somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস আজ

১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চ দিবস। ফারাক্কা বাঁধের ফলে নদীর নাব্যতা কেড়ে নেয়ার আশঙ্কায় ও পানি নায্য হিস্যার দাবীতে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সারাদেশের লাখ লাখ মানুষ রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান থেকে মরণ বাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশ নেন ও লংমার্চ শেষে কানসাট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সেদিন থেকেই ১৬ মে ফারাক্কা দিবস নামে পরিচিতি লাভ করে। দেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জনদুর্ভোগের জন্য তারা ওইদিন লংমার্চ করে ভারত সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানায়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন মহান নেতা মওলানা ভাসানী। তাই এ দিনটি আজও শোষণ, বৈষম্য আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং দাবি আদায়ের পক্ষে বঞ্চিতদের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে পানিশুন্য করতে ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে মাত্র ১৮ কি.মি. দূরে ভারতের মনোহরপুরে দেয়া হয় ফারাক্কা বাঁধ। ১৯৬১ সালের ৩০ জানুয়ারি ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ শুরু করে। ১৯৭০ সালে শেষ হয় বাঁধটির নির্মাণকাজ। তখন পরীক্ষামূলকভাবে ভারত কিছু কিছু পানি ছাড়ে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ফারাক্কার বাঁধ চালু হয়। ভারত ফারাক্কা বাধ নির্মান করে ১৯৭৬ থেকে একতরফাভাবে পানি নিজ দেশের অভ্যন্তরে ফিডার ক্যানেল দিয়ে প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে। ফলে ১৯৭৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত চাহিদানুযায়ী পানির নায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিতই হচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের আগে, শীতকালের শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদী থেকে ৪০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত পানি পেত বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গার পানি ইস্যু নিয়ে ৩০ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অতি দুর্বল একটি চুক্তি করেন। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই সে চুক্তি ভারত অকার্যকর করে দেয়। ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশ মাত্র ছয় হাজার ৪৫৭ কিউসেক পানি পায়, যা ফারাক্কা বাঁধ চালু হওয়ার পর সর্বনি¤œ প্রবাহ ছিল। অথচ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের পানি পাওয়ার কথা ৩৪ হাজার ৫০০ কিউসেক। ১৯৭৭ সালের পানি চুক্তিতে গ্যারান্টিক্লজ ছিল, কিন্তু এ চুক্তিতে তা না থাকায় ভারত বাংলাদেশকে তার ন্যায্য হিস্যা দিতে বাধ্য ছিল না। ফলে বাংলাদেশ পানি কম পেলেও তার প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া চুক্তিটিতে আন্তর্জাতিক সালিসিতে যাওয়ার কনো সুযোগ নেই। অথচ নেপালের সাথে মহাকালী নদী চুক্তিতে ভারত আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন মেনে নিয়েছে। কাজেই গঙ্গা নদীর পানি নিয়ে ভারতর সাথে যে পানি চুক্তি করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ এবং তা বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। এ চুক্তির সফলতা শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। এর কারণ গ্যারান্টিক্লজ বা অঙ্গীকার অনুচ্ছেদ না থাকা। বাস্তবে চুক্তির ফলাফল প্রায় শূন্য।পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, , ২০০১ সাল ২০১৫ সাল পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী পানি মিলছে মাত্র ৩ বছর ।


ফারাক্কা বাধের বিরুপ প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা,মহানন্দাসহ দেশের বড় বড় সব নদী নাব্যতা হারিয়ে ফেলে হয়ে পড়েছে পানিশূন্য বালির চরাঞ্চল। ফারাক্কা ব্যারেজের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মাসহ অন্য তিন নদী মহানন্দা, পাগলা ও পূনর্ভবা শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি না থাকায় পরিবেশের উপর পড়ছে বিরুপ প্রভাব। পানি বিশ্লেষকগণ বলেছেন, উজানে একাধিক বাঁধ দিয়ে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় ফারাক্কা পয়েন্টেই পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০সালের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হতে যেতে পারে। আজ থেকে চৌচল্লিশ বছর আগে আজকের এই ১৬ই মে তারিখেই ভারতে নির্মিত ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে লং মার্চে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজনীতিবিদ মৌলানা ভাসানি। তখন থেকেই বাংলাদেশে এই দিনটি 'ফারাক্কা লং মার্চ দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে, যদিও বিগত পাঁচ দশকে ফারাক্কা নিয়ে ভারতের অনড় অবস্থানে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। বস্তুত সাতের দশকের মাঝামাঝি ভারত যখন গঙ্গার বুকে ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করেছিল, তার পর থেকে বিতর্ক কখনওই এই প্রকল্পটির পিছু ছাড়েনি। সম্প্রতি ভারতেও ফারাক্কার বিরুদ্ধে জনমত জোরালো হচ্ছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তো ফারাক্কা ব্যারাজ ভেঙে ফেলারও প্রস্তাব করেছেন। মেধা পাটকরের মতো অ্যাক্টিভিস্ট ও অনেক বিশেষজ্ঞও বিবিসিকে বলছেন, ভারতেও ফারাক্কা এখন সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি ঘটাচ্ছে - কাজেই এটি অবিলম্বে 'ডিকমিশন' করা দরকার। আর সে জন্য মওলানা ভাসানীর মতো একজন সিংহপুরুষের বড়ই দরকার। অশীতিপর এ মানুষটি ভগ্নশরীর নিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে জাতিকে এককাতারে সমবেত করতে ডাক দিয়েছিলেন। তার সে ডাকে লাখ লাখ মানুষ সাড়া দিয়ে আগ্রাসী শক্তির ভিতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২০ রাত ১২:০৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×