সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক মন্দা খুব ব্যপক আকার ধারন করতে যাচ্ছে। এই অর্থনৈতিক মন্দা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে হওয়া অর্থনৈতিক মন্দার থেকেও ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পুরো পৃথিবীর প্রায় ৪০০মিলিয়ন মানুষ চাকুরী হারিয়ে ফেলবে অচিরেই। বিশ্ব অর্থনীতি মোটামুটি আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনীতির উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। আমেরিকার মাথা মোটা প্রেসিডেন্টের কারণে তাদের অর্থনীতিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। ইউরোপের অবস্থা এখনো রিসেশনের দিকে যায়নি তবে যেভাবে সার্বিক পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে, বলা যায় অচিরেই তারাও রিসেশনে পড়ে যাবে।
দক্ষিণ, পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলো মোটামুটি মাঝারি ধরনের উৎপাদন শিল্পের উপর নির্ভরশীল আর তাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে আমেরিকা এবং ইউরোপ। সুতরাং ক্রেতাদের দেশে স্থিরতা না আসলে এই অঞ্চলেরও অর্থনৈতিক স্থিরতা আসবেনা।
বাংলাদেশ মাঝারি ও ছোট উৎপাদন শিল্পের উপর বেশি নির্ভরশীল, তাই অর্থনৈতিক মন্দা হলে অনেক বেশি বিপাকে পড়বে দেশ। তবে বাঙ্গালীদের দুটি গুণ আছে যার কারণে এমন অর্থনৈতিক মন্দা বাঙ্গালীদের খুব বেশি কাবু করতে পারে না। বাঙ্গালীরা নিম্নমানের জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এবং আর্থিক সমস্যায় পতিত হলে আল্লাহর পরীক্ষা বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারে। কিন্তু এবারের সমস্যা বাঙ্গালীদের এই দুটি গুণ ভেঙ্গে দিতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দা তার উপর বন্যা, সবকিছু মিলিয়ে বিশাল এক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে বাঙ্গালীরা। সরকারে যদি সেরকম ভাবে দক্ষ লোকজন থাকতো তাহলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণের পথে হাঁটতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় করোনা পরিস্থিতি আসার আগে, সবকিছু জেনেও যেমন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, ঠিক তেমনি অর্থনৈতিক মন্দা আসতেছে জেনেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
এই মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ যেন ঠিক থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়া, কৃষি উৎপাদনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। সার, বীজ, কীটনাশক এসবের স্টকের উপর গুরুত্ব দেওয়া। কৃষকের সাথে কৃষি অফিসার কিংবা সরকারের লোকজন যারা এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের সরাসরি যোগাযোগ শুরু করে দেওয়া। কৃষকদের সুবিধা অসুবিধা শুনে তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উৎপাদনে রাখা। অতীতে তারা সরকারি লোকজনের কাছ থেকে যেসব খারাপ ব্যবহার পেয়েছে সেগুলি আর হবেনা এই মর্মে তাদের নিশ্চয়তা দেওয়া। যেসব আবাদি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে আছে সেগুলিকে আবাদি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মোটামুটি রেসিশনকে কিছুটা সামাল দিতে হলে কৃষি উৎপাদন দেড়গুন কিংবা দ্বিগুণ করতে হবে।
একমাত্র কৃষি এবং কৃষকই পারে এই সমস্যাকে কিছুটা থামিয়ে দিতে তবে সে ক্ষেত্রে সরকারি লোকজনকে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।
দেশের অন্যান্য সেক্টরগুলোর তুলনায় কৃষি সেক্টরকে পরিচালনা করা সহজ। চীন, ভারত, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকোচন হলেও আইএমএফ বলছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ১%। সম্ভবত কৃষি উৎপাদনের কথা মাথায় রেখে এমন প্রেডিকশন করা হয়েছে। তাই সরকারের উচিত হবে কৃষি উৎপাদন ঠিক রেখে বাকি সেক্টর গুলিকে ঠিক রাখা।
তবে মনে হচ্ছে সরকার নিজের ভারে নিজেই বেশি কষ্ট পাবে অর্থাৎ সরকারি লোকজনের বেতন-ভাতা দিতে গিয়ে হিমশিম খাবে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:০৩