সাধারণত কিছু অবসর পেলে কিংবা মন খারাপ থাকলে আমি পার্লারে যাই। সেখানে দু একজন মানুষ আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বিষয়টা আমার ভালো লাগে। কাজ ছিল না তাই পার্লারে গেলাম। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময় পেডিকিউর নামক সেবা কিনি।
যিনি আজ পেডিকিউর করবেন তার নাম রাবেয়া। কাজের ফাঁকে জিজ্ঞেস করল আপা কী চাকরি করেন? বললাম করি। কী চাকরি? বললাম- শিক্ষাকতা করি। পরবর্তী জিজ্ঞাস: কোথায় পড়ায়। বললাম; চিনতে পারলো। জানতে চাইলো বিয়ে করেছি কিনা? আমি বললাম না এখনো বিয়ে করিনি। এবার সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল, বলল ভালোই করেছেন। আমি বললাম তাই? আমার উত্তরটা রাবেয়াকে কনফিউজড করে দেয়। বলে না একজন কেউ থাকলে ভাল হয়। আমি জানতে চাইলাম তোমার আছে? মাথা নাড়লো হ্যাঁ। (কোথাও একটু দীর্ঘশ্বাস গোপন করে করে রাবেয়া)। আমি আর সে প্রসঙ্গে যাই না।
জিজ্ঞেস করলাম বাড়ি কোথায়। বাড়ির কথা উত্তর দিয়ে নিজে থেকেই বললো বাপ- মায় বিয়া দিছে। আমি আর কিছু জানতে চাই না, ও নিজে থেকেই বলে বিয়া মানেই কষ্ট, নিজের পছন্দে করলে তবু সে কষ্ট মেনে নেয়া যায়।মনে হয় নিজে পছন্দ করে করেছি তো! বাড়ির বিয়ের কষ্ট বেশি। রাবেয়া গোপন একটা দুঃখবোধ আমার কাছ থেকে আড়াল করতে চায়। সেটাকে আড়ালে রাখতে সহযোগিতা করি, কিছুটা সময় চুপ থাকি। চুপ থেকে ভাবতে থাকি কিংবা হিসাব মেলায় রাবেয়া কাউকে পছন্দ করতো, বিয়ের প্রসঙ্গ আসতেই তাদের সম্পর্কটা আর আলোর মুখ দেখেনি। বাঙালি অন্য আর দশটা ছেলের মতোই সেই ছেলেটাও বিয়ের প্রসঙ্গ আসতেই, অপারগতা প্রকাশ করে, কিংবা দায়িত্ব নিতে ভয় পায়। অভিমান নিয়ে রাবেয়া বাবা-মার পছন্দ করা ছেলের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসে।
আমি দার্শনিক মুখভঙ্গী করে রাবেয়াকে উত্তর দি, সংসার তো হিসেবের জায়গা; কি পেলাম কি পেলাম না। এখানে পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হলে ভাল, না হলেও ক্ষতি নেই। ভালবাসলে চাওয়া-পাওয়াটা অপার্থিব হয়ে যায়। সারাক্ষণ হারানোর ভয় কাজ করে। তোমার পরে সে যদি অন্য কাউকে ভালোবাসতো এটা তো মেনে নিতে পারতেনা। তার চেয়ে বরং এখন ভালো আছো, এটা ধরে নিয়ে যে তুমি তার থেকে তাকে বেশি ভালোবাসা। একটা সময়ে এইসব গোপন অভিমান বেঁচে থাকার অক্সিজেন। যাকে ভালোবাসো না তার সাথে সংসার করলে নির্ভার থাকা যায়। হারানোর ভয় অন্তত থাকে না! রাবেয়া আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে। কাজ শেষে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। রাবেয়া কী আমার জন্য অপেক্ষা করবে, আরেকটু স্বান্তনার জন্য...
বাঁচে তো সবাই, সৎ সাহস নিয়ে বাঁচে ক’জন। সত্য প্রকাশের সাহস না থাকায় কেউ কেউ একটা পুরোজীবন মিথ্যের সাথে কাটিয়ে দেয়। মানুষকে তার মনের সবথেকে শুদ্ধ ইচ্ছেগুলোকেই গোপন রাখতে হয়। একটা তুমুল জীবন কাটানোর পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন আপোষ করে!
‘ইদানিং নাকি অসহ্য রকম জটিল হয়ে যাচ্ছি!
কথার ঘুরপাকে, গল্পের উপসংহারে শূন্য শূন্যতা খুঁজি
সরল পথে ড্রেজার হয়ে পাথরে পাথর খুঁড়ি!’
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০৩