somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরন্তর যাত্রা

২৩ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ১৯ জুন ২০০৮ এর ঘটনা। সেদিন কেন যেন খুব ক্লান্ত লাগছিল। ল্যাবে বসে কাজ করতে করতে হঠাৎ মনে হলো কিছু একটা লিখে ফেলি। তখন খুব গল্প লেখার ভুত চেপেছে মাথায়। সামহোয়্যার ইন ব্লগে রীতিমত আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে বেশ কিছু লেখা। নিজেকে ব্লগার কম লেখক বেশি মনে হচ্ছিল। দ্রুত মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ডটা খুলে লিখতে বসে গেলাম। সামান্য কিছু চিন্তা না করে লিখে ফেললাম একটা গল্পের প্রথম পর্ব। এই গল্প কোথায় যাচ্ছে, কি হবে পরে, কিছুই আমার মাথায় ছিল না। শুধু এতটুকু ঠিক করেছিলাম আরো চার-পাঁচটা পর্ব মিলিয়ে একটা বড় গল্প দাড় করাবো। বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে গল্পের নাম ঠিক করলাম নিরন্তর। ব্লগে একজনের পোস্টে নিরন্তর শব্দটা দেখেই মূলত এই নামটা নেয়া। গল্পের সাথে মিল রেখে মোটেও নামটা ঠিক করিনি। নাম দিতে হয় তাই দেয়া।

পোস্ট করার পর প্রথম মন্তব্যটা করেন ব্লগার ছন্নছাড়ার পেন্সিল। তার কাছে গল্পটা নাকি বেশ ভালো লেগেছে। তার ভাষায় আকাশ নাকি কাঁপিয়ে দিচ্ছিল সব। এরপর ব্লগার কালপুরুষ ভাই এসে একটা চমৎকার মন্তব্য করেন - “আকাশে হয়তো তারার অভাব কখনই হয়না। তবে শুকতারা সবাই হতে পারেনা। চমৎকার লিখেছেন। খুব ভাল লাগলো।" সত্যি বলতে বেশ অনুপ্রেরনা পাই। আর তখনই প্রথমবারের মত চিন্তা করি এই গল্পটাকে আমি আরো গুছিয়ে লিখবো।

বিশ্ববিদ্যালয় শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে বাসে চিন্তা করতে শুরু করলাম। নিরন্তর শব্দের অর্থটাই যেন গল্পের প্লটটা আমার মাথায় এনে দিল। আকাশের মত ছেলেরা নিরন্তর ছুটছে। কিন্তু কিসের পেছনে? সম্ভবত কোন আকাশই জানে না সেটা। পৌনে এক ঘন্টার বাস ভ্রমনে আমার মাথায় গল্পটা একটু একটু করে দাড়িয়ে যেতে শুরু করলো। আমি যেন আকাশকে দেখতে পাচ্ছিলাম তখন। আকাশের নিরন্তর ছোটা, আকাশের অতীত, আকাশের ভালোবাসা এবং আকাশের এলোমেলো জীবন। সব এক হয়ে বারবার আমার মাথায় একটাই কথা বলে যাচ্ছিল – বর্তমান প্রজন্মকে আমি কিছু বলতে চাই এ গল্পের মাধ্যমে। এ সূর্যদয় বঞ্চিত প্রজন্ম আমার গল্প পড়ুক বা না পড়ুক – আমি তাদের অন্তত একটা অংশকে জানিয়ে দিতে চাই তথাকথিত এই উন্মাতাল জীবনটা আসলে আয়নার অপর দিক থেকে দেখতে কেমন এবং এর পরিনতী কি হয় শেষ পর্যন্ত।

