somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

La Haine : তিনজন বন্ধু, ১৯ ঘন্টা এবং এক অস্থির সময়ের মুভি

১০ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুভির নাম La Haine। যার অর্থ করলে দাড়ায় Hate বা ঘৃণা। এই নামটিই কেন জানি আমাকে মুভিটি দেখার জন্য বাধ্য করলো। ফরাসী মুভি La Haine। মুভিটির চিত্রনাট্য এবং পরিচালনায় ছিলেন Mathieu Kassovitz। মুভিটি দেখার পর আমার মনে প্রথম যে প্রশ্ন আসলো সেটি হলো "পরিচালক এবং মুভিটির সংশ্লিষ্ট সবাই কি শুটিংয়ের সময় বুঝতে পেরেছিলেন যে কি এক অসাধারণ সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন তারা!"। মুভিটি দেখা শেষেই একমিনিট সময় শেষ না করেই লিখতে বসে গেলাম। আপনাদের বলে বুঝাতে পারবো না যে আমি কি পরিমাণ মুগ্ধ এবং অবাক হয়ে গেছি মুভিটি দেখে। মুগ্ধ হয়েছি এরকম একটি অসাধারণ মানের মুভি দেখে এবং অবাক হয়েছি কারণ মুভির শুরুতে আমার ধারণাতেই ছিলো না যে এরকম একটা মুভি আজকে দেখা হবে।

মুভিটার জেনার বলতে গেলে বলতে হবে সাসপেন্স এবং ড্রামার এক অপূর্ব মিশ্রণ। মজার একটা ব্যাপার হলো ১৯৯৫সালে মুক্তি পেলেও কি কারণে জানি পরিচালক সম্পূর্ণ সাদাকালো করে মুভিটি নির্মাণ করেন। আমার কাছে এটি দারুণ লেগেছিলো। সাদাকালো হবার কারণেই নাকি বলতে পারছি না মুভির পটভূমির সেই অস্থিরতা কেন জানি দেখার সময় আমার মনের মাঝেও চলে এসেছিলো। আপনারা সবাই আশা করি মার্টিন স্করসিসের অমর সৃষ্টি রবার্ট ডি নিরো অভিনীত Taxi Driver মুভিটি দেখেছেন। আমেরিকার একটি অস্থির সময়ের চিত্ররূপ ছিলো সেখানে। Taxi Driver মুভিটির সাথে এই La Haine মুভির হালকা মিল পেতেও পারেন। কারণ এই মুভিটিও তৎকালীন ফ্রান্সের এক অস্থির এবং ভয়ংকর সময়কে ঘিরে নির্মিত।

এবার আসি মুভিটির ব্যাপারে। পুরো মুভিটি ৩জন বন্ধুর একদিনের ১৯ঘন্টার চিত্ররূপ। আগের রাতেই ফ্রান্সে ভয়াবহ এক জাতিগত দাংগা হয়ে গেছে। আইন বলে এখন আর সেখানে কিছু নেই। যে যার মতো আচরণ করে যাচ্ছে। পরেরদিন সকালবেলা। তিন ধর্মের তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এক হয়। এরা হলো পাগলাটে এবং রগচটা Vince, ঠান্ডা মাথার Hubert এবং একেবারেই শিশুসুলভ চরিত্রের Said। ঘটনাক্রমে এদের হাতে একটি পিস্তল চলে আসে। পিস্তলটি হাতে নিয়ে তাদের মাঝে ঘৃণা, প্রতিশোধ এবং ভয়ের এর অদ্ভূত অনুভূতি চলে আসে। যাইহোক সেটি নিয়ে তারা বের হয়ে পড়ে। শুরু হয় ১৯ঘন্টার সেই যাত্রা। এই যাত্রায় আড্ডাবাজী, হাইজ্যাক, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সবই ছিলো। অদ্ভূত এক সময়ের এক অদ্ভূত সেতুবন্ধন। বাকিটা আর বলা উচিত হবে না আমার। দেখে জেনে নিন।

সাসপেন্স কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম মুভিটি দেখতে বসে। এক অজানা টেনশন আমার নিজেরই মনের মাঝে ভর করে বসেছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো এই হয়তো কোন অজানা বিপদ নেমে আসছে তাদের উপর। আগে থেকে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তিনবন্ধুর সাথে আমি নিজেও যেন চলে গিয়েছিলাম সেই অস্থির সময়ে। তার উপর পরিচালক মুভিটি সম্পূর্ণ সাদাকালো করে নির্মান করেছেন। কেমন যেন রহস্যময় এবং অদ্ভূত লাগছিলো ব্যাপারটা। ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না সেটা। আপনারা যখন দেখবেন তখনই বুঝে যাবেন।

টেনশনে ভরপুর মুভির একটা দৃশ্যের কথা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছি না।

"তিনবন্ধু প্যারিসের এক জায়গায় গভীররাতে বসে টিভি দেখছে। হঠাৎ করেই তারা খুব বড় একটা দু:সংবাদ পায়। শোকের বহি:প্রকাশ দেখাতে না দেখাতে হঠাৎ করে খেয়াল করে দেখে তাদের পাগলাটে বন্ধু Vince পিস্তলসহ গায়েব!!! দৌড় দেয় দুবন্ধু তাকে খুজতে। পাগলটা না জানি আবার কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে!! হঠাৎ Vince কে তারা একজন পুলিশের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে!! অজানা আতংকে তাদের বুক কেপে উঠে!! Vince এর হাতে...........!!!!"

মুভিটি দেখা শেষ হবার কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়েই বসেছিলাম। বিশাল একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম যেটা হজম হচ্ছিলো না। এরকম করে যে একটা ধাক্কা খাবো সেটা কল্পনাতেই ছিলো না। এই পরিচালকের আগের কোন মুভি দেখা হয়নি। কিন্তু উনার এই মুভিটি দেখে আমি উনার ভক্ত হয়ে গেলাম। যেরকম চিত্রনাট্য সেরকম পরিচালনা। মাইন্ডব্লোয়িং!! মুভিটির নাম ঘৃণা শব্দটিকে সার্থক করার জন্য পরিচালক যেন উঠে পড়ে লেগে গিয়েছিলেন। চারিদিকে ঘৃণার ছড়াছড়ি।

সাধারণ মানুষ, দাঙ্গাবাজ, পুলিশ এবং সমাজ ব্যবস্থা সবজায়গায় শুধু ঘৃণার ছড়াছড়ি। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। বেশ ভয়ংকরভাবেই বলা যায় পরিচালকের মুন্সিয়ানায় ফুটে উঠেছে সেই সময়ের ভয়ানক অস্থিরতার চিত্র। আর সবশেষে বলতে হবে তিনবন্ধুর মাঝে Vince এবং Said এর অভিনয়ের কথা। এরকম বাস্তবসম্মত ক্লাসিক অভিনয় সচরাচর দেখা যায় না। মুভিতে তাদের দেখে কে বলবে যে তারা অভিনয় করছে !!! মনে হচ্ছিলো তারা যেন তাদের বাস্তব জীবনের একটি দিনকে দেখিয়ে যাচ্ছে। ব্রাভো ম্যান ব্রাভো।

এবার এই মুভির পিছনের কিছু ঘটনা তুলে ধরছি। মুভিটির পরিচালক এই মুভিটি কিন্তু বলা যায় নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই নির্মাণ করেছেন। তিনি সেই সময়ের দাঙ্গায় নিজেই জড়িত ছিলেন বলে শোনা যায়। এমনকি মুভিটি যখন নির্মাণ করা হচ্ছিলো তখনও শহরে দাঙ্গা চলছে!! তাই অনেক সত্যিকারের ফুটেজ নেয়া সম্ভব হয়েছিলো। মুভির সব সদস্যরা তিনমাসের জন্য চলমান দাঙ্গার সেই শহরেই অবস্থান করেছিলেন। এমনকি পরিচালকের কাছে মুভিটি নির্মাণের জন্য একেবারেই টাকা ছিলো না। তাই সাধারণ একটা handheld camera দিয়ে মুভিটির শুটিং শেষ করা হয়। এজন্যই আমি বলছিলাম মুভিটি কেন জানি আমার কাছে অতিরিক্ত বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো যেন আমি মুভি দেখছি না। চোখের সামনে দাড়িয়ে সত্য কোন ঘটনা দেখছি।

মুভিটির রেটিং আমার কাছে ৯.৫/১০। .৫ এমনিতেই কাটা দিছি। কোন কারণ নাই। একটা বলে শেষ করলাম মুভিটি সবার অবশ্যই এবং অবশ্যই দেখা উচিত। এই মুভিটি মিস করাটা একেবারেই উচিত হবে না।

* রিলিজ পাবার পর এই মুভি প্রচুর পুরস্কার পায় এবং সমালোচকদের প্রসংশা পায়।
** রিভিউ সাইট রটেনটমেটোস এর ১৪জন ক্রিটিক মুভিটিকে ১০০% রেটিং দিয়েছেন।
*** মুভিটি নিয়ে বিখ্যাত The Times ম্যাগাজিনের মন্তব্য "One of the most blisteringly effective pieces of urban cinema ever made."
**** ২০১০সালে প্রকাশিত Empire ম্যাগাজিনের The 100 Best Films Of World Cinema তালিকায় La Haine মুভিটি ৩২ নম্বর অবস্থানে রয়েছে।

মুভিটির টরেন্ট ডাউনলোড লিংক। আমি নিজে এখান থেকে নামিয়ে আজকে দেখেছি। তাই সবাইকে বলছি এখান থেকেই নামাতে। কারণ মুভিটির ভাষা কিন্তু ফরাসী। আর এই টরেন্ট লিংকে ইংলিশ সাবটাইটেলসহ দেয়া আছে। তাই কোন সমস্যাই হবে না দেখতে।
টরেন্ট ডাউনলোড লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৫
৪৯টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×