ব্লগে অনেকেই ভেবেছিলেন আমি হয়তো বিবাহিত। না, আমি অবিবাহিতই ছিলাম। গত ১৮ তারিখে আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং এটি আমার প্রথম বিয়ে । বর এবং কনে দুইজনেই সুস্থ্য আছি। আসলে খুব দ্রুতই সব কিছুর আয়োজন হয়ে গেছে। আপনাদের দাওয়াত দেওয়ার সুযোগও হলো না।
ঢাকা থেকে মেয়েকে দেখতে আমি গত সপ্তাহে বাড়িতে গিয়েছিলাম। মেয়েটি আমার পূর্ব পরিচিত এবং আমার বাড়ির পাশেই। তার সম্পর্কে আমার মোটামুটি জানাশোনা ছিল। আর এই জন্য কিছুটা এক্সাইটেড ছিলাম। সমস্যা হলো পরিবার থেকে আরেকটি মেয়েও দেখার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। যেটি আমার পছন্দ হয় সেদিকে আলোচনা এগুবে। আমি জানতাম আমার পরিচিত মেয়েটিই আমার পছন্দ হবে। যাক অপরিচিত মেয়েটিকে দেখার সিডিউল করা হল সকালে আর পরিচিত মেয়েটিকে মানে আমার বউকে দেখার সিডিউল পাওয়া গেলো বিকেল তিনটার পর।
এর আগে এভাবে মেয়ে দেখার অভিজ্ঞতা আমার ছিল না, এটাই প্রথম। অপরিচিত মেয়েটিকে ওদের বাড়িতে দেখতে গিয়েছিলাম, আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম, তবে যাকে দেখতে গিয়েছিলাম সে মনে হচ্ছে আমার থেকেও বেশি নার্ভাস ছিল। মেয়েটিকে আমার সামনে আনা হলো, আমি তার সামনে বসে আছি সেও বসে আছে। আমি কয়েকবার তার দিকে তাকালাম, বুজলাম সে বসেই থাকবে কোন কথা বলবে না। আমি তাকে নাম, পড়ালেখা জিজ্ঞেস করলাম সে আস্তে করে করে উত্তর দিল। এরপর বললাম আপনি কিছু জিজ্ঞেস করবেন না? সে চুপ করেই ছিল।
এই পৃথিবীতে আমার কাছে কখনো কোন মানুষের বাহ্যিক সৌন্দয্যকে অসুন্দর লাগেনি, প্রত্যেক মানুষই তার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সুন্দর। যাক চার, পাঁচ মিনিটের মত মেয়েটি আমার সামনে ছিল। আমাদের জন্য অনেক নাস্তার আয়োজন ছিল, আমি এসব পরিস্থিতিতে বেশিকিছু খেতে পারিনা, কি কারনে জানিনা সেখানে আমি অনেক কিছুই খেয়েছি!
আমরা সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম, উদ্দেশ্য পরের মানে আমার পরিচিত মেয়েটিকে দেখতে বের হওয়া। তবে সমস্যা হলো সিডিউল অনুযায়ী আমরা বেশ আগে আগে ওদের বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়ে দিলাম। এদিকে যত এগুচ্ছি আমি তত নার্ভস হচ্ছি! কাছাকাছি এসে দেখলাম শিডিউলেরও ঘন্টাখানেক আগে চলে যাবো আমরা। ড্রাইভারকে বললাম আস্তে আস্তে চালাতে। ওদের বাড়ির সামনে এসে থামালাম, আম্মাকে বললাম এখানে একটু দেরি করি নিই। আম্মা বিরক্ত হয়ে বলল দেরি করার কি দরকার! আসলে মেয়ের বাবা মানে আমার শশুর উনি বিকেল তিনটার পর ঘরে থাকেন না। উনার সম্পর্কে আমি জানি, অনেকটা রাগী মানুষ। আমি চাচ্ছিলাম না উনার মুখোমুখি হই, কি থেকে কি জিজ্ঞেস করে কে জানে।
যাক যত দেরিই করি বুঝলাম শিডিউলের আগেই যেতে হবে। মনে মনে ভাবলাম যাই যা আছে কপালে, উনি তো আর আমাদের ইংরেজি শিক্ষক মাঈনউদ্দিন স্যারের থেকে কড়া না। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছে আর আমার হার্টবিট বাড়ছে। আমরা তাদের বাড়ির দরজায় আসার পর দেখলাম মেয়ের ছোট ভাই দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের রিসিভ করে নিয়ে এসেছে ঘরে। ঘরের ভিতর ঢুকেই দেখি ড্রয়িং রুমে মেয়ের বাবা বসে আছে। আমি আরো নার্ভাস হয়ে গেলাম। আমাকে বসতে বললো উনি, বসিয়ে উনি নাম ধাম, ঠিকানা, আমার ব্যবসা সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন, আমি যথাসম্ভব উত্তর দিলাম। এরপর উনার অফিস থেকে একটা ফোন আসলো উনি সেটাই ব্যস্ত হয়ে গেলেন। রুমের বাহিরে গিয়ে কথা বলতে লাগলেন। কিছুটা স্বস্তি পেলাম। আবার ভাবলাম আমাদের থেকে ফোন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে মানে এখানে কিছু হচ্ছে না।
এরই মাঝে অনেক পদের নাস্তা চলে এসেছে, আমি কিছুই খেতে পারলাম না, শুধুমাত্র আঙ্গুর ফল খেলাম কয়েকটা। মেয়েটিকে আমার সামনে আনা হলো, তাকে দেখে আমার নার্ভাসনেসটা অনেকটা কেটে গেলো। প্রথম মেয়েটির মত তাকে নার্ভাস লাগেনি। সে আমার সামনে এসে বসেই একটা হাসি দিয়েছে। মেয়েটির সাথে এর আগে আমার অনেক কথা হয়েছিল আমাদের স্কুলের কয়েকটি প্রোগ্রামে। তবে এবার আমার কোন কথা বের হলো না মুখে। অনেক কষ্টে শুরু করার জন্য নাম জিজ্ঞেস করলাম, সে হেসে দিল আর বললো ভাইয়া আপনি আমার নাম জানেন না? এবার আমিও একটু হেসে দিলাম। যাক আরো অল্প কিছু কথা শেষে আমাদের দেখার পর্ব শেষ হয়ে গেল। মেয়েটি যখন উঠে যাবে তাকে আমি আস্তে করে বললাম নিতু “ভালোবাসি”!
যাইহোক এরপর দুই পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হলো। মেয়ের বাবা মানে আমার শশুর উনি অনেক খোঁজ খবর নিলেন আমার সম্পর্কে। এরপর উনি একদিন আমার বন্ধুকে(যে মিডিয়া ছিল) ফোন দিয়ে বললো আলহামদুলিল্লাহ তাদেরকে এগুতে বলো। আর হ্যাঁ, ছেলে আমাকে তার সম্পর্কে যা যা বলেছে আমি খোজ নিয়ে তার ব্যাতিক্রম পাইনি, এটা উনার ভালো লেগেছে। যাক এই খোঁজখবর নিয়েও অনেক মজার ঘটনা ঘটেছে সেটা অন্যসময় বলা যাবে।
এরপর খুব দ্রুত সবকিছু হয়ে গেল। গত আঠারো তারিখে আমি আর নিতু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। সবার দোয়াপ্রার্থী।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩০