somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

অগ্নিযুগের বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সূর্য সেনের সহকর্মী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। বিপ্লবীদের দলে নাম লেখানোর অল্প দিনের মধ্যেই বিনোদবিহারী চৌধুরী মাস্টারদা সূর্যসেনের প্রিয়ভাজন হয়েউঠেছিলেন। ১৯৩০ সালের ঐতিহাসিক অস্ত্রাগার লুন্ঠনে বিনোদবিহারী চৌধুরী তাই হতে পেরেছিলেন সূর্যসেনের অন্যতম তরুণ সহযোগী । বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী একটি ইতিহাস, একজন কিংবদন্তি, মহীরুহ। কালোত্তীর্ণ তার জীবন। ছোটখাটো মানুষটির দীর্ঘ সক্রিয় জীবনের মূলে তার ঋজু চরিত্র। স্পষ্টভাষী তিনি, নিজের অবস্থানে বরাবর অবিচল। বজ্র কঠিন চিত্তে লক্ষ্যে অটুট। বিনোদ বিহারী চৌধুরী নামটি কল্পনামাত্র একজন অপরাজেয় মানুষের চিত্রকলা ভেসে ওঠে আমাদের সামনে। স্বাধিকার ও মানবমুক্তির সংগ্রামের প্রতিটি পর্বে যিনি ছিলেন বরাভয়। শোষণমুক্ত সমাজের জন্য আমাদের দীর্ঘ অপেক্ষা, স্বপ্ন ও আকাঙ্খা তাঁর হাত ধরেই যেন বাস্তবতার ভিত্তি পায়। নতুন করে আশাবাদী করে তোলে মানুষকে। ত্রিকালদর্শী এই চিরবিপ্লবী মানুষটির আজ ৭ম তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের আজকের দিনে তিনি বার্ধক্য জনিত জটিলতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতে মৃত্যুবরণ করেন। অগ্নিযুগের বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


বিনোদ বিহারী চৌধূরী ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালি থানায় জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর বাবাকামিনী কুমার চৌধুরী ছিলেন পেশায় উকিল এবং মা রামা চৌধুরী ছিলেন গৃহিনী। তাঁর স্ত্রীর নাম বিভা চৌধুরী।ছেলের নাম বিবেকান্দ্র চৌধুরী। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি থানার রাঙ্গামাটিয়া বোর্ড স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাশুরু হয়েছিল৷ সেখান থেকে তিনি ফটিকছড়ির প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ফটিকছড়ি করোনেশনআদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বোয়ালখালির পি.সি. সেন সারোয়ারতলি উচ্চ বিদ্যালয়, চিটাগাং কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯২৯ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তাঁকে বৃত্তি প্রদানকরা হয়৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৩৪ এবং ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশরাজের রাজপুতনার ডিউলি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী অবস্থায় থাকার সময় তিনি প্রথম শ্রেণীতে আই.এ. এবংবি.এ. পাস করেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামকে তিন দিনের জন্য স্বাধীন করেছিলেন তারা। টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস করা, অক্সিলারি ফোর্সের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র লুট করেছেন। দামপাড়া পুলিশ লাইনে অস্ত্রের গুদাম ছিল, সেটাও তিনি ও দলের সদস্যরা মিলে লুঠ করেন। এ দলে ছিলেন মাস্টারদা সূর্য সেন সহ ছিলেন হিমাংশু সেন , অনন্ত সিংহ, গণেশ ঘোষ ও আনন্দ গুপ্ত। ‘৩০সালের এ ঘটনার পর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন জঙ্গি রূপ ধারণ করে। সে দিনের এসব বিপ্লবীর দুঃসাহসিক কর্মকান্ড ব্যর্থ হয়নি। চট্টগ্রাম সম্পূর্ণরূপে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত ছিল চার দিন। এই কয়েক দিনে ব্রিটিশ সৈন্যরা শক্তি সঞ্চয় করে বিপ্লবী দলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত বিনোদবিহারীরাও বীর বিক্রমে পরে জালালাবাদ পাহাড়ে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। জালালাবাদ যুদ্ধ ছিল বিনোদবিহারী চৌধুরীর প্রথম সম্মুখযুদ্ধ। গলায় গুলিবিদ্ধ হয়েও লড়াই থামাননি তাঁর। চোখের সামনে দেখেছিলেন ১২ জন সহকর্মীর মৃত্যু।


