২, আগস্ট, ২০১৮।
আগস্টের শুরুতেই দলের নেতা কর্মীরা শুভেচ্ছা জানাতে আশা শুরু করেছিলো, আজও কয়েকজন এসেছে। ফুল হাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী। বঙ্গবন্ধু খানিকটা বিরক্ত৷ আগেই বলে রেখেছিলো তার বেড যেনো রাস্তার পাশে কোন জানালার ধারে হয়৷ সে দেশের মানুষ ছাড়া কিছুই বুঝেনা৷ দেশের মানুষ দেখবে কাছে থেকে না হলেও ৫ তলার উপর হাসপাতালের কেবিনের উপর থেকে৷ "জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু" বলে যেই হুঙ্কার ছেড়ে যেভাবে এসেছে মাথা ধরে যাচ্ছিলো। এরা এসেই বললো, "লিডার, আসবো?"
বলিষ্ঠ কন্ঠে বললেন "আয়!"
বয়সের ভার তাকে একটুও নুয়াতে পারেনি৷ হাতে এতোগুলো সেলাইনের সুঁই, আঙ্গুলে বিপি মেশিন। তাকে দেখে কে বুঝবে এতো অসুস্থ তিনি?
"কি নিয়ে আসছিস? কয়দিন যাবত দেখি রাস্তায় গাড়ি লাইন করে চলে? তাও লাইন করে দিচ্ছে স্কুলের বাচ্চাগুলা, জনগনের টাকায় বেতন ট্রাফিক পুলিশ করেটা কি? "
একজন বলছে, " পোলাপান রাস্তায় নামছে, ওরা আন্দোলন করে, নিরাপদ সড়ক চায়, কিসের নিরাপদ সড়ক, নামছে বি এন পি জামাতের উশকানীতে।"
এমন সময় দুইজন নার্স আর একজন ডাক্তার আসলো সবাইকে বের করে দিতে৷ উনার এখন বিশ্রাম দরকার।
ওইদিকে ওবায়দুল কাদের, জাবেদ পাটোয়ারী, আসাদুজ্জামান খান বৈঠকে। গতো সপ্তাহ ধরে সচিব মন্ত্রী এম্পি সহো সবাইকে ধরেছে ছাত্ররা, লাইসেন্স ছাড়া সবাইকে নামিয়ে দিয়েছে গাড়ি থেকে৷ এতো ক্ষমতা ছাত্রদের হাতে থাকলে সমস্যা। নিজেদের গাড়ি নিয়েও বের হতে পারছেন না ইদানীং৷ মিলিটারীর গাড়িও কোন ছাড় পাচ্ছেনা৷ তারা সিদ্ধান্তে আসলো ছাত্র সড়াতে হবে৷ চার মাস পড়ে আবার নির্বাচন৷ কিভাবে এই ছাত্রদের মোকাবেলা করবে বুঝতে পারছেনা৷ এরা তো আর সিভিল পোশাকের জনগন না পাখির মতো গুলিকরে বলে দেয়া যাবে এরা জামাতের লোকজন। স্টুডেন্ট কেমনে হ্যান্ডেল করবে?
তারপরে সিদ্ধান্ত হইলো ছাত্রলীগদের "বুঝানোর" দ্বায়িত্ব দেয়া হবে৷ ওরাই হলো দেশের ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি, ওরাই পারবে।
০৪ আগস্ট, ২০১৮।
ছাত্ররা শুক্রবারের পর আজকে আবার নামলো রাস্তায়৷ জিগাতলা থেকে ধানমন্ডি আওয়ামীলীগ অফিস পর্যন্ত৷
ওইদিকে বঙ্গবন্ধুর শারীরিক অবস্থা খারাপ, দুইদিনে ঘুম থেকে উঠেনি। আজকে একটু চোখ মেলেছেন৷ কিন্তু কোন কথা বলেন নি। তাকে দেখেতে আসা কারো সাথেই না৷ একটা কথাই বললেন, পাইপটা দে...
তোফায়েল আহম্মেদ রাস্তায় আটকা পড়েছে৷ তার নিজের গাড়িরও কাগজ ঠিক নেই। হাসিনা আপাকে ফোন দিলো
: জ্বী বলেন তোফায়েল ভাই।
: ছাত্ররা আমার গাড়িও আটকে ফেলছে এইভাবে কয়দিন? কি চায় মেনে নেও।
: আজকে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ সমস্যা নেই।
রাস্তায় ছাত্রদের লাইন৷ মাঝে ছাত্রীরা৷ সবাইকে স্কুল ড্রেস এ ফুটফুটে লাগছে৷ কয়েকদিনে পোষাক ময়লা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের শুভ্রতায় এই ময়লা চোখে পড়ছেনা৷
পিলখানার দিকে যাচ্ছে, ওইদিক থেকে আসছে আইডিয়াল, সিটি কলেজ৷
পুলিশের এসপির ফোন ওবায়দুল কাদেরকে,
: স্যার, রাস্তায় হাজার হাজার স্টুডেন্ট, ফায়ার করা সম্ভব না৷
: আমি ছাত্রলীগ পাঠাচ্ছি৷ তোমরাও পজিশনে থাকো।
ছাত্রলীগ চলে এসেছে। রাস্তার এক পাশে আছে৷ ওইপাশে কিছু একটা হচ্ছে, হাতে ৯এমএম গান আর রড নিয়ে অপেক্ষায় আছে আর দেখছে কি হচ্ছে তা...
এমন সময় একপাশে সবাই ভাগ হয়ে যেতে থাকলো, একজন সবুজ পোষাকে সামনে আগাচ্ছে স্ট্রেচারে। সাদা শার্ট পড়া ছেলেগুলো একটু ছুয়ে দেখতে চাচ্ছে তাকে। পেছনে কয়েকজন ডাক্তার। হাতে স্যালাইনের ক্যানোলার লাগানো। আস্তে আস্তে সামনে এসে বললেন সেই হিমালয়সম বঙ্গবন্ধু,
: ওদের গায়ে গুলি চালানোর আগে এই বুকে গুলি চালা।তোরাই কি সেই ছাত্রলীগ? আমার হাতে বানানো সেই ছাত্রলীগ?
বাঘের এই গর্জনে সবাই একদম ভীত, পুলিশ তার অস্ত্র রাস্তায় রেখে দিলো। মুখোসে ঢাকা ছেলেগুলোর মাথাও নিজে৷ এই পর্বতের সামনে এসে যেনো সবাই একবারের জন্য হেরে গেলো।
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ১৫ই আগস্টে লাগা সেই ১৮টি বুলেট এখনো তার বুকে.....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



