বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠছে আরেক বাংলাদেশ। উজানি নদীর পানিবাহিত পলি জমে নোয়াখালীর দক্ষিণে সাগরের বুকে জেগে উঠছে শতাধিক ছোট দ্বীপ। কোনোটি জোয়ারে ডুবে যায়, ভাটায় আবার ভেসে ওঠে। কোনোটির কিছু অংশ জোয়ারেও ডোবে না। একটু পানির নিচে থাকা নতুন করে জেগে ওঠা এসব ভূমির পরিমাণ প্রায় ৩৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার। সেই হিসাবে সব দ্বীপ ও সাগরের গর্ভে জমা পলিতে কয়েক বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের সমপরিমাণ ভূমি সাগরের বুকে জেগে উঠবে বলে আশা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
নোয়াখালী জেলার দ্বীপ-উপজেলা হাতিয়ার দক্ষিণে জেগে ওঠা দ্বীপগুলো ঘুরে দেখা যায়, সমুদ্রের বুকে হাজার হাজার একর ভূমি জেগে উঠছে। নৌযানে হাতিয়ার দমারচর সাগরটিলা, নিঝুম দ্বীপ, কালামচরসহ একাধিক দ্বীপ ঘুরে দেখা গেছে, নোয়াখালীর দক্ষিণে বয়ারচর থেকে শুরু করে হাতিয়া উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণ অংশে এসব চর জেগে উঠছে। এর মধ্যে অধিকাংশ দ্বীপের নামকরণ করা হয়নি এখনও। এখানকার বড় দ্বীপগুলোর মধ্যে রয়েছে বয়ারচর, নলারচর, চর প্রিয়া, চর নূর ইসলাম, সাহেবরানীরচর, ডেলিয়ারচর, ঢালচর, মৌলভীরচর, চর গিয়াসউদ্দিন, রহমানচর, চর কালাম এবং নিঝুম দ্বীপ। এর মধ্যে পাঁচটি চরে মানুষের বসতি রয়েছে। চরগুলোর সঙ্গে প্রতিবছর নতুন ভূমি জেগে ওঠায় বেড়ে
যাচ্ছে দ্বীপের আয়তন। সবচেয়ে বড় আয়তনের দ্বীপ জেগে উঠছে নিঝুম দ্বীপের দক্ষিণে দমারচর সাগরটিলায়। হাতিয়া উপজেলার পূর্ব-দক্ষিণ অংশ দিয়ে বাড়ছে এ দ্বীপটি।
সাগরটিলায় গিয়ে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায় শুধু জেগে ওঠা চরের নতুন সবুজ ঘাস আর ঘাস। দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, দমারচর সাগরটিলার দক্ষিণ অংশের সাগরের দিকে প্রতিবছর নতুন ভূমি জেগে উঠছে। ভরা জোছনা সম্পূর্ণ চরটি জোয়ারে প্লাবিত হলেও ভাটায় চোখে পড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ একর ভূমি। দমারচর সাগরটিলার ভূমিহীন সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, দমারচরে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ছয় ঘণ্টা একটানা হেঁটেও চরের সীমানা পাওয়া যায়নি। আবার পূর্ব দিক থেকে রাতে তাকালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কারখানাগুলোর আলো দেখা যায়। চরটি ছোট ছোট খাল দ্বারা পাশের দ্বীপগুলো থেকে বিছিন্ন।মেঘনা মোহনা পর্যবেক্ষণ প্রকল্প (এমইএস) ১৯৯৭ সালে এক সমীক্ষা চালায় নোয়াখালীর দক্ষিণে ২০০ কিলোমিটার সাগরগর্ভে। ওই সময় তাদের সমীক্ষায় ধরা পড়ে, নোয়াখালী থেকে দক্ষিণে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত সাগরের গভীরতা গড়ে মাত্র ১৫ ফুট। পূর্ব-পশ্চিমে গড়ে ৩০ কিলোমিটার এলাকায়ও সাগরের গভীরতা একই। ১৮০ কিলোমিটার যাওয়ার পর আরও ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের প্রথম খাঁড়ি, গভীরতা ১২০ ফুট। ওই সমীক্ষার ফল থেকে ধারণা করা হয়, পরবর্তী ২০ বছরের মধ্যে বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকায় নতুন ভূমি জেগে উঠবে। শুধু হাতিয়ার দক্ষিণেই জেগে ওঠা ভূমির পরিমাণ হতে পারে ৬ থেকে ৭ লাখ একর। হাতিয়া উপজেলার একাধিক বাসিন্দা জানান, সমীক্ষার পর যে ধারণা করা হয়েছিল তার অনেক আগেই চর জাগতে শুরু করেছে সাগরের বুকে। প্রতিবছর জেগে উঠছে হাজার হাজার একর ভূমি। এর ফলে অচিরেই দেশের মূল ভূখ- নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়বে সন্দ্বীপ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




