
অনেকই হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর একাধিক বিয়ে নিয়ে তামশা করেন এবং প্রশ্ন ছুড়ে দেন কেন তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন? প্রশ্নকারীদের মধ্যে বিধর্মীরা যেমন আছেন তেমনি অনেক মুসলমানও রয়েছেন। গতকাল জনৈক ব্লগার আমাকে প্রশ্ন করেছেন " আপনার নবী কয়টা বিবাহ করে ছিলেন? এবং আয়েশা কে কত বছর বয়সে বিয়ে করে ছিলেন?" উত্তর না দিয়ে দৌরে পালায়েন না আবার"। প্রশ্নকারীর নাম দেখে অ্নুমিত সে মুসলমান। তিনি নবী (সঃ) কে আমার নবী বলেছেন. তবে তিনি কি তার নবী নন! আমি তার জবাবে বলেছিলাম, তিনি আমার নবী (সঃ) ভালো বলেছেন, আপনার তো না। তাই তাঁকে নিয়ে আপনার সাথে আলাপ করতে চাইনা। আপনি থাকেন আপনাকে নিয়ে ! কিন্তু আজ ভাবলাম, আস্তিক হোক বা নাস্তিক প্রশ্নকারীর উত্তর দেওয়া বা তার ভুল সংশোধন করা আমার দ্বায়িত্ব। তাই তার প্রশ্নের জবাবে বলছিঃ রসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর জীবদ্দশায় ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। হযরত খাদিজার জীবিত কালে তিনি আর কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি। মুসলিম জীবনীকারদের বর্ণনামতে, হযরত খাদিজার মৃত্যুর পর নবী আরও ১০ জন স্ত্রী গ্রহণ করেন। অর্থাৎ তার স্ত্রীর সংখ্যা সর্বমোট ১১ জন। এঁদের অনেকেই ছিলেন বিধবা বা যুদ্ধে স্বামীহারা অথবা স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা দুস্থ। কোনো বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আল্লাহর সরাসরি নির্দেশে। কেন হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এই এগারটি বিয়ে করেছেন তার স্পষ্ট জবাব স্বয়ং আল্লাহ সোবহানুতালা। যারা নবী (সঃ) এর একাধিক বিয়ে নিয়ে হাস্য তামাশ করেন করেন তাদের বিশেষ করে তামাশাকারী মুসলমানদের জন্য এই বিষয়টি জেনে রাখা খুবই জরুরী। আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে বলেন ‘হে নবী, আমি আপনার জন্য বৈধ করেছি আপনার স্ত্রীদেরকে যাদের আপনি দেনমোহর দিয়েছেন …আর কোন ঈমানদার নারী নবীর কাছে নিবেদন করলে আর নবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সে বৈধ। আর এ শুধু আপনারই জন্য, বাকী মুমিনদের জন্য নয় ‘। [সূরা আহযাব ৩৩:৫০] এই আয়াতের ব্যখ্যা দেয়া হয়েছে একেবারেই পরিস্কারভাবে। এটি জেনে রাখলে অমুসলমান ও মুসলিম ধর্মের হয়েও যারা শরীয়াহ বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন না তাদের জবাব দেয়া যাবে হাদিসে বণির্ত বিভিন্ন ব্যখ্যার মধ্যে দিয়ে। একথা অনস্বীকার্য যে রসুল (সঃ) কোন সাধারণ মানুষ ছিলেন না। তিনি আল্লাহর প্রেরিত রসুল (সঃ) সমগ্র মানব জাতীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। কারণ রাসুলের কাছে ওহী নাযিল হত