somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছুটির দিনে ঝর্ণার খোঁজে

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত সপ্তাহে খইয়াছড়া ঘুরতে যাওয়ার পর থেকে ঘোরাঘুরির মামদো ভুতটা ভালমতই ঘাড়ে চেপে বসেছে। যেটার ফলস্বরূপ গতকাল সাতদিন ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন আরেকটা দলের সাথে ভীরে গেলাম। অল্প কজনকে চিনি, বাদ বাকি সবাই অপরিচিত। গতবারের খইয়াছড়াটা ঠিক অর্থে হাইকিং বা ট্র্যাকিঙ্গের ধারে কাছ দিয়েও যায়নি। ভ্রমণ বা পরিদর্শন বলাই ভাল। কিন্তু গতকাল যেটা করলাম সেটা স্রেফ গাধামী কিংবা আক্ষরিক অর্থেই এডভেঞ্চার আর ট্র্যাকিং ছিল। নতুন কিছু আবিষ্কার। যদিও শুরুতে উদ্দেশ্য ছিল পুরনো রাস্তায় হেঁটে ঝর্ণা দেখে ফিরে আসবো। কিন্তু কপালে বোধহয় নতুন কিছু খুঁজে বের করাটাই লেখা ছিল।
ভোরবেলাতেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। উদ্দেশ্য যদিও শুরুতে একবার লিখেছিলাম হরিণ ভাঙা না বাঘ ভাঙা- সেটা পরে বদলে গিয়েছিল। আমাদের কলম্বাস রবিন আর জ্ঞানীভাই অমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাদুইজ্যা কুম, সোনাইছড়া পাথুরে ছড়া আর ঝর্ণা দেখতে যাবে। বারো জনের দল। এর মাঝে আমিও এক হতভাগা। সকালে উঠেই ব্যাগ গুছিয়ে বাবু সেজে বেরিয়েছিলাম। সবার আসার কথা এ.কে.খান পেট্রল পাম্পের সামনে। আমি রাইডারে উঠে বন্দর টিলা থেকে রওনা দিয়ে ছোটখাট একটা ঘুমও দিয়ে দিলাম এই ফাঁকে। ড্রাইভার সাহেবের পাশে বসে আমি একটা নৌকায় করে দূর্গম সোনাইছড়ার এলাকার খরস্রোতা ছড়া বাইছি! বাইতে বাইতে অলঙ্কার এসে গেল। পেছন থেকে হেল্পার সাহেব আমাকে গুঁতা দিয়ে জাগালেন, “ভাই, অলঙ্কার আইসা গেছে। উঠে ভাড়া দেন।”
আমি হাই তুলতে তুলতে আর জাবর কাটতে কাটতে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিলাম। ব্যাগ দিয়ে নেমে হাঁটতে লাগলাম এ.কে.খান পেট্রল পাম্পের দিকে। সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম রবিনদের আসার অপেক্ষায়। অবশ্য ওখানে ঠিক আমাদের দলটার মতই আরেকটা দল আগে থেকেই দাঁড়িয়েছিল। ভাগ্য ভাল গিয়ে কথা বলিনি। কারণ আমি যাওয়ার একটু পরেই ওরা আরেকটা বাসে করে বেরিয়ে গেছে। কথাবার্তা শুনে যা মনে হল- খইয়াছড়া কিংবা নাপিত্তাছড়া কোথাও যাবে বোধহয়।
আমাদের দলটা আসতে আসতে সাড় সাতটা বাজিয়ে দিয়েছে। সবাই আসার পর একটা হোটেলে ঢুকে দ্রুত নাস্তা করে নিলাম সবাই। কোথায় যাচ্ছি সেটা নিয়ে তখনো পরিষ্কার না আমি। কারণ প্ল্যান চেঞ্জ হয়ে গেছে। তারওপর বাস কন্ডাক্টরেরাও ঠিকমত চিনতে পারছে না। তাই না বুঝে বাসে ওঠাটাও ঝামেলার। নাম ঘটিত ঝামেলা লেগেছে। সোনাইছড়ি আর সোনাইছড়া নিয়ে। কারণ প্রথমটা একেবারে কাছেই, ভাটিয়ারীতে। অন্যটা বড় দারগারহাট বাজারের দিকে। এর মাঝে আবার কোন ফকিরহাটে নাকি যেতে হবে। এই ফকির হাটের সংখ্যাও দেখি চার চারটা! নামের অভাব পড়েছিল! আকিকা করে জায়গার নাম বদলানো গেলে সেটাই করা উচিত যা বুঝলাম। ফকিরহাটও আছে, আবার হাদী ফকিরহাটও আছে। কোনটায় নামতে হবে সেটা নিয়েও যত সমস্যা।
শেষ মেষ আর বাছ বিচার না করে আমাদের বারোজনের টিমটা হাদী ফকিরহাটেই নেমে গেলাম। বলা যায় খানিকটা অন্ধের হাতি দর্শন করতে যাওয়ার মত অবস্থা। আগের অন্ধ দলটা হাতির কানের বিবৃতি দিয়ে গেছে, আমরা যাচ্ছি লেজের দর্শন করতে।
