গ্রহণের পূর্বেই যেন গ্রহণ লেগেছিল। সম্পর্কটায়। অভ্যাসে।
খুব খুঁটি নাটিও যেন আতস কাঁচের নিচে এসে এসেম্বলিতে দাঁড়িয়েছিল।
আমরা অভিমান করতাম, রাগ করতাম, ঝগড়া করতাম।
তারপর আবার ভালবাসতাম।
আকণ্ঠ ভালবাসায় দম আটকে যাওয়ার অবস্থাও ছিল দৈনন্দিন
খুচরা কথা কাটাকাটিতে।
ঠিক যেন প্রতিটা বিষয় আমার মতোই, তোমার মতোই-
হতেই যদি না পারে, ওয়ান ইলাভেনের চেয়েও বড় কোনো
আন্তর্জাতিক সংবাদ হয়ে যাবে সম্পর্কের সবকিছু।
ব্রেকিং নিউজে চলে আসবে, সব কটা পোর্টালে, জঞ্জালে-
ছাপা হবে- ভুল করে তোমার ব্রাশটায় দাঁত মেজে ফেলেছিলাম!
অথবা সারাঘরময় ছড়িয়ে থাকা তোমার চুলের শবদেহ নিয়ে
বিব্রত মুখে বলে ফেলেছিলাম, “এই ঘর কুন্তলপুর না করে ছাড়বে না?”
অথবা আমার ভীষণ অপছন্দের মুরগী রান্না করায়
এবং একটাও অপশনাল তরকারি না রাখায় আমার অনুযোগ?
বিছানাটার কতখানি তোমার? কোন ভূখন্ড পর্যন্ত আমার সীমারেখা-
এ নিয়ে এক বেলা কথা বন্ধ থাকবে।
অফিসের মহিলা কলিগ কেন অফ টাইমে ফোন দেবে-
হাজারটা কৈফিয়ত! নয়তো না খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া!
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে ভুলে যাওয়ার মতো ৩০২ ধারার বিশাল অপরাধ।
কত অহরহই না আমাদের বিচ্ছেদ হয়।
সকালে। দুপুরে। সন্ধায়। রাতে।
আমরা একজন বৃষ্টি ভালবাসি।
একজন রোদ। মিষ্টি রোদ।
তাকে গ্রহণ করেছিলাম পৃথিবীর ক্যালেন্ডার যখন ফুরিয়া যাচ্ছে,
সূর্য গ্রহণের মতোই গ্রহণ লেগেছিল। কেন লিখে পড়ে দেয়া এই জীবন থেকে
তোমাকে সময় দেয়া হচ্ছে- কারণ দর্শিয়ে উত্তর চেয়েছিলে।
আমি সে উত্তর না দিয়ে কলিগের ফোন কলে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছি।
আমাদের শান্তিচুক্তির দলিলগুলো জড়ো করে থান ইট সাইজের
একটা খসড়া চুক্তিনামা-ফালনামা তৈরি করা সম্ভব।
এতসবের মাঝ দিয়েও দুম করে যেদিন নার্স এসে হুমকি দিয়ে গেল
“কাণ্ড ঘটিয়ে কই থাকেন আপনারা পুরুষ মানুষগুলো?”
আমি তো গভীর অন্ধকার কূয়ায় পড়ে গিয়েছিলাম।
হায়! শেষে আমার সব শান্তিচুক্তির বিষয়ে কি সমস্ত জগত জেনে গেছে?
আমি তোমার চোখেমুখে অভিমান করে দেড় দিন না খেয়ে থাকার ক্লান্তি দেখেছি।
সেই ক্লান্তি ছাপিয়ে বড় বড় চোখে বললে,
“বিছানাটা বেশি ছোট হয়ে যাবে! দোলনা রাখা যাবে না।”
আমি সূর্য গ্রহণ থেকে রৌদ্রলোকে বেরিয়ে এলাম সহসা।
বোকার মতো মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
“তোমার সঙ্গে এতকাল যখন এডজাস্ট করেছি। এটাও পারব!”
রূপকথার কোনো পৃষ্ঠায় আছি যেন। পাতা উল্টাতে ভুলে গেছি।
ফিনাইলের কড়া গন্ধ, টাইলসের ফ্লোরে খট খট জুতার আওয়াজ
এত মাঝে সহসা চমকে ওঠা আমি। এত ভালবাসা বাসী কবে ছিল আমাদের?
নাকি যুদ্ধ, সন্ধিচুক্তির মাঝের কোনো এক দ্বিপাক্ষিয় বৈঠকের
ডেজার্ট উৎসবের আমাদের পা হড়কানো?
শত্রুটাকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এসে রিক্সা? ন-না না! ইয়েলো ক্যাব।
“সেকি! তুমি ঠিক আছো তো?” তোমার চোখে প্রকাশ্য স্বংশয় দেখা দিল।
আমি ইতস্তত জড় পদার্থের মতো নিষ্প্রভ।
বৃষ্টি আচমকা হলে মানুষ অবাক হয়। আনন্দিত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:১৪