কর্মজীবনে বিনোদ বিহারী চৌধূরী ১৯৩০ সালে কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৩৯ সালে দৈনিক পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৪০ সালে চট্টগ্রাম কোর্টের একজন আইনজীবি হিসাবে অনুশীলন শুরুকরেন। কিন্ত অবশেষে তিনি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। এছাড়া ১৯৪০–১৯৪৬সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস নির্বাহী কমিটির সদস্য থাকার পাশাপাশি ১৯৪৬ সালে কংগ্রেস চট্টগ্রাম জেলাকমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ৩৭ বছর বয়সে পশ্চিম পাকিস্তান কংগ্রেসের সদস্য হন তিনি ৷১৯৫৮ সালে আউয়ূব খান সামরিক আইন জারী করে রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করলে বিনোদ বিহারী চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৯ সালে আউয়ূব বিরোধী গণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে ভারতের মিজোরাম দিয়ে কলকাতায় উপস্থিত হন এবং শরনার্থী কল্যাণ সমিতি গঠন করে সভাপতি হিসেবে তরুণ-যুবকদের সংগঠিত করতে থাকেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং সেন্টার পরিচালনা করেন এবং শরনার্থী শিবিরগুলোতে বহু প্রাইমারী স্কুল গড়ে তোলেন। জীবন সায়াহ্নে উপনিত হয়েও প্রচলিত রাজনীতির ধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে জনকল্যাণমূক সেবাধর্মী রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠায় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্যে শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত-অবহেলিত, অপমানিত জনগনের আকুল আর্তি সরকার ও সকল রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারীর নির্বাচনে (অনুষ্ঠিত হয়নি) চট্টগ্রাম-৯ নির্বাচনী আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন।


ব্যক্তিগত জীবনে তার সুযোগ্য জীবনসঙ্গী- সকল মুক্তি সংগ্রামের প্রেরণাদানকারী চট্টগ্রামের অন্যতম সেরা বিদ্যালয় অর্পণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষিকা মহীয়সী নারীর প্রতিকৃতি বিভা চৌধুরী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর শততম জন্মবার্ষিকীর প্রাক্কালে তাঁকে ছেড়ে অনন্তের পানে যাত্রা করেছেন যা তার জীবনের অন্যতম বড় অপূর্ণতা। এইদেশপ্রেমিক সদানিবেদিতপ্রাণ দম্পতির দুই সন্তান- অকাল প্রয়াত স্বর্গীয় সুবীর চৌধুরী এবং স্বর্গীয় বিবেকানন্দ চৌধুরী ভারতপ্রবাসী ছিলেন। খেয়লী বিধাতার ইশারায় বিপ্লবী এই যোদ্ধা তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই হারিয়ে ফেলেছিলেন ২ পুত্রকেই। ১০০ বছরের পথপরিক্রমা অতিক্রম করে ১০১ ও ১০২ পেরিয়ে ১০৩তম জন্মমাধদিন পালনের পর থেমে গেছে তাঁর জীবন। বয়স তাঁকে ভারাক্রান্ত করতে না পারলেও প্রকৃতির চিরায়ত সত্য তাঁকে থামতে বাধ্য করেছে। ১০ এপ্রিল ২০১৩ ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্য জনিত জটিলতায় তিনি এই নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন। সুদীর্ঘ জীবনে সমাজ ও রাষ্ট্রের যেকোনো দুর্দিনে তিনি ছিলেন সোচ্চার। স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রাম, মানবমুক্তির তিনি ছিলেন এক অনমনীয় অপ্রতিরোধ্য পতাকা। শতবর্ষাধিক বয়সের একটি বটবৃক্ষ ডালপালা পত্র ও পল্লবে আজ দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তার ছায়ার বিস্তার- যার ছায়াতলে আমরা নিশ্চিন্তে- নিরাপদে আজও জীবন যাপন করছি অবিরাম। তাঁর একটি বাক্য আমাদের কানে প্রতিফলিত হয় বার বার, “সত্য বড় কঠিন, সেই কঠিনেরে ভালবাসিও”। সত্য ও সুন্দরের এই অভিযাত্রীকে আজ ১০৪ তম জন্ম জয়ন্তীতে সবার অন্তরের উষ্ণ অভিনন্দন, সবার হৃদয়-নিংড়ানো বিনম্র অভিবাদন। মৃত্যুঞ্জয়ী এই বিপ্লবীর আদর্শ প্রতিফলিত হোক আমাদের সকলের মাঝে। ত্রিকালদর্শী এই চিরবিপ্লবী মানুষটির আজ ৭ম তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল তিনি বার্ধক্য জনিত জটিলতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতে মৃত্যুবরণ করেন। অগ্নিযুগের বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×