somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উড়ো চিঠি - এগার

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"বাবাকে নিয়ে খুব মজা করা হচ্ছে, তাইনা? নো প্রবলে..বেস্ট বাবার সাথে তার বেস্ট মেয়েও আছে। আমরাও ছেড়ে দেবোনা...লড়াই হবে, লড়াই। ভ্রুকুটির লড়াই। হি হি হি....আর তোমার বাঘের ছবিতো আগেও দেখেছি। ওতে কি আর অপবাদ ঘুচবে মশাইয়ের? একটা ডায়নোসর হলে ভালো হতো! কি আর করা, যেহেতু সেই সুযোগ নেই, তবে বাঘই সই। তবে এবার সাইজে একটু বড় এনো। বাবাকে আমি নাহয় ম্যানেজ করে নেবো। শত হলেও নামীদামি একজন ফটোগ্রাফার! এতটুকু ছাড় দেয়াই যায়। তবে যাই বলো, বিষয়টা নিয়ে কিন্তু আমি বেশ চিন্তিত । একদিকে একরোখা তুমি, আর অন্যদিকে পজেসিভ বাবা। বেশ ভোগাবে আমায়! বাবা কিন্তু আগে এমনটা ছিলেন না। নিজের পছন্দ করা মানুষটা যখন অসময়ে হাতটা ছেড়ে দিল, তখন থেকেই কেন জানি, বাবা আর আমার পছন্দের উপর ঠিক ভরসা রাখতে পারেন না। তার শুধুই মনে হয়, তার এই মেয়েটি বোকা, আর তাই পৃথিবী শুদ্ধ মানুষ তাকে ঠকাচ্ছে। হায়রে ভালোমানুষ বাবা আমার ! বেচারার মানুষের প্রতি বিশ্বাসটা নষ্ট হয়ে গেছে....

ফাইয়াজ এর সাথে আমার সম্পর্কটা তিন বছরের ছিল। তুমিতো জানোই এসব। তবে ওকে চিনতাম আরো দুই-তিন বছর আগে থেকে। আমার বড় খালার ছেলে, ইমন ভাইয়ের বন্ধু। ইমন ভাইয়ার একমাত্র বোন মীরা আপু থাকত কানাডায়। তাই বোন পাগল এই ভাইয়ার সব আদর আমিই পেতাম। পড়াশোনা শেষে বিয়ে করে আপু অবশ্য পরে ওখানেই থেকে যায়। ওদের প্রেমের বিয়ে, আর দুজনের পরিচয়টা ওখানে হলেও বিয়ের সকল অনুষ্ঠান দেশেই হয়েছিল। আপু বিয়ের জন্য দেশে এসেছিল দেড় মাসের জন্য। ফাইয়াজের সাথে সম্পর্কটা মূলত তখনই শুরু হয়। তখন আমরা ভাইয়াদের বাসার মোটামুটি কাছেই থাকতাম, মোহাম্মদপুরে। আর ওরা ছিল ভাইয়াদের ঠিক এক বাড়ি পর। বিশাল বড়, আর সুন্দর বাড়ি ছিল ওদের। মনে আছে, ওদের লনে একটা ছোট্ট পুকুরে পদ্মফুল ফুটতো। আমাকে এনে দিয়েছিল একবার। কি অদ্ভুত সুন্দর! বেগুনী বাগান বিলাসের ঝাড়টা, দোতলা বাড়ির কোল ঘেসে ছাদ পর্যন্ত উঠেছিল। কি যে দারুন লাগত! ওদের বাড়িটি ছিল পাড়ার সবার বিশাল আগ্রহের জায়গা....যাই হোক, ঐ সময়টাতে আমার খুব ঘন ঘন খালার বাসায় যাওয়া হতো, আর ফাইয়াজেরও। পরে জেনেছি আমার জন্যই নাকি যেত ও।

আমি তখন ফিজিক্স এ মাস্টার্স করছি, আর ও একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ইকোনমিকস পড়াতো। ক্লাস শেষে আমি যেমন খালার বাসায় চলে আসতাম, সেও ঠিক তেমনি ক্লাস শেষে সন্ধ্যার দিকে হাজির হতো। জানো, খুব অদ্ভুত লাগতো ওর দৃষ্টি। মনে হতো কিছু বলতে চায় আমায়, কিন্তু পারছেনা। কেন কে জানে! তেমন লাজুক তো মনে হয়নি কখনও, তবে কথা কম বলতো। ও ছিল খালার ফেভারিট। খালা সবসময় বলতো,"এতো সুন্দর দেখতে অথচ একদম মেয়ে ঘেঁসা না...কি ভদ্র ছেলে! আরেকটা মেয়ে থাকলে ঠিক বিয়ে দিতাম।" ও ছিল মুরুব্বিদের পছন্দের পাত্র। ইললেজেবল ব্যাচেলর বলতে পারো। আপুর বিয়েতেই নাকি কত কত প্রপোজাল এসেছিল। হা হা হা....ইমন ভাইয়ারা এগুলো নিয়ে অনেক পচাঁতো ওকে। আর ও খুব জোরে জোরে হেসে উঠতো। কেন জানি হাসির ঐ শব্দটা খুব টানতো আমায়! কাজের ফাঁকে খুব চা খেত ওরা বন্ধুরা মিলে। আমাকেই বানাতে হতো খালার কথা মতো। একদিন কি একটা বিস্কুট এর বিশাল সাইজের টিন এনে হাতে দিয়ে বললো,"এই নাও, বেস্ট চা এর সাথে দেয়ার মতো বেস্ট বিস্কুট... অনেক খুজে বের করেছি।" অতটুকু প্রশংসাাতেই যে কি ভীষন লজ্জা পেয়েছিলাম! বুঝতে পেরেছিলাম শুরু হয়ে গেছে ...আমার ভালোলাগার শুরু।

