somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

সমকালের পরাশক্তি বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার আলোচিত যত প্রেসিডেন্ট

২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমকালের পরাশক্তি দেশ আমেরিকা। খোলামেলা ভাষায় বললে, আধুনিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রটির প্রধান অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নিয়ন্ত্রণ করেন দেশ, রাষ্ট্র, সমাজ এমনকি গোটা বিশ্ব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। যিনিই প্রেসিডেন্ট হন, তার হাতে থাকে বিশ্বের মানচিত্র বদলে দেয়ার ক্ষমতা। জর্জ ওয়াশিংটন থেকে বারাক পাগলা ট্রাম্প, ইতিহাস দেখেছে অনেক কিছু। আর সেসব স্মৃতিপট থেকেই মিলবে অনেক আলোচিত-সমালোচিত প্রেসিডেন্টের নাম এবং তাদের কার্যকলাপ। আমেরিকার ইতিহাসের সেই আলোচিত প্রেসিডেন্টদের নিয়ে আজকের লেখাঃ সমকালের পরাশক্তি বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার আলোচিত যত প্রেসিডেন্ট


প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনঃ
ব্রিটিশ উপনিবেশিক শক্তি থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নির্বাচনে জর্জ ওয়াশিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জর্জ ওয়াশিংটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বপ্রথম প্রেসিডেন্ট। ১৭৩২ সালে ভার্জিনিয়ার এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া ওয়াশিংটন দুটো বিষয়ে ভীষণ উৎসাহী ছিলেন এবং সেগুলো নিয়ে চর্চা করতেন। এক. সামরিক কৌশল এবং দুই. পশ্চিমা সম্প্রসারণ। জীবনের শুরুতে ওয়াশিংটন ভূমি জরিপের কাজ করতেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি শিনানডোয়াহ্ ভূমি জরিপ কাজে সাহায্য করেন। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান ভোলার নয়। ওয়াশিংটন সেই যুদ্ধে কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব পালন করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গঠনে ওয়াশিংটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কর্মজীবনেও তিনি এতটাই সফল ছিলেন যে, জীবদ্দশা থেকে আজ অবদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতির জনক হিসেবে পরিচিত। আদর্শ এবং সততার জন্য ওয়াশিংটন ছিলেন সমান জনপ্রিয়। ইলেকটোরাল কলেজের প্রথম দুটি নির্বাচনে সর্বসম্মতভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ওয়াশিংটন। পরবর্তীতে রাজনীতি নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় এবং বুড়িয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। আমেরিকার ইতিহাসে জর্জ ওয়াশিংটন প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি কিনা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন অবস্থাতেও বার্ষিক ২৫ হাজার ডলার বেতন গ্রহণ করতেন না। মহান এই ব্যক্তির নেতৃত্বের গুণাবলির জন্য শুধু নিজ দেশে নয়, গোটা পৃথিবীতে প্রশংসিত। অবসরের পর মাউন্ট ভার্ননে তিন বছর অবসর জীবন উপভোগ করেন ওয়াশিংটন। ১৭৯৯ সালে গলায় রোগসংক্রমণের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মহান প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে জাতি কয়েক মাস ধরে শোক পালন করে।


সপ্তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনঃ
প্রথম ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে গাধা প্রতীক নিয়ে লড়াই করেন জ্যাকসন। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে তিনিই প্রথম কাজ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন ১৮২৮ সাল থেকে ১৮৩৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তার হাত ধরে গড়ে ওঠে মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। প্রথম ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট হিসেবে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন প্রথম গাধা প্রতীক ব্যবহার করেন। ১৭৬৭ সালে জন্ম নেওয়া জ্যাকসন পূর্বসূরিদের তুলনায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এর কারণ হলোঃ তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি শুধু ‘সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, ‘দুর্নীতিবাজ আভিজাত্য’র বিরুদ্ধেও সে সময় ব্যাপক সোচ্চার ছিলেন জ্যাকসন। তার দুই মেয়াদে দুুজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তারা হলেন জন সি. ক্যালহাউন এবং মার্টিন ভ্যান বিউরেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন টেনেসি অঞ্চল থেকে নির্বাচিত সিনেটর ছিলেন। তার আগে তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট দাস প্রথা বিরোধী ছিলেন। তার শাসন আমলে সর্বপ্রথম সরকারিভাবে কৃতদাসদের কেনা এবং তাদের পুনর্বাসনের কাজ হয়েছিল। ১৮৩৩ সালের এক ঘটনা, প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে বন্ধুদের সঙ্গে ভোজন করছিলেন, তখন কেউ তাকে ফিসফিস করে বলেছিল যে সিনেট ইংল্যান্ডের মন্ত্রী হিসেবে মার্টিন ভ্যান বুরেনের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেছে। জ্যাকসন তখন চিৎকার করে বলেন, আমি তাদের ধ্বংস করব! পরবর্তীতে ভ্যান বুরেন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট হন। আর সেই সঙ্গে তিনিও অবসরে চলে যান। ১৮৪৫ সালে অ্যান্ড্রু জ্যাকসন মৃত্যুবরণ করেন।


