নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘দেশের মুহব্বত জুযয়ে ঈমান।’
স্বাধীনতার ৪১ বৎসর পূর্ণ হলেও রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করা হচ্ছে না কেন?
দেশপ্রেমিক জনগণ এ বিজয়ের মাসেই রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের শাস্তির বাস্তবায়ন দেখতে চায়।
তাই শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের সরকারের জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে,
দেশী-বিদেশী অপশক্তির চাপে নতি স্বীকার না করে এই বিজয়ের মাসেই যালিম যুদ্ধাপরাধী ও দেশদ্রোহীদের অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি বাস্তবায়ন করে জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করা।
অন্যথায় জনসমর্থন হারানোর পাশাপাশি সরকারকে এজন্য বিরাট মাশুলও দিতে হতে পারে।
পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার সুস্পষ্ট নির্দেশ মুবারক ও দুনিয়াবী যথেষ্ট দলীল-প্রমাণ থাকার পরও যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের শাস্তির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না কেন? পবিত্র ইসলাম উনার দৃষ্টিতে ’৭১-এর রাজাকার, আল-বাদর, জামাতী, ওহাবী, সালাফী, খারিজীরা অত্যন্ত ঘৃণিত অপরাধী। আর সে অপরাধের বিচার না করাও অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তাই দেশী-বিদেশী যতো চাপই থাকুক না কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা থেকে পিছপা হওয়া যাবে না।
পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৪৫ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি এ কিতাবে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমসমূহের বিনিময় সমান জখম। অতঃপর যে ক্ষতিগ্রস্তদের বিনিময় প্রদান করে সে গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। যেসব লোক মহান আল্লাহ পাক তিনি যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী ফায়ছালা করে না, তারাই যালিম।”
১৯৮১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় বলা হয়েছে, মানব ইতিহাসে যতো গণহত্যা হয়েছে তার মধ্যে স্বল্পতম সময়ে সব থেকে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যায়। দৈনিক গড়ে ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার মানুষকে তখন হত্যা করা হয়।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কিসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালোভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। হে জ্ঞানীগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-১৭৮, ১৭৯)
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের তথ্য প্রমাণাদি নেই যে তা নয়। যা আছে তা যথেষ্ট। এর থেকেও কম প্রমাণ নিয়ে আর্জেন্টিনায় নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এর বাইরে সম্প্রতি চিলি, কম্বোডিয়া ও কসোভোর গণহত্যার বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ প্রমাণে বিভিন্ন দেশের গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোকেও পেশ করা যায়।
বিদায় হজ্জের খুতবায়, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র আরাফা শরীফ উনার ময়দানে ‘পবিত্র খুতবা শরীফ’ উনার মধ্যে বলেছেন, “আজকের এ দিন যেমন পবিত্র তেমনি প্রতিটি মুসলমানের জান-মালও পবিত্র। এমনকি তিনি মুসলমান উনার জান-মাল রক্ষার জন্য জিহাদের অনুমতিও দেন।”
রাজাকার, আল-বাদররা যে নরহত্যা, সম্ভ্রমহরণ ও লুণ্ঠন করেছে তাতে তারা লাখ-লাখ বান্দার হক্ব নষ্ট করেছে অর্থাৎ হক্কুল ইবাদ নষ্ট করেছে। আর আমভাবে হক্কুল ইবাদের গুনাহ মহান আল্লাহ পাক তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বান্দা তা ক্ষমা না করে।
মুনরহত্যার বদলা সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ ও কঠোর নির্দেশ মুবারক থাকার পরও যারা যুদ্ধাপরাধী জামাতী, ওহাবী, সালাফী, খারিজীদের বিচার করবে না, তারাও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে।
মূলকথা হলো- বর্তমান সরকার রাজাকার তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ব্যাপারে ওয়াদাবদ্ধ। তাহলে পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার সুস্পষ্ট নির্দেশ মুবারক ও দুনিয়াবী যথেষ্ট দলীল-প্রমাণ থাকার পরও রাজাকার তথা যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের শাস্তি এখনো কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না? এটা জনগণের প্রশ্ন? দেশপ্রেমিক জনগণ এ বিজয়ের মাসেই রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের শাস্তির বাস্তবায়ন দেখতে চায়। কাজেই শতকরা ৯৭ ভাগ মুসলমান উনাদের দেশ বাংলাদেশের সরকারের জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে- দেশী-বিদেশী অপশক্তির চাপে নতি স্বীকার না করে এই বিজয়ের মাসেই যালিম যুদ্ধাপরাধী ও দেশদ্রোহীদের শাস্তি কার্যকর করে জনগণকে দেয়া ওয়াদা পূরণ করা। অন্যথায় জনসমর্থন হারানোর পাশাপাশি সরকারকে এজন্য বিরাট মাশুলও দিতে হতে পারে।
-০-

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




