somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রজ্ঞাপন

৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আন্দালিব সাহেব খুব আয়েশ করে বারান্দার ইজিচেয়ারে বসে মার্কেজের একটা বই পড়ছিলেন; নাম ‘বিপন্ন জাহাজের এক নাবিকের গল্প’ । পাশে রয়েছে টি পট আর এক প্যাকেট লিঙ্কন । নতুন ব্র্যান্ডের সিগারেট, তাঁকে একজন গিফট করেছে । তৃপ্তি পাচ্ছেন না; পুরানোটার চেয়ে অনেক লাইট এটা । কি মনে করে বই রেখে দিয়ে এবার ল্যাপটপটা নিয়ে বসলেন তিনি । অনেক দিন ফেসবুকে ঢুঁ মারা হয় না । লগিন করতে গিয়ে পড়লেন আরেক সমস্যায়; পাসওয়ার্ড ভুল দেখাচ্ছে বারবার । বিরক্ত হয়ে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে একটা অশ্রাব্য শব্দ রিলিজ করে দিলেন তৎক্ষণাৎ । লাভ হলনা তাতেও । রিমাইন্ড….. রিমাইন্ড...... বলতে বলতে ব্রেইনস্টর্মিং করে ফেললেন তারপরও মনে পড়লনা গোপন সংখ্যাটা ।

নায়লা পড়ছে ভেতরের রুমে; ডাকাটা কি ঠিক হবে? ভাবতে ভাবতে অজান্তে ডেকেই বসলেন । প্রযুক্তির এই যুগে কষ্ট করে চেঁচিয়ে ডাকতে হয়না এখন আর ।

মোবাইলে রিং বাজছে কিন্তু কেটে দিচ্ছে নায়লা । এভাবে ক্রমাগত চেষ্টার আশীর্বাদে স্বয়ং বস্তুটিই এসে হাজির হয় ।

হয়েছেটা কি? এখান থেকে ওখানে তুমি মোবাইলে ফোন দিচ্ছ কেন? আমার কালকে থেকে মিডটার্ম ।

সেইজন্যই তো তোকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি, তুই পড়া ফেলে উঠে এলি কেন? আন্দালিব সাহেব কাঁচুমাচু হয়ে বলতে থাকেন ।
মেয়ের বিরক্তিসূচক মুখের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল কথাটা । মা নায়লা তুই না আমার ফেসবুক একাউন্ট খুলে দিয়েছিলি; সেটাতে তো এখন ঢুকতে পারছিনা । পাসওয়ার্ডটা কি তোর মনে আছে?

কি আশ্চর্য! তোমার একাউন্ট, আমার মনে থাকবে কেমন করে? আর পাসওয়ার্ড ভুলে গেলেই বা কেন!! কৃত্রিম ঝাঁজ মাখানো কন্ঠে বলল সে ।

ভুলে গেছিরে কিভাবে জানি, এই বুড়া বয়সে কি এতকিছু মনে থাকে । এটা পুনুরুদ্ধার করার কোনো ব্যবস্থা নাই রে মা?

থাক । তোমার আর এই বুড়ো বয়সে ফেবু ইউজ করার কোনো দরকার নেই; তুমি বরং ট্যুইটার ইউজ করো ।

বলিস কি!! তোরা পিচ্চিরা সামাজিক ওয়েবসাইটে অসামাজিক কার্যক্রম করে বেড়াবি আর আমরা বুড়োরা একটু আধটু পোকার খেলতে পারবো না; ইজ ইট ফেয়ার? আর আমি এখনও পুরোপুরি বুড়িয়ে যাইনি; কথাটা মনে রাখিস । নিজের ভাবগম্ভির বজায় রেখে আলগোছে কথাটা পাড়লেন আন্দালিব সাহেব ।

ঘাড় কাত করে সায় দিয়ে মুখ চেপে আস্তে কেটে পড়ল নায়লা । অল্পের জন্য দেখলনা আন্দালিব সাহেবের পাংশু এবং O বর্ণীয় মুখাবৃত্তি ।
এসেই সে আগে ফোন করলো বড়বোন শায়লাকে ।

কাজ হয়ে গেছে আপু ।

তাই নাকি!! আব্বু কিছু বুঝতে পারসে?

একদমই না; উনি তো পাসওয়ার্ড ভুলেই বসে আছেন । আনন্দধ্বনি শোনা যায় ওপাশ থেকে ।



গফুর ভাই ফ্রেন্ডদের বাসায় বাসায় গিয়ে দাওয়াত দিয়ে আসছেন । ইনভাইটেশন কার্ডটা ছোট্ট একটি ভিজিটিং কার্ডের সমান । তাতে ডেট, ভেন্যু এবং নগদ পেমেন্টের কথাও বলা আছে ।

কিরে বিয়ে টিয়ে করতাছস নাকি?

আরে না; আমার নতুন বই । বইমেলায় বের হচ্ছে ।

‘বৈপরীত্যের ক্রমবর্ধিষ্ণু পদার্পণ’ এরম খটমটে শিরোনাম দিছস কেলা । মনে হইতাছে তো নজরুল গীত, আরে ধুরো কাব্য ।

হ্যাঁ, ঠিক ধরেছিস; কবিতার বই । নিজেও কিনবি অন্যদেরও ইন্সপায়ার করবি, ঠিকাছে? ।

না ঠিক নাই । তুই দোস্ত মানুষ; তর থেইকা বই কিনুম কোন দুঃখে । মাগনা দিবি, বুজছস?

