somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু কবিতা

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু কবিতার মিসক্যারেজ হয়ে যায়
লোকাল বাসে করে ঘরে ফিরতে ফিরতে,
সার্কাসের দড়াবাজিকরের মত রড ধরে ঝুলতে ঝুলতে,
অথবা পকেট মারের একাউন্টে অনিচ্ছাকৃত
কিছু ক্রেডিট ট্রান্সফার করে।
আরো কিছু কবিতা আছে, যাদের মিসক্যারেজ হয়
ঠিক সময়ে কাগজ কলমের অভাবে।
অফিসের বড় সাহেবের সামনে বসে
মানথলি সামারির রিপোর্ট দেখাতে গিয়ে
আচমকাই লেবার পেইনে ভোগা শুরু করে কিছু কবিতা।
কবি ভুল ভাল লাগিয়ে দেয় এক্সেলের ঘরে।
কিছু কবিতা আছে মাথা ব্যথা কবিতা।
মগজের ভেতর সরষে ভাঙা ঘানির মত ক্যাঁচক্যাঁচ করতে থাকে।
লাইনগুলো পাক খায় আর বাজে শব্দ করতে থাকে মাথার মাঝে
ব্যথা লাগে, ব্যথা লাগে, ব্যথা লাগে।
অথচ এদের জন্মের কোনো উদ্দেশ্য নেই,
এরা বার বার জন্ম নেয়, দলামোচা করে ছুঁড়ে ফেলা হয়।
পুণর্জন্ম ঘটে। অতীতের কিছু লাইন থাকে, কিছু থাকে না।
এর বাহিরেও কিছু কবিতা রয়েছে,
যাদের মিসক্যারেজ হয় বিবাহিত জীবনে
প্রতিভার ঘূণপোকার সাথে সমরসন্ধি করতে গিয়ে।
এদের নাম অটিস্টিক কবিতা।
জন্মালেও ডিফেক্টে ভরা থাকে আগাগোড়া।
সিম্প্যাথি ছাড়া তেমন কিছু জোটে না এদের কপালে।
একটু অন্যধাঁচের কবিতাও আছে।
যারা জন্মাবার সাথে সাথে সন্ধ্যার অন্ধকার নামা গলির পথ ধরে
ফেরার পথে আততায়ীর হাতে নিহত হতে হয়।
এদের নাম ঘাতক কবিতা। পিতৃঘাতক। মাতৃঘাতক।
এছাড়াও কিছু ক্লাউন কবিতা রয়েছে।
জন্মের সাথে সাথে রাজ্যের বিধাতাদের পাজামার ফিতা ধরে টান দিয়ে বসে!
প্রত্যুত্তরে শ্রীঘরের আলোবাতাস অথবা গুম।
এদের নাম স্যাটায়ার কবিতা। ডায়াপার কবিতাও বলা যায়।
এদের আয়ুষ্কাল খুব বেশি না। তবে
উৎসাহী লোকজন মনে রাখে এদের কথা।
বয়স্ক মানুষদের ডায়াপারের কাহিনী বৃত্তান্ত বর্ণনা করে তো!
কিছু কবিতা হামাগুড়িকাল পর্যন্ত সময় পায়,
এদের গতি বড় ধীর, উদ্দেশ্যহীন এদের যাত্রা।
কিছু কবিতার জন্ম হয় প্রেমিক সম্প্রদায়ের কতিপয় যুবকের হাত ধরে,
এরা চেইন রিএকশনের মত ধর্ম বহন করে।
প্রেমিকার হৃদপিণ্ডের ভেতরে অনন্তকাল ক্রিয়া-বিক্রিয়া করে যায়।
এমনকি ব্রেক আপের পরেও!

আচ্ছা এতসব প্রকারভেদ নিয়ে বুলি কপচে লাভ নেই,
আমরা বরং একটা কবিতার সৃষ্টির কথা শুনি,
শুনে দেখি তার যাত্রার ইতিহাস, পান্থশালার বর্ণনা,
ডাকহরকরার কাহিনী কিংবা প্রাপকের তৃপ্তির কথা।
জনৈক উদ্ভ্রান্ত কবি এবং পিতা
তার কন্যার মৃত্যুতে লিখেছিলেন-
“ভদ্র উপহারের জ্বালায় কন্যাদানের কালে,
ভাবছিনু মেয়ে ছুঁড়েই দিলাম
নেকড়ে দলের পালে।
মাস ঘুরে ফের নাইয়োর ফিরে যে বার এসেছিল
বুঝিনি ভাই মেয়েটা আমার সত্যি হারায় গেল।
ভদ্র উপহারের ভিড়ে একটা কচি মুখে
গ্রহের বিষাদ কেমনে নেমে আসলো সবে ঝুঁকে?
প্রথম যেবার এই কোলেতে জড়ায়ছিলাম ওরে,
কে ভেবেছে এই বাহুতেই যাইবে সে যে মরে?.........”