হাদী ফকিরহাট নেমে রবিনরা লবণ আর শুঁকনো খাবার কিনে নিলো। আমার ব্যাগে আগে থেকেই সব ছিল। খাবার থেকে শুরু করে পরিষ্কার পানি, স্যালাইন, গ্লুকোজ, পেইনকিলার, ব্যান্ডেজ- মোটামুটি পুরো ডিসপেনসারি তুলে এনেছি। আমি তাই আর কিছু নেইনি। বাজারের ভেতর দিয়ে হাঁটতে লাগলাম সবাই। নতুন দল দেখে এলাকার লোকজনও ঘুরে ঘুরে তাকিয়ে দেখতে লাগলো কারা যায়। আমি বাদে বাকি প্রায় সবাই হাফ প্যান্ট পরেই বেরিয়ে গেছে দেখে লোকজনের ঘুরে তাকানোটা আরো বেশিই হল যা বুঝলাম। অনেকেই এগিয়ে এলো আমাদের সাথে কথা বলতে। এরমাঝে আবার দেখা গেল আমাদেরই এক জুনিয়ার ভাইয়ের ক্লাসমেটের বাবাও রয়েছেন সেখানে! ব্যাপারটা কাকতালীয় হলেও খুব মজা লাগলো। ভদ্রলোকের মেয়ে পাবলিক এ্যাডে পড়ছে সেই ছেলের সাথেই।
যাহোক, আমাদের হাঁটা শুরু হল। এবং কলম্বাস সাহেব একজন সফর সঙ্গী জুটিয়ে নিলেন এক পাহাড়ী বাগান চাষীকে। পাহাড়ের অনেক ভেতরে নাকি বাড়ী তার, অনেক ওপরে। মোট আঠারো জন চাষী মিলে নাকি নিরানব্বই বছরের জন্য সরকারের থেকে পাহাড়ি জায়গা লিজ নিয়েছেন তারা। নানান জাতের সবজি, গাছ, ফলের চাষ করেন। পরিষ্কার করে ঠিক বোঝা গেল না কিসের চাষ করেন। জিজ্ঞেস করলেই বলেন, “ভেরাইটিস আইটেমের কাজ করি মামা। এই বছর পাহাড়ে পানি আছিলো দেখে আনারস করবার পারি নাই।”
সেই মামাকে নিতে গিয়েই যত বিপদ আর মসিবত। তখনো অবশ্য জানা ছিল না যে তিনি আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছেন ঝর্ণা দেখাতে। উদ্দেশ্য আসলে কি ছিল সেটাও পরিষ্কার না। কত ধরণেরই তো মতলব থাকতে পারে। কারণ সঙ্গে ডিএসএলয়ার বাহিনী ছিল। দামি জিনিসপত্রের অভাব নেই। পাহাড়ের গভীরে ওঠার পর যেভাবে রবিন আর অমিদের অনুরোধ করা শুরু করেছিল নিজের বাড়িতে নেয়ার জন্য- তাতে খানিকটা সন্দেহ হওয়াতেই রবিনরা মধ্যবিরতী না নিয়ে একটানা হেঁটেই গিয়েছিল। থামেনি তার বাড়িতে। অথচ শুরুতে কথাছিল মামার বাড়িতে বিশ্রাম নেয়া হবে।
যাগ্যে, কথা ঘোরাচ্ছি খুব। এখন আসল কথায় আসি। যাত্রার শুরুতে বাঁশের লাঠি জোগার করে নিয়েছিলাম সবাই যার যার নিজ দায়িত্বে। গ্রামের ভেতরের পথ ধরে হাঁটতে গিয়ে খানিকবাদে কম্বার্স খুলে ফেলতে হয়েছিল। ভয়াবহ কাঁদা আর বাজে রাস্তা। পা দিলেই পা ঢুকে যাচ্ছে কাঁদার ভেতরে। টেনে ওঠাতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে যাচ্ছি। শেষে উপায় না দেখে জুতো খুলে সেগুলো স্থানীয় এক বাড়ীর দাওয়ায় রেখে দিয়ে এলাম। খালি পায়েই হাঁটা ধরলাম। জুতো রেখে আসার সময় ভাগ্য ভাল মুজাগুলো নিয়ে এসেছিলাম। ফেরার পথে কাজে লেগেছে।
খইয়াছড়া আর এবারের অভিযানে বড় ধরণে একটা পার্থক্য রয়েছে। খইয়াছড়াটার এলাকারটা সমতল। পাহাড়ে তেমন উঠতে হয় না। আর এবারে সোনাইছড়ার যাত্রাটা শুরু থেকেই ভয়াবহ রকমের পরিশ্রম আর কষ্টের ছিল। একে তো সকাল বেলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, পুরো রাস্তা যা আছে কাঁদায় ভরা- তার ওপর খাড়া পথ। পাহাড়ের গায়ে এঁকে বেঁকে সরু পিচ্ছিল পথ ধরে কেবল ওপরেই উঠছি আর উঠছি। ওঠার শেষ নেই। খানিক বাদে বাদে একে অন্যের নাম ধরে ডাক দিয়ে শিওর হয়ে নিচ্ছি সবাই ঠিক আছে কিনা। কিংবা সামনের জন্য ডানে বামে খাদ দেখলেও চিৎকার দিয়ে জানান দিয়ে দিচ্ছে টিমের বাকিদের। আমরা গহীন অরণ্যের মাঝ দিয়ে ওপরে উঠেই চলেছি। পাহাড়ী নলখাগড়ায় যে শরীরের খোলা জায়গাগুলো ইচ্ছে মত কেটে যাচ্ছে তখনো টের পাচ্ছিলাম না। দেখার সময় কোথায়? ডানে তাকালে বিস্তৃত পাহাড়ের রাজ্য, পায়ের নিচে গাছ পালার আড়াল দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ছুটে যাচ্ছে ছড়াটা, আর বামে তাকালেই খাদ কিংবা সেই পাহাড়ের ওপরের অংশ। বলাই বাহুল্য আমরা কখনো পাহাড়ের মাঝ দিয়ে যাচ্ছিলাম, তো কখনো পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠছিলাম। কখনো বা পাহাড়ের চুড়া দিয়ে ঢেউ খেলানো পথ দিয়ে হাঁটছিলাম।
ঠিক কত উচ্চতায় উঠেছিলাম আমরা জানি না। তবে সবাইকে বলে রাখি- সীতাকুণ্ডের যে বিস্তির্ণ পাহাড়ি অঞ্চল দেখা যায়- আমরা তার চুড়ায় উঠেছিলাম। এবং খুব আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই চুড়ার এলাকাতেও জলাবদ্ধতা রয়েছে, নালা রয়েছে, নর্দমা রয়েছে, ডোবা রয়েছে! এমনকি চুড়ায় সমতল জায়গাও রয়েছে! সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমরা অচেনা পথ ধরে তিন ঘণ্টা হাঁটতে হাঁটতে মানুষজন বলতে কেবল কিছু পাহাড়ী লোককে দেখেছি যারা বাঁশ কেটে নিয়ে যাচ্ছে নিচে বাজারে বেচতে। এই অমানুষিক পরিশ্রমের বদলে সে পাবে কেবল দেড়শো টাকা। অথচ সারা গায়ে কত জায়গাতেই যা জোঁক ধরে অবস্থা খারাপ করে রেখেছে। সেই সাথে রয়েছে চোলাই মদের সাপ্লাই। ফটিকছড়ি থেকে এই পথ দিয়েই পাহাড়ের অন্যপাশ থেকে দুই তিন ঘণ্টা হাঁটে সীতাকুণ্ডের এপাশে এসে সেই মদ বিক্রি করে তারা। কতটা পথ হেঁটেছি খেয়াল নেই, কতটা বেয়েছি তাও খেয়াল নেই। কারণ দলের সবচেয়ে দূর্বল ছেলেটা আমিই ছিলাম। সবার পেছনে ছিলাম সমস্ত রাস্তা। সামনের দিক থেকে অনেকক্ষণ পর পর আমার নাম ধরে ডাক দিয়ে ওরা নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছিল আমি আসলেই আছি কিনা। নাকি পড়ে গেছি। কারণ একে তো রোদ, তার ওপর পাহাড় বাইতে গিয়ে জিভ আধহাত বেরিয়ে পড়েছে আমার। বলা যায় দলের বুড়ো রগচটা ভামটা আমিই ছিলাম। কারণ দুই মিনিট যেতে না যেতেই গালাগাল করছিলাম অহেতুক ভুল পথে কেন হাঁটাচ্ছে- তা নিয়ে। রবিন আর অমিকে ইচ্ছে মত পেছন থেকে সারা পথ গাল দিয়েছি। গজগজ করতে করতে চুড়ায় উঠেছি। এর মাঝে কালে ভাদ্রে স্থানীয় বা ফটিকছড়ি থেকে আসা যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে সবাই বলেছে “এই তো দশ মিনিট হাঁটলেই ঝর্ণা, পনেরো মিনিট হাঁটলেই ঝর্ণা!” অথচ তাদের দশ পনের মিনিট আমাদের এক দেড় ঘণ্টা লাগিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ঝর্ণার দেখা নেই।
এবং পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এক মদ চোলাইকারীর কাছ থেকে জানা গেল আমরা ভুল পথে চলে এসেছি। সোনাইছড়া ফেলে আমরা নাকি হিলছড়িতে চলে এসেছি। ফটিকছড়ির একেবারে কাছে। হেঁটে নেমে গেলে এক ঘণ্টা লাগবে পৌছাতে। কিন্তু ঝর্ণার দেখা নেই। এদিকে দলের প্রায় সবাইকেই কম বেশি জোঁক ধরেছে। আমাকেও ধরেছে তিনটা। লবণ দিয়ে ছাড়ালাম। রিয়াদকে সবচেয়ে বেশি ধরেছিল। সাতটা জোঁক। প্রায় সবারই কাপড়ে রক্তের দাগ। বোঝাই যাচ্ছে জোঁক সাহেব আরাম করে খেয়ে সুন্দর করে নেমেও চলে গেছেন!
