somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা শুধু কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সন্তুষ্ট নই বরং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সব রাজাকারদেরও বিচার চাই।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান বিজয় দিবস ও প্রসঙ্গ কথা।
আমরা শুধু কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সন্তুষ্ট নই বরং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শের ভিত্তিতে আমরা সব রাজাকারদেরও বিচার চাই।


আজ ০২ মাহে ছফর, ১৪৩৪ হিজরী, ১৮ সাবি’, ১৩৮০ শামসি, ০২ পৌষ, ১৪১৯ ফসলী সন, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২ ঈসায়ী সন, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার স্বাধীন বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ৫৬ হাজার বর্গমাইল এদেশের আকাশে ৪০ বছর পূর্বের এদিনটিতে প্রথম উঠেছিল এক স্বাধীন, সমুজ্জ্বল, অত্যুজ্জ্বল অন্যরকম সূর্য। ১৯৭১-এর এদিনে যে সূর্যের উদয় হয়েছিল তা ছিল বাঙালি বিজয়ের সূর্য। এদিন তাই এ ভূখ-ের বাঙালি জনগোষ্ঠীর হাজার বছরের ইতিহাসের মহান গৌরবময় দিন।
পঁচিশে মার্চ কালো রাত্রিতে শুরু হওয়া পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যাযজ্ঞ আর নৃশংসতার দীর্ঘ নয়টি মাসে রক্তস্নাত পথে পাড়ি দিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর চার পাঁচ লাখ ধর্ষিতা মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল অমূল্য এই স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের এই দিনেই আজকের পৌষেরই এক পড়ন্ত বিকেলে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল বীর বাঙালি। ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রস্তুত হয়েছিল মঞ্চ। পাশের ঢাকা ক্লাব থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আনা হয়েছিল একটি টেবিল ও দুটি চেয়ার। পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জোন-বি এবং ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে ৯১ হাজার ৫৪৯ জন হানাদের সেনা ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণ দলীলে বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে সই করে।
১৯৭১ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনী দালিলিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এই দিন থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অনেক রক্ত, অনেক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
তাই আনন্দ উৎসব এবং শোক-শ্রদ্ধার এক অভূতপূর্ব সম্মিলনে দেশের সর্বত্রই আজ পালিত হবে ৪২তম বিজয় দিবস, মুক্তযুদ্ধে বিজয়ের ৪১তম বার্ষিকী। তবে আনন্দঘন এই দিনেও শহীদ পরিবারের সদস্যদের বুকের ভেতর থামেনি রক্তক্ষরণ। স্বজন হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে আজ তারা অনেকটাই ক্লান্ত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। গণহত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান। বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন দেশে এখনও অবহেলিত, অপমানিত। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করছে, মন্ত্রী হয়েছে। গেল নির্বাচনেও মনোনয়ন পেয়েছিল ২৫ যুদ্ধাপরাধী।
অপরদিকে বিজয়ের ৪১ বছরে এসেও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ হয়নি। এ নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। কারণ দেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রকাশ করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন তালিকা। এতে অমুক্তিযোদ্ধাদের শনাক্ত করা যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে, তেমনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ধারণেও রয়েছে অস্পষ্টতা। খোদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলামের অভিযোগ, দেশের প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের হাতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট রয়েছে।
তবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মতে এ সংখ্যা আরও বেশি। সংস্থাটির মতে, সারা দেশে অমুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার।
অভিযোগ রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মচারী আর একশ্রেণীর দালালের কারণে হয়রানি ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। দ্রুত কাজ করে দেয়ার কথা বলে বখশিশের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। যারা দিতে পারছেন না, তাদের কাজ আর হচ্ছে না। ঘুরতে হচ্ছে মাসের পর মাস।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে এক রাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সাড়ে চার দশকেরও অধিক সময় পাড়ি দেয়ার পর এ স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে আজ সেই হিসাব নেয়ার দিন।
স্মর্তব্য, ৪১ বছর একটি রাষ্ট্রের পরিপূর্ণতার বছর। বাংলাদেশকে এখন কোনক্রমেই আর শিশু রাষ্ট্র বলা যায় না।
অতএব, আজ আমাদের অনুভবে অন্তরের অন্তঃস্থিত প্রগাঢ় প্রশ্নের জোরদার বহিঃপ্রকাশ দরকার যে, আমাদের রক্তের, গর্বের মাতৃভূমি-
কেন এখনও বিশ্বের অনুন্নতশীল দেশের সারিতে?
