বাঙ্গালীদের জন্য এবারের কুরবানীর ঈদ অন্য বারের মত ছিলনা। আমার জানামতে পরিচিতদের ভিতর অনেককেই কুরবানীতে অংশগ্রহণ করতে দেখিনি। অনেকের কুরবানীর জন্য যে বাজেট থাকে তার থেকে অনেক কমে কুরবানীতে অংশগ্রহণ করেছে। এমন অনেককে দেখলাম শুধুমাত্র সামাজিক লজ্জার ভয়ে ঋণগ্রস্ত হয়েও কুরবানীতে অংশগ্রহণ করেছে। কুরবানী ধর্মীয় একটা আচার কিন্তু সমাজে এটা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে এটা এখন না করলে অপমানিত হতে হয় কিংবা নিজের মধ্যে হীনমন্যতা চলে আসে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দরকার ছিল সবার জন্য কুরবানী বাতিল করা। এটার জন্য আমাকে আবার ভেজিটেরিয়ান বা পশুপ্রেমী ভেবে বসবেন না। মানুষ পশুপ্রাণী খায় এটা বাস্তুসংস্থানের প্রক্রিয়া, এটার বিরোধী হওয়ার কিছু নেই। সমস্যা হচ্ছে মানুষের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং সমাজে ধনী গরিবের পার্থক্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা লোকলজ্জার ভয়ে কুরবানী দিয়েছে, আগামী দুই তিনমাস তাদের অনেক হিসেব করে চলতে হবে। বর্তমানে নগদ আয় এদের নিন্মমুখী এবং বেশিরভাগই কর্মহীন হয়ে যাচ্ছে।
সরকারি চাকুরিজীবীরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো আছে। সরকারেরও উচিত ছিল প্রাইভেট সেক্টরের মত সরকারি লোকজনদের বেতন কিছুটা কমিয়ে দেওয়া। এবারের করোনা সময়ে যখন সবাই আর্থিক সমস্যায় হিমশিম খাচ্ছিল তখন সরকারি লোকজন এই মেয়াদের বাজেটে তাদের যে স্কেল বাড়ানো হয়েছে তা নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। ১ লা আগস্ট ঈদ হওয়াতে তারা বোনাস কিছুটা বেশি পেয়েছে। তবে সেটা সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে যখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে ১লা আগস্ট, না ৩১ই জুলাই ঈদ হবে তার আগেই তারা ১লা আগস্ট ধরে তাদের বেতন বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় উপকারে সরকারি বেশিভাগ সেক্টরের লোকজনই কাজে লাগেনা। এরা যে পরিমান কাজ করে তার পারিশ্রমিক বড়জোর ৮-৯হাজার টাকা হতে পারে। এদের চাকুরী অনেকটা পার্ট টাইম জবের মত। দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ না করেও এরা বিশাল পরিমান অর্থ নিয়ে যায়। জাতি বিশাল পরিমান হাতির পাল পালে অকারণে। সরকারি লোকজনের দায়িত্ব হচ্ছে জাতিকে সঠিক সেবা দেওয়া ও সীমিত সুযোগ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ পরিমান সম্পদ সৃষ্টি করা। তবে যে হারে অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর পাওয়া যায় তাতে মনে হচ্ছে এরা সর্বোচ্চ সম্পদ ব্যবহার করে জাতির জন্য সীমিত সুযোগ সৃষ্টি করছে!
তারেক রহমান ও বেগম জিয়া যে দুর্নীতি পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছে সেটা এখনো চালু আছে। তবে আওমীলীগের লোকজন ও তাদের আমলারা সে পথে অনেক গুলো অলিগলি তৈরি করে নিয়েছে যাতে মানুষ ধাঁধায় পরে যায় এবং দুর্নীতি অনিয়ম কিভাবে হচ্ছে সেটা সঠিকভাবে বুঝতে না পারে।
আমাদের আমলারা হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে অদক্ষ ও অদূরদর্শী আমলা। জাতির জন্য এরা সঠিক সিদ্বান্ত নিতে বেশিরভাগ সময়ই ব্যর্থ হয়। এদের ব্যর্থতার দায় জাতি যুগের পর যুগ দিয়েই যাচ্ছে এবং আরো অনেকদিন দিয়ে যেতে হবে। যেভাবে জাতি শিক্ষিত হচ্ছে তাতে এখান থেকে উত্তরণের পথ এখনো দেখা যাচ্ছে না আর এটাই সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩২