somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উড়ো চিঠি -দশ

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"খুব হাসি পাচ্ছে, তাইনা? এমনি কি আর বলি," বাপ কা বেটি!!" দাড়াও না...বিয়েটা শুধু হয়ে যাক, তারপর শ্বশুর সাহেবকে একচোট দেখে নিবো। মেয়ের সাথে দেখা করতে তো সেই আমার দরজাতেই আসতে হবে। তখন দরজা খুলতে গিয়ে আমিও ভ্রুকুটি করবো। শোধ নিবো শোধ, ভ্রুকুটির শোধ! হা হা হা......ভদ্রলোকের অসহায় চেহারাটা ইমাজিন করতেই বুকের ভেতর কেমন যেন শান্তি শান্তি বোধ হচ্ছে। আহ! তবে যাই বলিনা কেন," হি ইজ দি বেস্ট ফাদার ইন দি ওয়ার্ল্ড!" এই ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তোমার প্রতি তার ভালোবাসা এতোটাই বেশি যে, তার পক্ষে অন্য কারো উপর তার মেয়ের দায়িত্ব দেয়াটা কঠিনই বটে। আর হয়তোবা তিনি খুব পজিসিভও। তোমার ভালোবাসার ভাগ দিতে তিনি হয়তো এখনও প্রস্তুত নন। তাই আমার প্রতি তার এতো বিরক্তি!

আমি জেদী, একরোখা তা মানতে রাজি আছি। বহুবার মার মুখে শুনেছি এই কথা। ছেলেবেলায় আমি নাকি বাধ্য ছিলাম বেশ। যতই দুষ্টুমী করতাম না কেন মার কথা শুনতাম। কিন্তু কখনও যদি কোনো কিছুতে না, বা হ্যা বলতাম, তা আর বদলাতো না। অনেকবার মারও নাকি খেয়েছি এইজন্য। কিন্তু ইগো! একদম না। ওটা সেল্ফ রেসপেক্ট। আর নিজেকে যদি সম্মান করতে না পারি, তবে অন্যরা কি করে আমাকেে সম্মান করবে বলো? আমি জানি আমি কি, কি করতে চাই... আমার ডিসিশনকে আমি সম্মান করি। নিজের উপর আস্থা আছে, তাই কারো কথায় আমার কিছু যায় আসে না। স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা করেও শেষ পর্যন্ত ফটোগ্রাফিকে নিজের পেশা হিসেবে নিতে কম কিন্তু বাঁধা পেরোতে হয়নি আমায়। কিন্তু অন্যের মতের উপর ভিত্তি করে, নিজের ভালোলাগাকে বিসর্জন দিতে আমি কখনও প্রস্তুত নই। আর তাই পেশা বা ভালোবাসা যাই হোক না কেন, তাতে অন্যের হস্তক্ষেপ কখনওই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

ক্যামেরার সাথে পরিচয়টা হয়েছিল ভাইয়ার মাধ্যমে,তা তোমাকে আগেই বলেছি। যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন ভাইয়া ইংল্যান্ড থেকে একটা দারুণ ক্যামেরা আনে আমার জন্য। ও আমার চেয়ে ছয় বছরের বড়, আর ওখানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো। ও বরাবরই আমার চেয়ে মেধাবী ছিল। খুব আদর করতো আমায়। কখনও ওর কাছে কিছু চাইতে হতোনা, এমনিতেই দারুণ দারুণ সব জিনিস এনে দিত ওখান থেকে। আর আমিও সেগুলিকে নিজের শখ বানিয়ে ফেলতাম। ভাইয়াও কিন্তু বেশ ভালো ছবি তুলতে পারত। ওর "সান সেট" এর ছবিগুলো অসাধারন ছিল! যদিও এখন আর প্র্যাকটিস করেনা। যাই হোক, ভাইয়ার দেয়া সেই ক্যামেরা যে আমার মাথায় কি করে এমন ভাবে ঢুকে গেল! অদ্ভূত! মা খুব কঠিন মহিলা, তাই পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়ার সুযোগ একদম হয়নি। নাহলে পড়াশোনা হয়তো গোল্লায় যেতো।