পাহাড়ের চুড়ায় ওঠার পর দলে মোটামুটি ভাঙন ধরে গেল। একদল আর সামনে যেতে চায় না, আরেকদল যাবে। সামনে যাওয়া মানে আবার পাহাড়ের অন্যপাশ ধরে নিচে নামতে থাকা। তাহলে ফেরার সময় খবর হয়ে যাবে। কিন্তু একটু আগে চলে যাওয়া লোকটার কথা অনুযায়ি ঝর্ণা খুব কাছেই। তাই দ্বিতীয় দলটা রওনা দিল পাহাড় বেয়ে নামায়। ঝর্ণা আজ দেখেই যাবে। ভুল পথে এসেছি তো কি হয়েছে, নতুন ঝর্ণার সন্ধান নিয়েই ফিরবে আজ।
অন্য দলটার নেতা আমি ছিলাম বলাই বাহুল্য। “পাগলামীর একটা সীমা আছে। এটা কি ধরণের কথা! তিন ঘণ্টা ধরে কেবল হাঁটতেই আছি! ঝর্ণা তো দূরে থাক- নালার খবরই নাই! বাথরুমের ঝর্ণার সামনে দাঁড়ায়া সেলফি দিস। এইখানে আর আগানোর কোনো মানে নাই!” বেশ খানিক্ষণ চেঁচালাম। কিন্তু চেঁচানো থামার পর বোকা বোকা মুখে তাকিয়ে দেখলাম আমি ছাড়া আর কেউ নাই। দলে কেবল আমিই দাঁড়িয়ে রয়েছি। বাকিরা পাহাড় বেয়ে নতুন ঝর্ণার খোঁজে নামতে লেগে গেছে! গাইগুই করতে করতে শেষে আর না পেরে রবিনদেরই পিছু নিলাম। যা থাকে কপালে।
খুব খাঁড়া সেই পাহাড় বেয়ে নেমে এলাম নিচে। নামতে নামতে আছাড়ও খেলাম। হাত কাটলো। গালাগাল করতে করতে নিচে নামছি। চারদিকে এতো বেশি গাছ, ঝোপ আর লতা পাতা যে মনে হচ্ছে সুড়ঙ্গ দিয়ে এগোচ্ছি। তবে হ্যাঁ, ঝর্ণার আভাস পাওয়া যাচ্ছে এখন। পাহাড়ের গায়ে মাটি নেই এই এলাকাতে। পাথর আর পাথর। বিশাল বিশাল পাহাড়গুলোকে এখন কেবল বিরাট পাথর ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না! এতো বড় পাথর আমার জীবনে সচোক্ষে দেখিনি আর! ছোট বড় ঝর্ণা ছুটে যাচ্ছে পাহাড় থেকে নামার পথটার দুই প্রান্ত দিয়ে। আর নিচের ছড়াটার দুই ধারে পাহাড়, অন্ধকার রাস্তা প্রায়। রাত নেমে এসেছে যেন! ছোট বড় পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আমি নিচে নেমেই অবাক হয়ে তাকাতে লাগলা। ছড়ার ওপরটা দেখার উপায় নেই। আকাশ দেখা যায় না। গাছপালা সুড়ঙ্গের মত বানিয়ে দিয়েছে পুরোটা! লতা ঝুলছে এখানে সেখানে।
অল্প সামনে এগিয়ে বাঁক ঘুরতেই একে একে তিনটা ঝর্ণা আবিষ্কার করলাম আমরা অবশেষে! আমার ধারণা স্থানীয় লোকদের বাদ দিলে আমাদের দলটাই প্রথম গিয়েছে এখানে। খইয়াছড়া কিংবা সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের ঝর্ণার সঙ্গে এই ঝর্ণা তিনটার বড় পার্থক্য হল এটা সিলেটের হাম হাম ঝর্ণার মত। পুরো পাহাড় জুড়েই ঝর্ণার ব্যাপ্তি। এবং বৃষ্টি শুরু হলে এখানে নির্ঘাত মৃত্যু। বনের ভেতর থেকে বিশাল বিশাল গাছ পালা টেনে দিয়ে এনে ছুড়ে দিতে থাকে এই ঝর্ণা, হরকাবান যাকে বলে। সেই সাথে থেকে থেকে পাথরও পড়তে থাকে ওপর থেকে। বেশ খানিকটা বিপজ্জনক জায়গা। খইয়াছড়া কিংবা