আজ প্রাক্তনকে ক্ষমা করার দিন। ২০১৮সাল থেকে এই দিনটা পালন করা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ক্ষমা কি আয়োজন করে করার মত বিষয়। আবার অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, কেউ কি ক্ষমা চেয়েছে যে ক্ষমা করবো? কিছু কিছু ক্ষমা তো মানুষকে তার নিজের জন্যই করতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মহা ধ্বংসযজ্ঞ শেষে জীবনের সব হারানো মানুষগুলো একটা গনজামায়েত করে চিৎকার করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন তাদেরকে যারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
চেনামানুষ সময়ের আবর্তে অচেনা হলে যা হয়, মনের ভিতর প্রশ্নের প্রতিযোগ; কেমন আছো, ঘুম হয় ঠিক মতো, চোখের নিচে কালি কেন? জানতে ইচ্ছে করে, প্লে লিষ্টে কী গান চলে... নানান চিন্তার প্রতিফলন দেয়ালের গায়ে নিঃসঙ্গ প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়ায়। মানুষের মনের ক্ষত সম্ভবত তার ঘৃণার সমান বড়। গল্প-উপন্যাস আপনাকে শেখাবে কিভাবে একটা পুরো জীবন ক্ষমা না করে, অভিমান পুষে রেখে কাটিয়ে দেয়া যায়। আমি বলি কি, প্রাক্তনের সাথে সহজ মনোভাব নিয়েও বেঁচে থাকা যায়। ভালোবাসা অনুভব করার ক্ষমতা তো সবার থাকে না। আর ক্ষমা যদি না করতে পারেন তাহলে জীবনে সামনে এগোবেন কিভাবে?
আজকাল মানুষ বিচ্ছেদকে ভয় পায় না, মানুষ বিকল্পকে ঘৃণা করে। মানুষ মেনে নিতে চায় না তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন কেউ একজন, ইগোতে লাগে। আরে ভাই, কেউ একজন আপনাকে ছেড়ে অন্যকে নিয়ে ভালো আছে তাতে ক্ষতি কী? বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে আপনারও উচিত সমমানসিকতাসম্পন্ন কারো সাথে ভালো থাকা, টু সাম এক্সটেন্ড সুখে থাকা। অনবদ্য প্রেমেও ছেড়ে না যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও অনেকক্ষেত্রে সবাই রক্ষা করতে পারে না। মানুষের সীমাবদ্ধতা তো অসীম। অনেক সময় দেখা যায় হৃদয় ক্ষমা করে দিতে চায়, মন তখন বাধ সাধে। কেন ক্ষমা করবো? কিংবা পেছনে ফেলে আসা মানুষকে কি চাইলেই ক্ষমা করা যায়? ধরেন, জীবনে পাওয়া তো হয়না কত কিছুই। তাই বলে ক্ষমাহীন ভাবে বেঁচে থাকাটা খুব সুখের না। যদিও ক্ষমা করা বেশ কষ্টের ব্যাপার, তার চেয়েও কষ্টের বিষয় হচ্ছে মানুষকে ভুলভাবে চেনা। আর ক্ষমা করতে না পারলে কোনো একদিন স্মৃতির দাবানলে মৃত্যু হয় শেষে।
অনেক সময় দেখা যায় কেউ হয়ত কাউকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসে আছেন। কিন্তু সেই মানুষটির প্রতি কোনো রকম আকর্ষণ অনুভবই করছে না। কিন্তু তাকে ছেড়ে দিতেও মন চাইছে না কেবলমাত্র একে ওপরের কাছে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ থাকেন বলে। মানুষকে কাছ থেকে নয় বরং দূর থেকে দেখেই তাকে আমরা বিচার করতে থাকি। যার ফলে ভবিষ্যতে অনেক সময়ই বড় রকমের ধোকা খেতে হয়। সব সম্পর্ক সুন্দর সমাপ্তি হয় না। মাঝ পথে পথা আলাদা হয়ে গেলেই কেন ক্ষমাহীন হয়ে যেতে হবে। হিন্দি সিনেমা ‘ডিয়ার জিন্দেগী’তে কিছু সুন্দর এডভাইজ আছে। আমরা আসলে প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সব ভালোলাগার বিষয়গুলো একসাথে পেতে চাই। একটা চেয়ার পছন্দ করার আগে আমরা যেমন আরো দুই একটা চেয়ারে বসে কম্ফোর্টনেসটা যাচাই করে নিই। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তেমনটা করা বা হওয়া উচিত। অন্তহীন আমার আরেকটা প্রিয় সিনেমা। রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণা নয়, বরং শর্মিলা ঠাকুর কি অসাধারণ মুগ্ধতা নিয়ে একজন স্বল্পপরিচিত মানুষকে সারাজীবন ভালোবেসেছেন। অথচ বেশিরভাব মানুষের কেবল চাই চাই ভাবনা।
নেতিবাচক ঘটনাকে পুংক্ষানুপুংক্ষভাবে মনে রাখার দারুন ক্ষমতা থাকে সবার। জীবনটাকে কেঁদে না ভাসিয়ে হেসে ঊড়িয়ে দেয়াই বোধহয় উত্তম। তাই চলুন বরং প্রার্থনা করি, ঈশ্বর আমাদেরকে শক্তি দিন এমন বিষয় মেনে নিতে, যা আমরা বদলাতে পারবো না। জালাল উদ্দিন রুমির একটা কোটেশন আছে, বৃক্ষের মতো হও, আর মরা পাতাগুলোকে ঝরে পড়তে দাও।
বি. দ্র. প্রাক্তনকে শুধু ক্ষমা করলেই চলবে না, এমনদিনে প্রয়োজনে প্রাক্তনের কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৭