পণপ্রথার বিরুদ্ধে কবি কলম অথবা স্টেন গান ধরেছেন।
কিন্তু বুলেটরূপী কবিতা যাত্রা আরম্ভ করে প্রথমেই
প্রকাশনার চত্বরে স্যাণ্ডেল ক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন কবির।
এই ধরণের কবিতাকে কিন্তু পিতৃপাদুকার ক্ষয়কারক কবিতাও বলা যায়।
পিতার স্যাণ্ডেলের তলা খেয়ে যায় এরা।
অতঃপর সহৃদ কোনো প্রকাশকের দয়াদ্র প্রাণ সেই কবির
আকুতি শুনতে পান। কিন্তু প্রকাশকের জীবনেও
একই কাহিনী আবর্তনরত। পুত্রের বিবাহে দুহাত মেলে উপঢৌকন গ্রহন,
কন্যার বিবাহে প্রদান। কবিতা বর্তমানে নন এসি বাসের যাত্রী।
প্রেসের নিতান্ত অক্ষর সমন্বয়কারী নিম্নমধ্যবিত্ত লোকটিও
কবিতার মর্ম হতে ক্রোশ ক্রোশ দূর। পান্থশালার পেয়াদা জানে না
কোন মুসাফিরের কোন শূরায় তৃষ্ণা মেটে।
কবিতার যাত্রা চলতে থাকে।

এক সময় ডাকহরকরা নামক বই বিক্রেতার কাছ থেকে প্রাপকের কাছেও
পৌছে যায়, পিতা অথবা কবির আহুতি।
থিয়েটারের মঞ্চে কোনো আবেগী মানুষের কণ্ঠে
উচ্চারিত হতে থাকে ছত্রে ছত্রে আবদ্ধ
প্রচ্ছন্ন-অপ্রচ্ছন দ্রোহ-বিষাদের উপাখ্যান।
মুগ্ধ অডিয়েন্স অন্ধকার থেকে হাততালি দেয়,
বাঃ বাঃ বাঃ বেশ বেশ!
আলো জ্বলে ওঠে এক সময়।
সভা ভঙ্গ হয়।

অডিয়েন্সের জীবনের পিছু নেবো না,
আসুন আমরা কেবল প্রত্যেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
হতাশার সুরে বলি-
“আবার মিসক্যারেজ!”

কিছু কবিতা দীর্ঘ জীবন লাভ করে।
বয়স বাড়ে, পৌঢ় হয়, বৃদ্ধও হয়।
এদের পাঠ্যপুস্তক কবিতা বলি।
বছর বছর ধরে একই বইয়ের পুনর্সংষ্করন হতে হতে
কবিতাগুলোও এক সময় প্রবীণ সরকারী স্কুল মাস্টারের মত দীর্ঘশ্বাস ফেলে
“আর কতবার একই বিষয় পড়াবো? পেনশন নিয়ে একটু বিশ্রাম চাই এখন!”
বহুকাল কোনো নিয়মের ভঙ্গ হয় না।
কোনো অনিয়মের কবিতার জন্ম হয় না।
কোনো অনিয়মের কবিতার দু ছত্র কাঁচা বয়সের ছেলে মেয়েটার হাতে
উঠে আসে না অজানা কোনো অর্থ নিয়ে।
সব কবিতার কেন অর্থ থাকতে হবে?
কিছু কবিতা হোক বিশ্রামের, কিছু হোক বর্তমানে, কিছু ভবিষ্যৎ।
কিছু কবিতায় ক্যান্সার থাকুক, ফিউশন বিক্রিয়া থাকুক।
কেন মিসক্যারেজের কবিতা হবে?
এলিট কবিতার বয়স অনেক হয়েছে,
আমার অথবা তোমার এখন পথশিশু কবিতা দরকার,
ওভার ব্রিজে ওঠার সময় খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরে
দুই হাত তুলে কাবাডি খেলার মত একটাকার জন্য ঘিরে ধরা তিন চার বছরের
ছেলেটার, মেয়েটার কবিতা দরকার।
সিএনজি স্ট্যাণ্ডের সমিতির পান খাওয়া ইসকান্দর আলীর লাঠি হাতে
ড্রাইভারদের দিকে চাঁদা চাইতে তেড়ে আসার কবিতা দরকার।
কবিতা দরকার ভর দুপুরের মাঝ রাস্তায় ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে
খিস্তি খেউর করতে থাকা ট্রাফিক পুলিশটার কবিতা।
দরকার অফিসের বড় সাহেবের রোজ রোজ নতুন গার্ল ফ্রেণ্ড বদলানোর কবিতা।

মানুষ কখনো উদ্দেশ্য নিয়ে জন্ম নেয় না।
বেঁচে থাকার জন্য উদ্দেশ্য তৈরি করে নেয়।
কিছু কবিতার উদ্দেশ্যহীন জন্ম হোক নাহয়।
আর কবিতার হাত পা দেহ থাকুক অবশ্যই।
অক্ষরের বন্যা দিয়ে নিরক্ষরের লাভ কি? খরাই তো!
কিছু কবিতা সিনেমা হোক, কিছু হোক আন্দোলন,
কিছুতে যুদ্ধ হোক, কিছুতে মহামারী,
আর কিছু কবিতা বাতাসে ভাসুক কার্বন মনোক্সাইডের সাথে সখ্যতা করে,
সীসার সঙ্গে বিবাহিত জীবন যাপন করে।
কিছু কবিতার জন্ম হোক মধ্যরাতের ঘরে ফেরার ভালবাসায়।
কিছু কবিতা থাকুক ফি বছরের চেনা বিছানার অর্ধেক অংশের মানুষটার জন্য।
কত ফিকে হয়ে আসে জীবন, দোকানের ওপরে ঝোলানো প্রাণ আপের
রঙ্গিন বিজ্ঞাপনটাও ফিকে হয়ে আসে এক সময়।
কিছু কবিতা তাদের নিয়ে লেখা হোক,
সম্পর্কের দু কথা জানুক মানুষ।
ধীরে ধীরে বৃদ্ধ সূর্যটাও বুঝুক, আর কত? আর কত?
কিছু কবিতার নাহয় জন্ম হোক সূর্যের দুঃখ নিয়ে?
কিছু কবিতার জন্ম হোক একটা সকাল আর বাবলা গাছের পাতায়
বৃদ্ধ সূর্যের স্নেহের ভালোবাসা নিয়ে।

৫ই নভেম্বর, ২০১৪,
সিইপিজেড, চট্টগ্রাম।
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×