সীতাকুণ্ডের অন্যান্য ঝর্ণার সাথে এর একটা পার্থক্য রয়েছে। পানিগুলো খুব পরিষ্কার। স্বচ্ছ। স্পষ্ট নিচটা দেখা যায়। যদিও বেশি দূর আর পরিষ্কার নেই। খানিক পরেই ঘোলাটে হয়ে গেছে। ক্লান্ত ছিলাম প্রায় সবাই’ই। ঝর্ণা দেখা মাত্র গোসল করার জন্য পাগলের মত ছুটলাম। ঝর্ণার ঠাণ্ডা পানি গায়ে পড়তেই সব ক্লান্তি নিমেষেই ধুয়ে নিয়ে গেল। হেলান দিয়েছিলাম পাহাড়ের গায়ে। তখনো খেয়াল করিনি খুব ছোট ছোট কতগুলো পানির পোকা লেগে যাচ্ছে আমাদের গায়ে। তিরবির করে গায়ের ভেতর ঢুকে পড়তেই খেয়াল করলাম। ভীষণ অস্বস্তিকর ব্যাপার। পাহাড়ের গা থেকে সরে এসে ঝর্ণাতে ভিজতে হল এরপর। পোকাগুলো গায়ে লেগে যাচ্ছে। কামড় না দিলেও কেমন যে রি রি একটা অনুভূতি হয়।
আকাশের অবস্থাও বেশি ভাল না দেখে আমরা বেশিক্ষণ অবশ্য থাকিনি। আধাঘণ্টার মত থাকতে পেরেছিলাম। ওপরের দিক থেকে আকাশ গর্জাবার শব্দ আসছে। বৃষ্টি এসে যাবে একটু পরেই। বৃষ্টি এলেই এই ঝর্ণা মৃত্যুপুরীতে বদলে যাবে। সেই সাথে পাহাড় বেয়ে ওপরে ওঠাটা আমাদের জন্য আরো বিপজ্জনক হয়ে পড়বে। কারণ খাড়া পাহাড়ের সেই সরু পথটা নিয়ে নামতে গিয়েই আমি আছাড় খেয়েছি। ওঠার সময় জান বেরিয়ে যাবে যদি পানি থাকে।
তাড়াহুড়ো করে ফিরতে শুরু করলাম এবারে। কিন্তু খাড়া পাহাড় বাইতে গিয়ে সত্যি সত্যি দমে গেলাম। যেভাবে থামছি আর দম নিচ্ছি হাপরের মত- শঙ্কা জাগলো, ঘরে ফিরতে পারবো তো? নাকি বাকি জীবন এই বনে জঙ্গলেই কাটিয়ে দিতে হবে? পেছন থেকে রিয়াদ আমাকে হাপাতে দেখে মুখ গম্ভীর করে বলল, “তোর স্টেমিনা লেভেলে সমস্যা আছে। ইকবাইল্ল্যারে দ্যাখ, ভুঁড়ি নিয়াও পাহাড়ি ছাগলের মত উইঠা গেল। আর তোর এই অবস্থা!”
আমি উত্তর দিতে পারিনি। ঘেমে নেয়ে যাচ্ছি। অবস্থা আসলেই সঙ্গিন। মাথা ঘোরাচ্ছে। সেন্স লেস হয়ে নিচে পড়ে গেলে নিথর বাবা আক্ষরিক অর্থেই নিথরত্ব লাভ করবে! চিকেন গ্রিল-বেয়ার গ্রিল আর হওয়া লাগবে না!
ফার্সীতে প্রবাদ আছে, কবিতার মত-

“স্বজাতির সনে স্বজাতি উড়িবে মিলিত হয়ে
পায়রার সাথে পায়রা শিকরে শিকরে লয়ে!”
“The same with same shall take its flight,
The dove with dove and kite with kite”
“কুনদ্‌ হম্‌-জিন্‌স্‌ ব্‌ হম্‌-জিন্‌স পরওয়াজ
কবুতর্‌ ব্‌ কবুতর বাজ ব্‌ বাজ”


কবুতরের দলে বৃদ্ধ কাক যে ঢুকে গেছে বোধকরি বুঝতে আর কারো বাকি নেই। সেই কাকের আবার ডানায় পালকের সংখ্যাও কম!
পাহাড়ের চুড়ায় ফের ওঠার পর আমি ইহলোক ত্যাগ করে ফেলেছিলাম প্রায়। আজরাইল সাহেব ট্রেন মিস করেছেন দেখে ঠিক সময়ে আসতে পারেননি। নাহলে আমাকে ছাই দিয়ে ধরতে হতো না। আমি সেচ্ছায় ধরা দিয়ে বললাম, “টেক মি টু দ্য হেভেন, হোয়্যার আই বিলং, মাই ওল্ড ফাদারস হোম!”
