somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি গানের কন্ঠশিল্পি, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা গানের কালজয়ী সুরস্রষ্টা, কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী ও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। অবিস্মরণীয় সুরের আগুন যিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সমগ্র বাংলায়, বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে সমগ্র উপমহাদেশে । তিনি ছিলেন একজন খ্যাতিমান বাঙালি কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক। তিনি হিন্দি সঙ্গীত জগৎ এ তিনি হেমন্ত কুমার নামে প্রসিদ্ধ। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অসংখ্য গানের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু গান:
"পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো, বলো কবে শীতল হবো"
"ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে"
"আয় খুকু আয়,আয় খুকু আয়"
"মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে"
"ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলোনা, ও বাতাস আঁখি মেলোনা"
"আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি,আর মুগ্ধ এ চোখে চেয়ে থেকেছি"
"এই রাত তোমার আমার, ঐ চাঁদ তোমার আমার…শুধু দুজনে"
"মেঘ কালো, আঁধার কালো, আর কলঙ্ক যে কালো"
"রানার ছুটেছে তাই ঝুমঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে"
"আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে"
"আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা,আর কতকাল আমি রব দিশাহারা"
"বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও,মনের মাঝেতে চিরদিন তাকে ডেকে নিও"
"আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ"
"কেন দূরে থাকো, শুধু আড়াল রাখো"
"ওলিরও কথা শুনে বকুল হাসে"...
.আজ এই খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পীর একশত দুইতম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। শিল্পীর জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।


হেমন্ত মুখপাধ্যায় ১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছোটবেলা কাটে তিন ভাই এক বোন নীলিমার সাথে। বড় ভাই তারাজ্যোতি ছোটগল্প লিখতেন। ছোটভাই , অমল মুখপাধ্যায় কিছু বাংলা ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন এবং ১৯৬০ এর দশকে কিছু গান ও গেয়েছিলেন। হেমন্ত ভবানিপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ছিলেন। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। কিন্তু, তিনি সঙ্গীতের জন্য আপন শিক্ষা ত্যাগ করেন। সেখানেই তার বাল্যবন্ধু ও কবি সুভাষ মুখপাধ্যায়ের সাথে পরিচয়। প্রথমে তাঁর সাহিত্যিক হবার ইচ্ছে ছিল। কিছুদিন, তিনি দেশএর জন্যে লেখেনও। কিন্তু যাঁর হবার কথা সঙ্গীতশিল্পী, তিনি কি অন্য কোনো কাজে মন বসাতে পারেন! ১৯৩৩ সালে শৈলেশ দত্তগুপ্তের সহযোগিতায় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’র জন্য প্রথম গান ‘আমার গানেতে এল নবরূপী চিরন্তন’ রেকর্ড করেন হেমন্ত। কিন্তু গানটি সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। শেষতক ১৯৩৭ সাল থেকে তিনি পুরোপুরি প্রবেশ করেন সঙ্গীত জগতে। এই বছর তিনি নরেশ ভট্টাচার্যের কথা এবং শৈলেশ দত্তগুপ্তের সুরে গ্রামোফোন কোম্পানী কলম্বিয়ার জন্য ‘জানিতে যদিগো তুমি’ এবং ‘বলো গো তুমি মোরে’ গান দুটি রেকর্ড করেন। বাল্যবন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাকে গান গাইবার জন্য ইডেন গার্ডেনের স্টুডিওতেও নিয়ে গিয়েছিলেন একবার। এরপর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই তিনি ‘গ্রামোফোন কোম্পানী অফ ইন্ডিয়া’র জন্য গান রেকর্ড করেছেন। ১৯৪০ সালে, সঙ্গীত পরিচালক কমল দাসগুপ্ত, হেমন্তকে দিয়ে, ফাইয়াজ হাস্মির কথায়ে "কিতনা দুখ ভুলায়া তুমনে" ও "ও প্রীত নিভানেভালি" গাওয়ালেন।


