প্রথমেই বলে নিই আমি কোন দার্শনিক বা সমাজতাত্বিক বা সাইকোলজিস্ট না যে জ্ঞানগর্ভ কোন লেখা লিখতে যাচ্ছি। আমার এই লেখাটা পুরোটাই আমার অনুভুতি খেকে লেখা, আমার কাছে যা মনে হয়েছে তাই লিখেছি্ ভুল হতে পারে নাও হতে পারে। এটা শুধুই মতামত কোন সিদ্ধান্ত না। অতএব জগতের সকল প্রতিষ্ঠিত সত্য এই লেখার কাছ থেকে নিরাপদ।
এবার কথা না ঘুরিয়ে আসল কথায় আসা যাক। পৃথিবীর আদিমতম চাহিদা কি? খাদ্য?বস্ত্র? মনে হয় না। আদি পিতা আদম(আঃ)কে সৃষ্টি করে তার জন্যে প্রথমে খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা হয়েছিলো কিনা আমার জানা নেই তবে যেটি করা হয়েছিলো সেটি হলো তার জন্যে সঙ্গী হিসেবে হাওয়া(আঃ)কে তৈরী করা হয়েছিলো। সেইদিক থেকে বলা যায় মানুষের প্রথম চাহিদা হয়ত ছিলো সঙ্গীর। অন্যদিকে চিন্তা করলে বলা যায় মানব জাতিকে স্রষ্টা প্রথম যে উপহারটি দিয়েছিলেন তা হলো সঙ্গী। আদম হাওয়া জন্মের পর একজন আরেকজনের সঙ্গী খুজে পেলেও আমাদের পিতা মাতারা এই ব্যাপারে একেবারে উদাসীন। কোন ব্যাক্তির সন্তার জন্মগ্রহনের পর সেই ব্যাক্তিটি কোনদিন ই হাসপাতাল খুজে ওইদিনে জন্ম নেয়া এমন কোন শিশুকে খোজেন না তার সন্তানের সঙ্গী রুপে! এবং সেইদিন তো দুরের কথা সন্তানের জন্যে সঙ্গী খোজার প্রয়োজনীয়তা অবিভাবকেরা অনুভব করেন সন্তানের বয়স পচিশ পেরোনোর পর। একারনে অনেকেই নিজ উদ্যোগে সঙ্গী খুজে নেয়। আফসোস মানব জাতি এখনও তার সৃস্টির প্রথম শিক্ষায় দিক্ষিত হতে পারলোনা।
যাই হোক, এবার আসল কথায় আসি। সঙ্গী খোজা। যেহেতু আমি একজন পুরুষ সেহেতু একজন পুরুষের দৃষ্টি ভঙ্গী আমার জন্যে বিষয়টা ব্যাখ্যা বেশী সহজ হবে।
জ্ঞান বুদ্ধি হবার পর প্রেমে পড়ে না এমন স্বাভাবিক পুরুষ এখনও জন্ম গ্রহন করেনি। শুধু তাই নয় একজন গড় পুরুষ তার সমগ্র জীবনে প্রেম ভালোবাসা এবং সঙ্গী খোজার পেছনে যত শ্রম ও মেধা খরচ করে তা সম্ভবত স্নায়ু-যুদ্ধ চলাকালে আমেরিকা ও রাশিয়ার কর্তাব্যাক্তিরাও এত মেধা খরচ করতেন না। তাই সেই বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই স্নাতক কোর্স চালু করতে পারে। আমি তার কতটুকুই বা জানি।
আজকে এখানে আমি আমার দেখা কয়েকটি ছোট অভিজ্ঞতা দিয়ে পুরুষ ও নারী সম্পর্কের একটি ছোট ক্ষেত্র আলোচনা করার চেষ্টা করব।
একবার আমার এক বড় ভাই আমাকে বলেছিলেন, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে কথনই শুধু ভালো বন্ধু হতে পারে না।
আমি তার কথার তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম। কারন আমি নিজেই দেখেছি একটা ছেলে আরেকটা মেয়ের সাথে কি সুন্দর ভালো বন্ধুত্ব পেতে আছে। আমার নিজেরও এমন কিছু ভালো বন্ধু(বান্ধবী) আছে।
তবে ভাইয়ার কথা একবারেই ফেলে দেয়া যায় না। যদি ধরি বন্ধুত্বের সম্পর্কে ছেলেমেয়ে উভয়েই যথেষ্ট সৎ তবুও এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সত্য যে একটা ছেলে একটা মেয়ে যদি একে অপরের খুব ভালো বন্ধু হয় এবং যদি একই সময়ে তাদের অন্য কোন বন্ধু না থাকে তাহলে তাদের একে অপরের প্রতি একটা নির্ভরশীলতার যায়গা তৈরী হয়। যেটা তাদের উভয়কেই "বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু একটা" অবস্থায় নিয়ে যায়। এটা তো দুদিক থেকেই হয়।
মুশকিলটা হয় যখন একটা ছেলে তার কোন বান্ধবীর সাথে একপাক্ষিক প্রেমে আবদ্ধ হয়!
আমার এক বান্ধবী আমাকে প্রায়ই বলে একটা মেয়ে নাকি বুঝতে পারে খুব সহজেই কোন ছেলে তাকে কিভাবে ট্রিট করছে। সেই ছেলেটা কি তাকে শুধু বন্ধু ভাবে নাকি অন্যকিছুও এর সাথে আছে?
