somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠ চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজ

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার উপজেলার বাংলার বাঘখ্যাত শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের ঐতিহ্যবাহী চাখার ইউনিয়ন। বিশ্বের অন্যতম মহাপুরুষ শেরে ই-বাংলার জন্ম ভুমি চাখারে অবস্থিত শেরেবাংলার স্মৃতি বিজড়িত চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজ আমার প্রিয় বিদ্যাপীঠ। কতবার যে এই গেট দিয়ে ভিতর বাহির করেছি, কেলেজ হোস্টেলে থাকাকালীন রাতে পুকুর পােরের ডাব পেড়েছি তা ভাবতে আজও সৃতিকাতর হই। সে যা হোক !!অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বাংলার বাঘ খ্যাত শের-ই বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৪০ সালে তার এলাকা বানারীপাড়ার চাখারে ৩৫ একর জমির ওপর নিজ নামে ফজলুল হক কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজটি স্থাপিত হওয়ায় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের লেখা পড়ার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই চাখার।পরবর্তীতে ওই কলেজটি সরকারিকরণ ও বেশ কয়েকটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা করা হয়। এ কলেজে এক সময় সরব ছাত্র সংসদও ছিলো। সেখান থেকে অনেক যোগ্য নেতৃত্বও বের হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকে রাজনীতি ও কর্মক্ষেত্রে পরবর্তীতে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। ১৯৭৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দুই বছর ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠে অধ্যান করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কলেজটি শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা করে আসছিল। স্বল্প খরচে মেধাবী ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা সুশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। দেশ-বিদেশে কাজ করে তারা সুনাম অর্জন করেছেন। রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপি হওয়ার পাশাপাশি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন। এ কলেজে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনাসহ নয়টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়েছে। তারপরও পুরন সেই গৌরবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। কলেজে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৫শ’তে নেমেছে। অন্তহীন সমস্যা ও সংকটে কলেজটি অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। বর্তমানে চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯৮০ জন। এ কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে ১০ জন এবং প্রভাষক পদে ১৬ জন কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও লাইব্রেরিয়ান ও সহকারী লানব্রেরিয়ান পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এসব পদের শিক্ষক ও একাডেমিক ভবন সংকটে ৯টি বিষয়ে অনার্সের দুই হাজার ও একাদশ শ্রেণির ৫২০ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ৪৬০ শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। কলেজে ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস নেই। এ কারণে ভর্তির কোটা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা একাদশ, দ্বাদশ ও অনার্স বিষয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকটে রয়েছেন। একাডেমিক ভবন সংকটে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। আবাসিক কোয়ার্টার সংকটে যোগদানের পর অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষকরা অন্য কলেজে বদলি হয়ে যান। ফলে শিক্ষক সংকটে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কাক্সিক্ষত ফলাফল করতে পারছেন না। প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের অভাবেও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ১৯৬৮ সালে নির্মিত বিজ্ঞান ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় প্রতিটি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। এছাড়া একটি একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষকে আবাসন হিসেবে শিক্ষকরা ব্যবহার করায় ক্লাসরুম সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আবার শিক্ষক কোয়ার্টার না থাকায় শিক্ষক সংকটও কাটছে না। কোটা অনুযায়ী শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী চাখার কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়া ১৪ জন সহযোগী অধ্যাপক থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে সেখানে সাতজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। প্রায় দুই দশক আগে নির্মিত কলেজের তিনতলা ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং দেয়াল ও ছাদে অসংখ্য ফাটল সৃষ্টি হয়ে বেহাল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি নামলেই ছাদ চুঁইয়ে পানি শ্রেণিকক্ষের ভেতরে পড়ে একাকার হয়ে যায়। ফলে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এছাড়া ভবন ও কক্ষ স্বল্পতার কারণে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উল্লেখ্য ১৯৮৪ সালে কলেজে সর্বশেষ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এবং নির্বাচন পণ্ড হয়ে যায়। এ নির্বাচনের পর থেকে এ কলেজে আর কোনো ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। বর্তমান সরকার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর ব্যাপক জোর দিলেও চাখার কলেজে আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়া লাগেনি।]কলেজে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। কলেজে অবকাঠামো ও জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। বাংলার বাঘ খ্যাত শের-ই-বাংলার বাসভবন ও ছাত্রাবাস জরাজীর্ণ ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। ইচ্ছে করলে আমার সাথে ঘুরে আসতে পারেন একে ফজলুল হক সাহেবের বাড়ি


তবে আশার কথা বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহে আলম বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শের-ই-বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের স্মৃতিধণ্য পূণ্য ভূমি বানারীপাড়ার চাখার ইউনিয়নকে উন্নত-সমৃদ্ধ আলোকিত এক ‘তিলোত্তমা’ ইউনিয়নে রূপান্তর করতে নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৯৪০ সালে শের-ই-বাংলা প্রতিষ্ঠিত চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজে ৬ কোটি টাকার অধিক প্রাক্কলিত ব্যয়ে লিফটসহ ৬ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। লস্করপুুর-চৌধুরীরহাটে সন্ধ্যা নদীতে ফেরী চলাচল এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফেরী চলাচলের পূর্বে ওই রাস্তাটি ১৬ ফুট প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে ফেরী চলাচল শুরু হলে বানারীপাড়ার সঙ্গে উজিরপুর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেতুবন্ধন সৃষ্টি হবে। এলাকাবাসী শেরে বাংলার চাখারকে নবরূপে সাঁজাতে সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের এ উদ্যোগকে কৃতজ্ঞচিত্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন।বর্তমানে কলেজে প্রভাষক, চারটি সহযোগী অধ্যাপক, চারটি প্রদর্শক, একজন লাইব্রেরিয়ান, একজন ক্রীড়া শিক্ষক, ১৩টি চতুর্থ শ্রেণি ও পাঁচটি তৃতীয় শ্রেণির পদ খালি রয়েছে।তা ছাড়া কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করা দরকার। সব বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করাসহ চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজকে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা সময়ের দাবী। পরিশেষে উপভোগ করুন সরকারী একে ফজলুল হক কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এক শিক্ষার্থীর নৃত্য।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৫৩
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×