somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি Hotel Rwanda - এক অসাধারণ বীরের সাহসিকতা এবং সত্য ঘটনা।

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল রাতেই এই মুভিটি দেখেছি। কি কারণে জানি আগে দেখা হয়নি। দেখা শেষ করেই বুঝে ফেলেছি আমার জীবনে দেখা সেরা একটি মুভি আজ আমি দেখলাম। সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত এক অসাধারণ মুভি দেখলাম। জানতে পারলাম সংঘটিত এক ভয়াবহ গণহত্যা এবং একইসাথে এক অসাধারণ বীর মানুষের কথা। পরে দেখি এতক্ষণ যা দেখলাম তা সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। পরে খুজে দেখলাম সব সত্যি। মুভিটির নাম ‘Hotel Rwanda’। মুক্তি পেয়েছিলো 2004সালে। পরিচালক ছিলেন Terry George। মুক্তি পাওয়ার পরেই সবদিক থেকে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলো এই মুভি। এমনকি ৩টি বিভাগে অস্কার নমিনেশন পেয়েছিলো। প্রথমে মুভিটির ছোট বর্ণনা দেই.......

মুভিটির সময় 1994 সালের। আফ্রিকার ছোট একটি দেশ Rwanda। দেশটির মানুষদের উপর যখন চরম দু:সময় এসে হাজির হয়েছিলো। দেশের মানুষদের মাঝে ২টি সম্প্রদায় ছিলো। একটি হলো Hutu আর অপরটি হলো Tutsi। এইসময় ক্ষমতাশালী Hutu সম্প্রদায়ের মানুষ ও আর্মীরা ‘বিশ্বাসঘাতক’ নাম দিয়ে Tutsiদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। নির্বিদ্ধায় হত্যা করতে থাকে তাদেরকে।

Paul Rusesabagina একজন মধ্যবয়স্ক লোক। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। ৪তারকা হোটেল Sabena Hôtel des Mille Collines এ সে Assistance manager পদে কাজ করতো। যেদিন এই নির্মম গণহত্যা শুরু হলো তার পরেরদিনই সে নিজের জীবন ঝুকি নিয়ে Hutu army দের কাছে থেকে নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীদের উদ্ধার করে হোটেলে নিয়ে আসে। জাতিসংঘ এর সেনাদের দিয়ে পাহারা দেয়া ছিলো হোটেলটিতে। তাই কেউ তখন এখানে হামলা করার সাহস পায়নি।

Paul এর ধারণা ছিলো ২/৩দিনের মাঝে বিদেশী বন্ধুরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। সবাইকে উদ্ধার করবে। কিন্তু তারা ছিলো কালো আর অসহায় এক জাতি। ক্ষমতাশীল বিদেশী রাষ্ট্রদের কাছে যাদের কোন মূল্যই নেই। তাই আমেরিকা, ব্রিটেন কোন দেশই এখানে সাহায্য করতে আসে না। তাই Paul এর ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে কয়েকদিন পর বিদেশী সেনারা এসে তাদের নিজেদের লোকদের হোটেল থেকে নিয়ে যায়। পিছনে সেই হোটেলটিতে ফেলে যায় ১২৬৮জন মানুষদেরকে। যাদের হাতে এখন আর বেশি সময় নেই। যেকোন সময় হত্যাকারীরা এখানে আক্রমণ করে সবাইকে মেরে শেষ করে ফেলবে।

কিন্তু অসীম সাহসী Paul তাতে দমে যায় না। সে নানা জায়গায় ফোন করে এই চরম বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার চেষ্টা করতে থাকে। জীবনের ঝুকি নিয়ে সবার জন্য খাবার কিনতে বাইরে চলে যায়। আর্মির লোকজন যখন হোটেলের সবার আসল পরিচয় জানতে গেষ্ট লিস্ট দেখতে চায় তখন ভুল তথ্য তুলে দেয় তাদের হাতে। আর্মির জেনারেলের সাথে ছিলো Paul এর কিছুটা ভালো সম্পর্ক। জেনারেলকে নানা মিথ্যে আশ্বাস ও ভয় দিয়ে সে বেশ কয়েকবার হোটেলের সবার জীবন বাচায়। এমনকি সে যখন পরিবার নিয়ে অন্য দেশে চলে যাবার সুযোগ পায় এইসব অসহায় মানুষদের কথা চিন্তা করে সে জীবনের ঝুকি থাকা সত্ত্বেও সে তাদের সাথে থেকে যায়। অপেক্ষা শুধু কয়েকটি দিনের জন্য। তাদের সবাইকে নিরাপদে নিয়ে যেতে জাতিসংঘের সেনারা আসবে। শুধুমাত্র সেই দিনটির জন্য কোনমতে বেচে থাকা। কিন্তু প্রতিটি মিনিট চরম আতঙ্কে কাটছে সবার। হত্যাকারী সবার ধারণা এই হোটেলে বিশ্বাসঘাতকরা লুকিয়ে আছে। যেকোন সময় সবাইকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করবে এইসব হত্যাকারী পশুরা। তাহলে কি হবে এই ১২৬৮জন নিরীহ মানুষদের পরিণতি ????