কিন্তু সাধারণ মানুষেরৎ কাছে নাযিল হয় না । * রাসুলকে আল্লাহ্ বিশেষভাবে মেরাজে নিয়ে গেছেন , আমাদের ক্ষেত্রে এটা অসম্ভব এখানে আমলের কিছুই নাই। তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর জন্য শারিয়াহ কিছুটা ভিন্ন ছিল। নবীজির জন্য ইসলামি আইন সাধারণ মুসলমানদের চেয়ে অনেক কঠিন ছিল। যেমন চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করা , মেরাজে যাওয়া , প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া তাঁর জন্য ওয়াজিব ছিল, একবার যুদ্ধের সরঞ্জাম পড়ে ফেলার পর যুদ্ধে না যাওয়া তাঁর জন্য হারাম ছিল। দান গ্রহণ ও মৃত্যুর সময় একটা পয়সা পরিমাণ সম্পদ রেখে যাওয়া তাঁর জন্য হারাম ছিল। তাঁর বংশধরদের কেউ খুব দরিদ্র হলেও যাকাত নিতে পারবেন না বলে কঠোর বিধান রয়েছে। স্ত্রীদের ব্যাপারেও তার বিধান আল্লাহ একটু অন্যরকম দিয়েছেন। এটিই আল্লাহর নির্দেশনা। এমন অনেক হাদিস আছে যা রাসুল (সা) এর জন্য খাস উম্মতের জন্য তা পালনীয় নয় । রাসুল (সাঃ) আমাদের সুন্নাহ মানতে বলেছেন হাদিস না। রাসূল (সাঃ) যে সকল নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাদেরকে উম্মা হাতুল মু’মিনীন অর্থাৎ মুসলমানদের মাতা হিসেবে অভিহিত করা হয়। কোরআনে এসেছে -“নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তার স্ত্রীগণ তাদের মাতা”( সূরা : আহযাব-০৬)
নবী মোহাম্মদ (সঃ) এর স্ত্রী গনের নামঃ
১। খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ
২। সাওদা বিনতে যামআ
৩। আয়িশা বিনতে আবু বকর
৪। হাফসা বিনতে উমর
৫। যয়নাব বিনতে খুযাইমা
৬। উম্মে সালামা হিন্দ বিনতে আবী উমাইয়্যা
৭। জয়নাব বিনতে জাহাল (রা.)
৮। জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিছ ইবনে আবি যারার
৯। উম্মে হাবিবা (রা.)
১০। সফিয়্যা বিনতে হুওয়াই
১১। মাইমুনা বিনতে হারিছ ইবনে হাযন
এবার জানা যাক নবী মোহাম্মদ(সঃ) একাধিক বিয়ের কারনঃ
১। হযরত খাদিজা (রা) মৃত্যুর পরে । রাসুল (সা) হযরত সওদা (রা) কে বিয়ে করেন রাসুলের চার কন্যা সন্তানকে দেখভালের জন্য ।
২। বনু মুস্তালিক গোত্রের নেতা হারেসার কন্যা জুহাইরিয়া (রা) কে রাসুল (সা) বিয়ে করেন । হারেসা হয়ে গেল রাসুলের শ্বশুর , এই দিকে বিবেচনা করে রাসুল (সা) এর সাথে বনু মুস্তালিক গোত্রের সবাইকে মুক্ত করে দেন এবং এতে দুই গোত্রের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্ক হয় ।
৩।হযরত সাফিয়া (রা) বিয়ের ফলে যুদ্ধ তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায় । রাসুল (সঃ)এর সাথে সন্ধি করে ইহুদীরা খয়বারে বসবাস করতে থাকে ।
