অনেককেই দেখি ধর্ম দিয়ে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে ব্যাখ্যা করতে চায়, এটা আসলে ভুল চেষ্টা। এভাবে চেষ্টা করতে গিয়ে দুটোকে গুলিয়ে ফেলে। ধর্ম এবং বিজ্ঞানকে একই সাথে ব্যাখ্যা করা যায়না, দুটোই আলাদা, একেবারেই আলাদা। ধর্মের মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস আর বিজ্ঞানের মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে অবিশ্বাস। এখন এই দুটোকে আপনি কিভাবে একই সুতোয় বাঁধবেন!
পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে, পৃথিবী গোলাকার, পানি থেকে মেঘ সৃষ্টি এগুলো আপনি যেমন ধর্মগ্রন্থ থেকে প্রমাণ করতে পারবেন তেমনি রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি কিংবা শেক্সপিয়ারের সনেটেও খুঁজে পাবেন। তাই ধর্মগ্রন্থ গুলোতে বিজ্ঞান বিষয়ে অতি আশ্চর্যজনক কিছু নেই।
শীতের রাতে খড়ের গাদার উপর বসে ওয়াজ শুনে কিংবা কম্বলের নিচে শুয়ে ইউটিউবে আহজারীর সাহেবের ওয়াজ শুনে কখনো বুঝতে পারবেন না, মোটরের ঘূর্ণনের ফোর্সকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে শক্তি উৎপন্ন করা হয়। এসব ওয়াজ আপনার পরকালের জন্য হয়তো কাজে আসবে কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে আপনি তাল মিলিয়ে চলার মত কোন উপাদান খুঁজে পাবেন না। আপনি কি কোন ওয়াজে পর্যায় সারণি কিভাবে তৈরি করা হয়েছে কিংবা হাইজেনবার্গের আনসারেটেনিটি সম্পর্কে পড়ার জন্য উপস্থিত শ্রোতাদের গুরুত্ব বুঝিয়েছে? না এরকম ওয়াজকারী অন্তত আমার চোখে পড়েনি।
বিজ্ঞান চর্চা করতে গেলে এমন এমন বিষয় আপনার সামনে চলে আসবে, যেটা সরাসরি আপনার ধর্মের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। এখন আপনি ধর্মের কথা মাথায় রেখে যদি সে বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে চান তাহলে আপনাকে হয়তো গবেষণা বন্ধ করে দিতে হবে অথবা আপনার ধর্মের সাথে সমন্বয় করে সে গবেষণা চালানোর চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও যখন আপনার গবেষণার বিষয়বস্তুর ব্যাপারে অন্যরা জানতে পারবে তখন আপনাকে সে গবেষণা থেকে বিরত রাখার জন্য সকল চেষ্টা করা হবে। ফলশ্রুতিতে আপনার প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত আর সফল হতে পারবে না।
ধর্মকে সব সময় ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখা উচিত। সমাজ কিংবা রাষ্ট্র এর পিছনে বেশি সময় ব্যয় করলে সে সমাজ বা রাষ্ট্রের উন্নতি খুব ধীরগতিতে হবে। ধর্ম পালনে কারো মনে প্রশান্তি আসলে সেটা দোষের কিছু নয়। সেই প্রশান্তি পাওয়ার জন্য সে ধর্ম পালন করতে পারে কিন্তু সেটা কখনোই পুরো রাষ্ট্র বা সমাজের উপর চাপিয়ে দিতে পারেনা। যেসব সমাজে বা রাষ্ট্রে ধর্মকে চাপিয়ে দেওয়া হয় সেসব রাষ্ট্র বা সমাজ বিজ্ঞান চর্চায় অনেক পিছিয়ে পড়ে। কারণ সেই সমাজ বা রাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা শিশুটি বিজ্ঞান এবং ধর্মকে সমন্বয় করার চেষ্টা করে আর এটা করতে গিয়ে সে না হতে পারে বিজ্ঞানী, না হতে পারে ধার্মিক! সে হয়ে উঠে বিজ্ঞানে পিছিয়ে পড়া এক সমাজের ক্ষুদ্র একটি অংশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৩১