ওপরে উঠে হাপাতে হাপাতেই মাথার ওপর আকাশ কালো হয়ে বৃষ্টি আর ঝড় শুরু হয়ে গেল। বোধহয় আল্লাহ্‌ নিজেও চাচ্ছিলেন যাতে আমি ঘরে ফিরি। খাবার পানি তেমন ছিল না। গ্লুকোজ বের করে প্যাকেট খুলে মুখে গ্লুকোজের পাউডার আর স্যালাইনের বিস্বাদ পাউডার ঢেলে নিয়ে এক ঢোক পানি দিয়ে গিলে নিলাম ক্যোঁৎ করে। বৃষ্টির মাঝেই উঠে দাঁড়ালাম। মোজা পরে নিলাম দ্রুত হাতে। জোঁক ধরেছিল একটা। রিয়াদ বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ছাড়িয়ে দিল সেটা। সবার মুখ কালো হয়ে গেছে। এই বৃষ্টিতে পাহাড়ের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাবে। পিচ্ছিল পথ দিয়ে কীভাবে ফিরবে? তারওপর এই হীম শিতল বৃষ্টিতে ভিজলে ঠাণ্ডা লাগতে বাধ্য।
কিন্তু এবারে আমাকেই দেখা গেল পাহাড়ি ছাগলের মত দৌড়াচ্ছি চেঁচাতে চেঁচাতে। আমার নিথর শ্রাবণ নামটার আদপ্যেই একটা সার্থকতা রয়েছে। বৃষ্টি আমাকে শক্তি দেয়। বৃষ্টি নামলেই আমি নতুন করে বাঁচতে শুরু করি। সরু এক ফুট চওড়া পাহাড়ি রাস্তা, দুপাশে গভীর খাদ। পড়লে আর উঠতে হবে না এই জীবনে- সেটা দিয়েই কিনা আমি আনন্দের সাথে লাফাতে লাফাতে দৌড়াচ্ছি, হাঁটছি। এমনকি আসার সময় যে রাস্তাগুলো ছিল- সেগুলোও এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বোঝার উপায় নেই যে রাস্তা ছিল। কোমর পানি এখন সেখানে। আমি উৎসাহী মুখে সেখানেই নেমে যাচ্ছি। তরতরিয়ে পার হয়ে অন্য পাড়ে উঠে বাকিদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম হাসিমুখে!
চারিদিকে বৃষ্টির শব্দ। কালো আকাশ। আর নিচে তাকালে দেখা যায় নিচের পাহাড়গুলোর ওপর কুয়াশার মত বৃষ্টি নামা। সেই সাথে বহুদূর থেকে ট্রেনের সাইরেনের শব্দ! আহা! চলেই তো এসেছি!
দ্বিগুণ উদ্যামে ছোটা শুরু করুলাম আমি। আমার আগের অনেকেই চলে গেছে। হয়তো বাজারে গিয়ে খাওয়াও শুরু করে দিয়েছি। আমি ছুটছি। ছুটছি। ছুটছি। আহা! বেঁচে থাকা বুঝি একেই বলে?
এবারে পায়ে মোজা থাকায় পা পিছলালো না একবারও। কিন্তু মোজা জোড়া ইহলোকের মায়া ত্যাগ করলেন আমাকে লোকালয় পর্যন্ত পৌছে দিয়ে। দলছুট হয়ে গেছে অনেকেই। আমি, রিয়াদ, শাহরুখসহ আরো তিনজন রয়েছি কেবল। হাত পা ধোয়া দরকার সবার। সেই সাথে জোঁক ছাড়ানোও জরুরি। কোথায় কোথায় লেগেছে তাও জানি না। আশেপাশে কারো বাড়ীতে টিউবওয়েলও নেই। জিজ্ঞেস করতে জানা গেল যে সবাই ছড়ার পানি দিয়ে কাজ চালায়। তাই এলাকার ঘোলাটে পানির ছড়াটায় নেমে এলাম সবাই। দু ধারে বিস্তির্ণ ধান ক্ষেত আর সবুজ ঘাসের মাঠ। মাঝ দিয়ে ছড়াটা বয়ে যাচ্ছে বয়জ্যেষ্ঠ একটা ভাব নিয়ে। বয়স অনেক যেন ছড়াটার। শান্ত সৌম একটা ভাব রয়েছে। তাকালেই মনে হয় খানিক আগের ক্ষরস্রোতা পাহাড়ী ঝর্ণাগুলোর সম্পর্কে চাচা কিংবা জ্যাঠা লাগে এই ভদ্রলোক।
আমরা যারা এক্সট্রা কাপড় এনেছিলাম- ব্যাগ খুলতে গিয়ে দেখা গেল বৃষ্টির কারণে সবার শুঁকনো কাপড়গুলোও ভিজে গেছে! কি মসিবত!
