এই ঘটনা থেকেই লেখাটার সূত্রপাত। মনে মনে যদি প্রশান্তির ঢেকুর তোলেন যে এই ঘটনা আপনার সাথে তো আর ঘটে নাই। তবে ভুল ভাবছেন। একেতো বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট তার উপর ওজন কারচুপি একবার মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবুন আপনার অবস্থান। পাইকারী থেকে খুচরা বিক্রেতা কোথায় কখন কিভাবে আপনাকে ওজনে ঠকতে হচ্ছে, চলুন জেনে নিন সেই তথ্য।
১৯৬০ সালে সারা বিশ্বে ওজনের একই একক পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আন্তর্জাতিক এই পদ্ধতির নাম এসআই (SI)। যাতে করে সারা বিশ্ব একই একক মেনে বিকিকিনি করতে পারে। বাংলাদেশেও চলে এই ওজন পদ্ধতিতে পন্যের পরিমাপ।
আপনি এই মুহূর্তে দ্বিধান্বিত, দাড়িপাল্লায় বাটখারা দিয়ে নিক্তি’র কাটা বরাবর দেখে কিংবা ডিজিটাল মেশিনে দেখে শুনে মেপে নিয়ে যে পন্য কিনছেন সেটা কম হওয়া খুবই অসম্ভব। তবে সব সম্ভবের দেশ বানহ্লাদেশে অবাক হবেননা প্লিজ। কারণ মাপা হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ বাটখারা দিয়ে কিংবা ডিজিটাল মেশিনে আগে থেকেই একশ গ্রাম ওজন বাড়িয়ে রাখা হয়।
মাছ-মুরগী-সবজ্বি থেকে শুরু করে চাল-ডাল-তাল-নুন এর খুচরা দোকানে এই কারচুপি হরহামেশাই হচ্ছে। তাই ভ্রাম্যমান আদালত দেখেই দোকানি পন্য অরক্ষিত রেখেই চম্পট দিয়ে সাময়িক মুক্তি লাভ করে। ক্রেতারা অনেক ক্ষেত্রেই বুঝতে পারেননা ভাবেন ভেজাল বিরোধী অভিযান। আর বুঝলেও প্রতিবাদ করতে পারেননা। কেননা ঠগ বাছতে তো গাঁ উজ়ারের অবস্থা।
খুচরা দোকানের ওজন কারচুপি না হয় মেনে নিলেন, তবে কোম্পানীর সিল দেয়া সেলাই করা বস্তা বন্দি চাল, চিনি, ডাল সহ প্রায় সব পন্যই কম থাকে। আড়তে ফ্রেশ ব্রান্ডের ৫০ কেজি’র চিনির বস্তায় থাকে ৪০০ গ্রাম কম। সিটি গ্রুপের তীর’এর শুধু চিনিতেই ৫০ কেজি’র বস্তায় কম হলো ৩০০ গ্রাম। এবার ডালের বস্তাতে ওজন করে দেখা গেল ৬০০ গ্রাম কম। চালের বস্তায় ৪০০ গ্রাম কম পাওয়া গেল। রডের দোকানে প্রতি বিশ কেজি তে এক কেজি কম দেন দোকানদার। স্বর্নের দোকানে এয়ার টাইট পরিমাপক যন্ত্রেও রয়েছে কারচুপি। শুধু দেশিয় পন্যে ওজনে কম থাকেনা, বিদেশ থেকে আমদানীকৃত চালেও বস্তা প্রতি ওজনে কম থাকে ৩০০/৪০০ গ্রাম। ময়দা নিশ্চয় কম দেয় না। জ্বী না, পরীক্ষা করে সেখানে কম পাওয়া গেল ২০০ গ্রাম। ছোলার বস্তারও একই অবস্থা।
কোথায় বানানো হয় এই সব ত্রুটিপূর্ণ বাটখারা। খুব কাছেই খুঁজে দেখলে পাবেন এই বাটখারা। ঢাকার কেরানী গঞ্জের জিঞ্জিরা। এখানে ঠিক এবং ত্রুটিপূর্ণ দুই ধরনের বাটখারা এখানে পাওয়া যায়। যদি বানাতে চান, তবে আপনাকে চলে যেতে হবে পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে। পাশাপাশি আপনি যদি ত্রুটিপূর্ণ তেল মাপার ক্যান। আইনে আছে সরকারী মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই (BSTI) এর অনুমতি ছাড়া কেউ এই ওজন পরিমাপক বাটখারা ও ক্যান বানাতে পারবেন না। এখানে অবশ্য কোনো অনুমতির অপেক্ষা করা হয় না। চাহিবা মাত্র দাবীকৃত মূল্য পরিশোধ করে আপনি বিনা বাধায় তা সংগ্রহ করতে পারবেন।
রাজধানীর মক্কা ফিলিং ষ্টেশন থেকে এক লিটার তেল সংগ্রহ করে মেপে দেখা গেলো ১০০ মিলিলিটার কম। দোষ চাপানো হলো তেল সরবারকারী সরকারী প্র্তিষ্ঠান পদ্মা পেট্রোলিয়াম এর উপর। অথচ জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে সরকারকে এই খানে ১৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। (তথ্যসূত্র- যমুনা টেলিভিশন)
সিএনজি’র ভাড়া নির্ধারনেও রয়েছে মিটার দূর্নীতি। মিটারের রেগুলেটর নিজের সুবিধা অনু্যায়ী অপারেট করার সুযোগ নিচ্ছেন চালক’রা। দুই কিলোমিটার বহু আগেই মিটার ভাড়া গননা শুরু করে। এবং লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সেই ভাড়া। এরপরও গন্তব্যে পৌছে আপনাকে গুনতে হয়ে মিটার কারচুপি দ্বারা নির্ধারিত ভাড়া সাথে বকশিশ।
একজন মানুষের দিক থেকে এই আর্থিক ক্ষতি বিচার করলে তা আপনাকে বিচলিত নাও করতে পারে। তবে এই আর্থিক ক্ষতি যদি ষোল কোটি মানুষের দিক থেকে বিচার করেন, তবে তা রীতিমতো আৎকে ওঠার মতো তথ্যই আপনাকে দিবে। আপনার শ্রমের বিনিময়ে আয়কৃ্ত অর্থের প্রতিটি টাকা ব্যয় হোক সঠিক ভাবে। সবার সচেতনতাই পারে এই কারচুপি রোধ করতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪৬