোষনা করেন ‘উর্দু, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তাৎক্ষনীক ছাত্রসমাজ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের পক্ষ থেকে শাসছুল হক, তোয়াহা, কামরুদিন, আবুর কাশেম, লিলিখান, অলি আহাদ, নইমুদ্দিন আহমেদ শামসল আলম ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাকে একটি স্বারক লিপি দেওয়া হয়। তা সত্যেও জিন্নাহ সাহেব ঢাকায় তার বিদায়ই ভাষনেও সবায়কে পাকিস্তানী হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ‘বাঙ্গালী, সিন্ধি ও পাঞ্জাবী বেলুচি পরিচয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য বিপদজ্জনক। 1948 সালের 27শে ফ্রেরুয়ারী সামছুল আলমকে আহব্বায়ক করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ছাত্রদের প্রচন্ড আন্দোলনের মুখে পরবর্তীকালে জিন্নাহ গোপনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সাথে দেখা করে ‘বাংলাকে‘ প্রাদেশিক সরকারি ভাষা হিসাবে মেনে নিয়ে পূর্ববাংলার ছাত্রসমাজের সাথে একটি আপোষ রফার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানান। ঢাকসুর ভি.পি ফরিদ উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক গোলাম আজম ও আব্দুর রহমান চৌধুরী (মহসীন হলের সহ-সভাপতি) আপোষ প্রস্তাবে রাজী হলেও শেখ মজিবুর রহমান, তোয়াহা, অলি আহাদ, তাজউদ্দিন আহম্মদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম আন্দোলন চলিয়ে যাওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। শেখ মজিবুর রহমানের এইরুপ একক নেতৃত্বের কারনে পরবর্তীতে তাদের সাথে দ্বন্দের সূত্রপাত হয় এবং তারা ভিন্ন শিবিরে স্বাধীনতা বিরোধীতা করেন । 1948 সালের 11ই মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারাদেশে সাধারন ধর্মঘট পালিত হয়। 27 ডিসেম্বর করাচিতে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষক সম্মেলনের উদ্বোধণী ভাষনে কেন্দ্রীয় শিক্ষা সচিব ফজলুর রহমান বাংলাভাষায় আরবি হরফ যুক্ত করার পক্ষে জোরাল চুক্তি প্রর্দশন করেন। 1948 সালের 31শে ডিসেম্বর কার্জন হলে ‘পূর্বপাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান তা যেমন সত্য, তার চেয়ে সত্য আমরা বাঙ্গালী; এটি কোন আদর্শের কথা নয়, এটি বাস্তবসত্য। 1949 সালের 7ই ফ্রেরুয়ারী পেশোয়ারে পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্ঠা, বোর্ড সভায় বাংলা বর্ণমালা বিলুপ্ত করে আরবী হরফ প্রবর্তনের পক্ষে ধর্মীলেবাসে নানা যুক্তি প্রদর্শন করেন। ফলে সচতুর রাজরৈতিক নেতৃত্ব 1949 সালের 23শে জুন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল হিসাবে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠাব করেন। এই সংগঠনটি শুরু থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিভিন্ন প্রকার অন্যায়-অত্যাচার, শোষন ও নীপিড়নের বিরোদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৪৯ সালের ১২ই মার্চ পাকিস্তান সংবিধান সভার প্রস্তাব অনুসারে শাসনতান্ত্রিক মূলনীতি নির্ধারন কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ১৯৫০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সংবিধান সভায় তোদের অন্তবর্তীকালীন রির্পোটে শাসনতান্তিক বিষয়ে রাষ্টভাষাকে ‘উদ্দু’ করার সুপারিশ করে। ইতিপূর্বে ১৯৪৮ সালের অক্টোবরে ঢাকা আরমানিঢোলা ময়দানে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের এক জন সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জনসভায় মওলানা ভাসনী ও শামছুল হক (১ম সাধারন সম্পঁদক আওয়ামীলীগ) এর নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ মিছিল গর্ভমেন্ট হাইজের দিকে রওয়ানা হেল পুলিশ বাধা প্রদান করে । আন্দোরনকারীরা বাধা উপেক্ষ করে সামনের দিকে অগ্রসর হলে- আইন শৃংখলা ভঙ্গের অজুহাতে মওলানা ভাসনী ও শামছুল হককে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৮ সালের 12 অক্টোবর এই সংবিধান কমিটি পাকিস্তান অবর্জাভার অফিসে এক সভার আহব্বান করে এবং তাতে কমরুদীন আহম্মদ আতাউর রহমান খান, মোহাম্মদ তোয়াহা, তাজউদ্দিন আহম্মদ পাকিস্তান অবজাভারের সম্পাদক আব্দুস ছালাম ও মানিক মিয়া অংশ গ্রহন করেন। বৈঠকে আন্দোলনের কর্ম-পরিকল্পনা এবং পরিধি নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯৫০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মূলনীতি নির্ধারক কমিটির রির্পোট প্রকাশের সাথে সাথে ঢাকার রাজৈনিতক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয় । পূর্ব বাংলার উপর