somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপ্ত অক্ষমতা: শিশু ও আমরা - ৬

২৭ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্পিচ থেরাপির প্রাথমিক ধারণা

অটিস্টিক শিশুদের মধ্যে যাদের ইনটেলেকচুয়াল ডিজেবিলিটি নেই, অর্থাৎ অ্যাসপারগার সিনড্রোমে ভুগছে, এমন শিশুদের ১০-২০% নিবিড় যত্ন ও পরিচর্যায় চার থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো একটু একটু করে কমিয়ে আনতে পারে, এবং কিছু অসুবিধা সত্ত্বেও একসময় সাধারণ স্কুলে স্বাভাবিক শিশুদের সাথে পড়ালেখা করতে পারে। আরো ১০-২০% শিশু স্বাভাবিক শিশুদের সাথে পড়তে না পারলেও বাসায় থেকে বা বিশেষায়িত স্কুলে নিবিড় যত্নসহ পড়ার সুযোগ পেলে, ভাষা সহ বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ নিয়ে সমাজে মোটামুটি স্বনির্ভর একটা স্থান করে নিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যার অন্যতম ব্যবহারিক উপায় হলো স্পিচ থেরাপি।

স্পিচ প্যাথোলজি বা স্পিচ থেরাপির আওতা যথেষ্ট বিস্তৃত। বাকযন্ত্রের গঠনজনিত কারণে কথা শেখার সমস্যা থেকে শুরু করে বুদ্ধিবৃত্তিক ঘাটতির কারণে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বা মিথস্ক্রিয়ার সমস্যা-- এরকম বহুবিধ সমস্যার সমাধানে এর কার্যকর প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব। এখানে স্পিচ থেরাপির কিছু ব্যবহারিক কৌশলের ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করব। বলে নেয়া দরকার, শুধু মৃদু বা মাঝারি মাত্রার অটিজম আছে এমন শিশুরাই নয়, স্বাভাবিক বা মেইনস্ট্রিম শিশুদের মধ্যে যাদের অতিচঞ্চলতা, অস্থিরতা, শারীরিক আঘাতের প্রবণতা বা অমনোযোগিতার মতো আচরণগত সমস্যা আছে, তাদের জন্যও এসব কৌশল যথেষ্ট উপকারী।



এখানে যে কৌশলগুলো দেখানো হবে (পরবর্তী পর্ব থেকে), সেগুলো মূলতঃ কিছু স্ট্রাকচার্ড প্লে; যেগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন listening, watching, thinking, doing, sharing ও turn-taking এর মাধ্যমে থেরাপিস্টের সঙ্গে শিশুর মিথস্ক্রিয়া নিশ্চিত হয়। শিশুর সঙ্গে থেরাপিস্ট (এখানে 'শিক্ষক' টার্মটি ব্যবহার করা হবে) এগুলো খেলবেন। শিশু ও শিক্ষক মুখোমুখি বসবেন। তুলনামূলকভাবে ছোট মাপের চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করতে হবে; যাতে করে সহজে শিশুর সঙ্গে শিক্ষকের আই-কন্ট্যাক্ট ঘটে, এবং শিশুর মনোযোগের কেন্দ্রীভবন বাধাগ্রস্ত না হয়। মোটামুটিভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক বয়স আড়াই থেকে তিন বছর-- এমন বয়সগ্রুপ থেকে এই কৌশলগুলো প্রয়োগযোগ্য। শিশু অভ্যস্ত বা দক্ষ হওয়া পর্যন্ত নিয়মিতভাবে একই কৌশলের চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। তারপর ক্রমান্বয়ে আরেকটু চিন্তাভাবনা করার সুযোগ আছে, এমন কাজ বা খেলাগুলোতে অগ্রসর হওয়া যাবে।

প্রতিবারে ৫/৬টি স্ট্রাকচার্ড প্লে করলে ভাল হয়। এসবের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের মধ্যে সংশ্লিষ্ট খেলনা, কার্ড, কাগজ, রংপেন্সিল, ইত্যাদি ছাড়াও আরো কিছু জিনিস লাগবে। যেমন দু'টো কার্ড; যার একটাতে "help" আর দ্বিতীয়টাতে "wait" লেখা (সঙ্গে উপযুক্ত ভাব-প্রকাশক কোন প্রতীক বা ছবি আঁকা)। কোন কাজ করতে গিয়ে শিশুর সমস্যা হলে তাকে "help" লেখা কার্ডটা তুলে ধরে শিক্ষকের সাহায্য চাইতে হবে। আবার কখনও শিক্ষকের নির্দেশনা পুরোপুরি না শুনে শিশু খেলা শুরু করলে, অথবা শিক্ষকের পালার সময় নিজে খেলতে চাইলে, কিংবা অন্য কোন অবস্থায় প্রয়োজন বুঝে "wait" লেখা কার্ডটি তুলে ধরে শিক্ষক তাকে অপেক্ষা করতে বলবেন। এই অভ্যস্ততা শিশুকে দৈনন্দিন জীবনে যে কোন কাজে প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যের সাহায্য চাইতে এবং ধৈর্যশীল হতে শেখাবে।

যেসব কাজ বা খেলা করা হবে; তার উপকরণ, খেলনা ইত্যাদি খেলাশেষে গুছিয়ে রাখার জন্য টেবিলের নীচে বা মেঝেতে একটা খালি বাক্স রাখতে হবে। বাক্সের গায়ে দাবার ছকের মতো সাদাকালো খোপকাটা থাকবে, যেটা থেকে বোঝা যাবে এর নাম ফিনিশ-বক্স। টেবিলের একপাশে বা দেয়ালে থাকবে একটা ছোট আয়তাকার বোর্ড বা ওয়াল-হ্যাং; যাতে এক সারিতে বা এক কলামে সাজানো থাকবে খেলাগুলোকে রিপ্রেজেন্ট করে এমন সব প্রতীক। এই প্রতীকগুলো হবে শক্ত কাগজ বা কার্ড কেটে তৈরি করা (ল্যামিনেট করে নিলে ভাল হয়); যাতে ছবি এঁকে ও লিখে একেকটা কাজ বা খেলা বোঝাতে হবে। সবশেষে থাকবে একটা ফিনিশ-পকেট; সাদাকালো খোপকাটা [ধারণা দেয়ার জন্য পরবর্তী ছবিতে এধরণের একটা নমুনা দেয়া হলো; অবশ্য এটা স্কুল-রুটিনের]।



প্রথম খেলাটি শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে তার উপকরণ/খেলনা গুছিয়ে ফিনিশ-বক্সে রাখবে শিশু। এরপর সে বোর্ড থেকে প্রথম প্রতীকটি সরিয়ে ফিনিশ-পকেটে রেখে দেবে। তারপর সে পরবর্তী প্রতীকটি দেখে শিক্ষককে বলবে পরবর্তী খেলা বা কাজটি কী। এভাবে প্রতিবার খেলনা গোছানো আর প্রতীক সরানোর মধ্য দিয়ে কাজের সূচনা, সিকোয়েন্স বা পর্যায়ক্রম, রুটিন, অপেক্ষা, সমাপ্তি-- এই প্রত্যয়গুলো সম্পর্কে শিশুর ধারণা জন্মাবে।



......... ক্রমশঃ

পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
পর্ব-৪
পর্ব-৫
৩৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×