১৯৪১ সালে এই শিল্পী তাঁর প্লে-ব্যাক সংগীত জীবন শুরু করেন ‘নিমাই সন্ন্যাস’ ছবির মাধ্যমে। এরপর থেকেই তিনি ভারতীয় বাংলা সিনেমার একজন অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে পরিগণিত হন। ফলে দর্শক-শ্রোতা একের পর এক কালজয়ী বাংলা গান উপহার পেয়েছেন। ১৯৪৪ সালে ‘ইরাদা’ ছবিতে প্লে-ব্যাক করে হিন্দী গানের শ্রোতাদেরকেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন হেমন্ত। একই বছরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রথম নিজের কম্পোজিশনে দুটো গান করেন। গান দুটির গীতিকার ছিলেন অমিয় বাগচী। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বের করেছিলেন। তবে তিনি প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন ১৯৪৪ সালে ‘প্রিয় বান্ধবী’ সিনেমাতে। এছাড়াও কলম্বিয়ার লেবেলে রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড বের করেছিলেন তিনি। তবে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে হেমন্ত আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৪৭ সালে ‘অভিযাত্রী’ সিনেমার মাধ্যমে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকেই হেমন্ত নিজেকে সম্ভাবনাময় শিল্পী এবং কম্পোজার হিসেবে সবার নজর কাড়েন। সেসময় তিনিই ছিলেন একমাত্র পুরুষ কণ্ঠশিল্পী যিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে কাজ করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে বলিউডি সিনেমা ‘নাগিন’ এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন তিনি। এই ছবির গান সেসময় দুই বছর ধরে টপচার্টের শীর্ষে অবস্থান করেছিল এবং এই সিনেমার জন্যই হেমন্ত ১৯৫৫ সালে ‘ফিল্মফেয়ার বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টর’ এর পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি বাংলা সিনেমা ‘শাপমোচন’ এর সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই ছবিতে তিনি উত্তম কুমারের জন্য চারটি গান করেছিলেন। তারপর থেকেই যেন উত্তম কুমারের ছবি মানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। পরবর্তী সময়ে এই জুটি পেয়েছিল অসম্ভব জনপ্রিয়তা।


(বেলা মুখপাধ্যায়, গীতা দত্ত, হেমন্ত মুখপাধ্যায়, শ্রী অরূপ, স্বরোজ সেন গুপ্ত)
ব্যাক্তিগত জীবনে ১৯৪৫ সালে হেমন্ত মুখপাধ্যায়ের সাথে বেলা মুখপাধ্যায়ের বিবাহ হয়। ১৯৪৩-এ বাংলা ছায়াছবি, কাশিনাথে, সঙ্গীত পরিচালক পঙ্কজ মল্লিক বেলাকে দিয়ে কিছু জনপ্রিয় গান গাইয়েছিলেন, কিন্তু বিবাহের পর তিনি আর সঙ্গীত জগৎ এ প্রবেশ করলেন না। হেমন্তর দুই সন্তান - পুত্র, জয়ন্ত, ও কন্যা, রাণু। রাণু মুখপাধ্যায় ১৯৬০-৭০ এ গান গাইতেন। ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, আমি যদি আর নাই আসি হেথা ফিরে’ মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসে এই গানটি শুনিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথিতযশা এই শিল্পীর জীবনাবসান ঘটে। তবে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে যে এই শিল্পীর স্বরলিপি চিরদিনের জন্য খোদাই করা হয়ে গেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।


ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি কন্ঠশিল্পি, সঙ্গীত পরিচালক এবং প্রযোজক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আজ একশত দুইতম জন্মবার্ষিকী। শিল্পীর জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকা।
লেখাটি ২০২০ সালে শিল্পীর শততম জন্মবার্ষিকতে
সামুতে প্রকাশিত, আজ পুনঃপ্রকাশ।


নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:২৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×