৪। নিজের কাছের সাহাবীদের সাথে সম্পর্ক আরও মজবুত , আরও শক্তিশালী করার জন্য তিনি তাঁদের সাথে সম্পর্ক করেছেন । হযরত উমর (রা) এর কন্যা হাফসা (রা) কে এবং আবু বকর (রা)এর কন্যা আয়েশা (রা) কেও রাসুল (সাঃ) বিয়ে করেন। শুদু কি তাই? নবীজি নিজের কন্যা ফাতিমাকে (রা) কে আলীর (রা) সাথে এবং কুলসুম আর রুকাইয়া (রা) বিয়ে দেন উসমান (রা) এর সাথে । ইসলামের ইতিহাস দেখুন । নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর ওফাতের পরে এই চারজনকেই ধারাবাহিক ভাবে খলিফা তথা মুসলিমদের আমীর নির্বাচিত করা হয় এতে বুঝা যায় রাসুল (সা) এর কৌশলটি কত সুদূর প্রসারিত ছিল ।
৫। হযরত জয়নাব (রা) কে বিয়ে করেন সমাজের মিথ্যা কুসংস্কার দূর করার জন্য ।
৬। উম্মে হাবিবাহ (রা) কে বিয়ে করার পর তার পিতা কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান আর রাসুল (সাঃ) এর প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেন না বরং ৮ম হিজরিতে রমজান মাসে মক্কা বিজয়ের পূর্বরাতে তিনি ইসলাম গ্রহন করেন ।
৭। হযরত মায়মুনা বিনতুল হারেছকে বিয়া করার ফলে নাজদ বাসীদের অব্যাহত শত্রুতা ও ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । অথচ এই নাজদবাসীরাই ৭০ জন সাহাবীদের দাওয়াত এর বাহানায় নির্মমভাবে হত্যা করেছিল । এই ঘটনা বিরে মাউনার ঘটনা নামে প্রসিদ্ধ । মহানবী (সা.)-এর এসব বিয়ের মধ্যে কোনো শারীরিক চাহিদাও ছিল না। বরং বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে তিনি বিয়ের মাধ্যমে একটি শক্তি সমাবেশও করে থাকবেন, যা দেখে তত্কালীন কাফের-মুশরিকরাও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল। ইসলামী শরিয়ায় এ জন্য শারীরিক প্রয়োজনে অধিক স্ত্রী রাখার প্রবণতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সীমারেখায় অনধিক চার স্ত্রী থাকলেও সবার অধিকার আদায় না করতে পারলে তাকে অন্যায় ও জুলুম বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
৮। এছাড়া আরও কারন আছে । পুরুষরা সরাসরি রাসুল (সা) থেকে মাসালা মাসায়েল জেনে নিত যা নারীরা পর্দার কারনে সেই সুযোগ ছিল না । রাসুল (সা) এর থেকে জেনে তাঁর স্ত্রীরা মাসালা জেনে তা অন্য মহিলাদের জানিয়ে দিত ।
একজন মানুষ যৌ্বনে উপনিত হলে প্রাবৃতিক নিয়েমেই বিপরীত লিংগের প্রতি আগ্রহী হয়, বিয়ে করে। কিন্তু সঙ্গত কারণেই যৌবনে নবীজি ওই রেওয়াজের পথেও হাঁটেননি। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বয়স যখন ২৫ বছর তখন তাঁর সাথে বিয়ে হয় ৪০ বছর বয়সের মহিলা খাদিজা (রা) এর সাথে । প্রশ্ন আসে যে, একজন সুদর্শন পুরুষ , যখন তাঁর টগবগে তারুণ্য ভরা যৌবনকাল, ঠিক তখন কিসের জন্য তিনি ৪০ বছরের একজন নারীকে বিয়ে করলেন, যখন তাঁর যৌবনকাল ডুবি অবস্থায় ? শুদু তাই নয়এই ৪০ বছরের খাদিজা (রা) ছিলেন একজন বিধবাও । যুবক হিসেবে একজন যুবতি নারীকেই বিয়ে যৌক্তিক ছিল , কেন তিনি ৪০ বছরের মেয়ে বিয়ে করলেন ?