দশম প্রেসিডেন্ট জন টেইলরঃ
তিনি ১৮৪১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দশম উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। হেনরি উইলিয়াম হ্যারিসনের সঙ্গে তিনি উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
জন টেইলর ১৭৯০ সালের ২৯ মার্চ ভার্জিনিয়ার চার্লস সিটি কাউন্টিতে এক অভিজাত ও রাজনীতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরবর্তী রানিং মেট হেনরি উইলিয়াম হ্যারিসনও একই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন টেইলর ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দশম রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৮৪১ থেকে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি ১৮৪১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দশম উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। হেনরি উইলিয়াম হ্যারিসনের সঙ্গে ১৮৪০ হুইগ টিকিট পাওয়ার মাধ্যমে তিনি উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র এক মাস পরে ১৮৪১ সালের এপ্রিল মাসে হ্যারিসনের মৃত্যুর পর তিনি রাষ্ট্রপতিত্ব গ্রহণ করেন। জন টেইলর চার বছর শাসন করলেও কখনই জনপ্রিয়তা পাননি। উল্টো তার রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কিছু কাজ করায় বহিষ্কৃত হন তার দল হুইগ পার্টি থেকে। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও অনেকে তাকে ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট’ কিংবা ‘ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে ডাকত। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম অনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শাসনকাল শেষ হয় ১৮৪৫ সালে।


ত্রয়োদশ প্রেসিডেন্ট মিলার্ড ফিলমোরঃ
মিলার্ড ফিলমোরের শাসনামলেই উত্তরের রাজ্যগুলো ও দক্ষিণের রাজ্যগুলোর মধ্যে দাস প্রথা নিয়ে বিরোধ প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। মিলার্ড ফিলমোর ১৮০০ সালের জানুয়ারির ৭ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি। ১৮৫০ সালে জ্যাকারি টেইলর মারা গেলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ফিলমোর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। টেইলরের পুরো মন্ত্রিসভা তার মৃত্যুর পর পদত্যাগ করলে ফিলমোরকে নতুন করে প্রশাসনিক দায়িত্ব বণ্টন করতে হয়। সেসময় তিনি ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর স্টিফেন ডগলাসের সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ শুরু করেন। তার শাসনামলেই উত্তরের রাজ্যগুলো ও দক্ষিণের রাজ্যগুলোর মধ্যে দাস প্রথা নিয়ে বিরোধ প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। এ সময় বিতর্কিত ‘কম্প্রোমাইজ অব ১৮৫০’ স্বাক্ষরিত হয়। এ বিল অনুসারে ক্যালিফোর্নিয়া দাসবিহীন রাজ্য হিসেবে যুক্ত হয়। অন্যদিকে ডিস্ট্র্রিক্ট অব কলম্বিয়াতে নিষিদ্ধ হয় দাস কেনাবেচা করা। কিন্তু ফিলমোর পালিয়ে যাওয়া দাসদের আবারও দাস হিসেবে ধরে আনার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহারও বাড়িয়ে দেন। এ রকম বিভিন্ন কারণে তিনি তার দলের কাছেই জনপ্রিয়তা হারান। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনয়ন পর্যন্ত পাননি।


১৬তম প্রেসিডেন্টআব্রাহাম লিংকনঃ
প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় নির্বাচন কেন্দ্রের কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা লিংকন এক সময় নিজের অজান্তেই রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। অত্যন্ত গরিব পরিবারে ১৮০৯ সালে জম্মগ্রহণ করেন লিংকন। পরবর্তীকালে স্বীয় প্রচেষ্টায় বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের অধিপতি হতে পেরেছিলেন তিনি। শিক্ষা-দীক্ষাহীন লিংকন একটি গুদামের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে পরিচয় ঘটে লিংকনের। একটি প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় তিনি নির্বাচন কেন্দ্রে কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। এরপর নিজের অজান্তেই রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন তিনি। এ ছাড়াও প্রথম জীবনে এই প্রেসিডেন্ট ছিলেন ভয়ঙ্কর মুষ্টিযোদ্ধা। প্রায় ৩০০-এর মতো যুদ্ধে লড়ে হেরেছিলেন মাত্র একটিতে। মজার ব্যাপার হলো মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা প্রেসিডেন্টের খেতাবটিও কিন্তু তাঁর। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার লিঙ্কনকে শুধু কীর্তিতে নয় শারীরিক উচ্চতায়ও আজ পর্যন্ত হারাতে পারেননি কোনো প্রেসিডেন্ট! আমেরিকা থেকে দাস প্রথা নিষিদ্ধ করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি। ১৮৬৩ সালের ১ জানুয়ারি লিংকন চূড়ান্তভাবে ক্রীতদাসদের মুক্তি ঘোষণায় স্বাক্ষর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনত ক্রীতদাস প্রথার অবসান ঘটল। এই ঘোষণায় তিনি বলেছিলেন, আমি আব্রাহাম লিংকন আদেশ দিচ্ছি এবং ঘোষণা করছি যে, উল্লিখিত রাষ্ট্রগুলোতে ক্রীতদাসরূপে যারা বন্দী রয়েছে তারা এখন থেকে স্বাধীন, মুক্ত। দাস প্রথা বিলুপ্ত হলো। যুদ্ধজয়ী লিংকন সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। সময়টা ছিল ১৮৬৫ সাল। ঠিক তখন আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার কারণে তার জীবনকে ঘিরে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।


