করোনার কারণে সরকার যে বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে সেটার বিতরণ প্রায় ৭০ শতাংশ হয়ে গেছে। এ ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ যদি অলাভজনক খাতে অথবা অনুৎপাদনশীল খাতে দেওয়া হয় তাহলে বাজারে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তির দিকে। অর্থনীতিবিদরা ভালো বলতে পারবে এটা কি সেই প্রণোদনা প্যাকেজের কারনে হচ্ছে কিনা। তবে এমন মুদ্রাস্ফীতি হওয়ার আরো অনেকগুলি কারণ আছে। উৎপাদনশীল খাতে প্রণোদনা দিলে সময়ের সাথেসাথে এই মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে আর অনুৎপাদনশীল খাতে বেশি প্রণোদনা চলে গেলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগবে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে সম্পদ সৃষ্টি করা মানে উৎপাদনশীল খাতে বেশি বিনিয়োগ করা।
আমাদের বাজেটের বিশাল একটি অংশ চলে যায় সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তাদের বেতন বোনাসে এবং সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি হিসেবে। আমার ঠিক জানা নাই সরকারের কয়টি প্রতিষ্ঠান নিজেদের আয়ে নিজেরা চলতে পারে। সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলিতে সঠিক উপায়ে ম্যানেজমেন্ট করলে তারা নিজেদের আয়ে নিজেরা চলতে পারার কথা। এসব প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তুকি দেওয়ার কারনে বাজেটের বিশাল একটি অংশ নষ্ট হয়ে যায়। আসলে এসব ভর্তুকি সমস্যা সমাধান করা বেশি কঠিন কাজ নয়, তবে আমাদের আমলা ও রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা না থাকার কারণে ইহার সমাধান হচ্ছে না।
আমাদের দেশে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু আছে যাকে পুঁজিবাদী অর্থনীতি বা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি কোনটাই বলা যায় না। আমার কাছে মনে হচ্ছে ইহাকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক অর্থনীতি বলাটা সঠিক হবে। আমাদের রাজনৈতিক শক্তি সমূহ আমাদের অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে যার কারণে অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষ যে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা তা থেকে বঞ্চিত হয়। রাজনীতিবিদদের সাথেসাথে আমাদের আমলারাও অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে অর্থনীতির সুবিধা সমূহ তারা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারেনা। আমাদের বিশাল শ্রম সম্পদ আছে তবে আমাদের ভূমির অপ্রতুলতা বিদ্যমান। এই শ্রম সম্পদকে সঠিক ভাবে কাজে লাগানোর জন্য, সঠিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নেওয়ার মত দক্ষ আমলা ও রাজনীতিবিদ নেই। এই সম্পদকে যদি আমাদের রাজনীতিবিদরা ও আমলারা মিলে সঠিক পন্থায় কাজে লাগাতে পারে তাহলে সত্যিকার অর্থেই দেশে উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে।
সর্বশেষ আমরা যদি রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে না আসতে পারি তাহলে জাতির উন্নয়ন কখনোই সম্ভব হবেনা। জাতির উন্নয়ন করতে হলে জাতির জন্য সম্পদ সৃষ্টি করতে হবে। আর এই সম্পদ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতিবিদ ও আমলাদের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। তবে অদূর ভবিষ্যতে এরকম ভূমিকা তারা রাখতে পারবে অন্তত আমার তা মনে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৬