somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউজপ্রিন্টের বর্তমান উচ্চমূল্য সংবাদপত্রের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ সরকারের উচিত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে সংবাদপত্র বর্তমানে নানা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে। সংবাদপত্র প্রকাশনার ব্যয়ভারও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। দৈনিক পত্রিকা ছাপানোর প্রধান উপাদান নিউজপ্রিন্ট উচ্চ মূল্যে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এবং আমদানিকৃত নিউজপ্রিন্টের উপর বিভিন্ন শুল্ক ও করের কারণে সংবাদপত্র শিল্পকে বড় সমস্যার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।
সরকারের আশ্বাস ছিল যে, সপ্তম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়িত করা হলে বিজ্ঞাপনের মূল্যহার ও পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। সে আশ্বাসও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান বিশ্বে নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়েই চলেছে। এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানিকৃত নিউজপ্রিন্টের উপর বিভিন্ন শুল্ক ও করের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক বছরেই এক ডলারের মূল্য বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। এই কারণেও নিউজপ্রিন্ট বাবদ আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
এসআরও ১৬৮/২০০৯ অনুসারে দৈনিক পত্রিকার নিউজপ্রিন্ট বর্তমানে আমদানি শুল্ক ৩% এবং ভ্যাট ১৫%, অর্থাৎ সব মিলিয়ে মোট ১৮% শুল্ক কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিগত দু’বছর প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট গড়ে প্রায় ৭০০ ডলারে আমদানি করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে উচ্চ শুল্ক পরিশোধ, পরিবহন ব্যয়, শ্রমিক বেতন, ব্যাংক সুদ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ মিলিয়ে টনপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৭৫,০০০/- টাকা। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জেনারেটর ব্যবহারের ফলে পত্রিকা ছাপা খরচও বাড়ছে ক্রমাগত। এই বিপুল অর্থ ব্যয়ে নিউজপ্রিন্ট কিনে এবং তা ছেপে পত্রিকা প্রকাশ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
দুই বছরের মাথায় সংবাদপত্রে ব্যবহার উপযোগী নিউজপ্রিন্টের দাম দেশি-বিদেশি ভেদে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কাগজের দাম বাড়ায় সংবাদপত্র প্রকাশনার ব্যয়ভার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। উচ্চহারে শুল্কের কারণে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি করেও চলতে পারছে না সংবাদপত্রগুলো। পাশাপাশি প্রকাশনার অন্যান্য উপকরণ ও বিদ্যুতের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির ফলে সংবাদপত্রসহ গোটা প্রকাশনা শিল্প গভীর সঙ্কটের মুখোমুুুখি।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে দেশের বাজারে মানভেদে প্রতিটন নিউজপ্রিন্টের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৪ হাজার টাকা। একই মানের কাগজ বর্তমানে ৫৮ হাজার থেকে ৬৬ হাজার টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
দেশে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত সংবাদপত্র সংখ্যা কয়েকশ। এসব সংবাদপত্র বর্তমানে নানা রকম সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে। সংবাদপত্র প্রকাশের প্রধান উপকরণ নিউজপ্রিন্ট। দেশীয় নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে এর চাহিদার সামান্য অংশই পূরণ সম্ভব হয়। অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের দেশি নিউজপ্রিন্টের মূল্য নিয়ন্ত্রণেও কোন লাগাম নেই। কোন কোন উৎপাদক বাজারে একচেটিয়া কর্তৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে সংবাদপত্রকে জিম্মি করে ফেলতেও সচেষ্ট। এ বাস্তবতায় আমদানিকৃত নিউজপ্রিন্টের উপর এ শিল্পকে অনেকটাই নির্ভর করতে হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১৮ শতাংশ হারে শুল্ক ও কর পরিশোধের যে ব্যবস্থা সেটা সংবাদপত্রের অস্তিত্বের জন্যই হুমকিস্বরূপ।
নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংবাদপত্রের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় কাগজের ব্যয় মেটাতে। সংবাদপত্র বিক্রি ও বিজ্ঞাপন থেকে যে আয় হয় তার সিংহভাগই কাগজের পিছনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন কাগজের মূল্য বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতেই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় সংবাদপত্র মালিকদের। বিশেষ করে আমার দেশসহ যেসব পত্রিকা সরকারের রোষানলে পড়ে চার বছর ধরে বিজ্ঞাপনবঞ্চিত, তাদের কঠিন টানাপড়েনের মধ্যে সংবাদপত্রের প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।
সংবাদপত্র শিল্পের বর্তমান অবস্থায় সরকারি বিজ্ঞাপনের মূল্য ও পরিমাণ বৃদ্ধি, নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন দাবি পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে সংবাদপত্র প্রকাশ সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।
এ অবস্থায় সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্টের উপর থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং সরকারি বিজ্ঞাপনের মূল্য ও পরিমাণ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে তা পত্রিকা প্রকাশের ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের বোঝা কমিয়ে আনা যেমন সহায়ক হবে, তেমনি সংবাদপত্র শিল্প যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখাও সহজ ও সম্ভব হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×