'দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ'…
মেঘে মেঘে আকাশে যে ছবির লেখালিখি হয় রোজ, তা সুন্দর হলেও বড় ক্ষণায়ু। অর্থহীন, সামঞ্জস্যহীন এই জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াই অপ্রত্যাশিত পুরষ্কারের ভয়ে। জীবনের সব ক্ষোভ শেষমেশ ছোট্ট একটুখানি দুঃখে রূপ নিয়েছে। ব্যথার স্থান অবশ হয়ে গেছে, ক্ষত হয়েছে পুরনো। তাই হয়তো ভদ্রতা এবং সৌজন্যতা মর্মান্তিকভাবে অনুভব করে এক আশ্চর্য ইচ্ছে! আমরা কেউই ঠিক স্বার্থপর হতে পারি না। অথচ যাদের জন্য ত্যাগ, তাদের প্রতিও মনে মনে বিদ্বেষ পোষণ করি। নিজেদের কাছে ক্রমাগত ছোট হতে থাকি। অথচ জানি না, ঠিক কি চাই। আসলে আমরা দুজনেই অনেক আকাংক্ষা পরস্পরের কাছে গোপন করে যাচ্ছি, নিজের কাছে মহৎ থাকার তাড়নায় পরস্পর ছদ্মবেশ পরছি। খুব কান্না পায়, অথচ কাঁদবার মতো কোনো নিজস্ব জায়গা নেই আমাদের।
টানাপোড়েন শব্দটা আমাদের চেয়ে ভালো আর কারা বেশি জানে। ক্লাসরুটিন- পাঞ্জাবীর পকেট থেকে বেরনো গোলাপ- এপ্যয়নমেন্ট লেটারের খাম! স্বপ্নের সাথে সত্যের খাদ তখনো এতটা মেশে নাই। আশাবাদী হওয়ার মত সুন্দর বিকেলের মত কল্পকথার সময় ছেড়ে পরস্পর থেকে বিপরীত মুখে হেঁটেছি সহস্র ক্রোশ। পথ বাড়লো কেবল, দূরত্ব বাড়লো না কোথাও। জীবন আসলে এক মহাসংগীত: না উচ্চারিত, না অনুচ্চারিত। তাকে ছেড়ে এলাম কবেই, তবু আমার দু’চোখ ভিজে আছে। ঘরের আয়নাটাও জানে, প্রতিচ্ছবির মানুষটার ভেতরটা কতটা ভাঙ্গাচুরা। জীবনের ভগ্নাংশের গল্প বলা কি এত সহজ? বেদনায় ভরা হ্রদয়ের অব্যক্ত কথা জন্ম দেয় নীরবতার। কিছু নীরবতা বরফের মতো ঠান্ডা এবং শক্ত। সেই নীরবতার ব্যাখ্যা করাও অত সহজ নয়। কিছু ব্যথা উপশমের জন্য ঔষধের চেয়েও সান্নিধ্য বেশি জরুরি। ‘বন্ধুরাও জানে দিব্যি আছি, নিয়মমাফিক ফিরে আসছি ঠিকানায়, কে বললো একটা মানুষ হারালে আরেকটা মানুষ মরে যায়?’
হোম কোয়ারেন্টিনে ভাববার অখন্ড অবসর পেয়ে বুকের ভেতর খুচরো স্মৃতির ঝনঝনানি আমাকে রাতভোর জাগিয়ে রাখে। যদিও ভাবনা হচ্ছে ভাষার অভাব! তবুও স্মৃতি হাতরে আমি নিজেকে খুঁজি। নিকটতম দু:খটাই সর্বাপেক্ষা বেশি কষ্টদায়ক। 'জীবন' ছোট্ট এই শব্দটাকে নিয়ে আমার কি কোন আক্ষেপ আছে, কিংবা আফসোস? যদিও অতীত সংশোধন করার সুযোগ মেলে না, তবুও নিজের মুখোমুখি দাঁড়াই। আমি যা সেটা দুনিয়া মেনে নেয়ার আগে, আমার নিজের মেনে নেয়াটা অসম্ভব জরুরি। নিজেকে প্রশ্ন করলাম দ্বিতীয় জীবনে যেকোন একটা বিষয় সংশোধন করার সুযোগ থাকলে কোনটা করবে নন্দিনী? মস্তিষ্ক এবং হৃদয় একই সাথে উত্তর দিলো- ভালোবাসবো।
মর্মের বেদনাবোধ ঢাকতেই হয়তো কিছু লাল মর্মান্তিক রকমের লাল হয়। বিচ্ছেদ; কি ভীষণ নগ্ন আর নিঃশব্দ! ভালোবাসা অনেকটা ঝিনুকের বুকে সঞ্চিত মুক্তোদানার মতন। যে মুক্তো ধারন করে তার আর সৌন্দর্য উপভোগ করা হয় না। আর যারা সৌন্দর্য উপভোগ করে তারা ঝিনুকের বেদনাবোধ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারনা রাখে না। ভালো তো সবাই বাসতে পারে না; এবং একমাত্র মহান হৃদয়ই পারে সেই ভালোবাসাকে ধরে রাখাতে। রোজকার অভাবেবোধ জুড়ে থাকা অনুভূতিরাও জানে ‘তুমি ফুরোলে, ব্যথারা ঘুমোলে, বিষাদ ভাবে কী নিদারুণ অপচয়!’
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৫