১৭তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনঃ
অ্যান্ড্রু জনসন ১৮০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর উত্তর ক্যারোলিনার রালেই শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অ্যান্ড্রু জনসন ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তদশ রাষ্ট্রপতি। অ্যান্ড্রুর যখন তিন বছর বয়স তখন তার পিতা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। মা পলি জনসন তার পরিবারের ভরণপোষণে ধোপার কাজ করতেন। তিনি ১৮৬৫ থেকে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আব্রাহাম লিংকন আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার সময় তিনি উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিলের কথা। সেদিন রাতে ওয়াশিংটন ডিসির ফোর্ডস থিয়েটারে ‘আওয়ার আমেরিকান কাজিন’ নাটকটি দেখতে স্ত্রী মেরি টোড লিঙ্কন এবং দুজন অতিথিকে নিয়ে গিয়েছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন। নাটকটি চলাকালেই রাত সোয়া ১০টা নাগাদ ০.৪৪ ক্যালিবারের ডেরিঞ্জার পিস্তল দিয়ে লিঙ্কনের মাথার পেছন দিকে গুলি করে বসেন অভিনেতা ও কনফেডারেট সমর্থক জন উইল্কিস বুথ। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অ্যান্ড্রু জনসন উপ-রাষ্ট্রপতির পদ অধিকার করেছিলেন। অ্যান্ড্রুর বয়স যখন তিন বছর তখন তার পিতা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তার মা পলি জনসন তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ধোপার কাজ করতেন। সে সময়ে এই পেশাকে হেয় করে দেখা হতো।


২১তম প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ আর্থারঃ
চেস্টার এ আর্থার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২১তম রাষ্ট্রপতি। ১৮৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জেমস এ গারফিল্ড ক্ষমতা গ্রহণের সাড়ে ছয় মাসের মাথায় আততায়ীর হাতে খুন হন। তখন ২১তম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন চেস্টার অ্যালান আর্থার। জেমস আব্রাহাম গারফিল্ড ছিলেন আমেরিকার বিশতম প্রেসিডেন্ট। ১৮৮১ সালের ৪ মার্চ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসীন হয়েছিলেন গারফিল্ড। কিন্তু এ সৌভাগ্য তার কপালে বেশি দিন লেখা ছিল না। দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসেরও কম সময়ের মাথায় জুলাই মাসের ২ তারিখ সকাল সাড়ে ৯টায় চার্লস জুলিয়াস গুইটাও এর গুলিতে মারাত্মক আহত হন তিনি। অবশেষে সেপ্টেম্বরের ১৯ তারিখ সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে এ আঘাত থেকে সৃষ্ট ইনফেকশনে ভুগেই মারা যান জেমস এ গারফিল্ড। গারফিল্ডকে গুলি করার পরপরই গুইটাওকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। চেস্টার এ আর্থার ক্ষমতা গ্রহণ করেই গারফিল্ড হত্যাকান্ডের বিচার শুরু করেন। প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা বিচার শেষে গুইটাওকে ১৮৮২ সালের ৩০ জুন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।


২২ ও ২৪তম প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২২তম এবং ২৪তম প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পর ক্লিভল্যান্ড প্রথম নির্বাচিত ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট। গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি হোয়াইট হাউস ছেড়ে গিয়েছিলেন, চার বছর পর দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন দুইবার তবে পরপর দুই নির্বাচনে নয়। মজার ব্যাপার হলো আমেরিকার ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি! ১৮৩৭ সালে জন্ম নেওয়া প্রেসিডেন্ট ছিলেন বোরবন ডেমোক্র্যাটের প্রধান নেতা। ৪৪ বছর বয়সে তিনি এমন রাজনৈতিক খ্যাতিতে আবির্ভূত হন, যা তাকে তিন বছরে হোয়াইট হাউসে নিয়ে যায়। ১৮৮৫ সালের আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ক্লিভল্যান্ড। ১৮৩৭ সালে জন্ম নেওয়া ক্লিভল্যান্ডই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি হোয়াইট হাউস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং চার বছর পর দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসেন। প্রথম জীবনে ছিলেন নিউইয়র্কের ছোট্ট এক কাউন্টির শেরিফ। উচ্চ শুল্ক ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করা তার শাসন আমলে তিনি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন। তিনি ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যার ফলে তিনি পরবর্তীকালে আমেরিকান আইকনে পরিণত হয়েছিলেন। এ ছাড়া কর্মজীবনে তিনি দুইবার অপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জল্লাদের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। হোয়াইট হাউস ত্যাগের পর ক্লিভল্যান্ড নিউ জার্সির প্রিন্সটনে বসবাস করেছিলেন। ১৯০৮ সালে তিনি মারা যান।