শেষ মেষ উপায় না দেখে সেই ভেজা কাপড়ই গায়ে দিয়ে ছড়ার ধারে খোলা আকাশের নিচে কাপড় বদলানোর কাজ সারলাম সবাই। আমি অবশ্য বাড়তি কাপড় নেই নি। তাই পাল্টানোর প্রসঙ্গও এলো না। বাকিরা কাপড় বদলালো আর দূর থেকে অন্যান্য বাড়ির মহিলা সদস্যরা ঘোমটা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কাপড় বদলানো দেখতে লাগলো মহাআগ্রহ নিয়ে। উদাম গায়ের ছেলেগুলোকে দেখে হেসে খুন হবার দশা সবার। আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম।
আমরা ছড়াতে যেমন কাদা ধুয়েছি- আমাদের দলের অন্যরা নাকি মসজিদের পুকুরে গোসলও দিয়ে দিয়েছে ততোক্ষণে। আমি মোজা খুলে খালি পায়ে কম্বার্স নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত গোটানো প্যান্ট নিয়ে হাঁটতে লাগলাম বাজারের দিকে। বাকিরাও খানিক দূরত্বে থেকে আসতে লাগলো।
বাজাতে ক্লান্ত শরীরে যতক্ষণে পৌঁছেছি তখন বাজে চারটা দশ। রবিনরা আগেই চলে এসেছিল। টিনের চাল দেয়া একটা হোটেলে বসে ভাত খাচ্ছিল। আমাদের দেখেই হাত নেড়ে ডাক দিল। আমার সাথে তখন কেবল রিয়াদ। বাকিরা পিছিয়ে গেছে বেশ খানিকটা। ঢুকে পড়লাম হোটেলে। পেটে আগুণের মত ক্ষুধা।
“মেরাজ ভাত এণ্ড জালবিতান” নামক বেড়ার হোটেলে ঢুকে দেখি লোকজন বিপুল উৎসাহে রঙিন টিভিতে সিনেমা দেখছেন। টিভির কালার আর কনট্রাস্ট’এর অবস্থা দেখে মনে হল সিডর যাওয়ার সময় এই টিভি হয়ে ঘুরে গেছে ২০০৮’র দিকে। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না- কিন্তু লোকজন বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে সেই সিনেমা দেখছে। আমাদের এত কিছু দেখার সময় নেই। হোটেল চালায় তিনজন। মূল কারীগড় হচ্ছেন মালিক, সম্ভবত মেরাজ তারই না। তার এক ছেলে হচ্ছে হোটেল বয়, আর ক্যাসিয়ার হচ্ছে তার ছোট মেয়ে। দুজনেই ক্লাস ফোর ফাইভে পড়ে। বড় না বেশি। হোটেলের নাম ‘ভাত বিতান’ ঠিক আছে, কিন্তু ‘জাল’ বিতানের অর্থটা ঠিক বুঝতে পারিনি প্রথমে। কারণ জাল বা নেট আশেপাশে ছিল না। পরে রিয়াদ বোঝালো জাল বিতান বলে আসলে ঝাল খাবারের দোকান বুঝিয়েছে। কারণ সেখানে ভাত ছাড়াও পেঁয়াজু, মোগলাই, বেগুনি ছিল। আমরা বসা মাত্র ঠাণ্ডা ভাত আর ঠাণ্ডা তরকারি চলে এলো। গরুর মাংস। আর কিছু নেই দেখে পেঁয়াজু নিলাম, সাথে কাঁচা মরিচ। ভয়ংকর খিদে পেয়েছিল। ভাতের প্লেটে পুরো তরকারির বাটি ঢেলে দিয়ে হাপুসগুপুস করে খাওয়া লাগিয়ে দিলাম। খিদে বেশি ছিল বলে- নাকি আসলেই তরকারিটা খুব ভাল ছিল জানি না, খেতে অসম্ভব ভাল লাগলো। রাজভোগ মনে হচ্ছিল সেই সামান্য খাবার। খুব সস্তায় গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাওয়া হয়ে গেল আমাদের। খেতে খেতেই দলের সর্বশেষ এবং লেট সদস্য শাওন এসে পৌছালো। মহাত্মা গান্ধীর মত সে তার স্যান্ডেল জোড়া দান করে এসেছে গ্রামের সেই বাড়িতে। ভুল করে নিয়ে আসেনি। খালি পায়ে বাঁশের লাঠি হাতে দরবেশের মত চলে এসেছে পাহাড় ঘুরে সিদ্ধ পুরুষ হয়ে। যদিও সিদ্ধপুরুষ সাহেবের গায়ে কেবল লাল পোলোশার্ট আর কালো হাফ প্যান্ট। কিন্তু বিধ্বস্ত দশা দেখে মনে হচ্ছে আসলেই সিদ্ধি লাভ হয়ে গেছে তার!