নিজের মেধায়, নাকি মার কঠিন তদারকিতে জানিনা, তবে বুয়েটের স্থাপত্যবিদ্যায় চান্স পেয়ে গেলাম। মা খুব খুশি ছিলেন। হয়তো ওতোটা আশা করেননি আমার কাছে। আর আমি খুশি ছিলাম কারন, মার তদারকি কিছুটা কমবে, আর আমি আমার ক্যামেরাকে একটু বেশি সময় দিতে পারবো। পাশ করে ভালো একটা চাকরিও জুটিয়ে ফেললাম কিন্তু এক মূহুর্তের জন্যও ক্যামেরা কে মাথা থেকে সরাতে পারিনি। দুই বছর কাজ করলাম অন্যের অফিসে। তারপর নিজেই একটা ছোট্ট অফিস নিলাম ছয় জন নবীন স্থপতি নিয়ে। এখানেও প্রায় চার বছর কঠোর পরিশ্রম করে কিছুটা দাঁড় করালাম নিজের প্রতিষ্ঠানকে। স্থাপত্য ডিজাইনেও মন্দ ছিলাম না, তাই হয়তো খুব বেগ পেতে হয়নি।ক্যামেরা তখনও আমার সাথে ছিল। সমস্যার শুরু হলো যখন ফটোগ্রাফিকে বেশি প্রাধান্য দেয়া শুরু করলাম। অফিসের কাজ একজন এর দায়িত্বে দিয়ে আমি আমার মনের খোরাক জোগাতে, বেশিরভাগ দিনগুলি বিভিন্ন জেলা অথবা দেশের বাইরে কাটাতাম। ফোন অথবা ই-মেইলই ছিল একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। তাই খুব কম প্রজেক্ট নিয়েই কাজ করা হতো। এই নিয়ে মা আর ভাইয়ার কতো বাধা আর কটু কথার সম্মুখীন হতে হয়েছে!

তোমার বাবা অথবা অন্যরা যতই বলুক আমি " গরু ছাগলের " ছবি তুলি, আমার কিছু যায় আসে না। লন্ডন এর ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম এ গতবার একশো জন ফটোগ্রাফারদের ছবির যে প্রদর্শনী হয়েছিল তাতে আমার ছবিও স্থান পেয়েছিল। বাবাকে বলো, খুব জগা- মগা নই কিন্তু। তার মেয়েকে ভালোবাসার যোগ্যতা রাখি, ভালো রাখার যোগ্যতা রাখি। তবে এবার তার জন্য একটা আস্ত বাঘের ছবি তুলে আনব ঠিকই। গরু ছাগলের অপবাদ ঘুচতে হবেতো, কি বলো, তাইনা? হা হা হা....

খুব অদ্ভুত সব প্রশ্ন করো তুমি ! তবুও প্রশ্নটা খুব ভাবাচ্ছে আমায়। আসলেইতো, তোমাকে ভালোবাসার কারনটা ঠিক কি? মুগ্ধতা দিয়ে শুরু হয়েছিল আমাদের সম্পর্কটা। কিন্তু কখন যেন সেই অনুভূতি ভালোবাসা হয়ে, আমার হৃদয়ের খুব গহীনে চিরতরে বাসা বেঁধে ফেলেছিল, ঠিক বুঝতে পারিনি। এখন তো খুবই বিপদের মধ্যে আছি! চোখ বন্ধ করলেই তোমার গভীর চোখ দুটো দেখতে পাই। ঝরনার কলকলে শব্দ ,তোমার খিলখিলে হাসি মনে হয়। অন্ধকার রাতের জ্বলজ্বলে তাঁরা যেন তোমার নাকফুল....সূর্যাস্তের রক্তিম আলো যেন তোমার লজ্জায় রাঙানো টকটকে গাল। সব কিছুতেই শুধু তুমি আর তুমি। তুমি নেই, তবু তুমি আছো...."

ইতি
"ছেলেটি "
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×