ইউরোপ জুড়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শ্রমিকরা। ‘কর্ম ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে একযোগে নজিরবিহীন ধর্মঘট ও উন্মত্ত বিক্ষোভ শুরু করেছে তারা। বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির প্রতিবাদে এই ধর্মঘট চলছে।
ইউরোপীয় ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (ইটিইউসি) পুরো ইউরোপ জুড়ে শুরু হওয়া শ্রমিক ধর্মঘটের সমন্বয় করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৩টি দেশের ৪০টি গোষ্ঠী এ সব ধর্মঘটের সঙ্গে জড়িত।
ইটিইউসি নেতা জুডিথ কিরটন-ডার্লিং বলেছে, ইউরোপে ব্যয় সংকোচন নীতি কোনো কাজে আসছে না বরং বৈষম্য ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যয় কমানোর ফলে অর্থনৈতিক সংকটের কোনো সমাধান হচ্ছে না বলে সে অভিযোগ করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি স্পেনে মধ্যরাত থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। একই ঘটনা ঘটেছে পর্তুগালেও। স্পেনে প্রতি চারজন শ্রমিকের মধ্যে একজন বেকার হয়ে পড়েছে। এবং দেশটির অর্থনীতিতে চলছে গভীর মন্দা।
সাধারণ ধর্মঘটে স্পেন ও পর্তুগালের পরিবহন, ব্যবসা এবং স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানী মাদ্রিদসহ অন্যান্য শহরে পুলিশ ও বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
স্পেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৩২ জনকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেছে। আর সেখানে আহত হয়েছে ১৫ জন।
মাদ্রিদে সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
স্পেন ও পর্তুগালে হাজার হাজার বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। যাত্রা শুরুর আগে যাত্রীদেরকে বিমানের শিডিউল দেখে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিমান সংস্থাগুলো।
গ্রিস, বেলজিয়াম এবং ইতালিতেও ধর্মঘট হয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য দেশগুলোতে বিক্ষোভ মিছিলের পরিকল্পনা নিয়ে রাস্তায় নামতে যাচ্ছে শ্রমিকরা।
লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রীটে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে শ্রমিকদের। পর্তুগাল ও স্পেনে বাতিল করা হয়েছে ৮শ’ ফ্লাইট।
লন্ডনের হিথরো বিমান বন্দরে ৩৯টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ট্রেনে করে ব্রাসেলস যেতে মানা করা হয়েছে।
ইজিজেট ইউরোপের সাথে তাদের ২০টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। পর্তুগাল ও স্পেনে ফ্লাইট বাতিল করায় ওই দিনের অন্তত ৪০ ভাগ যাত্রী আটকা পড়েছে। টিএপি বাতিল করেছে তাদের ৪৫টি ফ্লাইট।
তবে ইউরোস্টার বলছে, শ্রমিকদের এধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি আরো বাড়তে পারে।
মটরগাড়ি, বিদ্যুৎ, জাহাজ নির্মাণ ও নির্মাণ শিল্পের শ্রমিকরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে।
ইউরোপীয়ান ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বারনাডেট্টি সেগল বলেছে, আমরা দেখাতে চাই বাজার ব্যবস্থাপনার নীতি পরিবর্তন করতেই হবে। কারণ আমরা আগের চেয়ে বেশি বেকার হয়ে পড়ছি, কাজ হারাচ্ছি।
সেগল বলেছে, এখন পরিস্থিতি সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এখনই সময় নীতি পরিবর্তন করার। যারা কর দিচ্ছে সেই সব সাধারণ মানুষ মন্দায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের ক্ষোভের পরিমাণ কল্পনার বাইরে। অথচ যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সামান্যই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শ্রমিক নেতারা বলছে, কৃচ্ছতা সাধনের পরিকল্পনা দিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলা যাবে না। এ নীতি উৎপাদন ব্যবস্থার পরিপন্থী।
স্পেন ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। কিন্তু সারা স্পেন জুড়ে কাজের জন্যে চলছে হাহাকার। কার্যত স্পেন, ইটালি, পর্তুগাল, গ্রীসসহ ইউরোপের ২৩টি দেশে সরকারী ব্যয় সংকোচ নীতির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছে ট্রেড নিয়নগুলো। অচল হয়ে পড়েছে জনপরিবহন ব্যবস্থা।
স্পেনের কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। ধর্মঘট চলছে ফ্রান্স, জার্মানী এবং পোল্যান্ডেও।
গণ পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় বিমানের ফ্লাইট বাতিল বা সময় পরিবর্তন হচ্ছে।
মাদ্রিদ বিক্ষোভকারীরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেবার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। স্পেনের আরো কয়েকটি শহরে সংঘর্ষ হয়েছে।
বিশেষ করে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ইউরোপীয় দেশগুলো ইউরোজোনের সংকটে সবচাইতে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেকারণে সেসব দেশেই বিক্ষোভ বেশি হচ্ছে।
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের বাসিন্দা পাকুই ওলমো বলছে, সে তার সন্তানদের কথা ভেবেই বিক্ষোভে নেমেছে।
ইতালির রোমের রাস্তায় একজন বিক্ষোভকারী বলে, এ এক ভয়াবহ অবস্থা, চারদিকে শুধু ছাঁটাই, ছাঁটাই আর ছাঁটাই। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে শুধু বিপদই দেখতে পাচ্ছি।
সবজায়গাতেই এক কথা, অর্থনীতিকে টেনে তুলতে গিয়ে সরকারগুলো যে ব্যয়সংকোচ কর্মসূচি নিয়েছে তা কাজ করছে না। বেকারত্ব বাড়ছে, মানুষের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ।
শ্রমিক নেতারা বলছে, বেলজিয়ামেই ব্যয়সংকোচের কি পরিণতি হয়েছে দেখুন। ক’দিন আগেই শুনেছি ফোর্ড কোম্পানি দশ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করছে। আরো নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তাদের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।
অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছে এতগুলো ইউরোপিয়ান দেশে যখন মন্দা চলছে তখন এই ব্যয় সংকোচ চালিয়ে যাওয়াটা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