২৬তম প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টঃ
আমেরিকার প্রথম আধুনিক প্রেসিডেন্ট বলে অভিহিত করা হয় থিওডোর রুজভেল্টকে। ১৮৮২ সালে রুজভেল্ট নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্যপদ গ্রহণ করে রিপাবলিকান পার্টির খাতায় নাম লিখে তার রাজনৈতি জীবনের শুরু। মাত্র ৪২ বছর বয়সে আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব নেন তিনি। ২৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্টের জন্ম ২৭ অক্টোবর, ১৮৫৮ সালে নিউইয়র্কে। তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন ডেনমার্কের অধিবাসী। হার্ভার্ড কলেজে রুজভেল্টের পড়াশোনা শুরু হয় ১৮৭৬ সালে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার চার মাস পর ১৮৮০ সালে বিয়ে করেন অ্যালিস হ্যাথওয়েকে। ১৮৮২ সালে রুজভেল্ট নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্যপদ গ্রহণ করে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটান। পাশাপাশি রিপাবলিকান পার্টির খাতায় নাম লেখান। ১৮৯৮ সালে নিউইয়র্কের গভর্নর পদে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯০০ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাকেনলি নিহত হলে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। ১৯০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জয়ী হন জনপ্রিয় রুজভেল্ট। রুশ-জাপান যুদ্ধাবসানে ভূমিকা রাখার জন্য ১৯০৬ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়।


৩০তম প্রেসিডেন্ট কেলভিন কুলিজঃ
কেলভিন কুলিজ যুক্তরাষ্ট্রের ৩০তম রাষ্ট্রপতি ছিলেন।কুলিজ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তার বাবার কাছে। সে বছর কংগ্রেসে দেওয়া তার বক্তৃতা রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল। ওয়ারেন হার্ডিংয়ের মৃত্যুর পর ১৯২৩ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কেলভিন কুলিজ। তিনি অস্বাভাবিক চুপচাপ স্বভাবের ছিলেন। যদিও তিনি তার এই স্বভাবের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। কুলিজ ছিলেন রিপাবলিকান। মজার ব্যাপার হলো, কুলিজ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তার বাবার কাছে। সে বছর ডিসেম্বরে কংগ্রেসে দেওয়া তার বক্তৃতা রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল। সেটি ছিল প্রথম কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্টের বক্তৃতার সরাসরি সম্প্রচার। তিনি রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন। আরও একটি বিশেষ দিক হচ্ছে কিউবা সফরকারী যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট ছিলেন কেলভিন কুলিজ। যুক্তরাষ্ট্রের ৩০তম এই প্রেসিডেন্ট ১৯২৯ সালে যখন কিউবায় যান, রীতিমতো একজন রকস্টারের সমান সংবর্ধনা পেয়েছিলেন। তার প্রতিনিধি দলের জন্য ছিল ঢালাও হাভানা ড্রাইয়ের ব্যবস্থা। এর পরই দেশ দুটির মধ্যে নেমে আসে লৌহযবনিকা। সমাজতান্ত্রিক কিউবা পরবর্তীতে গলার কাঁটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের।


৩১তম প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভারঃ
হার্বার্ট হুভার ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩১তম প্রেসিডেন্ট। তিনি ১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ সালে মহামন্দাকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। মহামন্দার কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার পদক্ষেপগুলো ঢাকা পড়ে যায়। ১৯৩২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের কাছে পরাজিত হন।


৩৩তম প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানঃ
১৯৪৫ সালে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের মৃত্যুর পর ৩৩তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন হ্যারি এস ট্রুম্যান। হ্যারি এস ট্রুুম্যান ১৮৮৪ সালের মে মাসের ৮ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন। ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের মৃত্যুর পর তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একজন ব্যক্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট। যুক্তরাষ্ট্রের তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি তিনবার এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য মার্শাল ল বাস্তবায়িত করেন এবং ট্রুম্যান মতবাদ ও ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত করেন। যে নীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশ টেনে ধরে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের তুমুল জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুুম্যান কংগ্রেসে দাঁড়িয়ে এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। সেদিন তিনি ঘোষণা করেন, দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি অবলম্বন করে আসছে তা হলো বিচ্ছিন্নতার নীতি বা মনরো নীতি। এখন সময় এসেছে এই নীতি ছুড়ে ফেলে দেওয়ার।

৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ারঃ
ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪তম প্রেসিডেন্ট। তিনি ১৯৫৩ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন পাঁচ তারকাবিশিষ্ট জেনারেল ছিলেন। ইউরোপে মিত্র সেনাবাহিনীর ত্বরিত শক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক (ঝঁঢ়ৎবসব ঈড়সসধহফবৎ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ সালে তিনি নেটোর প্রথম সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫২ সালে রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ‘সাম্যবাদ, কোরিয়া ও দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ঠা-া যুদ্ধে সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের ওপর চাপ বৃদ্ধি করা ও কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট ঘাটতি কমানো ছিল তার প্রশাসনের মূল দুই লক্ষ্য।


৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। যিনি জেএফকে নামেই বেশি পরিচিত। আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র আইরিশ প্রেসিডেন্ট ও আমেরিকার দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। নানা গুঞ্জন থাকা সত্ত্বেও কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট। ১৯১৭ সালে ম্যাসাচুসেটসের ব্রুকলিনে জন্মগ্রহণ করেন। আমেরিকার বিখ্যাত কেনেডি পরিবারের সন্তান তিনি। ছেলেবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল লেখক হওয়ার। সদা লাজুক কেনিডির রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা ছিল না। তারপরও তিনি আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত প্রেসিডেন্ট। মাত্র ৪৩ বছরে নির্বাচিত কেনিডি আমেরিকার সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার সুদর্শন, রুচিশীল, ভদ্র, উচ্চশিক্ষিত ইমেজের পাশাপাশি আরেকটি ইমেজ হয়তো অনেকের কাছেই অজানা। কেনেডি অনেকের কাছে প্লে বয় প্রেসিডেন্ট হিসেবেও পরিচিত। জগৎ বিখ্যাত সুন্দরী মেরিলিন মুনরো ছাড়াও জাইনি ম্যানসফিল্ড, ওডেরি হেপবার্ন, এঞ্জি ডিক্সনসহ অনেক সেলিব্রেটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তার। কেনেডি প্রথম ও একমাত্র ক্যাথলিক এবং প্রথম আইরিশ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সামরিক জীবন থেকে অবসর নিয়ে সাংবাদিকতা করেন। তিনি পুলিৎজার পুরস্কার জেতা একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট মোকাবিলা করেন। ১৯৬৩ সালে কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।


৩৬তম প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনঃ
কেনেডি হত্যার পর লিন্ডন জনসন রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লিন্ডন বি জনসন ১৯০৮ সালের আগস্ট মাসের ২৭ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন। জন এফ কেনেডি হত্যার পর লিন্ডন বেনস জনসন রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সর্বকনিষ্ঠতম গণতান্ত্রিক সর্বহারা নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেনেডিকে যখন গুলি করা হয় তখন কেনেডির ঠিক দুটি গাড়ির পেছনে ছিলেন জনসন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে তিনি কেনেডির কাজগুলোকেই মূলত এগিয়ে নেন। সেই সঙ্গে যুক্ত করেন নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা। তিনি সিনেটে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। অফিসে তার সময়, প্রধান নাগরিক অধিকার আইন পাস করা হয়। তার সময়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলেছে। বিভিন্ন কারণে তার সময়কাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তার সময়ে নাগরিক অধিকার আইন পাস হয়। ২৪তম সংশোধনী পোল ট্যাক্স বহিষ্কারের অনুমোদনও হয়েছিল। তার শাসনকালেই ড. মার্টিন লুথার কিং ও জেআর হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।


৩৭তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনঃ
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন। তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি রিপাবলিকান ইউএসের সিনেটর হিসেবে এবং ১৯৫৩ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির মুখে পদত্যাগ করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নিক্সনই হলেন প্রথম এবং একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাস। আমেরিকান সমাজ-রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে গভীর বিভক্তি- যার কারণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি, সংকট চলছে অর্থনীতিতেও। কংগ্রেসের একটা বড় অংশ চলে গেছে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের বিরুদ্ধে। জনমতও তার বিপক্ষে। সেই গ্রীষ্মকালে সবার চোখ প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের দিকে। সবাই জানতে চায় ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট কমপ্লেক্সে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অফিসে গোপনে অনুপ্রবেশ এবং টেলিফোনে আড়িপাতার ঘটনার ব্যাপারে তিনি কতটুকু জানতেন বা জানতেন না। তখন আড়াই বছর ধরে প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে নানা রকমের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে এসে ব্যাপারটা একেবারে চরমে উঠে গেল। টম ডে ফ্রাংক বলেছিলেন, আগস্টের পাঁচ তারিখ সোমবার হোয়াইট হাউস সেদিন তিনটি টেপ রেকর্ড করা কথোপকথনের হুবহু বিবরণী প্রকাশ করল। নিক্সন এগুলো গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট সর্বসম্মতভাবে রায় দিল যে, এগুলো প্রকাশ করতে হবে। আর ওই কথোপকথনের বিবরণী সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করল যে, এসব ঘটনায় প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কোনো ভূমিকাই ছিল না বলে তিনি যা বলেছিলেন তা ছিল মিথ্যা। প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন যে, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফিসে আড়িপাতার ঘটনার তিনি কিছুই জানতেন না। কিন্তু সেই বিবরণী থেকে বোঝা গেল যে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন মিথ্যা বলেছেন। এখন তিনি যদি পদত্যাগ না করেন তা হলে মার্কিন কংগ্রেসে তাকে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন করা হবে।
তিন দিন পর আগস্টের আট তারিখ দুপুরবেলা হোয়াইট হাউসে নিক্সনের প্রেস সচিব এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বললেন, সেদিনই রাত আটটায় প্রেসিডেন্ট নিক্সন ওভাল অফিস থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তখনই এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এই ভাষণে মূলত তিনি পদত্যাগের কথাই ঘোষণা করবেন। তাই হলো। রিচার্ড নিক্সন ভাষণে বললেন, আমি কখনো দায়িত্ব ছেড়ে চলে যাওয়ার লোক নই, কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার আমেরিকার স্বার্থকেই সবার ওপর স্থান দিতে হবে। কাজেই আমি পদত্যাগ করতে যাচ্ছি- যা আগামীকাল দুপুর থেকে কার্যকর হবে।


