কয়েকদিন আগে বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। বাড়িতে সাধারণত আমি ঈদ ছাড়া এত দিন থাকি না। এবার একটু দরকারে বেশি থাকা হয়ে গেছে। বাড়িতে থাকার সময় এবার দুটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্য করলাম। এবং উক্ত বিষয় দুটি আমাকে আসলে খুবই দুঃখ দিয়েছে।
প্রথম ঘটনাটি হচ্ছে, আমাদের এলাকার ঐদিকে আইসক্রিমওয়ালা তৈরি করা আইসক্রিম ফেরি করে বিক্রি করে। একটা সময় শুধু সুপারির সিজনে বিক্রি করতো। এখন প্রায় সারা বছরেই নাকি এইরকম আইসক্রিম বাড়ি বাড়ি এসে ফেরি করে বিক্রি করে। হঠাৎ করে দুপুরবেলা আমি মাইকে জোরে জোরে মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ শুনতে পাই। বুঝতে পারি ওয়াজ আমাদের বাড়ির দরজায় বাজানো হচ্ছে। আম্মাকে ডেকে বললাম এই ভর দুপুরে এত জোরে ওয়াজ বাড়িতে কে বাজাচ্ছে? আম্মা বলল কেউ বাজাচ্ছে না, আইসক্রিমওয়ালা আইসক্রিম বিক্রি করতে এসেছে। আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আইসক্রিমওয়ালা কবে থেকে আবার ওয়াজ বাজিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করে? আম্মা বলল, গত দুই তিন বছর থেকেই তো এভাবে আইসক্রিম বিক্রি করে। আমি বললাম আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম ঘন্টা বাজিয়ে এবং পরবর্তীতে গান বাজিয়ে আইসক্রিমওয়ালা আইসক্রিম বিক্রি করতে আসতো।
আম্মা বলতো বেশ কয়েকদিন আগে এমনই ছিল। হঠাৎ করে এলাকায় কোনো এক আইসক্রিমওয়ালা এরকম গান-বাজনা করে আইসক্রিম বিক্রি করার কারণে এলাকার কিছু ছেলে তাকে ধরে আচ্ছামতো মারধোর করেছে। তার আইসক্রিমের পেটি পানিতে ফেলে দিয়েছে। আর বলেছে গান বাজনা বা ঘন্টা বাজিয়ে যেন আর কখনো এই এলাকায় আইসক্রিম বিক্রি না করে। এরপর থেকেই সব আইসক্রিমওয়ালা ওয়াজ বাজিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করা শুরু করে।
পরের ঘটনা, শুক্রবার দিন আমি জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছি। যথারীতি জমায়েতের সাথে নামাজ শেষ করার পর বসে রইলাম। একটু দূর থেকে খেয়াল করলাম আমাদের আগের ইমাম সাহেব নেই। নতুন এক ইমাম সাহেব নামাজ পড়াচ্ছেন এবং আজকেই সম্ভবত উনি প্রথম জুমার নামাজ এই মসজিদে পড়াচ্ছেন। তো নামাজ শেষে উনি বসে আছেন, কিছুক্ষণ পর মুসল্লীরা হুজুরকে মোনাজাত দেওয়ার জন্য বলল। হুজুর চুপ করে ছিলেন, একপর্যায়ে মুসল্লীরা জোরাজুরি করতে শুরু করলো। এবার হুজুর বললেন, “সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করা বিদ'আত, আমি এভাবে মুনাজাত করাতে পারবো না। আপনারা নিজেরা নিজেরা মোনাজাত করে নিন।”
স্বাভাবিকভাবেই সামনের কাতারে বসে থাকা আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজন মুরুব্বী উনাকে বারবার অনুরোধ করতে লাগলো। একপর্যায়ে বললো, আপনি যদি মোনাজাত না করেন আগামী জুম্মার নামাজ থেকে আপনারা নামাজ পড়ানোর দরকার নেই। অগত্যা বেচারা ইমাম দু'হাত তুলে মোনাজাত ধরলো, অল্প কিছু দোয়া পড়ে শেষে উনি বললেন, “হে আল্লাহ আমি এই মুসল্লিদের জোরাজুরিতে এ কাজ করতে বাধ্য হলাম। আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং এদের হেদায়েত দান করো।”
আমি আল্লাহর কাছে তার এই ফরিয়াদ শুনে খুব অবাক হলাম এবং মনে মনে হাসিও পেলো মোনাজাতের ভিতরে। এরপরের শুক্রবার পর্যন্ত অবশ্য আমি বাড়িতে ছিলাম না। উনাকে কি ইমামের চাকুরীতে রাখা হয়েছে কিনা সেটা ফোন করে জানলাম, উনি নাকি নিজেই আর আসেননি নামাজ পড়াতে!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৮