ইমরান খান নামক চরিত্রটি পাকিস্তানের জাতীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ সাড়া জাগানো একটি চরিত্র। তবে একটি কথা আছে বাংলায়, “যত গর্জে তত বর্ষে না!” ইমরান খানের ব্যাপারে এই প্রবাদটি শতভাগ সত্য। ইমরান খান যে পরিমাণ সমর্থন ও আশা দেখিয়ে মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছে সে তার কিছুই করতে পারেনি। তার উদ্দেশ্য হয়তো ভালো ছিল কিন্তু সে যে পরিমাণ গর্জন দিত সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য সে পরিমাণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারেনি।
ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে সে দেশের বাইরে তার সব বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করেছে! আধুনিক এই বিশ্বে পররাষ্ট্রনীতি এত জঘন্য হলে কোন সরকারই সার্ভাইব করার কথা না, ইমরান খানও পারেনি।
যে সৌদি আরব পাকিস্তানকে জন্মের পর থেকেই সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে ইমরান খানের কূটনৈতিক অদূরদর্শিতা কারণে সে সৌদি আরবও সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু কি সহযোগিতা বন্ধ করেছে, তাদের পূর্বের দেওয়া দুই বিলিয়ন ডলারও ফেরত চেয়েছিল। চীনের সাথেও তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে আর্মস ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। অথচ আমেরিকা, সৌদি আরবের পরেই চীন ছিল তার তৃতীয় ভালো বন্ধু। এছাড়াও ডেভিড লুয়ের মতো মাঝারি মানের একজন ডিপ্লোমেট যখন তার দেশে আসে তখন দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন থেকে সে মন্তব্য করেছে তাকে অপসারণ করার জন্য ডেভিড লু পাকিস্তান সফর করেছে! এগুলি কোনভাবেই আমেরিকা ও তার মিত্র দেশ গুলো ভালোভাবে নেয়নি। ডেভিড লুয়ের সফরটিকে সে খুব বাজে ভাবে হ্যান্ডেল করেছিল!
তবে তার দূরদর্শিতা ও বোকামির চূড়ান্ত লেভেল অতিক্রম করে আফগানিস্তানে তালেবানদের সমর্থন দিয়ে। তালেবান সরকারকে সাহায্য করার জন্য, স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সে বিশ্ববাসীকে আহবান করে। যেটা ছিল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কপিনে শেষ ফেরেক ঠুকা! ইমরান খানের বোঝা উচিত ছিল যাদের দান, অনুদান, ঋণ কিংবা ব্যবসায় আমার দেশের অর্থনীতির চাকা চলে তাদের বিরাগভাজন এত খোলাসা ভাবে হওয়ার দরকার নেই। মূলত তার পররাষ্ট্রনীতি যারা দেখভাল করতো সে নিজে সহ তারা সবাই ছিল কট্টরপন্থী। এতটা কট্টর ও মাথা মোটা যে তালেবানদের অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা পর্যন্ত করেছে!
যাই হোক ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে তবে এটি অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। পাকিস্তানের এমন ঘটনার নজির বহু আছে। কিন্তু যেটা হলো ইমরান খানের জন্য তার সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এসেছে। সে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই প্রথম কোনো সেনা ছাউনিতে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ঢুকে পড়েছে, আগুন লাগিয়েছে। ইমরান খান দেশের সাধারণ মানুষকে সামান্তবাদের বিপক্ষে যে স্বপ্ন দেখিয়েছে সে স্বপ্নে সাধারণ মানুষ এখনো বিভোর হয়ে আছে!
ইমরান খানের এই জনপ্রিয়তা দেখে মনে হচ্ছে তার কিছু হবে না কিন্তু ইমরান খানের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়তা ছিল জুলফিকার আলী
ভুট্টকে যখন ফাঁসি দেওয়া হয়! তাই রাজনৈতিক সব সম্ভবের দেশ পাকিস্তানে কি হয় সেটা বলা মুশকিল!
পাকিস্তান আজন্ম একটি অভিশপ্ত দেশ! এই অভিশাপ থেকে সে দেশের সাধারণ মানুষের কবে যে মুক্তি মিলবে কে জানে। যে স্বপ্ন ইমরান খান দেখিয়েছে সে স্বপ্ন ইমরান খান তার নির্বুদ্ধিতার জন্য শুরুই করতে পারেনি। আবার কে কখন আসবে পাকিস্তানকে এমন স্বপ্ন দেখাতে, সাধারণ পাকিস্তানিদের উজ্জীবিত করতে। তবে আমার মনে হচ্ছে সুদূর ভবিষ্যতে এমন কেউই আসবেনা। পাকিস্তানিদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত তাদের আরো অনেক সময় ধরে ভোগ করতে হবে!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:২৩