একটি অগনতান্ত্রিক প্রস্তাব চাপিয়ে দেওয়ার চক্রন্তের বিরোদ্ধে স্বঃফুর্ত প্রতিবাদে পাকিস্তান অবর্জাভার অফিসে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে ডেমোক্রেটিভ ফেডারেশনের নামে একটি সংগঠেনর জন্ম হয়। এই ডেমোক্রেটিভ ফেডারেশনের সদস্যবৃন্দ বিকল্প শাসনতন্তের খড়সা তৈরির জন্য সংবিধান কমিটি নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিনের ভাষণ প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন খাজা নাজিমুদ্দিন ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন এবং ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি মূলত জিন্নাহ্'র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত তাঁর ভাষণে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে কোনো জাতি দু'টি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি।নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯ জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্রসহ নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।পরে তারা তাদের মিছিল নিয়ে বর্ধমান হাউসের (বর্তমান বাংলা একাডেমী) দিকে অগ্রসর হয়। পরদিন ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়।সভায় আরবি লিপিতে বাংলা লেখার সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এবং ৩০ জানুয়ারির সভায় গৃহীত ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন দেয়া হয়। পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।
পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে সমবেত হয়। সমাবেশ থেকে আরবি লিপিতে বাংলা লেখার প্রস্তাবের প্রতিবাদ এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ছাত্ররা তাদের সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
২০ ফেব্রুয়ারি সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় এক মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিভিন্ন হলে সভা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ৯৪ নবাবপুর রোডস্থ আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিষদের কিছু সদস্য নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পক্ষে থাকলেও, সবশেষে ১১-৩ ভোটে[ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে একই বিষয় নিয়ে পৃথক পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় সলিমুল্লাহ হলে ফকির শাহাবুদ্দীনের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত সভায় নেতৃত্ব দেন আবদুল মোমিন। শাহাবুদ্দিন আহমদের প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে এই সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নেন আবদুল মোমিন এবং শামসুল আলম।পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী এ দিন সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতামতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে। বিভিন্ন অনুষদের ডীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঐসময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়।কিছু ছাত্র ঐসময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিকে দৌঁড়ে চলে গেলেও বাদ-বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে অনুরোধ জানান এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় কয়েকজনকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ছাত্ররা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পুনরায় তাদের বিক্ষোভ শুরু করে।
বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাঁধা দেয়। কিন্তু পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইনসভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবে। ছাত্ররা ঐ উদ্দেশ্যে আইনসভার দিকে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ দৌঁড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলিবর্ষণে আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে সেসময় নিহত হন। ঐদিন অহিউল্লাহ নামের একজন ৮/৯ বছরেরে কিশোরও নিহত হয়।
ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত অফিস, দোকানপাট ও পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন সাথে সাথে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়।রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহ্বান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে।
ঐসময় গণপরিষদে অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশের গুলির খবর জানতে পেরে মাওলানা তর্কবাগিশসহ বিরোধী দলীয় বেশ কয়েকজন অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান। গণপরিষদে মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত-সহ ছোট ছয়জন সদস্য মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে যাবার জন্যে অনুরোধ করেন এবং শোক প্রদর্শনের লক্ষ্যে অধিবেশন স্থগিত করার কথা বলেন।কোষাগার বিভাগের মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ, শরফুদ্দিন আহমেদ, সামশুদ্দিন আহমেদ খন্দকার এবং মসলেউদ্দিন আহমেদ এই কার্যক্রমে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও নুরুল আমিন অন্যান্য নেতাদের অনুরোধ রাখেননি এবং অধিবেশনে বাংলা ভাষার বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।
পাঁচ
1951 সালে লাহোরে কায়েদে মিল্লাত লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। ফলে সারাদেশ ব্যাপি রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। 1954 সালের প্রাদেশীক পরিষদ নির্বাচনে ঘোষিত হলে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে অন্যান্য দল মিলে যুক্তফ্রন্ট নামীয় একটি সমন্বিত বিরোধী ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর তারিখে কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন ।যুক্তফ্রন্টের প্রধার তিন নেতা ছিলেন মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এই যুক্তফ্রন্ট ২১ দফার একটি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। যথা-
১. বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হবে। ২. বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ও সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ এবং খাজনা হ্রাস ও সার্টিফিকেট মারফত খাজনা আদায় রহিত করা হবে। ৩. পাট ব্যবসা জাতীয়করণ এবং তা পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ পরিচালনায় আনা এবং মুসলিম লীগ শাসনামলের পাট কেলেঙ্কারির তদন্ত ও অপরাধীর শাস্তি বিধান করা। ৪. কৃষিতে সমবায় প্রথা প্রবর্তন এবং সরকারি সাহায্যে কুটির শিল্পের উন্নয়ন। ৫. পূর্ববঙ্গকে লবণ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। ৬. কারিগর শ্রেনীর গরীব মোহাজেরদের কর্মসংস্থানের আশু ব্যবস্থা। ৭. খাল খনন ও সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে বন্যা ও দূর্ভিক্ষ রোধ । ৮. পূর্ববঙ্গে কৃষি ও শিল্প খাতের আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বী করা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) মূলনীতি মাফিক শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। ৯. দেশের সর্বত্র অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং শিক্ষকদের ন্যায্য বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা। ১০. শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভেদাভেদ বিলোপ করে সকল বিদ্যালয়কে সরকারি সাহায্যপুষ্ট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। ১১. ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীল আইন বাতিল এবং উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করা। ১২. শাসনব্যয় হ্রাস, যুক্তফ্রন্টের কোনো মন্ত্রীর এক হাজার টাকার বেশি বেতন গ্রহণ না করা। ১৩. দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ-রিশ্ওয়াত বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন। ১৪. জননিরাপত্তা আইন, অর্ডিন্যান্স ও অনুরূপ কালাকানুন বাতিল, বিনাবিচারে আটক বন্দির মুক্তি, রাষ্ট্রদ্রোহিতায় অভিযুক্তদের প্রকাশ্য আদালতে বিচার এবং সংবাদপত্র ও সভাসমিতি করার অবাধ অধিকার নিশ্চিত করা। ১৫. বিচারবিভাগকে শাসনবিভাগ থেকে পৃথক করা। ১৬. বর্ধমান হাউসের পরিবর্তে কম বিলাসের বাড়িতে যুক্তফ্রন্টের প্রধান মন্ত্রীর অবস্থান করা এবং বর্ধমান হাউসকে প্রথমে ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষনাগারে পরিণত করা। ১৭. রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ ঘটনাস্থলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা এবং শহীদদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ১৮. একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষনা করা। ১৯. লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বায়ত্তসাশন এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মূদ্রা