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর পূণ্যবতী স্ত্রীগণঃ
১। হযরত খাদিজা রাঃ হযরত খাদিজা রাঃ এর সাথে রাসূল সাঃ এর বিবাহ হয়,যখন রাসূল সাঃ এর বয়স ছিল ২৫ বছর। আর হযরত খাদিজা রাঃ এর বয়স ছিল ৪০ বছর। হযরত খাদিজা রাঃ এর সাথে রাসূল সাঃ সংসার করেন ২৫ বছর। অর্থাৎ হযরত খাদিজা রাঃ এর ইন্তেকালের সময় রাসূল সাঃ এর বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। এই ২৫ বছরের মাঝে রাসূল সাঃ দ্বিতীয় কোন বিবাহ করেননি। ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত নবী (সাঃ) অবিবাহিত ছিলেনঃ
--- ২৫ থেকে ৫৩ বছর বয়স পর্যন্ত নবী সা: এর মাত্র একজন স্ত্রী ছিলেন
--- ৫৩ থেকে ৬৩ বছর বয়সের মধ্যে নবীর সা: বাকি বিয়ে গুলো সম্পন্ন হয়।
২। হযরত সাওদা রাঃ হযরত খাদিজা রাঃ এর ইন্তেকালের পর সর্বপ্রথম রাসূল সাঃ বিয়ে করেন হযরত সাওদা রাঃ কে। যার স্বামী হিযরত করে হাবশা গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। ফলে হযরত সাওদা রাঃ বিধবা হয়ে যান। তখন রাসূল সাঃ তার কষ্ট লাঘবের জন্য বিবাহ করেন।
৩। হযরত আয়শা রাঃ আয়েশা (রাঃ) ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)এর বন্ধু হযরত আবু বকর (রাঃ) এর কন্যা। বিয়ের সময় আয়েশার বয়স ছিল মাত্র ৬ অথবা ৯ বছর। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। আয়েশার স্মরন শক্তিও ছিল অসাধারন। হযরতআয়েশা (রাঃ)হুযুর সাঃ মৃত্যুর প র সবচেয়ে বেশী দিন বেচে ছিলেন এবং তিনিই স্ত্রীগনেরমধ্যে সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ননা ক রে গেছেন। এখন প্রশ্ন হল মুহাম্মদ কেন মাত্র ৬ অথবা ৯ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন? হযরত আবু বকর রাঃ তার কন্যা হযরত আয়শা রাঃ এর বিবাহ এক কাফির যুবায়ের বিন মুতয়িম এর সাথে ঠিক করা ছিল। কিন্তু তার পিতা সেই বিবাহ রদ করে দেয় এ শংকায় যে, তার ছেলে মুসলমান হয়ে যেতে পারে। এ ছিল পরিস্থিতি। মুসলিম কন্যাদের মুসলিমদের সাথে বিবাহ দেয়া ছাড়া কোন গত্যান্তর ছিল না। উক্ত বিবাহ নাকচ হয়ে যাবার পর হযরত আবু বকর রাঃ তার কন্যা আয়শা রাঃ এর সাথে রাসূল সাঃ এর বিবাহ দিয়ে দেন। মুহাম্মদ সাঃ আয়েশা রাঃ কে প্রাথমিক যে তিন কারণের জন্য বিয়ে করেছিলেনঃ ক) আবু বকর রাঃ সাথের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আত্মীয়তার মজবুত বাঁধনে পর্যবেশিত করে রাখা। খ) আয়েশা রাঃ ইসলামের বিধি বিধান শিক্ষা এবং তৈরী করা যাতে তিনি ইসলামের বিধি বিধানকে সংরক্ষণ, (বিশেষ করে নারীদের জন্য একান্ত বিষয়াদি) রাসুল সাঃ জীবন ইতিহাস, আল কোরআনের আয়াতের নাজিলের কারণ এবং মানুষকে তাঁর সঠিক শিক্ষাদান করতে পারেন। গ) উনাকে সে ভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল যাতে তিনি উনার সম্পূর্ণ সক্ষমতাকে ইসলামের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
৪। হযরত হাফসা রাঃ হযরত উমর রাঃ এর কন্যা হযরত হাফসা রাঃ ও তার স্বামীর সাথে হিযরত করেন। কিন্তু তার স্বামীও ইন্তোকাল করেন। তখন হযরত উমর রাঃ তার কন্যাকে বিয়ে করার জন্য প্রথমে হযরত উসমান রাঃ কে, তারপর হযরত আবু বকর রাঃ কে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা উভয়ে অস্বিকৃতি জানালে রাসূল সাঃ হযরত হাফসা রাঃ কে বিবাহ করেন।
৫। উম্মুল মাসাকীন হযরত যয়নব বিনতে খুজাইমা রাঃ যার স্বামী উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান। তারপর রাসূল সাঃ ৩য় হিজরীর রমজান মাসে বিবাহ করেন। মাত্র আটমাস তার বিবাহাধীনে থেকে বিয়ের পরবর্তী বৎসরেই ৪র্থ হিজরীর রবিউস সানি মাসে তার মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র তিনি এবং খাদিজা এই দুজনই মুহাম্মাদ এর জীবদ্দশায় মারা যান। বিভিন্ন বর্ণনামতে, তিনি অত্যন্ত দানশীলা মহিলা ছিলেন। ইসলাম-পূর্ব যুগেও একারণে তাকে উন্মুল মাসাকীন (গরিবের মা) বলে ডাকা হতো।
৬। হযরত উম্মে সালামা রাঃ উম্মে সালামা হিন্দ বিনতে আবী উমাইয়্যা যার স্বামীও কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হিযরত করেছিলেন। ৪র্থ হিজরিতে তার প্রথম স্বামী আবু সালামা এক যুদ্ধে শহীদ হন।অতঃপর রাসূল সাঃ উক্ত বিধবা নারী হযরত সালমা রাঃ কে বিবাহ করেন।
৭। রায়হানা বিনত যায়েদঃ রায়হানা বিনত যায়েদ ছিলেন বানু নাদির গোত্রের একজন ইহুদী নারী যিনি মুসলমানদের নিকট "উম্মুল মুমেনীন" (ইসলামের নবী মুহাম্মাদের স্ত্রী) হিসাবে সম্মাণিত।
৮। হযরত যয়নব বিনতে জাহাল রাঃ জয়নাব বিনতে জাহাল (রা.) : তিনি ছিলেন নবী (সা.)-এর ফুফাতো বোন। নবী (সা.) প্রথমে তাঁর এই বোনকে তাঁর পালকপুত্র জায়েদ (রা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দেন। এই বিয়েতে গোড়া থেকেই জয়নাব (রা.)-এর আপত্তি ছিল। ফলে তাঁদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। পরে তাঁদের পারিবারিক জীবনে বিচ্ছেদ ঘটে। জয়নাব (রা.)-এর আপত্তিতে এ বিয়ে সংঘটিত হওয়ায় এবং পরে বিচ্ছেদ ঘটায় নবী (সা.)-এর মনে কিছুটা অনুশোচনা আসে। এ থেকে জয়নাব (রা.)-কে নিজে বিয়ে করার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও তত্কালীন আরবের কুসংস্কারের জন্য তা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। পরে পবিত্র কোরআনের সুরা আহজাবে আয়াত নাজিল হয়। সেখানে পালক ছেলে ও ঔরসজাত সন্তান সমতুল্য নয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কুসংস্কার নির্মূল করার উদ্দেশ্যে নবী (সা.)-এর মাধ্যমে সেই বিধান বাস্তবায়ন করে দেখানোর প্রয়োজন অনুভূত হয়। তখনই জয়নাব (রা.)-এর সঙ্গে নবী (সা.)-এর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
৮। জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিছ ইবনে আবি যারারঃ জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিছ ছিলেন বনু মুস্তালিক গোত্রের সঙ্গে দাঙ্গার ফলে আটক হওয়া যুদ্ধবন্দী, যিনি উক্ত গোত্রের সর্দারের কন্যা ছিলেন। তার স্বামী, মুস্তফা বিন সাফওয়ান, উক্ত দাঙ্গায় নিহত হন। নিয়মানুযায়ী জুয়াইরিয়া প্রাথমিকভাবে সাহাবী সাবিত বিন কায়েস বিন আল শাম্মাসের গনিমতের (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) ভাগে পড়েন। বন্দী অবস্থাতেই, জুয়াইরিয়া মুহাম্মাদ এর কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন যে, গোত্রপ্রধানের কন্যা হিসেবে তাকে যেন মুক্তি দেয়া হয়, মুহাম্মাদ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ইত্যবসরে, তার বাবা তাকে মুক্ত করতে মুহাম্মাদের কাছে মুক্তিপণ দেয়ার প্রস্তাব করলেন, কিন্তু মুহাম্মাদ উক্ত প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করলেন। এরপর হযরত মোহাম্মদ (সঃ) জুয়াইরিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এবং জুয়াইরিয়াও রাজি হলেন। যখন সবাই জানতে পারল যে বনু মুস্তালিকের সাথে ইসলামের নবীর বৈবাহিক আত্মীয়তা তৈরি হয়েছে, তখন মুসলিমগণ উক্ত গোত্রের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দিতে শুরু করলেন। এভাবে, জুয়াইরিয়ার সাথে মুহাম্মদ (সঃ)র বিয়ে ইতোপূর্বে তার দ্বারা বন্দী হওয়া প্রায় শত পরিবারের মুক্তির কারণ হয়ে উঠলো।