৩৮তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড আর ফোর্ডঃ
আজ অবধি জেরাল্ড আর ফোর্ডই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোনো প্রকার নির্বাচনে না জিতেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঠাঁই পেয়েছিলেন হোয়াইট হাউসে। আমেরিকার ৩৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘটনাটি সত্যিই অভূতপূর্ব। ইতিহাসে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হয়নি। ভাগ্য যেন জেরাল্ড ফোর্ডকে টেনে এনেছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে। আর তাতে হোয়াইট হাউসের ৩৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জেরাল্ড আর ফোর্ড। আমেরিকার ইতিহাসে তিনি একজন ভাগ্যবান প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচিত। প্রথমবার কোনো প্রকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়াই ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে স্থলাভিষিক্ত হন। সে সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট স্পিরো ইগ্নেউ পদত্যাগ করেছিলেন। নতুন পদে স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বছর না পেরোতেই আবার ভাগ্য খুলে যায় জেরাল্ড ফোর্ডের। ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিতে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পদত্যাগের পর তিনিই গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব। মূলত আমেরিকার ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী নির্বাচন ছাড়া প্রেসিডেন্ট পদে স্থলাভিষিক্ত হন জেরাল্ড ফোর্ড। জেরাল্ড আর ফোর্ড ১৯৭৪ সালে ৩৮তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় ঘোষণা করেছিলেন, আমি অসাধারণ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ করেছি। মজার বিষয় হলোÑ আজ অবধি তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোনো নির্বাচনে না জিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে ঠাঁই পেয়েছিলেন। যদিও সে সময় তার জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল আমেরিকার মুদ্রাস্ফীতি আয়ত্তকরণ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, দীর্ঘস্থায়ী শক্তির ঘাটতি সমাধান এবং বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা। জেরাল্ড ফোর্ড তখন আমেরিকার সমাজ ও অর্থনীতির সমস্যা সমাধানে সরকারি হস্তক্ষেপ ও ব্যয়ের ঝুঁকি রোধে কাজ করেছিলেন।


৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানঃ
রিগ্যান ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা। পরবর্তীতে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির অঙ্গনে। ৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পা রাখেন হোয়াইট হাউসে। রোনাল্ড উইলসন রিগ্যান, মূলত তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। একসময় জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। তারপর ৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পা রাখেন হোয়াইট হাউসে। একজন সফল রাজনীতিক এবং অভিনেতা কেমন হতে পারে তার আদর্শ রোনাল্ড রিগ্যান। ১৯১১ সালে এই প্রতিভাবান ব্যক্তি জম্মগ্রহণ করেন। তার সিনেমা জগৎ হলিউডে অভিষেক ১৯৩৭ সালে। দেখতে দেখতে ৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত বিখ্যাত সিনেমাগুলোর মধ্যে অল-আমেরিকান, কিংস র, বেডটাইম ফর বঞ্জো উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে একজন সফল রাজনীতিক হিসেবে ১৯৬৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন। মার্কিন রাজনীতিতে তার উপস্থিতি রাজনীতির পটপরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৮০ সালে জিমি কার্টারকে হারিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিশ্ব দেখে রিগ্যানের আগ্রাসী রূপ। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত শাসনামলে প্রথম আগ্রাসনের শিকার লেবানন। ১৯৮৩ সালে গ্রানাডা এবং ১৯৮৬ সালে বার্লিনের ডিস্কোবারে বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ায় হামলা চালান তিনি। জাতিসংঘ এই হামলায় তীব্র নিন্দা জানায়। তার উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন জর্জ এইচডব্লিউ বুশ। ১৯৮১-এর ২০ জানুয়ারি থেকে ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি অবসরে যান। ১৯৯৪ সালে তিনি আলজেইমার্স রোগে আক্রান্ত হন। ২০০৪ সালে প্রতিভাবান এই আমেরিকানের শেষ প্রয়াণ ঘটে।


