somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি থেকে যা আজও আমায় ভাবায় (৮)★

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। আমার দাদী তখনও জীবিত। আমি, আমার দাদী ও আমার বড় বোন একই খাটে ঘুমাতাম। রাতের বেলায় যখন বিদ্যুৎ চলে যেত দাদী আমাদের দুই ভাই বোনকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতেন। আমরা আরামে ঘুমাতাম। বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত দাদী এই কাজটি করতেন। আমার দাদির ঘুম খুবই হালকা ছিল, সামান্য আওয়াজেই উনার ঘুম ভেঙে যেত। তখন আমাদের এলাকায় চোরের বেশ উপদ্রব ছিল। সিঁধ কেটে মানুষের ঘরে ঘরে চুরি হতো। আব্বা আম্মা তখন খুবই চিন্তায় ছিল কখন না জানি কখন আমাদের ঘরে চোর ঢুকে। তবে আম্মা প্রায়ই বলতো তোর দাদীর ঘুম এতই হালকা যে চোর ঢোকার আগেই টের পেয়ে যাবে।
সেসময় চুরির আশঙ্কার কারণে ঘরের বেশ কিছু দামি গহনা ও নগদ টাকা তখন আমার আব্বা আম্মাকে দিয়ে আমার নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কারণ নানাদের পাকা বাড়ি ছিল সিঁধ কেটে চুরির ভয় ছিল না। তো একদিন সকালবেলায় সবার চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠি দেখি আমাদের ঘরে রাতের বেলায় চোর ঢুকেছে। তবে একটা পর্যায়ে দেখে সবাই হাসাহাসি করছে। আমি বুঝতে পারছি না ঘরে চুরি হয়েছে সবাই হাসাহাসি করছে কেনো! পরে দেখলাম চোর আসলে ঘরে ঢুকে নেওয়ার মতো তেমন কিছুই পায়নি। শেষমেষ আব্বা রাতেরবেলা বাজার থেকে আসার সময় আম নিয়ে এসেছিল। আমরা ঘুমিয়ে থাকায় আমাদের জন্য আমগুলি রেখে দিয়েছে, যেনো সকালে খেতে পারি। চোর ব্যাটা সে আমগুলি ঘরে বসেই খেয়েছে এবং এত সুন্দর করে খেয়েছে যে আমের বিচিতে সামান্যতম আম নেই। এমন ভাবে সে চুষে চুষে খেয়েছে। খাওয়ার পরে আমের খোসা ও আমের বিচি গুলি খুব সুন্দর করে ঘরের মাঝখানে গুছিয়ে রেখেছে এবং আম খেয়ে ঘরের মধ্যেই টয়লেট করে চলে গিয়েছে!
তবে এর চেয়েও আশ্চর্য বিষয় হয়েছে চোর ঠিক আমার দাদির মাথার নিচ দিয়েই সিঁধ কেটে ঢুকেছে অথচ দাদী কোনো টেরই পায়নি! আমার দাদী যতদিন বেঁচে ছিল এটা নিয়ে আমরা উনার সাথে মজা নিতাম।

এই ঘটনাটি ২০১৮ সালের দিকে। আমি একদিন সন্ধ্যা বেলায় কাজ শেষ করে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় কিছুটা জ্যাম ছিল, রিক্সা খুব আস্তে আস্তে যাচ্ছিল। একটু দূরে বাসস্ট্যান্ড, তার আগে একটি ছেলে হাতের রিসিট নিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিল। যাদের রিক্সায় কিংবা সিএনজিতে অথবা মাথায় কোন মালামালের ব্যাগ/বস্তা আছে। এ জায়গায় প্রায় এমনটি দেখা যায়, মানুষ খুব বিরক্ত হয় তবে কারোই কিছুর করা থাকে না। এরা এক প্রকার জোর করে সিটি কর্পোরেশনের টোল বলে একটি রিসিট ধরিয়ে দিয়ে ২০ টাকা ৩০ টাকা কিংবা ৫০ টাকা নিয়ে নেয়!
তো আমার রিক্সার পাশেই আরেক ভদ্রলোক রিক্সায় বসে ছিল। রিক্সায় উনার মোটামুটি বড় ধরনের একটি ব্যাগ ছিল। ছেলেটি এসে তার হাতে ৩০ টাকার একটা রিসিট ধরিয়ে দিয়ে জলদি টাকা বের করতে বলে। লোকটি বলে আমি টাকা দিব কেনো! ছেলেটি বলে এখান দিয়ে মালামাল নিতে হলে সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্স দিতে হয়। রিসিটে সব লেখা আছে, আপনি দেখুন। লোকটি কোনো অবস্থাতেই টাকা দিতে রাজি হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে সে বলে আমি বাসার জন্য বাজার করে নিয়ে যাচ্ছি এটার আবার কিসের ট্যাক্স! লোকটির ব্যাগে সত্যিকার অর্থেই কাঁচা বাজার ছিল। ছেলেটি বাজারের ব্যাগের মুখ খুললে দেখা যায় সেখানে পেঁয়াজ, টমেটো আরো কিছু জিনিস ছিল, তবে পরিমানে একটু বেশিই ছিল। কিন্তু নাছোড়বান্দা ছেলেটি বলছে এত বাজার বাসার জন্য না, আপনাকে এটার জন্য ট্যাক্স দিতে হবে। লোকটি অনেক তর্ক বিতর্ক পর ছেলেটিকে বুঝাতে পেরেছে এটা বাসার জন্যই। তারপরেও ছেলেটি খুবই বিরক্তি ভাব ও বিশ্রী গালাগাল দিয়ে লোকটিকে ছেড়ে দিয়েছে।
আমি পাশ থেকে সবই দেখছিলাম, সত্যি বলতে আমি না মোটামুটি সবাই দেখছিল কিন্তু কেউই কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। কারণ এরা এখানে মানুষকে এভাবেই হয়রানি করে যাচ্ছে দিনের পর দিন! আমার বুঝে আসেনা সিটি কর্পোরেশনের ট্যাক্সের নামে রাস্তা ব্যবহার করার জন্য এটা কি ধরনের ট্যাক্স আদায় করছে! এইসব রাস্তা সিটি কর্পোরেশনের নাকি সড়ক মন্ত্রণালয়ের!

