চাঁদ দেখে রোজা রাখা ও ভাঙ্গার নির্দেশ সম্বলিত হাদীস অনুযায়ী সাম্প্রতিককালের আগ পর্যন্ত নিজের চোখ দ্বারা চাঁদ দেখেই মোসলমানেরা ঈদ-রোজা পালন করে আসছে। চাঁদের গতিপথ, গতিবেগ, ইত্যাদির বৈজ্ঞানিক হিসাব পুন্খানুপুন্খরূপে আবিষ্কৃত হবার পর অনেক মোসলমান আর চোখের উপর নির্ভর না করে , চাঁদের তারিখ নির্ধারণ করার জন্য বৈজ্ঞানিক হিসাবের উপর নির্ভর করাটাই বেশি পছন্দ করছেন। কেননা চোখের দৃষ্টির চাইতে বৈজ্ঞানিক হিসাব অনেক বেশী নির্ভরযোগ্য। এখানেই সেকেলে আর একেলেদের মধ্যে মতবিরোধ।
রোজার মাস ও হজ্ব সম্পাদন এর সময় নির্দ্ধারণ যেরূপ চাঁদের গতিবিধির উপর নির্ভরশীল, তদ্রূপ নামাজ সম্পাদন করার সময়, এবং প্রাত্যহিক রোজা শুরু ( সেহরী খাওয়া ) ও শেষ ( ইফতারী) করা সূর্যের গতিবিধির উপর নির্ভরশীল ।
পবিত্র কোরান শরীফে পাঁচ-ওয়াক্ত নামাজের সময় কখন শুরু হবে তার নির্দেশ দেয়া আছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়,(মধ্যাহ্ন সূর্য থেকে ) সূর্য হেলিয়া যাবার পর ( সুরা বনী-ইসরাইল : আয়াত -৭৮ ) জোহরের নামাজের সময় শুরু। রাসূল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহেচ্ছালাম এর সময়ে যখন নামাজের আদেশ জারী হল তখন জোহরের নামাজের সময় শুরু হল কিনা তা বুঝতে ( তথা আল্লাহর আদেশ পালন করতে ) সূর্য টি হেলিয়া গেছে কিনা তা চোখ দ্বারা প্রত্যক্ষ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলনা বিধায় সূর্যের অবস্থান চোখ দ্বারা প্রত্যক্ষ করেই (সরাসরি সুর্যকে দেখে কিংবা গাছের ছায়া দেখে ) জোহরের নামাজ পড়া হত। ঘড়ি আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত মোসলমানেরা এই পদ্ধতিতেই জোহরের নামাজের সময় নির্দ্ধারণ করত।
রাসূল করীম (দ
যিনি/যারা এ মতের সমর্থক যে চাঁদ না দেখে রোজা রাখা/ভাঙ্গা হারাম, তারা কি জোহরের নামাজের ওয়াক্ত বুঝার জন্য সুর্যের অবস্থান নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করে কিংবা অন্যে প্রত্যক্ষ করেছে এরূপ স্বাক্ষী নিয়ে জোহরের নামাজের সময় ঠিক করেন ? নাকি ঘড়ি দেখে নামাজের সময় ঠিক করেন ? কেউ যদি ঘড়ি দেখে নামাজের সময় ঠিক করেন তিনি কি আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করলেননা ? কেননা সুরা বনী-ইসরাইল : আয়াত -৭৮ আয়াতে ঘড়ি দেখে নামাজ পড়তে আদেশ দেয়া হয়নি। আদেশ দেয়া হয়েছে সুর্যের অবস্থান মধ্যাহ্ন থেকে হেলিয়া গেলে নামাজ পড়তে।
ফজর-মাগরেব নামাজ পড়ার জন্য কেউ কি চোখ দিয়ে প্রত্যক্ষ করতে যায় সূর্যটা কি উঠল বা ডুবলো? যে রোজার মাস শুরু করতে চাঁদ নিজে চোখে দেখার জন্য এত তোড়জোড় অথচ সে প্রাত্যহিক রোজার শুরু ( তথা সেহরী খাওযা ) এবং শেষ করতে ( তথা ইফতারী করা ) আমরা ঘড়ি দেখেই সিদ্ধান্ত নেই, সূর্য্য দেখিনা । অথচ কোরান-হাদীসে ঘড়ি দেখে এ কাজগুলি করার কোন নির্দেশ নাই।বরং কোরান-হাদীসের আদেশ অনুযায়ী , সূর্যটা কি উঠল বা ডুবলো তার সাথে ফজর-মাগরেব এর নামাজের সময়ের এবং রোজা শুরু- শেষ হবার সম্পর্ক । । এতদসত্ত্বেও নিজ চোখে সূর্যের অবস্থান না দেখে ,নামাজের সময় নির্ধারনে এবং প্রাত্যহিক রোজা শুরু-শেষ করতে ঘড়ির উপর আমরা নির্ভর করি কেন ?
আর যদি কেউ মনে করেন ঘড়ি দেখে নামাজের সময় ঠিক করতে এবং প্রাত্যহিক রোজা শুরু-শেষ করতে কোন দোষ নাই , তাহলে চাঁদের তারিখের বৈজ্ঞানিক হিসাব ( এটাও একপ্রকার ঘড়ি ) অনুযায়ী রোজা-হজ্ব পালন করার জন্য চাঁদের প্রথম তারিখ ( বা উদয়ের তারিখ ) নির্দ্ধারণ করতে অসুবিধা কোথায়?
যখন ছাপার মেশিন আবিষ্কার হয়েছে , তখনকার শ্রদ্ধেয় আলেমগন কোরান শরীফ ছাপানো , নিষিদ্ধ ফতোয়া দিলেন বেদাতের অজুহাতে। সেজন্য ছাপার মেশিন আবিষ্কৃত হবার পর প্রায় দুইশত বছর পর্য্যন্ত কোরান শরীফ ছাপা শুরু করা যায় নাই । কোরান শরীফ ছাপানোর কারণে অধিকসংখ্যক লোক কোরান শরীফ পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু সে সুযোগ মোসলমানেরা প্রায় দুইশত বছর পর্যন্ত পায় নাই। আর আজকাল কি এটা কল্পনা করা যায় . "ছাপানো কোরান শরীফ বেদাত "? ?
আমাদের শ্রদ্ধেয় আলেমগনের প্রায় দুইশত বছর লাগল বুঝতে যে কোরান শরীফ ছাপাতে কোন দোষ নাই। আর আজকাল কি এটা কল্পনা করা যায় . "ছাপানো কোরান শরীফ বেদাত "? ?
আমাদের আলেমগনের কত শত বছর লাগবে জানিনা, যখন তারা একমত হয়ে বলবে চাঁদের তারিখ বৈজ্ঞানিক হিসাব অনুযায়ী ধার্য করে রোজা/হজ্ব /ঈদ পালন করতে কোন দোষ নাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




