সাপিওসেক্সুয়াল শব্দটা আজকাল বহুল চর্চিত একটা টার্ম। সাপিওসেক্সুয়াল হচ্ছেন সেইসব মানুষ যারা অন্যের প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তার প্রেমে পড়েন। এই যেমন কারো অভিনয় ভালো লাগে, কারো গান, কারো গল্প। আবার ডেমিসেক্সুয়াল বলে আরেকটা টার্ম আছে। খুব সহজ ভাষায় যার মানে দাঁড়ায়, একজন ব্যক্তি যতক্ষন পর্যন্ত তার সঙ্গীর প্রতি না সঙ্গিনীর প্রতি ইমোশোনালী এটাচমেন্ট ফিল না করেন ততক্ষন পর্যন্ত তিনি বা তারা একে অন্যের প্রতি কাম অনুভব করেন না। বিষয়টাতে মনের মুগ্ধতা আগে, পরে শরীরের যোগাযোগ হয়। প্রথমেই একে অন্যকে ভালো করে জেনে বুঝে নেয়া। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব থেকে পরে এসে প্রেম হওয়ার পেছনে এই মানসিকতার রয়েছে বিরাট ভূমিকা। এক্ষেত্রে এমনও হয় অনেকে প্রথমদিকে শুধু ফোনে কথা বলে কিংবা চিঠি লিখে বা ইমেইলে একে অন্যের সাথে মানসিকভাবে এতোটাই ঘনিষ্টজন বা বন্ধুজন হয়ে যান যে তারা যেকোনো মূল্যে একসাথে জীবন কাটানো সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়ে নেন।
লিঙ্গ শব্দটা যে শুধু শারীরিক তা নয়, এটা সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিকও বটে। যদিও লিঙ্গ শব্দটা আমাদের মাথায় প্রথম যে ইমেজ আনে সেটা নারী কিংবা পুরুষ হিসেবে পরিচিত। মাঝে মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের কথা আমাদের মনে পড়ে কিংবা পড়েনা। অনেক ক্ষেত্রে মনে পড়লেও মুখে আমরা সেটাকে উহ্য রাখতেই বেশি পছন্দ করি।
লিঙ্গ ধারণার যাথে যৌনতার সম্পর্ক অতোপ্রতোভাবে জড়িত। যৌনতার একমাত্র উদ্দেশ্য বংশ বিস্তার করা নয়। সামাজিকতাও যৌনতার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য বটে। মনোলিঙ্গ, জৈবলিঙ্গ বা ক্রোমোজমের উপর নির্ভর করে না। জৈবলিঙ্গটা শরীরের আর মনোলিঙ্গটা আইডেনটিটি, প্রেজেন্টেশন, সেলফ এক্সপ্রেশন, ইন্টারপার্সোনাল সম্পর্ক, সোশিওকালচারাল রোলের উপর নির্ভর করে।
জৈবলৈঙ্গিক পরিচয় বলে যে, মানুষ হবেন নারী অথবা পুরুষ অথবা তৃ্তীয় লিঙ্গের যার বহুল চর্তিত নাম হিজড়া।
মনোলিঙ্গ বা জেন্ডার বলছে যে, মানুষ হতে পারেন সিসজেন্ডার- জৈবলিঙ্গ এবং মনোলিঙ্গের সাথে যাদের কোন বিরোধ নেই।
লিঙ্গাভিমান বলেও একটা টার্ম আছে। সেটা এমন যে, দ্বিতীয় লিঙ্গের কোনো কিছু অনুকরন মানে দাড় করায় প্রথম লিঙ্গের অপমান।