জীবনের সেরা একটি মুভি খুব মনোযোগ দিয়ে ২ঘন্টা সময় নিয়ে দেখলাম। সেই সময়ের অস্হির সেই পরিস্হিতি....জীবন-মৃত্যুর মাঝে চরম সেই টেনশনের পুরোটা পরিচালক এই মুভিতে নিয়ে আসতে পেরেছেন। যতটুকু সময় মুভিটি দেখছিলাম পুরোটা সময় এক আতঙ্ক...এক চরম টেনশন কাজ করছিলো মনে। এই বুঝি হত্যার জন্য সবার উপর হামলা করা হচ্ছে!!! রাস্তায় যখন সবার উপর গাড়ির উপর হামলা করা হয় এবং হোটেলে যখন হামলা হয় সেই সময়ে আমার মনের অবস্হা বলে বোঝাতে পারবো না। Paul Rusesabagina এর চরিত্রে Don Cheadle অসাধারণ এবং মনে রাখার মতো অভিনয় করে গেছেন। মুভিটি যারা এখনো দেখেননি তারা বুঝতেই পারছেন না কেমন অসাধারণ একটি মুভি মিস করে ফেলেছেন। দেখে ফেলুন তাড়াতাড়ি।
মুভিটির IMDB রেটিং হলো 8.3/10। কিন্তু আমার পারসোনাল রেটিং হলো 9/10 ।


এই লোকটির নাম হলো Paul Rusesabagina । উনিই হলেন সেই অসাধারণ বীর...চরম সাহসী....অন্যমনের সেই মানুষটি। তিনি নিজে ছিলেন Hutu সম্প্রদায়ের। তার কোন বিপদই ছিলো না। আর্মির জেনারেলের সাথে তার ছিলো ভালো সম্পর্ক। খুব সহজেই নিজে এবং পরিবারকে নিয়ে তিনি নিরাপদে সরে যেতে পারতেন। কিন্তু নিজের জীবনের মায়া সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করে চরম সাহসী এই মানুষটি ১২৬৮জন মানুষের জীবন বাচিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে এই কথা। কিন্তু একবিন্দু মিথ্যে নেই এই কথার মাঝে। এই লোকটির মতো সাহসী মানুষদের জন্যই আমাদের এই পৃথিবী আজো স্বপ্ন দেখে। মূলত উনার জীবন এবং চরম সাহসী ও অসাধারণ সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই মুভিটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। মুভিটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনার বর্ণনায় নির্মিত। কিন্তু বাস্তব ঘটনার সাথে মুভিটির ৩টি ঘটনার পরিবর্তন হয়েছিলো। সেগুলো হলো.....

১. Paul যখন ভিসা পেয়েও হোটেলের অসহায় মানুষদের ছেড়ে না গিয়ে তার পরিবারকে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন তার স্ত্রী তার এই সিদ্ধান্তে বিন্দুমাত্র রাগ করেনি। বরং মন খারাপ করেছিলো। আর Paul থেকে যাবার এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেয়নি। আগেরদিন রাতে নিজের স্ত্রীর সাথে আলাপ করেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
২. Paul এবং তার পরিবার Hôtel des Mille Collines থেকে পালানোর পর সাথে সাথে নয়। প্রায় ২বছর পর দেশ ছেড়েছিলো।
৩. মুভিটি দেখে সত্যিকারের Paul বলেছিলেন বাস্তবে যে গণহত্যা আর নিশংসতা হয়েছিলো তার অনেক কম মুভিতে দেখানো হয়েছে এবং তা না দেখিয়ে ভালো হয়েছে। কারণ এই চরম নিশংসতা অনেক মানুষ সহ্য করতে পারবেন না।


এরা হলো সেই নরপশু। যাদের নির্দেশ ও অংশগ্রহনে সেই সময়ে প্রায় ১০,০০,০০০ লক্ষ নিরীহ..অসহায় মানুষদের জীবন হারাতে হয়েছিলো। এই সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০%!!! এরা এখন আছে বিচারের কাঠগড়ায়। উপযুক্ত ও কঠোর বিচার চাই এদের।

মুভিটি দেখার পর একটি ব্যাপার নিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। যারা দেখেছেন তারা এবং যারা এখনো দেখেননি তারা দেখলেই বলতে পারবেন এই মুভির মূল শক্তি ছিলো Paul এই সাহসী চরিত্র. গল্প, চিত্রনাট্য আর পরিচালনা। সম্মূখযুদ্ধের দৃশ্য একেবারেই নেই এই মুভিতে। আর তাই কোন স্পেশাল/ভিজ্যুয়াল এফেক্ট এর কঠিন ব্যবহার এই মুভিতে একেবারেই নেই। আমাদের নিজেদের রয়েছে ১৯৭১সালের এক গৌরবময় ইতিহাস। আর আছে Paul এর মতো সেই সময়ের অসাধারণ অনেক বীরের গল্প ছড়িয়ে। আমাদের হাতে আছে ভালো অভিনেতা, পরিচালক, স্ক্রিপরাইটার সবাই। আমার মতে সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এরকম একটি মুভি আমরা খুব খুব সহজেই নির্মাণ করতে পারতাম। সবাই বাজেট আর টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো নিয়ে আমাদের অসহায়ত্ব এর কথা বলে। তাদেরকে বলছি আগে এই মুভিটি দেখুন। তারপর কথা বলতে আসুন। এমন কি আছে এই মুভিতে যা আমরা পারবো না সেটা আমাকে বোঝান। তাহলে আজ ৪০বছর পরও আমরা এরকম একটি অসাধারণ মুভি কেন আজো নির্মাণ করতে পারছি না ? কেন পারছি না বিশ্ববাসীকে দেখানোর মতো আর গর্ব করার মতো একটি মুভি নির্মাণ করতে ??

তরতাজা টরেন্ট ও মিডিয়াফায়ার ডাউনলোড লিংক......
টরেন্ট লিংক
টরেন্ট

মিডিয়াফায়ার....... Password: mediafire4u.com
পার্ট ১ পার্ট ২ পার্ট ৩ পার্ট ৪ পার্ট ৫
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৫
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×