শেখ হাসিনা গতবার নির্বাচনের আগে বলেছিল তিনি এই টার্মে ক্ষমতায় এলে দুর্নীতিবাজদের দৌড়ের উপর রাখবেন। দুর্নীতিতে উনার নীতি থাকবে জিরো টলারেন্স! উনার এসব কথা কথাই থেকে গেলো মনে হয়, এবছর সুইস ব্যাংকে দেশ থেকে ৮০বিলিয়ন টাকা পাচার হয়ে গেছে! এটা শুদু সুইস ব্যাংকের হিসেব সেটা আবার যারা শুধু নিজেদের জাতীয়তা পরিচয় দিয়ে একাউন্ট খুলেছে তাদের হিসেব। এক সুইস ব্যাংকে যদি এই অবস্থা হয় বাকি আরো ব্যাংকের অবস্থা কেমন তাহলে? টাকা পয়সা তো মনে হচ্ছে দেশে আর থাকবে না!
সুইস ব্যাংক থেকে বাংলাদেশকে ট্রফি দেওয়া উচিত। আর বাংলাদেশীদের জন্য মনে হচ্ছে সুইস ব্যাংকে আলাদা ভোল্ট খুলতে হবে আর কয়দিন পর!
মজার ব্যাপার হচ্ছে এই নিউজটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও কেউই এটা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য করছে না। নামিদামি পত্রিকা গুলোও তেমন বোল্ড করে খবরটি ছাপায়নি! মনে হয় আজকাল পত্রিকার মালিক, সম্পাদকরাও সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খুলছে! ব্লগেও এই নিয়ে দুইটি পোস্ট দেখেছি মাত্র, আমাদের ব্লগাররাও সুইস ব্যাংকে টাকা টুকা রাখেন নাকি কে জানে।
যাক আমাদের সরকার প্রধান এই নিউজটি দেখেছে কিনা বলা মুশকিল, তবে উনি যে ওয়াদা দিয়েছিলেন সেটা উনার মনে আছে কিনা এটা জানা দরকার। উনার আশেপাশের লোক গুলো দেশ থেকে টাকা নিয়ে সুইস ব্যাংক ভরিয়ে ফেলছে এটা অন্তত উনার জানা থাকার কথা। দেশে একটা দারোগার চাকুরী, ছাত্রলীগ, যুবলীগের একটা সভাপতি, সেক্রেটারির পদ দিতে গেলে এনএসআই, ডিজিএফ দিয়ে উনি তদন্ত করান। উনার আশেপাশের লোক গুলো সম্পর্কে এমন তদন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার করে করার দরকার উনার।
দেশের এত পরিমান ক্যাশ বের হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতির কি অবস্থা হবে এটা ক্লাস সেভেনের বাচ্চাও বলতে পারবে, উনারও পারার কথা। উনি মনে হয় উনার অর্থমন্ত্রী কালো টাকা দেশে আনার যে সুযোগ করে দিয়েছে সেটার ফলাফল দেখার অপেক্ষা করছেন। আসলে সেটার ফলাফল হবে বড় একটা শূন্য। যে একবার কষ্ট করে দেশ থেকে কালো টাকা বের করেছে তাকে হাজারো লোভ দেখালেও সে ঐ টাকা দেশে নিয়ে আসবে না। বরং আরো নেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকবে।
বিএনপি একসময় টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও উনার এমপি, মন্ত্রীরা এই কথাটি দোয়া-দুরুদের মত করে পড়ে এবং উনাদের সময়ে দেশ এই জায়গায় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি এটা উনাদের সাফল্য হিসেবেই বলে। দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়নি কারন কি? অন্য দেশ আমাদের থেকে দুর্নীতিতে ভালো করছে এই জন্য নাকি আমাদের দেশে আসলেই দুর্নীতি কমেছে? আসলে কারন হচ্ছে এখন দুর্নীতির কৌশল পরিবর্তন হয়েছে, খালি চোখে অনেক অর্থনৈতিক লেনদেনকে দুর্নীতি মনে হয়না কিন্তু একটু এনালাইসিস করলেই বুঝা যায় সেখানে দুর্নীতি হয়েছে। ওভার ইনভয়েস, পরামর্শ প্রতিষ্ঠান, সক্ষমতা নিরুপন, সম্ভাব্যতা যাচাই, পর্যবেক্ষন কমিটি এসব ভারীভারী নাম দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয় যা আপাতত দৃষ্টিতে দুর্নীতি মনে হয়না। এছাড়াও বিএনপির সময় যদি দুর্নীতি ও অর্থপাচারের একশো একটি উপায় থাকতো এখন আছে একহাজার একটি!
সে যাইহোক, দেশের টাকা-পয়সা এভাবে পাচার হয়ে গেলে সেটা দেশের জন্য নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করবে, সেসব ট্যাকেল দেওয়ার মত দক্ষ রাজনীতিবিদ ও আমলা এই দেশে নেই। আপাতত শেখ হাসিনা সরকারের উচিত হবে সত্যিকার অর্থেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকর করা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩২