বাংলাদেশে সংবাদপত্র বর্তমানে নানা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে। সংবাদপত্র প্রকাশনার ব্যয়ভারও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। দৈনিক পত্রিকা ছাপানোর প্রধান উপাদান নিউজপ্রিন্ট উচ্চ মূল্যে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এবং আমদানিকৃত নিউজপ্রিন্টের উপর বিভিন্ন শুল্ক ও করের কারণে সংবাদপত্র শিল্পকে বড় সমস্যার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।
সরকারের আশ্বাস ছিল যে, সপ্তম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়িত করা হলে বিজ্ঞাপনের মূল্যহার ও পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। সে আশ্বাসও বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমান বিশ্বে নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়েই চলেছে। এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমদানিকৃত নিউজপ্রিন্টের উপর বিভিন্ন শুল্ক ও করের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক বছরেই এক ডলারের মূল্য বেড়েছে প্রায় ১২ টাকা। এই কারণেও নিউজপ্রিন্ট বাবদ আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
এসআরও ১৬৮/২০০৯ অনুসারে দৈনিক পত্রিকার নিউজপ্রিন্ট বর্তমানে আমদানি শুল্ক ৩% এবং ভ্যাট ১৫%, অর্থাৎ সব মিলিয়ে মোট ১৮% শুল্ক কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিগত দু’বছর প্রতি টন নিউজপ্রিন্ট গড়ে প্রায় ৭০০ ডলারে আমদানি করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে উচ্চ শুল্ক পরিশোধ, পরিবহন ব্যয়, শ্রমিক বেতন, ব্যাংক সুদ এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ মিলিয়ে টনপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৭৫,০০০/- টাকা। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জেনারেটর ব্যবহারের ফলে পত্রিকা ছাপা খরচও বাড়ছে ক্রমাগত। এই বিপুল অর্থ ব্যয়ে নিউজপ্রিন্ট কিনে এবং তা ছেপে পত্রিকা প্রকাশ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
দুই বছরের মাথায় সংবাদপত্রে ব্যবহার উপযোগী নিউজপ্রিন্টের দাম দেশি-বিদেশি ভেদে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কাগজের দাম বাড়ায় সংবাদপত্র প্রকাশনার ব্যয়ভার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। উচ্চহারে শুল্কের কারণে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি করেও চলতে পারছে না সংবাদপত্রগুলো। পাশাপাশি প্রকাশনার অন্যান্য উপকরণ ও বিদ্যুতের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির ফলে সংবাদপত্রসহ গোটা প্রকাশনা শিল্প গভীর সঙ্কটের মুখোমুুুখি।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে দেশের বাজারে মানভেদে প্রতিটন নিউজপ্রিন্টের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৪ হাজার টাকা। একই মানের কাগজ বর্তমানে ৫৮ হাজার থেকে ৬৬ হাজার টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
দেশে জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত সংবাদপত্র সংখ্যা কয়েকশ। এসব সংবাদপত্র বর্তমানে নানা রকম সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে। সংবাদপত্র প্রকাশের প্রধান উপকরণ নিউজপ্রিন্ট। দেশীয় নিউজপ্রিন্ট মিল থেকে এর চাহিদার সামান্য অংশই পূরণ সম্ভব হয়। অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের দেশি নিউজপ্রিন্টের মূল্য নিয়ন্ত্রণেও কোন লাগাম নেই। কোন কোন উৎপাদক বাজারে একচেটিয়া কর্তৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে সংবাদপত্রকে জিম্মি করে ফেলতেও সচেষ্ট। এ বাস্তবতায় আমদানিকৃত নিউজপ্রিন্টের উপর এ শিল্পকে অনেকটাই নির্ভর করতে হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১৮ শতাংশ হারে শুল্ক ও কর পরিশোধের যে ব্যবস্থা সেটা সংবাদপত্রের অস্তিত্বের জন্যই হুমকিস্বরূপ।
নিউজপ্রিন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংবাদপত্রের আয়ের একটা বড় অংশ চলে যায় কাগজের ব্যয় মেটাতে। সংবাদপত্র বিক্রি ও বিজ্ঞাপন থেকে যে আয় হয় তার সিংহভাগই কাগজের পিছনে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন কাগজের মূল্য বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতেই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় সংবাদপত্র মালিকদের। বিশেষ করে আমার দেশসহ যেসব পত্রিকা সরকারের রোষানলে পড়ে চার বছর ধরে বিজ্ঞাপনবঞ্চিত, তাদের কঠিন টানাপড়েনের মধ্যে সংবাদপত্রের প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।
সংবাদপত্র শিল্পের বর্তমান অবস্থায় সরকারি বিজ্ঞাপনের মূল্য ও পরিমাণ বৃদ্ধি, নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন দাবি পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হলে সংবাদপত্র প্রকাশ সামনের দিনগুলোতে আরও অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।
এ অবস্থায় সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্টের উপর থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং সরকারি বিজ্ঞাপনের মূল্য ও পরিমাণ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে তা পত্রিকা প্রকাশের ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের বোঝা কমিয়ে আনা যেমন সহায়ক হবে, তেমনি সংবাদপত্র শিল্প যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখাও সহজ ও সম্ভব হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