মেরাজ সাহেবের হোটেলে বসে খাওয়ার সময় হোটেল বয়, তার ছেলে ভীষণ উৎসাহ নিয়ে আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করছিল কোথায় কোথায় গেছি। “ভিত্রে কিন্তু চিকুন চিকুন খুব নিচু ঝর্ণা আছে বাইয়া। গেছিলেন? আমি পৌরাই গিয়া গুইরা আসচি। কুব সুন্দর!” চোখ বড় বড় করে বলল।
আমি কেবল হাসলাম, “পরের বার গেলে তোমাকে নিয়ে যাব। তুমি হবে আমাদের গাইড। এবারে গিয়ে তো সব জায়গা হাতড়ে বেড়িয়েছি!”
“জুঁকে ধরে নাই আপনারে?”
“ধরেছিল। কে জানে, প্যান্টের ভেতরে বসেও হয়তো এখন দুই তিন পেগ মারছে- টের পাচ্ছি না তো!” স্মিত হাসলাম।
এর মাঝেই অমি গলা উঁচিয়ে স্বভাবসূলভ নেতা নেতা গলায় বলে উঠল, “এখন সবাই ট্রাকে উঠবো। ট্রাক না থাকলে বাসের ছাদে। নো আদার অপশন্স!”

হ্যাঁ। ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে আমার নিজের। শেষ বিকেলে একটা ইট ভরা ট্রাকে করে হাদী ফকিরহাট বাজার থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম সবাই। বিশ টাকার আমলকি কিনে নিয়েছিলাম স্যুভনির হিসেবে। ট্রাক চলেছে গরুর গাড়ির গতিতে। দুলতে দুলতে। বব মার্লের “ওওওওওওও গাঞ্জা গাঞ্জা, ওওওওওওও গাঞ্জা গাঞ্জা!” সুর তুলে গাইছিল কয়েকজন। অসম্ভব সুন্দর একটা সন্ধ্যা নামা দেখতে দেখতে ফিরেছি। মাথার ওপর দিয়ে বাদুরের ওড়া উড়ি আর পশ্চিমাকাশে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে সূর্যের বিদায় কিংবা পূর্বের রহস্যময় সীতাকুণ্ডের সেই ঝর্ণার দুনিয়ায় কুয়াশার মত বৃষ্টি নেমে আসাটাকে এক ফ্রেমে দেখেছিলাম। সত্যি আশ্চর্য এই পৃথিবী। আশ্চর্য বেঁচে থাকার অনুভূতি। জয় করার অনুভূতি। নিজের সঙ্কীর্ণতাকে ফুঁৎকার দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার বিচিত্র এক উল্লাস। চারপাশে দিয়ে ছুটে যাওয়া বাস, ট্রাক আর সিএনজির নদী- এর বিপরীতে বারোজনের দলটার গলা ছেড়ে যার যার মত গান গাওয়া আর উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকা- সব যেন কোথাও লেখা হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। দৃশ্যটা যেন আগেও কোথাও দেখেছি আমি। কাল যেন সব ব্যাকওয়ার্ডে গিয়ে রিপ্লে হচ্ছিল। স্মৃতি কিংবা পুনরাবৃতির জন্য গ্রামোফোন নামক মগজের ভেতর প্যাঁচ কাটা হচ্ছিল নতুন করে, নতুন করে, নতুন করে।
সমস্ত শরীরে অসম্ভব ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফেরা হয়েছিল কাল। গোসলের সময় পানি গায়ে ঢালতেই কম করে হলেও নয় দশটা কাটা জায়গা থেকে নিজ নিজ অস্তিত্বের জানান নিয়ে জ্বলে ওঠা শুরু করলো। কখন যে কেটেছে কিছুই টের পাইনি।
কিছু খেয়ে কোনমতে শুয়ে পড়তেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। জবাবদিহিতা নেই জীবনে। অনুযোগ কিংবা অভিযোগের সুর নেই। ঘণ্টায় সময় করে শব্দ করার কোনো প্রয়োজন নেই। সবটাই নিজের ইচ্ছা। ঘুমিয়ে যেতে ক্লান্তি নেই, জেগে থাকাটাই শুধু ক্লান্তি আর বিষণ্নতার। সব কাটিয়ে যে ফিরে এসেছি- ক্ষতি কি? সাম টাইমস সাইলেন্স হ্যাভ দ্য লাউজি ভয়েস টু সে ‘ক্লোজ ইয়োর আইস শাট ডাউন ইয়োর ওয়ার্ল্ডস ইউন্ডো, এন্ড কাম টু কনকিউর মী!’
So do I.

“বিশ্বনাথ বিশ্বাসে বুঝায়ে বলে বাছা।
দুনিয়ামে এসাভি আদমী রহে সাঁচা।।
ভালা বাওয়া কাহে তেরা মৃত্যকাল কাছে।
রাতদিন যৈসা তৈসা সুখ দুঃখ হোয়ে।
জানা গেল বাত বাওয়া জানা গেল বাত।
কাপড়া লেও আওর আও মেরা সাথ।।”
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×