লিখতে শুরু করলাম নিরন্তর। পুরো গল্প তখন আমার মাথা থেকে বের হবার জন্য যুদ্ধ করছে। একের পর এক পর্ব লিখতে লিখতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু গল্প যেন আর শেষ হয় না। পরবর্তি দশ দিনে লিখলাম দশটা পর্ব। কিন্তু তাতেও যেন অর্ধেকও শেষ করতে পারলাম না। জুলাই মাসে লিখলাম নিরন্তরের এগারো তম পর্ব। তারপর লেখা বন্ধ করে দিলাম। একটানা ব্লগিংই বন্ধ রাখলাম নভেম্বর পর্যন্ত। নভেম্বরের চার তারিখ প্রথম আলো ব্লগ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেদিনই ব্লগিং শুরু করলাম সেখানে। আবার ফিরে আসতে লাগলো নিরন্তর লেখার ইচ্ছে। এবার ঠিক করলাম আর বড় গল্প নয়। নিরন্তরকে উপন্যাস হিসেবে দাড় করবো। ধীরেধীরে আবার গোছাতে শুরু করলাম নিরন্তর। এবার প্রথম আলো এবং সামহোয়্যার ইন – দুটো ব্লগেই প্রকাশ করতে শুরু করলাম। পাঠক এসে তাদের মতামত দিতে লাগলেন, আমিও নুতন উদ্যামে লিখতে লাগলাম। আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম শেষ দুটো পর্ব আলাদা ভাবে না দিয়ে পুরো উপন্যাসের সাথে এক সাথে দেব। অতঃপর এলো সেই ক্ষন। গত ১২ জুলাই সামহোয়্যার ইন এবং প্রথম আলো ব্লগে এক সাথে প্রকাশ করলাম আমার সম্পূর্ন উপন্যাস। দুই দিন পরই পাঠকের সুবিধার জন্য ই-বুক আকারেও প্রকাশ করলাম গ্রন্থটা। ফেইসবুকে এ্যাড দিলাম, বন্ধুদের অনুরোধ করলাম পরিচিতজনদের জানাতে।

এর পর এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটতে শুরু করলো। আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠি ডজন খানেক ইমেইল আর ফেইসবুক ম্যাসেজ নিয়ে। মোটামোটি সবাই আমার অপরিচিত মানুষ। তাদের ভালো লাগার অনুভুতি জানাতে মেইল বা ম্যাসেজ পাঠাতেন। সবাই একটা কথা বলছিলেন যে আমার উপন্যাসে একটা 'বক্তব্য' আছে যেটা তাদের ভালো লেগেছে। সুইডেনের কেটিএইচ থেকে সুব্রত দাশ জানান তার কাছে ভালো লাগার মূল কারন পুরো দৃশ্যপটের পূর্নাঙ্গতা। ঢাকা থেকে শাহ এম কামাল জানান তার কাছে মনে হয়েছে উপন্যাসটায় বর্তমান ফুটে এসেছে। একই অভিমত প্রকাশ করেন লুবনা আহমেদ এবং শায়লা শারমিনও। আরো অনেকেই ছোট করে কিন্তু চমৎকার মন্তব্য দিচ্ছিলেন যা আমাকে যারপরনাই ছুঁয়ে গিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় মেইলটা করেছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাবরিনা ফরিদ। অদ্ভুত সুন্দর ভাবে সে কেটে কেটে নিরন্তরকে ব্যাখ্যা করেছে। এটা দেখে আমার শুধু একটাই কথা মনে হয়েছে - আমি আমার অনুভুতি প্রকাশে সফল, সীমিত পরিসরের মানুষের কাছে হলেও, আমি সফল।

এখন পর্যন্ত ১,৭০৫ বার নিরন্তর ডাউনলোড হয়েছে অফিসিয়াল সাইটটা থেকে। প্রতিদিনই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ পড়ছেন উপন্যাসটা। তাদের আগ্রহই আমাকে সাহস দিচ্ছে আগামী বই মেলায় নিরন্তর প্রকাশ করার। ভবিষ্যতের উপর মানুষের হাত নেই। আমি জানি না কি হবে, তবে এত এত ভালোবাসা সাহসটাকে উসকে দিচ্ছে নিঃসন্দেহে। খুব বলতে ইচ্ছে করছে - দেখা হবে বন্ধু, কথা হবে আগামী বই মেলায়। বাকিটা নিয়তির হাতে তোলা থাক।

(এই অফিসিয়াল ওয়েব সাইট থেকে উপন্যাসটা ডাউনলোড করা যাবে এবং পাঠকের মন্তব্যও পড়া যাবে।)

২৩ জুলাই ২০০৯
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×