কেন স্বাধীনতার ৪১ বছরেও হয়নি মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত?
কেন আজও মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করে খায়?
কেন আজো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের জন্য হন্যে হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে?
কেন এখনও অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও দেশের অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষের দিনে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া জোটে না?
কেন হাজার হাজার কোটি টাকার সাহায্যের পরও সিডরে, আইলা ক্ষতিগ্রস্তদের এখনও ঘরবাড়ি হলো না?
কেন খোদ রাজধানীর ফুটপাতে শুয়ে থাকে লাখ লাখ লোক। কেন কেবল রাজধানীতেই ৬০ লাখ লাঞ্ছিত বস্তিবাসীর বাস?
কেন স্বাধীনতা উত্তর ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ তকমার পর আজও
চাল সিন্ডিকেট, তেল সিন্ডিকেট
চিনি সিন্ডিকেট, বহাল তবিয়তে থাকে?
কেন এদেশে ক্ষমতাসীনরা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে?
কীভাবে স্বাধীন দেশে রাজাকাররা মন্ত্রীর পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে ঘুরতে পারে?
কেন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে বিবৃত ‘দেশকে স্বাধীন করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ’ বলার পরও ‘মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি ও চেতনা ছিল পবিত্র দ্বীন ইসলাম’ সে কথা প্রতিফলিত হয় না?
কেন আজ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে ঘৃণিত রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কেনার হাট বসাতে পারে?
কেন আজ রাজাকার জামাতীরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রলোভনে প্ররোচিত করতে পারে?
একথা আজ সর্বত্র বিস্তার করা দরকার যে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকাররা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতার কোন সুফল পেতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোন সমাবেশই কেবল নয় বরং কোন ধরনের কোন সমাবেশের অনুমোদন তারা পেতে পারে না।
পাশাপাশি আমরা বলব পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আঙ্গিকেই স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের সমাধান হওয়া দরকার। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে যে কেউ একটা বদ কাজ করলো পশ্চিম প্রাপ্ত থেকে যে কেউ তা সমর্থন করলো তার সমান গুনাহ তার হবে।” আমরা তাই শুধু কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সন্তুষ্ট নই। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনকারী সব রাজাকার তথা গোটা জামাতে মওদুদী এবং তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থনকারী সব শিবির কর্মী এবং তাবৎ ধর্মব্যবসায়ীদেরও যথাযোগ্য বিচার চাই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমেরিকার মতো একটি খ্রিস্টান দেশ থেকে যদি তাদের রাজাকারদের উৎখাত করা হতে পারে তবে তা ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে তা হতে পারবে না কেন? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৭৮২ সালে যেসব আমেরিকাবাসী ব্রিটেনের পক্ষ নিয়েছিল স্বাধীনতার পর তাদের প্রত্যেককে আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
আমাদের দেশের রাজাকারদের মতো ওদেরকে বলা হত ‘লয়েলিস্ট’। আমেরিকায় যদি কোন ‘লয়েলিস্ট’ না থাকতে পারে তবে আমাদের দেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে কোন মতেই কোন রাজাকার থাকতে পারে না। সঙ্গতকারণেই আমরা স্পষ্ট ও বুলন্দ আওয়াজ এবং তীব্র উচ্চারণ করছি, ‘রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই; পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রাজাকারের ঠাঁই নেই।’
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×