ট্রান্সজেন্ডার- পুরুষের শরীর নিয়ে জন্মে যারা মনে করেন না যে তিনি পুরুষ। আবার নারীর শরীর নিয়ে জন্মেও যিনি মনে করেনা যে তিনি নারী। সমাজে তাদের দূর্ভোগের শেষ নেই। বলা যায়, দেয়ার পেইন ইন দ্যা অ্যাস। অরুন্ধতী রায়’এর দ্যা মিনিস্ট্রি অফ আট মোস্ট হ্যাপিনেস বইয়ের এরকম একটা লাইন আছে, আফতাব যিনি পুরুষের শরীরে নারীর হৃদয় নিয়ে জন্মেছেন। আফতাব নিজেকে আঞ্জুম নামে ডাকে। শারীরিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের সাথে যারা আচার-আচরন মিলে না।
ট্রান্সসেক্সচুয়াল বা রূপান্তরকামী। এরা নিজেদের যৌনাঙ্গ পরিবর্তন করে নেন। কেউ হরমোন থেরাপি নিয়ে শারীরিক গঠনে পরিবররতন আনেন। কখনো বা অপারেশনের মাধ্যমেও তা করে থাকেন। মনের পরিচয়টা শরীরে ফুটিয়ে তুলতেই তারা সাধারণত এইসব পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।
ইন্টারসেক্স বা উভয়লিঙ্গ- এরা নারী বা পুরুষ কারো কাতারেই পড়েন না। নারী কিংবা পুরুষের প্রজনন নির্ভর পরিচয় তারা সেটাকে ছাপিয়ে যায়। এদের শরীরে ক্রোমোজমের ধরনে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এদের প্রজনন অঙ্গের গঠনও নারী-পুরুষের প্রজনন অঙ্গের সমন্বিত রূপ। ইন্টেরসেক্স টার্মটা এসেছে গ্রীক মিথে চরিত্র হার্মাফ্লোডিটাস থেকে।
মনোগামী বা এককামী- যারা একজন যৌন সঙ্গীতেই সন্তষ্ট থাকেন। এবং যৌন জীবনে বিশস্ত সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকেন।
পলিগামী বা বহুকামী- যারা একই সঙ্গে একাধিক যৌন সঙ্গীতে অভ্যস্ত থাকেন তদেরকে পলিগামী বলা হয়।
সর্বকামী বা প্যানজেন্ডার- হল যেকোন দৈহিক যৌনতা বা লিঙ্গ পরিচয়-বিশিষ্ট মানুষের প্রতি এক প্রকার যৌন আকর্ষণ, রোমান্টিক ভালোবাসা বা অবেগীয় আকর্ষণ। সর্বকামী ব্যক্তিগণ নিজেদের লিঙ্গ-অন্ধ হিসেবে নির্দেশ করে থাকেন, যার দ্বারা বোঝানো হয় যে,তারা অন্যদের প্রতি যৌন আকর্ষিত হবে কিনা তা নির্ধারণে লিঙ্গ এবং জৈবিক যৌনতা গুরুত্বহীন বা অপ্রাসঙ্গিক।।
নিষ্কামী বা জেন্ডার-নিউট্রাল হলেন তারা যাদের মধ্যে কোনোরকম কামের বালাই নেই। অর্থাৎ যারা যৌনসম্পর্ক বিষয়ে নিস্পৃহ। এদেরকে এসেক্সুয়ালও বলে।
জেন্ডার কুইয়ার- হচ্ছেন তারা, যারা নিজেদের নারীও মনে করে আবার পুরুষও মনে করে।
প্যানসেক্সুয়াল- এরা যেকোন লিঙ্গের মানুষের সাথে যৌন কার্যকলাপ করে। যৌনতায় শুধুই বিপরীত লিঙ্গের উপর সীমাবদ্ধ নয়।
যৌন ব্যবসায় জড়িত নারীদেরকে বলা হয় পতিতা। কখনো বা কলগার্ল, কিংবা বলা হয় স্কট। এবং পাশ্চাত্যে পুরুষ পতিতাদের বলা হয় ‘গিগোলো’।
মিউচুয়াল কনসেন্ট সেক্স বলে পশ্চিমাবিশ্বে টার্ম আছে যাকে এক শব্দে বলা হয় ‘জিগোলো’।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৭