somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পর্ক সমীকরণ...

১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মানুষের সম্পর্কগুলো আলো-বাতাসের মত সহজ এবং স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন। তাতে আন্তরিকতা, সমানুভূতি আর সহমর্মিতার মিশেল থাকা চাই। একে অন্যের প্রতি দায়িত্ব থাকবে, তবে অবশ্যই সেটা দায়বদ্ধতা নয়। যেখানে আপনার প্রিয়জন আছে, লাইফ নেই; সেটাই দায়বদ্ধতা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পারস্পারিক সম্পর্কটা আর আন্তরিকতার নয়, কেবলই আনুষ্ঠানিকতার। সাইকোলজিক্যাল স্যাটিসফেকশন না থাকা মানেই বেদনার তাড়না এবং ব্যর্থতার বোধ।

ভালোবাসা এবং ঘৃণা খুব দূরের কিছু নয়। একই রেখাপথে নিকতমত দূরত্বে তাদের বাস। যথেচ্ছা অবজ্ঞা করার নাম ভালোবাসা নয়। সমস্তটা ঝড়ের পরেও অটুট থাকার মানে ভালোবাসা। ভালোবাসা এমন একটা ব্যাপার যা নিজে নিজেই সব কিছুকে বদলে নেয়। প্রেম পোশাকের মতো বদলে ফেলা যায়; ভালোবাসা তো শরীর, সেটা বদলানো যায় না। সাধারণত আইন দ্বারা স্বীকৃত হতে হয় এমন সম্পর্কে বিচ্ছেদ হলে বেশ কিছু পর্ব পেরোতো হয়। কিন্তু যে সম্পর্ক অলিখিত সেখানে বিচ্ছেদ শব্দটা অনেক বেশি আড়ম্বর মনে হতে পারে। বিচ্ছেদ লিখিত সম্পর্কে হোক কিংবা অলিখিত সম্পর্কে হোক তার জন্য মানসিক প্রস্তুতির দরকার আছে। কোন রুগ্ন সম্পর্ককে দিনের পর দিন বাঁচিয়ে রেখে মহৎ মানুষ হওয়া যায় কিন্তু সুখি মানুষ নয়।

পেছনে ফিরে তাকালেই যে সম্পর্কটাকে খুব দূরের এবং নিরানন্দের মনে হচ্ছে সেই সম্পর্কের বিষয়ে চিন্তা করার সময় বের করুন। ইমোশনাল এবং সেন্টিমেন্টাল এক বিষয় নয়। ‘সাইকোলজিক্যাল প্রিপারেশন ফর সেপারেশন’টা কেমন হওয়া উচিৎ? যার ক্রাইসিস যত বড় তাকে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হয় যে তিনি ক্রাইসিসটা কিভাবে ম্যানেজ করবেন। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা ভাবি, “মানুষ জিজ্ঞেস করলে কী বলবো? তাকে (পার্টনারকে) আমি কিভাবে জানাবো? জানার পর কী রিএক্ট করবে?” সবার আগে মনে রাখতে হবে ‘কেউই জীবনে অপরিহার্য নয়’। বড় জোর প্রয়োজনীয় হতে পারে। জীবন কখনো কোথাও কারো জন্য থেমে থাকে না।

মূলত অবিশ্বাস থেকেই সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। দানা বাধে অসন্তোষ। শুরু হয় সন্দেহের পৌনপুনিকতা। একের কাছে অন্যের গোপনীয়তা। বাড়তে থাকা কলহ-বিবাদ। আস্থাহীন-নির্ভরতাহীন সম্পর্কে বয়ে বেড়ানো হয়ে ওঠে অভিশাপের মতো। সমাধান যোগ্য হলে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে নেয়া যেতে পারে। আর তা না হলে মচকে থাকার চেয়ে ভেঙ্গে যাওয়াই ভালো। তাতে যন্ত্রণাটা কিছুটা কম হয় বলে মানি।