তোমার মতো শব্দ করে হাসলেও ফাইয়াজের আর কোনো মিল ছিলনা তোমার সাথে। তোমার মতো এতো অস্থির, আর সপষ্টবাদী ছিলোনা ও। মাঝেমধ্যে কিছু কথা বলতো, তবে তা কোনও প্রেম বিষয়ক নয় একদম। বিয়ের শপিং করতে প্রায় আমার আর ভাইয়ার সাথে ভিড়তো। হলুদে সবার জন্য যখন শাড়ি পছন্দ করতে গেলাম, বাসন্তী রংয়ের জামদানি শাড়িটি ওই পছন্দ করেছিল আর বলেছিল," এটাই নাও, তোমাকে দারুণ মানাবে..." ওটাই ছিল ওর মুখে আমার প্রথম প্রশংসা। কেন জানি কথাটি শুনে অদ্ভুত শিহরন হয়েছিল সারা শরীরে! হলুদের দিন সকাল হতেই খুব ব্যস্ততা ছিল। ডালা সাজানো, স্টেজ সাজানো....আরো কতো শতো কাজ। আমি এলো চুলে, সাধারণ পোশাকে, কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে ডালা সাজানোতে ডুবে আছি। ভাইয়া আর তার বন্ধুরা স্টেজ আর আল্পনার দায়িত্বে ছিলেন। হঠাৎ এক ঝুড়ি লাল গোলাপ এনে আমার সামনে রাখলো। আমি অবাক চোখে তাকালাম, আর কিছু বলার আগেই ও বললো," তোমার জন্য...তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, রাতে বলবো।" তারপর চলে গেলো। আমি এক ঝুড়ি রক্ত গোলাপ নিয়ে,ওর পথের দিকে বোকার মতো চেয়ে রইলাম...

কি অদ্ভুত! আমার সব কিছু এখনও সপষ্ট মনে আছে! তুমি কি খুব অবাক হচ্ছো? সেই রাতে হলুদ শাড়িটি পরে সাজতে গিয়ে, কেন জানি হাতটা খুব কেঁপেছিল...বুক ধরফর করছিল। ছেলেরাও সবাই পরেছিল হালকা হলুদ পাঞ্জাবী। ছেলেদেরকেও যে হলুদ রং মানায়, তা সেদিন ওকে দেখে বুঝেছিলাম। ওর সামনে আসলে কেমন যেন অস্থির লাগছিল! বুকের ভেতরে কেমন জানি ভয় জড়ানো ভালোলাগার অনুভূতি হচ্ছিল। কিন্তু ওকে অন্য সময়ের তুলনায় বেশ প্রাণবন্ত আর হাসিখুশি মনে হচ্ছিল । আর কেন জানি, সারাটা সময় জুড়ে আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল। আমার সপষ্ট মনে আছে, ঠিক রাত সাড়ে এগারোটায়, বেশির ভাগ গেস্ট যখন চলে গিয়েছিল, ঠিক তখন ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে ও আমাকে জীবনের প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়ে ছিল। একটি মাত্র শব্দ, একটি মাত্র শব্দ সেদিন আমার জীবনের আলো বয়ে এনেছিল। শব্দটি ছিল, ভালোবাসি.....

মনে পরে? তুমিই আমাকে বলেছিলে, প্রথম ভালোবাসা, দ্বিতীয় ভালোবাসা বলে কিছু নেই। যখন ভালোবাসো, সেই সময়টাতে সেটাই প্রথম । কি অদ্ভুত সুন্দর করে কথাগুলো বলেছিলে তুমি! আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। প্রায় মনে হতো আমার, তুমি কেন আগে আসনি? তবেতো আর কোনও ফাইয়াজ আসতে পারতোনা। ভূল ভালোবাসা দিয়ে জীবনের শুরুটা করতে হতোনা....তারপর তোমার বলা কথাগুলো ভাবতাম, আর মনে হতো, সময় কখনও কোনও কিছুর প্রাধান্য নির্ণয় করতে পারেনা। মানুষ নিজের প্রাধান্য নিজেই তৈরী করে। ভালোবাসার সাথে পরিচয়টা হয়তো ফাইয়াজ করিয়েছে, কিন্তু ভালোবাসার মানে বুঝিয়েছ তুমি। ফাইয়াজ স্বপ্ন দেখিয়েছে, আর তুমি স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছ.....অন্ধকার থেকে হাত ধরে জোছনার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছো....তবু মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমিই কেন আমার প্রথম স্পর্শ হওনি! আমার সকল ভালোলাগার অনুভূতি কেন তোমাকে দিয়ে শুরু হয়নি! কেন তুমিই প্রথম বলোনি, ভালোবাসি......."

ইতি
"মেয়েটি"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×