আমাদের দুই ভাই বোনের ছোটবেলার শিক্ষক ছিলেন আমার মা। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত উনিই আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এরপরে আমাদের আরো দুই ভাই বোনকে আমরাই পড়িয়েছি। আমার আম্মা আমাদেরকে দুইবেলা পড়াতেন, সকালবেলা এক ঘন্টার মত এবং সন্ধ্যা থেকে রাতের পড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত। এই সন্ধ্যা থেকে রাতের পড়ার মাঝখান দিয়ে বাড়ির অনেকেই আসতেন আম্মার সাথে কথা বলতে আবার অনেকে আসতেন বিভিন্ন পরামর্শ ও কাজের জন্য। কাজ বলতে প্রায় অনেকে আসতো আম্মার কাছে চিঠি লিখে দেওয়ার জন্য। কেউ আসতো তার ছেলের কাছে চিঠি লেখার জন্য, কেউ আসতো নিজের মেয়ের জামাইয়ের কাছে চিঠি লেখার জন্য আবার অনেকে আসতো নিজের স্বামী কাছে চিঠি লেখার জন্য। কেউ চিঠি লিখতে আসলে আমরা খুব আনন্দ পেতাম, কারণ যে সময়টুকুতে আম্মা চিঠি লিখতো সে সময় আমরা পড়া থেকে কিছুটা বিরতি পেতাম।
আমার আম্মার হাতের লেখা খুবই সুন্দর ছিল, যদিও আম্মা বেশি দূর পড়ালেখা করেননি। অষ্টম শ্রেণী পাস করার পরেই আম্মার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। যাইহোক এমনই একদিন আমাদের পাশের বাড়ির এক মহিলা আম্মার কাছে চিঠি লেখার জন্য এসেছে উনি উনার স্বামীর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখবেন, উনার স্বামী সৌদি আরবে থাকে। আম্মাকে উনি চিঠি লিখতে বললেন, উনি বলছেন আর আম্মা লিখছেন। প্রথমেই উনার স্বামী কেমন আছে, শরীর স্বাস্থ্য ভালো কিনা, বাড়িতে কবে আসবে, গতবারে যে টাকা পাঠিয়েছে সেগুলি ঠিকভাবে পেয়েছে আরো কিছু বিষয় বলছে আর আম্মা সেটা লিখে যাচ্ছে। এরপর উনি আর কিছু বলছেন না, দাঁড়িয়ে আছেন। আম্মা বলছেন কি হলো ভাবী এরপরে আর কি লিখবো। তারপরে উনি কিছু বলছেন না দেখে আম্মা উনার দিকে তাকিয়ে বললো আর কিছু লেখার নেই? এরপর উনি মুচকি হাসি দিলেন এবং আমার দিকে ইশারা করলেন, আমি কিছুই বুঝলাম না। আম্মা আমাকে বললো, যা এখান থেকে। ঐ ঘরে বই নিয়ে গিয়ে পড়, আমি ডাক দিলে আসবি।
তখন আমি কিছু বুঝিনি তবে এখন বুঝছি উনি কেনো মুচকি হাসি দিলেন এবং আম্মা আমাকে কি জন্য পাশের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। আপনারা কেউ কি বিষয়টা বুঝেছেন :)
স্মৃতি থেকে যা আজও ভাবায় আমায় (৭)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×