৯। উম্মে হাবিবা (রা.) : মহানবী (সা.)-এর চাচা আবু সুফিয়ানের কন্যা। প্রথমে উবায়দুল্লাহ বিন জাহালের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। দুজনই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং আফ্রিকার হাবশায় হিজরত করেন। কিন্তু সেখানে উবায়দুল্লাহ খ্রিস্টান হয়ে যান। উবায়দুল্লাহ থেকে উম্মে হাবিবাকে মুক্ত করতে তিনি হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশির মাধ্যমে চাচাতো বোন উম্মে হাবিবা (রা.)-কে বিয়ে করেন।
১০। রামালাহ বিনতে আবী-সুফিয়ানঃ তিনি উম্মে হাবিবা নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা ছিলেন এবং পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি মুসলিম হন। আবিসিনিয়ায় হিজরতকারীদের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। হিজরতের পর তার স্বামী খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন, অপরদিকে তিনি ইসলামে অনড় থেকে যান। হিজরতে থাকাকালীন সময়ে তার স্বামীর মৃত্যু হলে মুহাম্মাদ তাকে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। মুসলিমদের সাথে কুরাইশদের যুদ্ধ নিরসনকামী হুদায়বিয়ার চুক্তির পরপরই রাসূল সাঃ সমসাময়িক ইসলামের প্রতিপক্ষ ও কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের এই কন্যাকে বিবাহ করেন, যাতে করে মুসলিমদের সাথে কুরাইশদের তৎকালীন শত্রুতা আরও কমে আস।
১০। হযরত সফিয়্যাহ রাঃ সাফিয়া (রা.) ছিলেন নবীদেরই বংশধর। হজরত মুসা (আ.)-এর ভাই হজরত হারুন (আ.)-এর অধস্তন বংশধারার কন্যা। প্রথমে কিনানা ইবনে আবিলের স্ত্রী ছিলেন তিনি। কিনানার মৃত্যুর পর মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
১১। হযরত মাইমুনা রাঃ তিনিও হিজরত করেছিলেন। বিধবা হবার পর রাসূল সাঃ এর বিবাহে আসেন। যয়নব বিনতে জাহাল রাঃ ছাড়া বাকিরা সবাই ইসলামের শুরু যুগেই ইসলাম কবুল করেন। তারপর কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাধ্য হয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করে পরবাসে চলে যান। কিন্তু সেখানে তাদের স্বামীগণ ইন্তেকাল করলে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। কোথায় যাবেন? কার কাছে যাবেন? আপন বাড়িতে ফিরে গেলে কাফির আত্মীয় স্বজন অত্যাচার নিপিড়ন করে ধ্বংস করে ফেলবে। এরকম অসহায় হালাতে পড়া নারীদের রাসূল সাঃ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেন।
