আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে খুব বেশি জাতীয় স্বার্থ বিষয়ে একমত হতে পারিনি। অতীতের অনেক বিষয়েও যেমন পারিনি বর্তমানের কোন বিষয়েও আমরা একমত হতে পারছি না! যেকোনো সহজ বিষয়েও আমরা ফেটে দুই ভাগ হয়ে যাই!
বিষয়টি হচ্ছে গত দুইদিন আগে ফেসবুকে আমার বন্ধু তালিকার একজন ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার নামের এক লোকের সাথে একটা ছবি পোস্ট করে। ক্যাপশনে উনার প্রতি কিছু প্রশংসামূলক কথা ও উনাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। যে লোকটি পোস্ট করেছেন উনি মোটামুটি কট্টরপন্থী আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার সমর্থক। তো উনার ওই ছবিতে উনার বন্ধুরা বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করা শুরু করল। বেশিরভাগের কথাই হল নিঝুম মজুমদার আওয়ামীলীগের লোক নয় কিংবা শেখ হাসিনার প্রকৃত সমর্থকও নয়। সচরাচর যে শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়, যেমন কাউয়া, হাইব্রিড কিংবা দলে অনুপ্রবেশকারী, এগুলি নিঝুম মজুমদার লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে। এছাড়াও ২০০৮-৯ সালের দিকে তার আওমীলীগ ও শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে সমালোচনা করা বিভিন্ন পোষ্টের লিংক দেওয়া হচ্ছিল!
যাইহোক, আমি সেখানে একজন মন্তব্যকারীর উদ্দেশ্যে বললাম, “আপনি কি জানেন হিলারি ক্লিনটন একটা সময় রিপাবলিকান সমর্থক ছিলেন কিংবা মাহাথির মোহাম্মদের কথা তো নিশ্চয়ই জানেন, যে লোক তার বিরোধী দলের লোকদের নামে বেনামে জেলে ঢুকিয়েছে সেই বিরোধী লোকদের সাথে একজোট হয়েই মাহথির সরকার গঠন করেছে? আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্রের কোথাও কি বলা আছে অন্য কোন দলের লোক আওয়ামীলীগে যোগদান করতে পারবে না?”
তিনি আমার মন্তব্যের জবাবে কি বলেছেন শুনুন, “আওয়ামীলীগ কেউ করতে পারে না, আওয়ামীলীগ হয়ে জন্ম নিতে হয়।”
আমি উনার এই কমেন্টের জবাবে বললাম, তাহলে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও তাদের নীতি-নির্ধারকদেরকে বলুন আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে?
এরপর উনি রিপ্লাই দিলেন, “এসব বালছাল মুস্তাকের বংশধরদের জন্য আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই।”
এই উত্তরের পর উনার মন্তব্যের আমি আর কোন জবাব দেওয়ার ভাষা খুজে পেলাম না। মনেমনে ভাবলাম, সময় এসেছে আওয়ামীলীগের লোকদেরকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিরুৎসাহিত করার!
দেখুন একটা দলে মানুষ আকর্ষিত হয় কখন? যখন সে দলের আদর্শ, রাষ্ট্র পরিচালনার সিস্টেম, মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণের ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ নেয় এবং সেগুলি থেকে যখন সুফল পায় তখনই সে দলের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। এখন কেউ যদি আওয়ামীলীগের আদর্শ কিংবা তাদের যে কোনো ভাল কাজের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সে দল করতে চায়, তাহলে তাকে কাউয়া, হাইব্রিড কিংবা দলে অনুপ্রবেশকারী বলে ট্যাগ দেওয়া কি সঠিক! বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সে তার পছন্দমত যে কোন দলই করতে পারবে কিংবা একটি দল ত্যাগ করে আরেকটি দলে যোগদান করতে পারবে এতে কোনো দলেরই গঠনতান্ত্রিক বাঁধা নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দলের সামান্য একজন কর্মী থেকে শুরু করে একেবারে উচ্চ পর্যায়ের নেতারাও এ বিষয়টিকে খুবই নোংরা ভাবে উপস্থাপন করে। তাদের অভিমত তাদের দল কেউ যদি জন্মগত ভাবে না করে সে এই দলে এসে দলের ক্ষতি করবে। আর এই জন্যই আমার কাছে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কোয়ালিটিফুল মানুষের পদারোচনা খুবই কম!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২৩ সকাল ৯:৪১