somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনপ্রিয় সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ৭৭তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা গান ও চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত কিংবদন্তীর নাম গাজী মাজহারুল আনোয়ার। যিনি ২১ হাজার গানের স্রস্টা ও আমাদের বাংলা গানের সর্বকালের সেরা গীতিকারদের একজন। তিনি একাধারে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, রচয়িতা, গীতিকার ও সুরকার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেও টেলিভিশনের জন্য গান লিখে গেছেন। বিবিসি বাংলা তৈরিকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশটি বাংলা গানের তালিকায় রয়েছে তার লেখা তিনটি গান। গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। চলচ্চিত্রে নানা ভূমিকার জন্য তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও ২০০২ সালে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম নিয়ে অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার বাংলাদেশের একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি, ৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য, সেন্সরবোর্ডের সদস্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের আজ ৭৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জনপ্রিয় সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২-৬৩ সালে মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় প্রথম গান লিখেন ‘’ “বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে” যার সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন। ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্থানে গান লিখা শুরু করেন। সেইসময়ে গানপ্রতি ৫০ টাকা পেতেন যা দিয়ে তাঁর পেশাদার গীতিকার জীবন শুরু। সেই যে শুরু করেছিলেন আজ অবধি তাঁর গান লিখা আজো চলছে। ১৯৬৫ সাল থেকে যুক্ত হন চলচ্চিত্রে। লিখতে শুরু করেন কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছবির পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার কিছু টিভি নাটকও পরিচালনা করেন। সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ ছবিতে ‘’আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লিখা সফলতার সাথে শুরু করেন। গানটি আজো প্রয়াত আঞ্জুমান আরা বেগম ও বশির আহমেদের কণ্ঠের সেরাগানগুলোর তালিকায় শীর্ষে আছে । রুনা লায়লার গাওয়া চলচ্চিত্রের প্রথম গান ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে কি হবে ‘’ গানটিও গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লিখা । তাঁর লিখা বহু কালজয়ী গান আমাদের চলচ্চিত্রের গানের ভাণ্ডারের আলাদা এক সম্পদ হয়ে আছে। শুধু তাই নয় , তাঁর লিখা ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রেরণাদায়ক গান হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল যা আজো গাওয়া হয় ও হবে চিরকাল । বিবিসি বাংলা শতাব্দির সেরা ২০ গানের মাঝে জয় বাংলা বাংলার জয় গানটি সহ আরও দুটো গানসহ গাজির লিখা মোট ৩ টি গান স্থান পেয়েছে ।আঞ্জুমান আরা বেগম , রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন,এন্দ্রু কিশোর, সৈয়দ আব্দুল হাদি সহ এমন কোন খ্যাতিমান শিল্পী নেই যে যার কণ্ঠে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লিখা গান নেই । জহিরুল হকের ‘সারেন্ডার’ ছবিতে জসিমের লিপে ‘সবাই তো ভালোবাসা চায় ‘ গানটি দিয়ে তো সারেন্ডার ও জসিমকে দর্শকদের হৃদয়ে ঠাই করে দিয়েছেন এবং যে গানটির জন্য সুরকার আলম খান ও শিল্পী অ্যান্ড্রো কিশোর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ।###


গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছবি প্রযোজনার একটি প্রতিষ্ঠান ছিল যার নাম ‘দেশ চিত্রকথা’। দেশ চিত্রকথা থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ৪২ টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার সবগুলোতে তিনি পরিচালক হিসেবে ছিলেন না। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিগুলো হলো –শাস্তি, স্বাধীন, শর্ত, সমর, শ্রদ্ধা, ক্ষুধা, স্নেহ, তপস্যা, উল্কা, আম্মা, পরাধীন,আর্তনাদ,পাষাণের প্রেম, এই যে দুনিয়া। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছবিগুলোর কাহিনীগুলো হতো নাটকীয়তায় ভরপুর যা বেশ কয়েকবার মোড় নিতো। কিন্তু গাজী যেন কিভাবে কিভাবে সব নাটকীয়তা এক সুতোয় বেঁধে সুন্দর এক সমাপ্তি টানতেন যা দর্শকদের মুগ্ধ করতো। পরিচালনা ছাড়াও তার প্রযোজিত ছবিগুলো হলো সমাধান,অগ্নিশিখা, অনুরোধ, জিঞ্জির, আনারকলি, নানটু ঘোটক, চোর, বিচারপতি, সন্ধি, স্বাক্ষর ইত্যাদি। অন্যর প্রযোজিত কিন্তু গাজীর পরিচালনার ছবিগুলো হলো ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘জীবনের গল্প’, অনন্ত জলিল প্রযোজিত ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০০২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ‘উচিৎ শিক্ষা’, ১৯৯৬ সালে ‘অজান্তে’ ,২০০১ সালে ‘চুড়িওয়ালা’, ২০০২ সালে ‘লাল দরিয়া’, ২০০৩ সালে ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’ চলচ্চিত্রগুলোর জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে সর্বমোট ৫ বার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ছাড়াও একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কর্তৃক লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা ১১০।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার এদেশের গর্ব, দেশকে ভালবেসে লিখেছেন অমর দেশের গান, সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা গানের ভাণ্ডার। তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির একটি ‘প্রতিষ্ঠান’ হয়ে চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। চিরকাল ‘বাংলাদেশী’ বা বাংলাদেশপন্থি হয়ে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এই মেধাবী মানুষটি যিনি আজ আমাদের মিডিয়ায় বড় অবহেলিত। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশক এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের আজ ৭৭তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে দেশের এই বরেণ্য মেধাবী মানুষটিকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×