আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিয়া থেকে ভারত কিভাবে তেল আমদানী করছে সেটা জানার জন্য ভারতের কাছে পরামর্শ চেয়েছি। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাশিয়া থেকে ক্রুড অয়েল আমদানি করা সঠিক কাজ হবেনা। ভারত বিশাল রাষ্ট্র, ভারতের বাণিজ্যের আকার আমাদের তুলনায় বহুগুণ বেশি। এছাড়াও ভারত খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমেরিকার দেওয়া রাশিয়ার তেলের ওপরে নিষেধাজ্ঞা ভারত যতটা সহজে উপেক্ষা করতে পারবে আমাদের পক্ষে সেভাবে সম্ভব নয়। আমরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভারতের চেয়ে বেশি আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। আবার ভারতের ওপর আমেরিকা বেশি চাপ সৃষ্টি করলে সেটা হিতে বিপরীত হতে পারে। তখন ভারত চীন সম্পর্কের উন্নতি কিংবা রাশিয়ার সাথে অর্থনৈতিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার এমন দুশ্চিন্তার আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশকে চাইলে খুব সহজেই বিপাকে ফেলে দিতে পারবে তারা।
আরো কিছু ব্যাপার আছে, যেমন
■ভারত হলো আমেরিকার ১২তম বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। অন্যদিকে বাংলাদেশ হলো ৬০তম। ভারতে প্রতিবছর আমেরিকা প্রায় ৩৫বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে। যেখানে বাংলাদেশে রপ্তানি হয় মাত্র ২বিলিয়ন ডলারের মত।
■ ভারত আমেরিকার ১০তম বৃহত্তম আমদানী বাজার। বাংলাদেশ যেখানে ৩৮তম! প্রতিবছর ভারত থেকে প্রায় ৬০বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা যায় আমেরিকায়। যেখানের বাংলাদেশের যায় ৬বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
■ আমেরিকার আমদানিকৃত কৃষিপণ্যের বাজার হিসেবে ভারত ১৪তম। যেখানে বাংলাদেশ থেকে সামান্য কিছু চা পাতা ও তামাক ছাড়া আমেরিকায় কোন কৃষি পণ্য রপ্তানি হয় না!
■ ভারতের বাজারে আমেরিকার সরাসরি বিনিয়োগ আছে প্রায় ৫০বিলিয়ন ডলারের মত এবং আমেরিকার বাজারে ভারতের সরাসরি বিনিয়োগ আছে ৬বিলিয়নের মতো। আর বাংলাদেশের বাজারে আমেরিকার বিনিয়োগ আছে ৫০০মিলিয়ন ডলার।
■ এদিকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রায় অর্ধেকই আমেরিকায় রপ্তানি হয় যার বাজার মূল্য ৫বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। আবার বাকি অর্ধেক যায় ইউরোপের বাজারে, আর আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে অধিকাংশ ইউরোপের দেশ গুলো মেনে নিচ্ছে। তাই ইউরোপের বাজার নিয়েও ঝুঁকিতে পড়বে।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমেরিকার বড় বড় ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি গুলোর মেনুফেকচারিং বেশিরভাগই ভারতে হয়ে থাকে। জরুরী মেডিসিন ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য ভারত খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ তাদের কাছে। তাই এই মুহূর্তে সবকিছু বিবেচনা করে এবং ভারতকে উদাহরণ ধরে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের ক্রুড ওয়েল আমদানী করা এক ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে! কিন্তু টিভিতে আজ একটা টকশোতে দেখলাম বাংলাদেশের এক সাবেক রাষ্ট্রদূত বলছেন রাশিয়া থেকে এই মুহূর্তে কমদামে তেল আমদানির সুযোগ বাংলাদেশ চাইলে নিতে পারে।
এই বিষয়ে আমাদের ব্লগারদের অভিমত কি?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১১:০০