লাল নীল বেগুনী সহ নাম না জানা কত রঙের যে ড্রেস কিন্তু পছন্দসই সাদা রঙের কোন ড্রেস নাই। দোকানীকে কারণ জিজ্ঞেস করাতে বলল এই রঙের মাল চলে কম তাই দোকানে রাখি না। তারপরও আমি এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরি। মন বলে যদি পরের দোকানে পেয়ে যাই। ঘুরতে ঘুরতে ঠিকই একটা দোকান পেয়ে যাই। নাম সাদা কালো। খুঁজতে খুঁজতে পছন্দসই একটা ড্রেসও পেয়ে যাই। সাদা জমিনে সাদা সুতোয় হাতের নিখুঁত কাজ।
অখুশী না হলেও রিমী যে খুব একটা খুশী হয়নি তা তার চেহারা দেখেই বুঝতে পারি।
তারপরও জিজ্ঞেস করি 'পছন্দ হয়নি?'
'তুমি এই রঙটা কেন পছন্দ করলে?'
'কেন..সাদা রঙ কি দোষ করল?'
'সাদা রঙে কেমন যেন বিধবা বিধবা লাগে।'
' আজীব! এখনো বিয়েই হয়নি আবার বিধবা লাগা..'
জবাবে রিমী কিছু বলে না। শুধু চেহারায় ফুটে উঠে একরাশ বিষণ্ণতা। মনের আকাশেও মনে হয় মেঘের ঘনঘটা। যেকোন সময় বৃষ্টি হয়ে অঝোরে ঝড়তে পারে দুচোখ বেয়ে।
' তুমি কি জান...আমাদের গাড়ির রঙ ছিল সাদা। বাবার অনেক শখ করে কেনা। এ্যাকসিডেন্টের দুদিন পর যখন বাবার লাশ ভেসে উঠে তার পরনের পায়জামা পাঞ্জাবী তখনও ধবধবে সাদা । কবরে শুইয়ে দেয়ার আগে যে পোশাক পরানো হল তাও ছিল সাদা ।'
রিমীর অপছন্দের কারণ বুঝতে পারি। আর অবাক হই এ যুগের মেয়ে হয়েও রিমীর এই মানসিকতা দেখে। কিন্তু রিমীকে তা বুঝতে দেই না।
' আচ্ছা এটা পাল্টিয়ে নিয়ে আসা যায় না?'
' যায়, তবে সেটা হবে কালো। ঐ দোকানে সাদা কালো ছাড়া অন্যকোন রঙের পোশাক নাই।'
রিমী বেশ হতাশই হয়। আর নিজের উপর আমার হয় প্রচন্ড রাগ। ভালোবাসার মানুষের পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারে এত কম ধারণা আমার। হায়রে বেকুব প্রেমিক!
রিমী মনে হয় আমার মনের অবস্হা বুঝতে পারে। হঠাৎ করে তার চেহারা থেকে কালো মেঘ সরে গিয়ে রোদের ঝিলিক দেখা যায়। আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে
'পাল্টানোর দরকার নাই। এটাই থাক'
২
নানা ঘটনা আর দূর্ঘটনার মধ্যদিয়ে হুট করে বিয়ে করে ফেলি। বলা যায় বিয়ে করতে বাধ্য হই। বাধার দেয়াল ভাঙ্গা অথবা টপকানো কোনটাই আমার পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। রিমীর কাছে হই অপরাধী । মনে মনে হাজার বার, লক্ষ বার ক্ষমা চাই। সরাসরি তার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয় না। কারণ সামানাসামনি দাড়াবার মতো শক্তি এবং সাহস কোনটাই আমার নাই। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে রিমী এসে হাজির হয় আমার সামনে, বউ ভাত অনুষ্টানে। আরো অবাক হই তার পরনে আমার দেয়া সেই সাদা পোশাক দেখে। রিমী খুব স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করে
'কেমন আছ?'
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দেই
' ভাল। তুমি?'
'এইতো বেশ আছি।' এই বলে রিমী ভেতরের রুমে চলে যায় যেখানে অন্য মেয়েরা বউ কে নিয়ে বসে আছে।
আমার উপর কি তাহলে রিমীর কোন রাগ নেই? আমি খুশী হতে পারি না। বরং কষ্ট হয় অদ্ভুদ সুন্দর এই মেয়েটির জন্য যে তার ভালবাসা অপাত্রে দান করেছিল। ছটফট করতে থাকি তার সাথে কথা বলার জন্য। লোকজনের ভীড়ে সেই সুযোগ আর হয় না।
পরদিন খুব ভোরবেলা আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘরের ভেতর দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি ছাদে যাই। বাড়ীর সবাই মনে হয় ঘুমে। কোন সাড়া শব্দ নাই। একা একা ছাদে বসে থাকি। সূর্য উঠা দেখি। সেই কবে এভাবে ভোরের সূর্য উঠা দেখেছি, অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারি না। ছাদ থেকে যখন নেমে আসি দেখতে পাই মা গেটের পাশে দাড়িয়ে ফিসফিস করে কথা বলছেন। গেটের ঐ পাশে যে দাড়ানো তাকে দেখা যাচ্ছে না। আমি এগিয়ে গেলে শুনতে পাই মা বলছেন 'রোমেল কে কিন্তু এখন কিছুই জানানো যাবে না।'
আরেকটু এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, কি জানানো যাবে না?
পেছন ফিরে আমাকে দেখে মা ভুত দেখার মতো চমকে উঠেন। আর আমি চমকে উঠি গেটের পাশে রাজীবকে দেখে।
'তোকে আমরা জানাতে চাইনি এই সময়ে' এই বলে রাজীব তাকায় মা'র দিকে। মা তাকান আমার দিকে ভীতভাবে।
'রিমী মারা গেছে কাল রাতে।.......'। রাজীব আরো কি কি বলে যায়। কিন্তু আমি ওর কথা কিছুই শুনতে পাই না। আমি শুধু শুনতে পাই মেঘের গগণ বিদারী গর্জন আর বুঝতে পারি আমার পুরো পৃথিবী ঘিরে আসছে আধার কালোয়।
সন্ধারও শেষ আলো যখন হইবে কালো
তখন সাগরও পক্কী উড়ে যাবে স্হলে
ও সমুদ্র কাছে আস আমাকে ভালবাসো
আদরে লোকায়ে রাখ তোমার ঐ অঞ্চলে
আমি আজ ভেজাব চোখ সমুদ্র জলে..।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




