অভিজাত খদ্দেররা সবাই মেল এস্কর্ট (MALE ESCORT) শব্দের সাথে পরিচিত। Escort (এসকর্ট) শব্দের আর্থিক প্রতিশব্দ ‘সহচর’ বা 'সশস্ত্র সঙ্গী’ হলেও এসব সহচর হচ্ছে মূলত দেহব্যবসায়ী। এশিয়ার অনেক দেশ। পাশ্চাত্যে এই ধরণের সেবা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতেও এটা অনেকটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। কলকাতাতে পুরুষ যৌন কর্মীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। এই ব্যবসা বা সেবা চালু রাখতে গড়ে উঠছে অসংখ্য অনলাইন সাইট। কম সংখ্যক হলেও রাজধানী ঢাকায়ও চলছে `মেইল এস্কর্ট` ব্যবসায়। ঢাকাকে কেউ বলে মসজিদের নগরী। আর কেউ বলে রিকশার নগরী। আর জাদুর শহর তো বটেই। কিন্তু এই ঢাকার অলিতে-গলিতে রয়েছে অসংখ্য গল্প। এদের কোনটা সিদ্ধ, আর কোনটা নিষিদ্ধ। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকায় এরকম অনেক পুরুষ পতিতা রয়েছে। ঢাকার বেশ কয়েকটি অভিজাত এলাকায় পুরুষ যৌন কর্মীদের দেখা পাওয়া যায়। তবে এদের যে কেউ দেখলে চিনবে না। বিশেষ করে যারা এসকল বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন না, তারা তো নয়ই। এরা খদ্দেরের সাথে যোগাযোগ করে এক ভিন্ন কৌশলে। এক বিশেষ সংকেত ব্যবহার করে কাজটি করে তারা। এক রকম প্রতীকিও বলা চলে। আর তাহলো রুমাল। ভালোবাসা বা প্রেম নিবেদনের জন্য রুমালের ব্যবহার বহু পুরনো। কিন্তু নিষিদ্ধ যৌনতায় রুমালের এই ব্যবহার যেন সত্যি বিস্ময়কর। অবশ্য এই পেশাটাও কম বিস্ময়কর নয়।
নিয়ন আলোর এই ঢাকায় কয়েক শ মেল এস্কর্ট রয়েছে, বলে জানা যায়। যদিও এর সঠিক তথ্য ভিত্তিক কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। এদের কয়েকটি অনলাইন প্লাটফর্মও রয়েছে বলে জানা যায়। অনেক নারী শুধু শরীর ম্যাসেইজ করার জন্য ঢাকায় যুবকদের ভাড়া করছেন উচ্চবিত্ত নারীরা এসব কাজে ঘণ্টা হিসেবে টাকা নেন মেল ইস্কর্টরা। ঢাকা এসকর্ট সার্ভিস এ যোগ দিচ্ছেন অনেক সুঠাম তরুন। এ জগতে Male Escort Dhaka, Escort Boy Dhaka বা Rent Boy Dhaka হিসেবে পরিচিত তারা। ঢাকায় এরকম কয়েকশ Male Escort রয়েছে। ঢাকায় ছেলে ভাড়া করার জন্য রয়েছে আলদা ফেসবুক পেজ। তবে সামাজিক মাধ্যমে থাকা পেইজের অনেকগুলোই ভুয়া বলে জানান মেইল এস্কর্ট হিসেবে কাজ করা একজন। ফয়সাল ইফতেখার। এটা তার প্রকৃত নাম না হলেও এই নামেই এ জগতে পরিচিতি তার। পরিচয় গোপন করে কথা বললেও সরাসরি দেখা করতে চাননি তিনি। কিভাবে এই পেশায় আসা এমনটা জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানান, শুরুটা আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে। তখন তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশপাশি ফরেনারদের গাইড হিসেবে কাজ করতেন। তখন পথ শিশুদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি করতে ঢাকায় এসেছিলেন ২৪/২৫ বছরের সুন্দরী আমেরিকান এক নারী। গুলশানের একটি হোটেলে ছিলেন। ওই নারীর গাইড হিসেবে কাজ করার দ্বিতীয় দিনই তিনি তাকে বিছানায় সঙ্গ দিতে প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে তাকে পে করা হবে। তখন আমেরিকান ওই নারীর প্রস্তাবে রাজি হয়ে বেশ কিছু বাড়তি টাকা আয় করেছিলেন সামি। ওই নারী তাকে পরামর্শ দেন মেইল এস্কর্ট হিসেবে কাজ করলে ভালো আর্ন করবেন তিনি। তারপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলেন সামি আর একটা সময় এভাবেই চলে আসেন।
গাড়ির গ্লাস নামিয়ে; হ্যালো স্মার্টবয় বলেই যুবককে ডাকলেন এক মধ্য বয়সী নারী। মৃদু হেসে যুবক এগিয়ে যান। তারপর আস্তে আস্তে কথা হয় তাদের। যুবক গাড়িতে উঠেতেই গাড়িটি বনানীর দিকে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই গুলশান-২ এর মোড়ে ঘটে ঘটনাটি। একটি জিমনেশিয়াম থেকে বের হয়ে গুলশানের ওই মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন যুবক। তার পরনে কালো প্যান্ট, কালো গেঞ্জি, কাঁধে ছোট একটি ব্যাগ। তার শরীর থেকে ভেসে আসছিল পারফিউমের ঘ্রাণ। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের খদ্দেরদের সকলেই উচ্চবিত্ত। তবে অনেক অর্থবিত্তের মালিক হলেও তারা নিষঙ্গ। এটা যে শুধু শারীরিকভাবে তা নয়, মানসিকভাবে তারা সঙ্গ চায়। পেমেন্ট এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে বেশি কিছু বলা লাগে না। খুশি হওয়ার মতোই পেমেন্ট করে। কয়েক বছর ধরে এই পেশায় থাকা এই ব্যক্তি জানান, খদ্দেরদের একটা অংশের বয়স ৪০ এর উপরে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা শ্রেণি রয়েছে যাদের লাইফস্টাইল ফরেনারদের মতোই। এই ভাবনা থেকেই তৈরি করেন একটি ওয়েব সাইট। পরবর্তীকালে একটি ফরম পুরন করে তিনি ঐ ওয়েবসাইট এর সদস্য হন। সেখানে অনেক ঢাকার মেল এসকর্ট রয়েছে তার মতোই। অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন সেখানে। শুরুতে ভেবেছি এদেশে এটা মানুষ সহজে গ্রহণ করবে না। তবে এদেশে বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। তারা অন্তত সাদরে গ্রহণ করবে। আর্নও হবে। তবে ওই শ্রেণির কাছে তা প্রচার করতে হবে। ওই সাইটে গিয়ে দেখা গেছে এতে তার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। যা দেখলে সহজে তার সম্পর্কে অনুমেয়। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ তিনি। তার উচ্চতা ৫ফুট ১০ ইঞ্চি, বয়স ২৮। এতে তিনি ইংরেজিতে যা লিখেছেন তার বাংলা হচ্ছে;আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমার সঙ্গে। আমার হট ও উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা অনুসারে প্রকৃত তৃপ্তি দেব। আমি নিরাপদ সম্পর্ক করব। আমি স্বাস্থ্য সম্মত ও রোগমুক্ত। আমি খুব পরিষ্কার এবং আপনার কাছেও তা আশা করি।’শুধু প্রকৃত ক্লায়েন্টকে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করে ফোন নম্বর ও মেইলের ঠিকানা দেয়া আছে এতে। এরপর থেকে বিভিন্ন ধনী নারীরা যাদের স্বামী বিদেশ কিংবা সদ্য বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে তারা তাকে ফোন দিতে থাকে। তার সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রতি মাসেই অপরিচিত পাঁচ-ছয়জন নারী ক্লায়েন্টের কল পান তিনি। বিশ্বাসযোগ্য হলেই সাড়া দেন। এছাড়া নিয়মিত কিছু ক্লায়েন্ট রয়েছে তার। একইভাবে এরকম একই সাইটে নিজের শুধু দুটি চোখের ছবি দিয়ে সস্তা এসকর্ট বয় হিসেবে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সুমন আহমেদ নামে এক যুবক। তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমি আগ্রহী বলেই এখানে তথ্য দিচ্ছি, আপনি আগ্রহী হলে দ্বিধা ছাড়াই আমাকে কল দিতে পারেন।’ একইভাবে ওবাইস নামে এক যুবক লিখেছেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য। আপনার বাড়িতে বা অন্য কোথাও নিরাপদে।’ এতে শুধু নারীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। লিঙ্কন নামে এক ইস্কর্ট বয় জানান, তাদের ক্লায়েন্ট মূলত অভিজাত শ্রেণির ও ফরেনার কিছু নারী। দেশি অভিজাত নারীদের অনেকের স্বামী নেই। ডিভোর্সি অথবা বিধবা। নিঃসঙ্গ বোধ করেন। তারা মেইল খুঁজেন। গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা ও ধানমন্ডি এলাকায় এরকম অনেক ক্লায়েন্ট রয়েছে বলে জানান তারা। অনেক নারী শুধু শরীর ম্যাসেইজ করার জন্য সস্তা এসকর্ট বয়দের ডাকেন।
নারীরা সাধারণত সুঠামদেহী, শ্যামলা, ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ছেলেদের বেশি পছন্দ করেন। এজন্য মেইল এস্কর্টরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন। সুস্থ ও শক্তিশালী থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার খান। জেন্টস পার্লারে যান নিয়মিত। তবে মেইল এস্কর্ট পেশা সমাজের চরম অবক্ষয়। সমাজে আইন রয়েছে। ধর্ম রয়েছে। যেখানে নিয়ম-নীতির মধ্য দিয়ে জীবন পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলার জন্যই এসব নিয়ম। শারীরিক চাহিদার জন্য বৈধ পথেই হাঁটতে হবে। নতুবা এই সভ্যতা অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে। পরিবার প্রথা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা বিলীন হলে নানা অসঙ্গতি সৃষ্টি হবে। বাইরের দেশের অপসংস্কৃতি কোনোভাবেই অনুসরণ করা যাবে না। এজন্য সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৩৯