এইটা কি কইলি ! তুই দোস্ত হইয়া দোস্তের জন্য একটা বইও কিনতে পারবি না ? তাহলে অন্যরা কি বলবে । গফুর ভাই দুর্বল জায়গায় আঘাত করে ফেললেন ।

আইচ্ছা ঠিকাছে যাহ্‌, ছাইড়া দিলাম । তয় বন্ধুর কথা ভুইল্লা যাইস না, মনে রাখিছ আমরা আছিলাম দেইখ্যাই তুই অত উঁচায় যাইতে পারছস ।

গফুর ভাই অস্বীকার করলেন না । বরং মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিলেন ।

শুন, আমাগো লীগের নেতা মুকুল ভাইরে চিনস না? হেই ভাইরে দিয়া ব্যবস্থা করতেছি; হলের সব পোলাপাইনের বাধ্যতামূলক ভাবে কমপক্ষে একটা কিনতেই হইবো । অহন তর কাম হইল গিয়া; এক প্যাকেট বেনসন লইয়া তেনার সামনে যাবি, ভালা মন্দ জিগাইবি । তরে দেখলে খুশিই হইব ।



ব্লগার জয়নাল হামিদ ফেসবুকের ‘বৈক্রপ’ পেজে একটা স্ট্যাটাস দিলেন । সঙ্গে সঙ্গে কমেন্টস আর লাইকের হিড়িক পড়ে গেলো । সেই লিস্টে আছেন, স্বয়ং আন্দালিব সাহেব, বিভিন্ন দৈনিকের কলামিস্ট ও সাংবাদিকগণ, সম্পাদক থেকে শুরু করে সহসম্পাদক, বিভিন্ন ওয়েভসাইডের ব্লগারগণ এবং নির্বিশেষে আমজনতা ।

স্যার আসবো?

কে?

আমি গফুর ।

পত্রিকার সম্পাদকীয় কলাম থেকে চোখ তুলে তাকালেন আন্দালিব সাহেব । ও জয়নাল, এসো বসো । কেমন নিষ্প্রভ শোনা গেলো ওনার কন্ঠ ।
মিষ্টির প্যাকেটটা রেখে একটা র্যা পিং পেপারে মোড়া বাক্স এগিয়ে দিলেন গফুর ভাই ।

কি এটা?

খুলেই দেখুন স্যার, রহস্য করে বললেন যেন ।

খুললেন তিনি । ভেতরে সুন্দর মলাটের ঝকঝকে একটা বই । নামটা বেশ চকচকে ‘বৈপরীত্যের ……..’ । মেজাজ ঠিক রাখতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর ।
জিজ্ঞাস করলেন কোন প্রকাশনী?

অদ্বয় । তুমি আসলে একটা ……………

অপদার্থ, তাই না স্যার? অসমাপ্ত কথাটা শেষ করলেন গফুর ভাই । তাহলে প্রথম পৃষ্ঠাটা একটু উল্টে দেখুন ।

আগ্রহ বোধ করলেন না তিনি । গফুর ভাই আরো বারকয়েক রিকোয়েস্ট করলেন । ফিরেও তাকালেন না আন্দালিব সাহেব; বরং তাঁকে উপেক্ষা করে ফেসবুক লগিনের ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে গিয়ে সফল হয়ে গেলেন এবং যারপরনাই আশ্চর্যন্যিত হলেন । তবে সেটা বাইরে প্রকাশ করলেন না । দেখলেন অনেকগুলো নোটিফিকেশন জমে আছে । চেক করতে গিয়ে দেখেন ‘বৈক্রপ’ নামক একটা পেজে তাঁর স্ট্যাটাস এবং সেটাকে ঘিরে অসংখ্য লাইকস আর কমেন্টস । বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি । এই প্রথম তিনি উপলব্দি করলেন ফেসবুকে ডিসলাইক বাটন থাকাটা যে কতটা জরুরী । হ্যাকিং …. হ্যাকিং ….. তাকিয়ে থেকে আনমনে কথাগুলো আউড়িয়ে গেলেন শুধু ।



গফুর ভাই চলে গেছেন অল্প কিছুক্ষন হবে । আন্দালিব সাহেব ধীরে ধীরে বইটা তুলে নেন । দ্বিধাদ্বন্দ্ব না করে ছুঁড়ে ফেলেন বারান্দার ফাঁক গলিয়ে । নতুন বই ধুলোয় পড়ে মলিন হয়ে যায় নিমিষেই । এখনও হয়তো শুঁকলে পাওয়া যাবে এতে নতুন প্রিন্টের গন্ধ কিংবা প্রথম পাতাটা উল্টালে দেখা যাবে উৎকৃষ্ট বিশেষণে বিশেষায়িত উৎসর্গবাক্যটা ।।


এর আগের পর্বটি হচ্ছে বৈপরীত্যের ক্রমবর্ধিষ্ণু পদার্পণ




সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:২৭
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×