বিল্লি ম্যাও আজ সকাল থেকে কিছুই খায়নি। খাওয়া বলতে শুধু একটা বিস্কুট। সেটা আবার পুরোপুরি নিজের চেষ্টায় পাওয়া নয়। একটা ছোট মেয়ে, স্কুলে যাচ্ছিল। কাঁধে ব্যাগ, বাঁ হাতে টিফিন বক্স। হাঁটতে হাঁটতে পেছনে না তাকিয়েই একটা বিস্কুট ছুঁড়ে দিলো রাস্তায়। হয়তো ইচ্ছে করে, হয়তো না। বিল্লি সেটা কুড়িয়ে খেল। শুকনো বিস্কুট। গায়ে টোস্টের ধুলা। তবুও মন্দ না।
তারপর থেকে কিছুই খায়নি। পেটের ভেতর থেকে একটা হালকা সোঁ সোঁ ভাব উঠছে। সে হেঁটে চলেছে শহরের পুরনো এক পাড়ার দেয়াল বেয়ে।
এই দেয়ালটা তার চেনা। দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে। পাখিরা গাছে ফিরে যাচ্ছে। বাতাস একটু নরম।
হঠাৎ থেমে যায় বিল্লি।
একটা রান্নাঘরের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। জানালাটা খোলা। জানালার পাশেই দেয়ালটা চলে গেছে সোজা।
ভেতরে এক বৃদ্ধা মাছ ভাজছেন।
কড়াইয়ে মাছের ঝাঁঝালো গন্ধ, তেলের সাঁসাঁ শব্দ।
সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। একটু নিচু হয়ে, চোখে কৌতূহল আর অপেক্ষা।
এক টুকরো মাছ... না, না হলে একটা ভাজা কাঁটা?
বৃদ্ধা দেখলেন না। কিংবা দেখেও কিছু বললেন না।
মাছ উল্টে দিলেন, একটু লবণ ছিটালেন, গায়ে ঘাম মুছলেন শাড়ির আঁচলে।
বিল্লি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল।
তারপর আর দাঁড়িয়ে থাকল না।
চোখ ফিরিয়ে হাঁটা ধরল। দেয়ালটা যেন এবার একটু বেশি লম্বা মনে হচ্ছে।
হঠাৎ সামনে চোখে পড়ল আরেকটা বেড়াল।
হলুদচে গায়ের রঙ, চোখ দুটো অস্বস্তিকরভাবে ঠান্ডা।
বিল্লি থেমে যায়। দুজনের মাঝখানে হালকা হাওয়া বইছে।
তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এক ধরণের বোঝাপড়ার মতো কিছু ঘটে যাচ্ছে চুপচাপ।
বিল্লি একটু নিচু হয়ে পা তোলে, ধীরে ধীরে এগোয়।
আরেকটা পা। তারপর আরেকটা।
সামনের বেড়ালটা হঠাৎ মিলিয়ে গেল, দেয়ালের একপাশ বেয়ে নিচে নামল হয়তো, দেখা গেল না আর।
বিল্লি দাঁড়িয়ে থাকে না।
সে এক লাফে সানশেডে ওঠে। তারপর জানালায়।
২য় তলার জানালা।
জানালাটা খোলা। ভেতরে ম্লান আলো। পর্দাটা হালকা দুলছে।
বিল্লি ঢুকে পড়ে।
ঘরের ভেতরে একটা পুরনো চেয়ার। চেয়ারের নিচে গুটানো একটা গামছা।
গামছার ওপর শুয়ে পড়ে সে।
একটু পরপর গলা দিয়ে হালকা একটা শব্দ বের হয়—“ম্রাঁও…”
তারপর সেটা আর হয় না।
ঘরে কেউ নেই।
দেয়ালের ওপাশে একটা ভাঙা ঘড়ি চলছে টিক টিক করে।
বিল্লি চোখ বন্ধ করে।
পেটটা এখনও খালি।
কিন্তু ঘুম আসছে। সেটাই এখন বড় কথা।
সে ঘুমিয়ে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




