ব্রিটিশ-মার্কিন চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেত্রী এমিলি ব্লান্ট । ৩৭ বছর বয়সী ব্রিটিশ অভিনেত্রী ব্লান্ট তার ক্যারিয়ার শুরু করেন মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে। ২০০৪ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘মাই সামার অফ লাভ’। সমকামী প্রেম নিয়ে তৈরি ওই সিনেমার মাধ্যমেই অভিনেত্রী হিসেবে নিজের জাত চিনিয়ে দেন ব্লান্ট; জিতে নেন ‘ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড ব্রিটিশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’-এর ‘মোস্ট প্রমিসিং নিউকামার’-এর খেতাব। পরের বছর টেলিভিশন ড্রামা সিরিজ ‘গিডিয়ন’স ডটার’-এ অভিনয় করে জিতে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার। ২০০১ সালে লন্ডনে মঞ্চস্থ দ্য রয়্যাল ফ্যামিলি মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন । ২০০৩ সালে টেলিভিশন চলচ্চিত্র বৌডিকা (ওয়ারিয়র কুইন) দিয়ে টেলিভিশনে অভিষেক হয়। ২০০৪ সালে মাই সামার অফ লাভ চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পুরস্কার এ সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নতুন মুখের খ্যাতি লাভ করেন। গিডিয়ন্স ডটার (২০০৬) টেলিভিশন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা টিভি পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি দ্য ডেভিল্স ওয়্যার্স প্রাডা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা চলচ্চিত্র পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার ও বাফটা পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। আজ এই অভিনেত্রীর ৩৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৮৩ সালের আজকের দিনে তিনি যুক্তরাজ্যে (লন্ডন) জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ-মার্কিন চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেত্রী এমিলি ব্লান্টের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
এমিলি ব্লান্ট ১৯৮৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যের ওয়ান্ডসওর্থে জন্মগ্রহণ করেন। ব্লন্টের পুরো নাম এমিলি ওলিভিয়া লিয়াহ ব্লান্ট। তার পিতা অলিভার সিমন পিটার ব্লান্ট ছিলেন একজন ব্যারিস্টার এবং মাতা জোয়ানা একজন অভিনেত্রী ও শিক্ষক। তিনি চার ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার অন্য ভাই-বোনেরা হলেন ফেলিসিটি, সেবাস্টিন, ও সুজানাহ। তার দাদা পিটার ব্লান্ট ছিলেন একজন মেজর-জেনারেল এবং তার এক চাচা ক্রিসপিন ব্লান্ট কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য। অভিনেত্রী এমিলি ব্লান্ট একেবারে শৈশব থেকেই তোতলাতেন। একসময় তিনি আবিষ্কার করেন অভিনয় তোতলামি থেকে সেরে উঠবার একটি লাগসই উপায়। শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত এমিলি তোতলামি ও কথা বলার সমস্যায় ভুগেছেন। তিনি টেনে কথা বলতে পারতেন না বলে সেসময় যারা অবলীলায় কথা বলতে পারে তাদে লক্ষ করতেন ও কথা শুনতেন। তিনি বলেন : “ আমি অনর্গল কথা বলতে পারতাম না বলে অন্যদের লক্ষ্য করতাম আর তাদের কথা শুনতাম। আমি যখন টিউব ট্রেনে ভ্রমণ করতাম, অবাক হয়ে সবাইকে দেখতাম আর তাদের নিয়ে গল্প বানাতাম। সবসময় অন্যকে নকল করার এক ধরণে ধাত ছিল আমার মাঝে। “আমি খুব ছোটবেলায় অভিনয় শুরু করেছিলাম, কারণ এটিই ছিল আমার জন্য একমাত্র উপায় যে ভাবে আমি স্বাভাবিকভাবে কথা বলা রপ্ত করতে পারি। আমি হলাম সেই কিশোরী যে ওপর তলায় গিয়ে নিজে নিজে আয়নার সামনে বিভিন্ন কাজ করা চেষ্টা করত। আমি অন্য কাউকে বলতে পারতাম না খুব গোপনীয়তাপ্রিয় ছিলাম বলে।” একটি সাময়িকীকে দেয়া সাক্ষাতকারে এমিলি ব্লান্ট শৈশবে তার তোতলামির ধাত কাটিয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন। ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে স্যার পিটার হলের নির্দেশনায় দ্য রয়্যাল ফ্যামিলি মঞ্চনাটকে জুডি ডেঞ্চের সাথে ব্লান্টের পেশাদারী কর্মজীবন শুরু হয়। এই নাটকে তিনি ডেঞ্চের চরিত্রে ফ্যানি ক্যাভেন্ডিশের নাতনী গোয়েন চরিত্রে অভিনয় করেন। সমালোচক টম কিটিঞ্জ এই নাটকে প্রশংসা করে লিখেন, "পিটার হলের নির্দেশনা ও অ্যান্থনি ওয়ার্ডের সেটের যোগসূত্রের ফলে দ্য রয়্যাল ফ্যামিলি অসাধারণ বিনোদনপূর্ণ একটি রাত উপহার দিয়েছে" এবং লিখেন, "এতে সকল অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুন্দর মানসম্পন্ন অভিনয় পাওয়া গেছে।" ব্লান্ট তার অভিনয়ের জন্য ইভেনিং স্ট্যান্ডার্ডে "শ্রেষ্ঠ নবাগত" হিসেবে ভূষিত হন। ২০০২ সালে তিনি ন্যাশনাল থিয়েটারে নিকোলাস রাইটের ভিনসেন্ট ইন ব্রিক্সটন মঞ্চনাটকে ইউজিনি চরিত্রে এবং চিসেস্টার ফেস্টিভ্যাল থিয়েটারে ইন্ধু রুবাসিঙ্ঘম নির্দেশিত রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট মঞ্চনাটকে জুলিয়েট চরিত্রে অভিনয় করেন।. ২০০৩ সালে রোমানদের জন্য যুদ্ধ করা প্রাচীন সেল্টিক যুদ্ধা-রানীর জীবনী নিয়ে নির্মিত বোদিকা নাটক দিয়ে তার ব্রিটিশ টেলিভিশনে অভিষেক হয়। একই বছর তিনি দুই খণ্ড বিশিষ্ট ব্রিটিশ টেলিভিশন নাটক এইটথ হেনরি-তে ষোড়শ শতাব্দীর রানী ক্যাথরিন হাওয়ার্ড চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হন।
১৪ বছরের ক্যারিয়ারে ব্লান্ট জিতে নিয়েছেন বাফটার ‘ব্রিটিশ আর্টিস্ট অফ দ্য ইয়ার’-এর মতো পুরস্কার। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল, ‘দ্য ডেভিল ওয়্যারস প্রাডা’ (২০০৬), ‘ইয়াং ভিক্টোরিয়া’ (২০০৯), ‘দ্য অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যুরো’ (২০১১) এবং ‘লুপার’ (২০১২)। তার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ‘আর্থার নিউম্যান’; ২০১৩ সালের ওই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেতা কলিন ফার্থ।হলিউডে কাজ শুরু করার সময় অভিনেত্রী এমিলি ব্লান্ট ধারণা করেছিলেন এই জগতটি ‘রঙধনু আর সূর্যরশ্মি’ দিয়ে তৈরি, কিন্তু অচিরেই তার ভুল ভেঙে যায়। ‘গার্ল অন দ্য ট্রেইন’ চলচ্চিত্রের তারকাটি জানান হলিউডে কাজ শুরু করার আগে তার এক ধরণের প্রত্যাশা ছিল তবে যোগ দেবার পর তিনি বুঝতে পারেন তার এই বিশ্বাস ছিল ভুল। তিনি এক সাময়িকীকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, “এটি আসলে একটি বাণিজ্যে যোগ দেয়া, বিশেষ করে আমি যখন এখানে পা রাখি আমার কাছে মনে হয়েছিল এই জগতটি ‘রঙধনু আর সূর্যরশ্মি’ দিয়ে তৈরি, এর পরই উপলব্ধি করলাম এটি আসলে শো বিজনেস, আর তা তো বাণিজ্যই, আমি ব্যক্তিগতভাবে নিরাশাবাদী নই। আমি আসলেই আশাবাদী। তবে এটি বাণিজ্য বলে যে কাউকে কঠিন পথ বেছে নিতেই হয়। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, অনেক সময়ই ছবিতে দরকার না থাকা সত্ত্বেও ন্যুড সিন রাখা হয়।আমার মনে হয় এজন্য হেলমেট পরে নেয়া দরকার।” তাই তিনি আর ছবিতে নগ্ন হবেন না। মেয়ে হেজেলের জন্ম দেওয়ার পর এমিলি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্যামেরার সামনে আর নগ্ন হবেন না বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। এমিলি বলেন, আমি এখন আর ২২ বছরের নেই। কাজেই পর্দায় নগ্ন হতেও স্বচ্ছন্দ নই আর। তাছাড়া এমন কোনও চরিত্রে তিনি আর অভিনয় করবেন না, যাতে বর্ণবিদ্বেষ কিংবা হিংস্রতা প্রকাশ পায়। তিনি আরও বলেন এই জগত এতোটাই কঠিন যে অন্য কেউ এতে আশার ইচ্ছা রাখলে তাকে তিনি নিরুৎসাহিত করবেন। আজ এই অভিনেত্রীর ৩৭তম জন্মবার্ষিকী। ব্রিটিশ-মার্কিন চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেত্রী এমিলি ব্লান্টের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৩৫