৪১তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচডব্লিউ বুশঃ
জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪১তম রাষ্ট্রপতি। তিনি বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে দক্ষ একজন কূটনীতিক ছিলেন। স্নুায়ুযুদ্ধের শেষ দিকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রেন্ট স্কুক্রফট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বেকারকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করেছিলেন তিনি। যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। জর্জ এইচডব্লিউ বুশ ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে তিনি ডেমক্র্যাটিক প্রার্থী বিল ক্লিনটনের কাছে হেরে যান। পরে তার ছেলে জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০১ সাল থেকে দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।


৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনঃ
তার জয় হবে এমন আশা কেউই করেননি। তবে এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রস পেরুট অংশ নিলে ক্লিনটনের ভাগ্য খুলে যায় এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। বিদেশনীতির ক্ষেত্রেও ক্লিনটনের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তার মধ্যস্থতায় ১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক ‘অসলো শান্তি চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়, যা ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখে। ২০০১ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন ক্লিনটন। এরপর নিজের প্রতিষ্ঠিত ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন মানবকল্যাণমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং আলোচিত নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি ঘটে মার্কিন এই প্রেসিডেন্টকে নিয়েই। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৮ সালে মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ভয়াবহ বিপাকে পড়েছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন জনগণ ছিল ক্লিনটনের প্রতি দারু ণ সহানুভূতিশীল।


৪৩তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশঃ
আমেরিকানদের কাছে তো বটেই, গোটা বিশ্বের কাছেও জর্জ ডব্লিউ বুশ (জুনিয়র) এবং আগ্রাসী ও যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেশ সমালোচিত হন। এতে জনগণ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং প্রতিবাদে সোচ্চার হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। আমেরিকানদের কাছে তিনি বুশ জুনিয়র নামে সর্বাধিক পরিচিত। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। জর্জ ডব্লিউ বুশ নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ৪৬তম প্রশাসক বা গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ১৩০ কোটি ডলার কর মওকুফ করেন এবং ‘কোনো শিশু আইনের বাইরে থাকবে না’ শীর্ষক আইন প্রণয়ন করে বিশেষ আলোচিত হন। এ ছাড়া আগ্রাসী ও যুদ্ধবাজ হিসেবে তিনি ব্যাপক সমালোচিত। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব সামলে জনপ্রিয়তা লাভের পর প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ে নেমে বিপুল ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন ওয়াকার বুশ। তবে ১৯৮০-এর দশকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের ইতি ঘটান বুশ সিনিয়রই। নির্বাচনে জয়লাভের পর বুশ সিনিয়র যুদ্ধবাজ হিসেবে আবির্ভূত হন। মধ্য আমেরিকার দেশ পানামায় সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে সেখানকার যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সামরিক শাসক ম্যানুয়াল নরিয়েগাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ১৯৯০ সালে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন সরকার কুয়েত দখলের চেষ্টা চালালে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন ওয়াকার বুশ। পরের বছর ইরাকে এককভাবেই সামরিক আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকি বাহিনী কুয়েত ছেড়ে গেলেও ওয়াকার বুশের নির্দেশে মার্কিন সামরিক বাহিনী বাগদাদের দিকে অগ্রসর হয়। এই যুদ্ধের পর তার জনপ্রিয়তায় ধস নামে। সারাবিশ্বে তার বিরুদ্ধে বৈরী মনোভাব তৈরি হয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও বুশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করে। কারণ দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে নাক গলানোর ফল হিসেবে ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পার্টির বিল ক্লিনটনের কাছে ওয়াকার বুশ হেরে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পর তিনি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে উৎখাত করার জন্য সে দেশে আগ্রাসন চালান। মূল উদ্দেশ্য ছিল আল-কায়েদা ধ্বংস করে ওসামা বিন লাদেনকে আটক করা। ২০০৩ সালের মার্চে বুশ ইরাক দখলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অজুহাত দেখিয়ে ইরাক দখল করলেও সেখানে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তার দেওয়া ঘোষণা মিথ্যা প্রমাণিত হয় ও নিন্দার ঝড় ওঠে।


৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাঃ
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পুরো নাম বারাক হোসেন ওবামা জুনিয়র। ১৯৬১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে তার জন্ম। আর্থিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও নানা-নানী ওবামাকে হাওয়াইয়ের ওই সময়ের সেরা স্কুলে ভর্তি করেন। স্কুলে থাকার সময় ওবামা বর্ণবাদের শিকার হন। রাজনীতিতে তার সফলতার গল্পটা দারুণ। ১৯৯৬ সালে তিনি ইলিনয় রাজ্যের সিনেটর নির্বাচিত হন। এ সময় নৈতিক আইন প্রণয়ন, দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশু শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারিত করতে তিনি ডেমোক্র্যাটস এবং রিপাবলিকান উভয়ের সঙ্গে কাজ করেন। ২০০৪ সালে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বস্টন শহরে অনুষ্ঠিত ডেমোক্র্যাট দলের জাতীয় সম্মেলনে বারাক ওবামা মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সম্মেলনের আগ পর্যন্ত ওবামা জাতীয় পরিসরে মোটামুটি অচেনাই ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাট দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হন। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২০১২ সালে পুনঃনির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সামান্য কৃতিত্বের জন্য বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১১ এবং ২০১২ সালে ‘পার্সন অফ দ্য ইয়ার’ মনোনীত করে।


৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পঃ
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি। এছাড়াও তিনি একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব এবং লেখক হিসেবে আলোচিত। দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশ্যানের পরিচালক এবং ট্রাম্প এন্টারটেইনম্যান্ট রিসোর্টের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই সমালোচিত। শুরু থেকেই বিতর্কিত এই মিলিয়নিয়ার। মনোনয়ন না পেলে দাঙ্গা হবে বলে হুশিয়ারি দেন ট্রাম্প। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হলেও চরম বিতর্কিত ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগও রয়েছে। তা ছাড়া ক্রাইম সিন্ডিকেটেও তার হাত রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনেও ট্রাম্প চরমভাবে বিতর্কিত। তিনটি বিয়ে করা ট্রাম্প নানা নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত। অবশ্য তিনি উল্টো এসব সমালোচনার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সেই নারীদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকবেন। ট্রাম্প ২০১৫ সালের ১৬ তারিখে রিপাবলিকান পার্টির অধীনে ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার মনোনয়ন প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। ট্রাম্প তার পূর্বের প্রচারণা কর্মকান্ড দিয়ে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং জনসমর্থন অর্জনে সক্ষম হন। ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী রাজনীতি তাকে তার শ্রমিক-শ্রেণীর সমর্থকদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। ট্রাম্প তার অভিবাসন নীতির মাধ্যমে আনুমানিক ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত করা এবং মেক্সিকান-যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে একটি সু-দৃঢ় দেওয়াল নির্মাণের প্রস্তাবনা রাখেন। নানা বিতর্কের পরে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ৩০৬টি ইলেক্টরাল ভোট পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি নির্বামার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই সমালোচিত। তবে ক্ষমতায় বসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চার বছর পরে তার পরাজয়ের বীজ বুনেছিলেন ট্রাম্প। ব্যক্তিগতজীবন ব্যাপকভাবে মিডিয়া কাভারেজ অর্জন করেছিল। ধর্ম নিয়ে ট্রাম্পের বহু দৃঢ় বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। সন্ত্রাস এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে একাত্ম করে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। পলিটিকো ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন ‘সারগ্রাহী, তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনকারী ও প্রায়ই স্ববিরোধী’ হিসেবে। সংসদের উভয় পক্ষের সদস্যদের ট্রাম্পকে "পাগল" এবং "জঘন্য" হিসেবে আখ্যায়িত করতে শোনা যায়। তার জীবনে তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন জিতেছেন এটি নিশ্চিত হওয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করতে রাজী হননি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে ডেনাল্ড ট্রাম্পের শিবির বিভিন্ন রাজ্যে মামলাও করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেন দায়িত্ব নেবার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেয়া নীতিমালাগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার করবেন তিনি। আমেরিকাকে মহান বানানোর অঙ্গীকার করে ক্ষমতাসীন ট্রাম্প যে এত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে তর্কে লিপ্ত হবেন, সেটাই সবাইকে বিস্মিত করছে।


৪৬তম প্রেসিডেন্ট জোসেফ রবিনেট "জো" বাইডেন, জুনিয়রঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের সাথে ২০২০ সালে অনুষ্ঠি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কমলা হ্যারিসের বাবা আফ্রিকান, মা ভারতীয়। চেন্নাইয়ের বিজ্ঞানী মার্কিন মুলুকে গিয়েছিলেন গবেষণার কাজে। তারপর সেখানেই থেকে যান, বিয়ে করেন এক আফ্রিকান মার্কিনিকে। কমলা তাঁদেরই সন্তান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর অর্থনীতিতে স্নাতক কমলা পরবর্তী কালে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ডেমোক্র্যাট দলে জো বাইডেনের সঙ্গে তিনিও প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল বাইডেনকেই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচন করে। তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদপ্রার্থী করা হয়। কমলা হ্যারিস এতদিন ভারতীয়-মার্কিনদের জন্য বিশেষ কিছু করেননি। কিন্তু অধিকাংশ ভারতীয় মার্কিনদের কাছে বর্ণবাদ খুব বড় বিষয়। ট্রাম্পের কারণে যা রীতিমতো বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সে জন্য ভারতীয়-মার্কিনরা ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুঁকেছেন। সেই সুবিধাটা পেয়েছেণ কমলা।তাই এই প্রথম কোনও এশীয় অ্যামেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন দেখা যাক জো বাইডেন আর কমলা মিলে বিশ্বকে কি উপহার দেন!

বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা নিয়ে আমার পূর্বের পোস্টঃ আমেরিকার রাষ্ট্রপতিদের সুযোগ সুবিধা

উৎসর্গঃ রাজীব নূর খাঁন, আমরাগো জামাই

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×