আমার ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে মূলত ১৪এপ্রিল থেকে। বন্ধুদেরকে নিজ দায়িত্বে লিখে লিখে পাঠিয়েছি, 'একটু মন দিয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া করলে এই আমার মতো ঈদে-গ্রীষ্মে-শীতে পক্ষকাল ছূটি কাটাতে পারতা'। তো ছুটি আর গরমের তাপদাহ মিলিয়ে নাটক দেখা শুরু করলাম। বাংলা নাটক কোনটা দেখবো, কারটা দেখবো ভাবতে ভাবতে যাহের আলভি'র অভিনীত নাটক গুলো দেখা শুরু করলাম। এই পর্যন্ত আমি আলভির ২৬টা নাটক দেখেছি। মোটাদাগে আলভির অভিনয় দক্ষতা ভালো। সাবলীল। হাসিটা সুন্দর। বাংলা নাটকের জগতে লম্বা রেসে থাকবে। আফরান নিশোর পর তাকে আমি ভালো অবস্থানে রাখি।
গতকাল রাতে দেখা নাটকের নাম এক্সপোজড। মূল চরিত্রে জাহের আলভি আর পারসা ইভানা। নাটকের কাহিনিতে খুব বেশি চমক নাই। সেই পুরনো কাসুন্দি প্রেম এবং অবহেলা। কিন্তু ডায়লগগুলোর একটা হলো, তুমি তো আমার পেটে বাচ্চা দিয়ে চলে গেছিলা। (আল্লাহ গো) আমি ভাবতাম প্রেমিক চলে গেলে দু:খ দিয়ে যায়, আজ জানলাম কেউ কেউ পেটে বাচ্চাও দিয়ে যায়!
পারসা ইভানার অভিনয় এতই বাজে যে একটা মর্মস্পর্শী ঘটনাকে সে কুৎসিততম ভাবে অভিনয় করেছে। লাউড ভয়েজ, কাজের বেটি টাইপের এটিটিউড। এত বাজে অভিনেত্রী কিভাবে টেলিভিশন নাটকে রোল পায়! পরিচালক বান্নার কাজ আমার ভালো লাগে, তবে এইটা জঘন্য লেগেছে। আপাতত বিরতি। ২০২৩সালে দাঁড়িয়ে পেটে বাচ্চা দিয়ে যাওয়ার ডায়লগ আমি নিতে পারলাম না। সরি...
একই প্লটে কয়েকবছর আগে একটা নাটক দেখেছিলাম। ইন্তেখাব দিনার এবং নারী অভিনেত্রীর নামটা মনে পড়ছে না। ওরা দুজন মফস্বলে থাকে। পারিবারিক জটিলতা ও সামাজিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। ইন্তেখাব বিদেশ পাড়ি জমায়। কথা দিয়ে যায় ফিরে আসবে। মেয়েটা প্রেগন্যান্সির কথা ইন্তেখাবকে জানাতে পারে না। সিঙ্গেল মাদার হিসেবে সন্তান জন্ম দেয় এবং সামাজিক কারণে দত্তক দিয়ে দেয়। ১৯বছর গড়িয়ে যায়। দত্তক নেয়া পরিবার বিদেশ সেটেল্ড হবে বলে নারী চরিত্রটি কন্যাকে দেখতে ঢাকা আসে। অবশ্যই পরিচয় গোপন করে দেখা করে। এবং ঘটনা চক্রে ইন্তেখাব দিনারের সাথে দেখা হয়ে যায়। দুজনের মধ্যে কথা হয়। ইন্তেখাব কন্যার কথা জানতে পেরে একটি বারের জন্য দেখা করতে চায়। নারী চরিত্রটি স্পষ্ট ভাবে জানান 'তুমি জানবে এই পৃথিবীতে তোমার সন্তান আছে এবং তাকে তুমি কোনোদিনই দেখতে পাবে না। আমার সাথে করা অন্যায়ের এটাই তোমার উপযুক্ত শাস্তি! আহ্ কি প্লট, কি দারুণ অভিনয়।
বাংলা বর্ণমালা আমরা সবাই জানি, কারণ লেখাপড়ার শুরুই তো হয় বর্ণপরিচয় দিয়ে। তবুও চর্চার অভাবে ব্যঞ্জনবর্ণের শেষঅংশটা অনেকেরই ভুল হয় কিংবা এলোমেলো হয়ে যায়। তো এডিটিং কোর্সের ক্লাসে বলে রাখলাম, সবাই বাংলা বর্ণমালা রিভাইজ দিয়ে নিয়েন। যে কোনো দিন ক্লাসে লিখতে দিবো। একটা সাদা পেইজ এবং পাঁচমিনিট সময়, বর্ণমালা লিখতে হবে। একজন বাদে সবাই ঠিক লিখলো। যে একজন ভুল লিখেছে। বর্ণমালার ১১ টি স্বরবর্ণ ঠিক আছে কিন্তু ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে ২৮টা লিখেছে তাও এলোমেলো ভাবে। মেয়েটা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী। এত সাধারণ ভুল নামিরার করার কথা না। ক্লাসে বললাম, নামিরা আপনি ক্লাসের পরে আমার সাথে একটু দেখা করবেন তো। নামিরা রুমে আসলো, বসলো, কুশলাদি বিনিময়ের পর বর্ণমালা লেখা পেইজটা তার সামনে দিয়ে জানতে চাইলাম কোনো সমস্যা চলছে। গভীর বিষাদমাখা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি কিছু মনে রাখতে পারছি না ম্যাম। সবকিছু গুলিয়ে ফেলছি। আই নিড ইয়োর হেল্প। আচ্ছা আপনি আসতে পারেন, লেখাপড়াটা একটু মন দিয়ে করেন প্লিজ।
নামিরার প্রেমিকও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নামিরা ভর্তি হওয়ার চতুর্থদিন থেকে এই ছেলে তার অফিসিয়াল বয়ফ্রেন্ড। তাদের ফেসবুকের প্রতিটি ইঞ্চি জুড়ে তাদের প্রেমের প্রকাশ। সেই প্রেম মাত্র ১০মাসে আইসিইউতে! আহা প্রেম, আহারে প্রেম। বাদশা'র নতুন গান সানাক-এ একটা সুন্দর লাইন আছে 'মুঝে নাচনা কা শখ থা, উসে নাচানা আতাথা'।
একদিন নামিরাদের ক্লাসে কোনো একটা প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে বললাম, 'যদি কোনো সম্পর্ক ভেঙে যায়, মনে রাখবেন ঐটা সস্তা ছিলো...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২৩ সকাল ৯:১৮