আমি এটা কতটা সত্য জানিনা।
তবে মেয়েরা প্রায়ই একটা নালিশ করে ছেলেদের সম্পর্কে যে কোন ছেলে কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করার অল্প কয়েকদিনেই কেন প্রোপজ করে বসে?? ছেলেরা কি শুধু বন্ধুই থাকতে পারে না? ওরা কেন সব সময় খালি প্রেম প্রেম করে কেন?
আমি হেসে প্রায়ই বলি, তাতে অসুবিধা কি? এটা আদি মানব আদম থেকে হয়ে আসছে....সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা সকলের জন্যেই রয়েছে।
তবে এটা সত্য পুরুসদের একটা বড় অংশ সকল অধিকাংশ নারীকে নিয়েই এই এক চিন্তাই করে। এটা কেউ বিকৃতিও বলতে পারে প্রাকৃতিক ও বলতে পারে। আমি আগেই বলেছি আমি কোন বিশেষজ্ঞ নই যে সিদ্ধান্ত দিবো।
এবং বান্ধবীকে প্রপোজ করা যে অল্পকয়েকদিনের বন্ধুত্বে ঘটে তা কিন্তু নয়। অনেকদিনের বন্ধুত্বেও ঘটে। এমনও আমি দেখেছি অনেকদিন ধরে চলে আসা একটা চমৎকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক শেষ হয় প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে। আবার কিছু কিছু সফলতার সাথে দৌর্দন্ড দাপটে পূর্নতা পায়।
এখন আসা যাক আমি কেন এই লেখার শিরোনাম এমন দিলাম।
রবীন্দ্রনাথ দাদু বলে গিয়েছেন, নারী হৃদয় ভগবান বোঝে না আমি তো কোন ছাড়।
রবীন্দ্রনাথ ছাড় হলে আমরা তো ছাড়পোকা গোত্রের।
তাই স্বাভাবিক পুরুষ নারী হৃদয়ের অলি গলিতে হারিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু মেয়েরা কি বোঝে তার অতি ভালো বন্ধুটি তাকে কিভাবে দেখছে?
রিনিঝিনি কন্ঠের আবেগময়ী হাসি....টেলিফোনে প্রেমালাপ(প্রায়)...[যাকে আমরা বলি ফাইজলামি করে বলছি আর কি]
কিংবা দুজনে প্রেমস্থান সমুহে শিক্ষাসফরে যাওয়া!!.......অথবা দুজনে মিলে এমন এমন কাজ করা যা দেখে পথচারী আমজনতা পার্থক্য করতে পারে এরা কি?
অথবা বিশেষ বিশেষ আব্দার পালন কারী কথা গুলো....তুমি না খেলে কিন্তু আমিও খাবনা বলে দিলাম মার্কা কেয়ারিং .....
এসব যখন চলে কোন বন্ধুত্বে তখন সেই বন্ধু-এবং বান্ধবীরা ওয়াকিবহাল থাকেন তো তাদের মনের গহীনে অন্য কিছু বাসা বাধছে কিনা?
আমি কিছু ছেলেকে দেখেছি যারা এই অতি বন্ধুতার ফাদ তৈরী করে মেয়েদের সাথে স্রেফ মজা লুটে
এরকম মেয়েদেরও দেখেছি.....
তবে বন্ধুত্বের লেভেল এর পরিমান আমার উপরে বর্নিত স্তরের আগেই অনেক মেয়ের অজান্তে তার ভালো বন্ধুটি তার প্রেমে পড়ে যায়।
মেয়েটি যেমন ইচ্ছাকৃত এই কাজটি করেনি তেমনি ছেলেটিই নিজের অজান্তেই তাকে ভালোবাসে
দুদিক থেকে অনুভুতি এক না হওয়ায় ভেঙ্গে যায় একটা চমৎকার বন্ধুত্বে সম্পর্ক
যদিও এই ক্ষেত্রে দুজনকেই সাবধান হওয়া উচিৎ তবুও আমি মনে করি একটা মেয়ে একটু চাইলেই এই ধরনের বিপদ থেকে বন্ধুত্বটাকে রক্ষ করতে পারে।
কেননা একটা ছেলের পক্ষে একটা মেয়ে তাকে ভালোবাসে কিনা তা বোঝাটা খানিকটা কঠিন
তাই মেয়েটি যদি খেয়াল রাখে তাহলে অপেক্ষাকৃত সহজে বোঝা যায় তার ভালো বন্ধুটি তাকে ভালোবেসে ফেলছে কিনা
এবং সে যদি তার ভালো বন্ধুটিকে নিয়ে ওই রকমের কোন চিন্তায় না থাকে তাহলে একটু সাবধানী আর কৌশুলী হলেই বোধহয় ছেলেটির অনুভুতি গুলোকে বিপদসীমার নীচে রাখা যায়
তবে যদি তেমন কোন সমস্যা না থাকে তাহলে আমি মনে করি একজন ভালো বন্ধুই সবচেয়ে ভালো সঙ্গী হতে পারে....যে তোমার চলার পথে হোচোট খেলে তোমার হাত ধরে দাড়াতে সাহায্য করবে......
তবে যারা তপুর মত গান....মেয়ে তুমি এখনও আমায় বন্ধু ভাবো কি? তাদের উদ্দেশ্যে বলি ভালোবাসা অপরাধ না....জীবনে যতবার যতজনকে ভালোবেসেছেন সবকটি ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা করুন...এবং ভালোবাসার মানুষটিকে শ্রদ্ধা করুন......সে আপনাকে ভালোবাসুক চাই না বাসুক.....মনকে শান্তনা দিন...."যেটা ছিলো না ছিলো না সেটা না পাওয়াই থাক.....সব পেলে নষ্ট জীবন" বলে........
ভালো থাকুন ভালো বাসুন