ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে কে জয়ী হবে, এই কথাটিই পুরোপুরি সঠিক নয়। কারন যে যুদ্ধটা চলছে সেটা আদোতে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ নয়। যুদ্ধটা হচ্ছে ন্যাটো বনাম রাশিয়া। ইউক্রেনকে সামনে রেখে ন্যাটো এই ফ্রক্সি যুদ্ধ চালাচ্ছে রাশিয়ার সাথে। যুদ্ধ চালাচ্ছে বললে ভুল হবে, বলা যায় আগুন নিয়ে নাড়াচাড়া করছে ন্যাটো। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর সোভিয়েত ফেডারেশনের আগ্রাসন থামাতে ন্যাটো গঠিত হয়। সোভিয়েত ভাঙ্গার পর আসলে ন্যাটোর আর দরকার থাকার কথা না, এবং ন্যাটো আর সম্প্রসারিত করা হবে না এই কমিটমেন্টও করা হয়। কিন্তু সে কমিটমেন্ট রক্ষা করা হয়নি। পুরোনো রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত অনেক দেশকেই ন্যাটোর পেটের ভিতর ঢুকানো হয় তবুও রাশিয়া যুদ্ধ বাঁধায়নি। কিন্তু ইউক্রেন আর জর্জিয়াকে যখন ন্যাটো খোঁচাতে থাকে তখনই রাশিয়া আপত্তি দেখায় এবং এই আপত্তিটা যৌক্তিক কারনেই দেখিয়েছে রাশিয়া।
আমি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণকে সমর্থন করছি না কিন্তু এটা তো সত্য ইউক্রেন সীমান্তে ন্যাটোর এটমিক মিসাইল বসলে রাশিয়া নিজেকে অনিরাপদ মনে করবেই। আর এটা একটা এটমিক শক্তিধর দেশ কিছুতেই মেনে নিবে না কোনদিন।
কিউবায় যখন রাশিয়া আন্তঃমহাদেশীয় মিসাইল বসাতে চেয়েছিল তখন আমেরিকা তুমুল আপত্তি তোলে এবং তখনকার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার সাথে এই বিষয়ে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছিল। পুতিনও কিন্তু স্পষ্ট বার্তা প্রথম দিন থেকেই দিয়ে আসছিল যে, ইউক্রেন কথা দিক তারা ন্যাটতে যোগ দিবেনা তাহলে ইউক্রেন আক্রমন নিয়ে তারা আর সামনে এগুবেনা। আরেকটা বিষয়, রাশিয়া যদি আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে এটমিক অস্ত্র বসায় সেটা আমেরিকা কিভাবে নিবে? রাশিয়া বাদ দিলাম খোদ মেক্সিকো সরকার যদি সীমান্তে মিসাইল মোতায়েন করার সিদ্বান্ত নেয় সেটা আমেরিকা বরদাস্ত করবে কখনো? করবে না। এগুলো জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু, যেটা আমেরিকাও মেনে নিবে না রাশিয়াও না। বাইডেন যেমন বলছে ন্যাটো সরাসরি এই যুদ্ধে জড়াবে না কিন্তু তারা পুতিনকে আস্তেআস্তে বিপর্যস্ত করবে। তার মানে ন্যাটো অলরেডি ফ্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে।
আফগানিস্তানের মত দুর্বল রাষ্ট্রে সোভিয়েত দশ বছর যুদ্ধ চালিয়ে সে ভার বহন করতে পারেনি সেখানে ইউক্রেন প্লাস ছায়া ন্যাটোর সাথে যুদ্ধ করে রাশিয়া বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে। আর এটাই মনে হচ্ছে আমেরিকার কৌশল। তবে আমেরিকার এটাও মনে রাখতে হবে এখন এটমিক অস্ত্রের যুগ তাই যুদ্ধ সবাইকে অনেক বেশিই চিন্তিত করে। এটমিক শক্তিধর একটা দেশকে নিয়ে এমন এক্সপেরিমেন্ট করা সত্যিই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বাইডেন প্রশাসন এতে ব্যর্থ হলে আমেরিকা সহ পুরো ইউরোপকে এর চড়া মূল্য দিতে হবে। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোর তো অলরেডি মূল্য দেওয়া শুরুই হয়ে গেছে।
আমেরিকা ও ন্যাটো চাইলে এই যুদ্ধ অতিস্বত্তর থামাতে পারে অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চলার সম্ভবনা বেড়েই চলছে। যুদ্ধ কখনোই কারো কাম্য নয়, যুদ্ধ অনেক কিছুই কেড়ে নেয় তবে সবার আগে কেড়ে নেয় নৈতিকতা!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০৯