স্মরণকালের প্রলয়ংকরী সাইক্লোন সিডরের ৫ বছর অতিবাহিত হলেও বাগেরহাটের শরণখোলাবাসীর কাঙ্খিত টেকসই বেড়িবাধ ও উপজেলা সদর রায়েন্দা শহর রক্ষাবাঁধ আজও নির্মিত হয়নি। ভয়াল সিডরের সেই ১৫ নভেম্বর আজ। এখনো দিনটির কথা স্মরণ করে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মানুষ। টেকসই বাঁধের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তারা। তবুও তাদের স্বপ্নের বাঁধে বাস্তবতা পায়নি। সর্বস্ব হারানো মানুষগুলো শুধু পেয়েছেন সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিশ্রুতি আর আশারবাণী।
উপজেলার সব এলাকাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ বেষ্টিত। তা-ও নাজুক। অথচ বাণিজ্যিক শহরটি বরাবরই রয়ে গেছে বেড়িবাঁধের বাইরে। বলেশ্বর পাড়ের এ শহরটিতে রয়েছে সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক, সরকারি খাদ্য গুদাম, পোস্ট অফিস, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, তিনটি সারের গুদাম, পাঁচটি বরফ কল, একটি বেসরকারি হাসপাতাল, দুটি প্রাইমারী ও একটি মাধ্যমিক স্কুলসহ পাঁচ সহস্রাধিক পরিবারের বসবাস। ফলে সিডর শরণখোলার অরক্ষিত অর্থনীতির মূল কেন্দ্রকে ভাসিয়ে নিয়েছে খুব সহজেই। যার ক্ষতির পরিমান কয়েক হাজার কোটি টাকা। সেদিনের সেই ধ্বংসের কথা মনে করে দিশেহারা হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। তারা তাদের সম্পদ রক্ষায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ ও শহর রক্ষাবাধের দাবিতে আন্দোলন মুখর হয়ে ওঠেন। গঠন করেন ‘শরণখোলা শহর রক্ষা বাঁধ আন্দোলন বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। এর ব্যানারে বলেশ্বর পাড়ের রায়েন্দার সুনীল শিকারির বাড়ি থেকে রাজৈর মারকাজ মসজিদ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার শহর রক্ষাবাঁধ এবং রায়েন্দা থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন খুঁড়িয়াখালী বাজার পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মানের দাবি জানানো হয়। সংগঠনটির পক্ষ থেকে তৎকালিন তত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
জানা যায়, শরণখোলাবাসীর আন্দোলন-সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের তৎকালিন সেনা প্রধান মঈন-উ আহমেদ সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী ওই সময় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামত এবং শহর রক্ষাবাঁধ নির্মানে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করতে বলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। তখন জরুরী ভিত্তিতে বিধ্বস্ত বাঁধ মেরামত করা হলেও প্রস্তুতকৃত রায়েন্দা শহর রক্ষা বাঁধের মাটির কাজের ৯০ কোটি টাকার প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসার পর পানি সম্পদ মন্ত্রী ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক টিম এলাকা পরিদর্শন শেষে টেকসই বেড়িবাঁধ ও শহর রক্ষাবাঁধ নির্মানে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার আর কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেনি। শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আকন বলেন,উপজেলা শহর রক্ষা বাধ সহ অন্যান্য বেড়িবাঁধ এ অঞ্চলের মানুষের জীবন মরনের সমস্যা । অবিলম্বে এ বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন ।
এব্যাপারে শরণখোলা শহর রক্ষাবাঁধ আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক এমএ রশিদ আকন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, শুধু আশার বাণী শুনতে শুনতে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর বাঁধের বাইরে অরক্ষিত থাকা সত্বেও সরকার শহর রক্ষাবাঁধ বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেনা। অনেকটা আশাহত হয়ে তিনি বলেন, তবুও আমাদের আন্দোলন চলবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, অতি সম্প্রতি ৭ কিঃমিঃ নতুন বেরীবাধ নির্মানের জন্য টেন্ডারপূর্বক কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। বাকি কাজ ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে করা হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