এ ছিল রাসূল সাঃ এর এগারটি বিবাহের হালাত। যা পরিস্কার প্রমাণ করে, রাসূল সাঃ প্রথম বিয়ে করেছিলেন সাধারণ নীতি অনুপাতে। কিন্তু বাকি দশ বিবাহ করেছেন পরিস্থিতি, পারিপার্শিকতার স্বীকার হয়ে। দ্বীনী ফায়দার উদ্দেশ্যে। শুধু নিজের খাহেশের কারণে অধিক বিবাহ রাসূল সাঃ করেননি। মহানবী (সা.)-এর এত বেশি বিয়ে আজকের যুগে অস্বাভাবিক মনে হলেও তত্কালীন আরব জগতে এটা ছিল খুবই স্বাভাবিক। ওই সময় আরবে বহু বিবাহ একটি রেওয়াজ ছিলো। কোরআন নাযিলের পরেও বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে কোনো কোনো পুরুষ ১০০টি, কেউ ৮০টি বিয়ে করেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশেও এর উদাহরণ রয়েছে। এ ছাড়া আগের নবীদের ইতিহাসে দেখা যায়, সুলায়মান (আ.)-এর ৭০০ স্ত্রী ছিল, দাউদ (আ.)-এর ৯৯ জন এবং ইব্রাহিম (আ.)-এর তিনজন, ইয়াকুব (আ.)-এর চারজন, মুসা (আ.)-এর চারজন স্ত্রী ছিলেন। আমাদের নবীজি বেঁচেছিলেন ৬৩ বছর। সেখানে ৫০ বছর পর্যন্ত মাত্র একজন স্ত্রীই ছিলো তার। এর পরে আয়াতের বিষয় আমলে নিয়ে সন্মানার্থে কয়েকজনকে তিনি স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ধন্য করেছেন। মুহাম্মদ (সা.)-এর বিয়ে প্রায় সবগুলোই মানবিক, একটি কোরআনের আয়াতের বাস্তবায়ন, দু-একটি ইসলামী শরিয়া বাস্তবায়ন। কেউ কেউ ছিলেন মহানবী (সা.)-এর বৃহত্তর পরিবারের সদস্য, ফুফাতো বোন অথবা চাচাতো বোন। অনেক বিধবা-অসহায় নারীকে তিনি নিজ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। একজন বাদে কেউই কুমারী ছিলেন না; বরং মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে অনেকের বিয়ে হয়েছিল, যাঁদের অনেক সন্তান ছিল, তা নিয়েই। আর এ শুধু মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জন্য, বাকী মুমিনদের জন্য নয়। তারণ রাসূল সাঃ সমগ্র মানবজাতির জন্য সমগ্র বিষয়ে আদর্শ হিসেবে প্রেরীত হয়েছেন। তাই রাসুল (সঃ) এর জন্য বিশেষ ক্ষেত্রে ১১ বা একাধিক স্ত্রী কিন্তু উম্মতের জন্য ৪ টি তবে তাও সমস্যা সামাল দেওয়ার জন্য । না হলেএকটিই উত্তম। তাই পরকালে নাজাত প্রত্যাশীদের জন্য বিশেষ কারণে সর্বোচ্চ ৪ স্ত্রীর বিধান মানার জন্য কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
উপসংহারঃ একখা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে স্মরণে রাখতে হবে যে, রাসূল সাঃ একজন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি একজন নবী ছিলেন। সেই সাথে একজন রাষ্ট্রনায়ক। চতুর্মূখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইসলাম নামক জান্নাতী ধর্মকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে আদিষ্ট ছিলেন। এ কারণে পরিবেশ পরিস্থিতিকে শামাল দিতে অনেক বিষয়ের সম্মুখিন হতে হয়। রাজনৈতিক জটিলতায় পড়তে হয়েছে। সেখানে একাধিক বিবাহ করার সুযোগ অনেক জটিল পরিস্থিতি সামাল দেবার হাতিয়ার হয়েছিল। রাসূল সাঃ এর বিয়েকৃত নারীদের হালাত দেখলেই তা আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে। এরপরও যারা আমাদের শ্রেষ্ঠ নবী, উত্তম আখলাক ও শ্রেষ্ঠ চরিত্রবান নবীজী সাঃ এর পবিত্র সত্বা নিয়ে অপবাদে খড়গ তুলে তাদের জ্ঞানপাপী বা মুর্খদের আমরা শুধু এটুকু নসিহত করতে পারি যে আমরা যেন আমাদের অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে মহামানব হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর জীবনের কোন কিছু নিয়ে সংশয় ও অহেতুক কৌতুহল ও তামাশা করে নিজের ঈমানকে দূর্বল না করি। মনে রাখতে হবে আল্লাহ ও রসুলের কোন বি্ধানের বিরুদ্ধাচারণ বা উপহাস মনে আল্লাহর সাথে যিহাদ করার সামিল। আমরা যেন আমাদের অজ্ঞতার কারণে এমন ভুল না করি আল্লহ আমাদের সহি বুঝ বুঝবার তৌফিক দান করুন। আমিন
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