ব্যতীত সকল বিষয় পূর্ববঙ্গ সরকারের অধীনে আনয়ন, দেশরক্ষা ক্ষেত্রে স্থলবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তানে এবং নৌবাহিনীর হেডকোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন এবং পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্রনির্মাণ কারখানা স্থাপন ও আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা। ২০. কোনো অজুহাতে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা কর্তৃক আইন পরিষদের আয়ু না বাড়ানো এবং আয়ু শেষ হওয়ার ছয়মাস পূর্বে মন্ত্রিসভার পদত্যাগপূর্বক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। ২১. যুক্তফ্রন্টের আমলে সৃষ্ট শূন্য আসন তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা এবং পরপর তিনটি উপনির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী পরাজিত হলে মন্ত্রিসভার পদত্যাগ করা।
১৯৫৪ সালের মার্চের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন অর্জ্জন করে। তন্মধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, ৪৮টি পেয়েছিল শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামী ইসলাম পার্টি লাভ করেছিল ২২, গণতন্ত্রী দল লাভ করেছির ১৩টি এবং খেলাফত-ই-রাব্বানী নামক দলটি ১টি আসন। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ সম্পূর্ণরূপে এ নির্বাচনে পরাভূত হয় ; তারা কেবল ৯টি আসন লাভ করতে সমর্থ হয়।
এ নির্বাচনে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য ৭২টি আসন সংরক্ষিত ছিল। এগুলোর মধ্যে কংগ্রেস লাভ করেছিল ২৪টি আসন, কমিউনিস্ট পার্টি ৪টি, শিডিউল্ড কাস্ট ফাউন্ডেশন ২৭টি, গণতন্ত্রী দল ৩টি এবং ইউনাইটেড পগ্রেসিভ পার্টি ১৩টি আসন লাভ করেছিল। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন।1954 সালের ৩ রা এপ্রিল শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুক হক চার সদস্য বিশিষ্ট যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠন করেন। পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয় ১৫ মে তারিখে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুর হক। যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে বাংলা একাডেমী গঠন করে।এ প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সংরক্ষণ, গবেষণা এবং মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে বলে গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়। যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল মাল গোলাম মাহমুদ ১৯৫৪ সালের ৩০ মে তারিখে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকার বাতিল ঘোষণা করে। ১৯৫৫ সালের ৬ জুন তারিখে যুক্তফ্রন্ট পুণর্গঠন করা হয়; যদিও আওয়ামী লীগ মন্ত্রী পরিষদে যোগদেয়নি।
১৯৫৪ সালের ৩১ মে ‘ব্লাসফেমি’ আইন জারি করে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদ বাতিল করে দিয়ে শাসনতন্ত্রের ৯২ (ক) ধারা জারীর মাধ্যমে প্রদেশে গভর্ণরের শাসন প্রবর্তন করেন। একথা সত্য যে, 1956 সালের 12 সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহ্ওয়ার্দীর প্রধানমন্ত্রিত্বে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও রিপাবলিকান পার্টির কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে সোহ্ওয়ার্দী সাহেব মার্কিনমূখী পররাষ্ট্রণীতি গ্রহন করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিয়াটো, সেন্টো প্রভুতি সামরিক চুক্তির পক্ষ অবলম্বন করেন। সাথে আরো ছিল মৌলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি। গনতন্ত্রী দলের নেতা ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানিশ এবং মাহমুদ আলি সিলেটি। ফলে কেন্দ্রীয় সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এইরুপ আমেরিকাপন্থী মতাদর্শের কারনে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রাদেশীক সভাপতি মওলানা ভাসানীর সাথে মতানৈক্য দেখা দেয়। 1955 সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামেয় দলটি থেকে সম্প্রদায়িক ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলটিকে অসম্প্রদায়ীক ও সর্বজনীন করে নির্বানে অংশ গ্রহনের তুরজুর চলে। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও প্রাদেশীক সভাপতির পরস্পর ভিন্ন মতার্দশের কারনে আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে যায় এবং মওলানা ভাষানির নেতৃত্বে ন্যাশনার আওয়ামী লীগ নামে একটি নতুন দলের সৃষ্টি হয়।