প্রেমে বিশ্বাস থাকতে হয়, আর বিয়েতে বিশ্বস্ততা। 'তোমার প্রেম, প্রিয়া, সরকারি প্রেসনোটের চেয়েও মিথ্যা।- শামসুর রাহমান। কিংবা 'আমার প্রেমে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না, আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেও না'– মুজতবা আলী। জীবনের সবথেকে বড় শিক্ষা, জীবন কখনো থেমে থাকে না। ভালোবাসায় প্রমান দিতে নেই, ভালোবাসায় জানান দিতে হয়। ভালোবাসতে হলে সময় দিতে হয়। সংসার, সম্পর্কের কাঠামোগত ধারনাগুলোর একটা। সম্পর্কে আড়াল থাকতে হয়। স্পেস থাকা লাগে। 'শীতের সঙ্গে বসন্তের পরিনয় কখনো সুখের হয় না। না শীতের জন্য, না বসন্তের’। তাই সমমানসিকতা সম্পন্নদেরই শয্যাসঙ্গিনী হওয়া উচিৎ। বিয়ে সামাজিক ভাবে হলেই টেকার সম্ভবনা সব থেকে বেশি। এত বেশি মানুষকে ইনভলব করে যাতে সবাই নিজ দায়িত্ব বুঝতে পারে। সংসার,গোছানো জীবন; এর বাইরে- অনেকে বের হতে পারেনা। তাই সম্পর্ক উষ্ণ থাকুক আর না থাকুক এক সাথে থাকবেই হবে সেই সামাজিক প্রেসার নিয়ে অনেকে এক সাথে থাকে। বিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠে আনন্দহীন দায়িত্ব পালন। আনুষ্ঠানিকতা মাত্র! বিয়েতে স্ত্রী’রা ছেলেদের দায়িত্ব আর স্বামীরা মেয়েদের কর্তব্যবোধের অবস্থানে চলে আসে।

খুব গোছানো সংসারে মনোসংযোগ থাকে না। সংসারে সবসময়ই হ্যাঁ মানে উপেক্ষা। অপ্রাপ্তি থাকুক, মতদ্বৈততা হোক, খিটিমিটি লেগে থাকুক, ঝগড়াঝগড়ি হোক। অনেক কিছু না থাকার ভেতরেও যেন অতি অবশ্যই দু’জন প্রিয়জন থাকুক। কিছু কিছু না থাকাটাই সংসারে সবথেকে বেশি প্রয়োজন। দু’জন প্রিয়জন একসাথে থাকলে জীবনের অনেক আনুসাঙ্গিক থাকা না থাকার পার্থক্য খুব সীমিত হয়ে যায়। কিছু সম্পর্কের উপরটা চাকচিক্যময় জৌলুসে ভরা; ভেতরটা অন্তঃসার শূন্য, ফাঁকা। প্রেমহীন দাম্পত্য জীবন যেমন হয় বরফ নয় অগ্নিরথ! সব আছের সংসারে বেশীরভাগের কাজ হলো নিজেকে গুছিয়ে নেয়া। কোনো কিছু অ-গোছালো না করা।

আমরা প্রত্যেকেই আসলে কম্পোজার, আমাদের জীবনের সংগীতের। কথা সুর বাদ্যযন্ত্র সবকিছু মিলেমিশে তৈরি হয় প্রত্যেকটি নিজস্ব সংগীত। অসাধারণ লিরিক পানসে হয়ে যায় সঠিক সুরের অভাবে। সঠিক সুরও আবেদনহীন সুন্দর লিরিকের অনুপস্থিতিতে। ডিভোর্স, ব্রেক আপ শব্দগুলো আপনাকে অসম্ভব দুঃখ দিবে। তবে এটাও ঠিক এগুলোই আপনাকে আবার নতুনভাবে বাঁচার সুযোগ দিবে। সাহিত্যে, নাটকে, সিনেমা কিংবা অগ্রজের কাছে পাবেন প্রাক্তনের প্রতি তীব্র অভিমান নিয়ে বেঁচে থাকার ফর্মুলা। কিন্তু আমি বলি কি প্রাক্তনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহজ সম্পর্ক নিয়েও ভালো থাকা যায়। রিলেশনশিপ হুট করে হয় না। কমিটমেন্ট দিয়ে দেয়া বা বিএফ/জিএফ স্ট্যাটাস দিয়ে দেয়ায় সবকিছু নয়। অনুভূতি বোঝাপড়া, দায়িত্ববোধ আসতে সময় লাগে। আবেগ বুঝতে পারার জন্য সময় নিতে এবং দিতে হবে। বাস্তবসম্মত চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মানুষ সবসময় প্রিয়তমর সান্নিধ্য পেতে বাসায় ফিরে ব্যাপারটা সবসময় তা নাও হতে পারে। মানুষ আরামের জন্যও বাসায় ফিরে…




সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৮
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×